05/11/2023
লিখেছেন: নাফিসা ইয়াসমিন
ইতিহাস কোন স্তব্ধ অতীত নয় বরং ইতিহাস চির-মুখর, ধারাবাহিক এক জীবন প্রবাহ। যুগ-যুগান্তর ধরে মানব-সভ্যতার চলমান জীবনধারাই ইতিহাস। সেই চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে আছে কত শত ভাঙা-গড়ার ইতিহাসের অর্ধলুপ্ত অবশেষ। কত রক্ত-রঞ্জিত দৃশ্যপটের পরিবর্তন।কত উত্থান-পতন, কত চেষ্টার তরঙ্গ, কত সামাজিক বিবর্তন।
যুগ-যুগান্তরব্যাপী সভ্যতার ক্রম-বিবর্তনের ধারায় অতিবাহিত হয়ে আমরা উপনীত হয়েছি এই একবিংশ শতাব্দীতে।
এই শতাব্দীর প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে, সর্বশেষ ওহীর জন্মভূমি আরব ভুখন্ড থেকে লক্ষ্য কোটি মাইল দূরে অবস্থিত আর্য-অনার্য ,শক ,হুন ,রাজপুত অমুসলিম জাতির মিলনক্ষেত্র ভারতীয় উপমহাদেশে কিভাবে মুসলিম আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে।
বিশেষ করে পূর্ব বাংলা এবং অল্প বিস্তর পশ্চিম বাংলা মুসলিম জনসমাবেশের প্রাণকেন্দ্র কিভাবে হয়ে উঠলো?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার আধিক্য কখনো পঁচিশ শতাংশের অধিক হয়নি সেখানে মুসলিম শাসকেরা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছে প্রায় ৮০০ বছর।
আরো আশ্চর্যের বিষয়,প্রিয় নবীজির সাহাবীরা(রাঃ) এই ভুখন্ডে এসে দলে দলে ইসলামের আলো প্রচার করেছিলেন এমন তথ্যও পরিবেশিত হয়নি।
তবুও জাতির বিচারে বাঙালি মুসলিম বর্তমান আরবের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী।
আমরা কি কখনো অনুসন্ধিৎসু হয়েছি নিজদের শিকড়ের সন্ধানে কিংবা ভারতীয় ভুখন্ডে কেমন ভাবে আমাদের পূর্বপুরুষদের আগমনে ইসলামের ঊষাকাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ইতিহাসের বিবরণী?
এই সমস্ত আদ্যোপান্ত শিকড়ের ইতিহাস জানাতে এবং মুমিন হৃদয়ের চিরন্তন এই সম্পর্কিত কৌতূহলের জবাবের উত্তর দিতে চেতনা প্রকাশনার এক অনবদ্য প্রয়াস সিন্ধু থেকে বঙ্গ (১-২ খন্ড) গ্রন্থটি।বইটির লেখক মনযূর আহমাদ।
📚প্রিভিউ পর্যালোচনা
----------------------------------
চেতনা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিতব্য বইটির শর্ট পিডিএফ থেকে উপলব্ধি করা যায়, যে বইটির সূচিপত্র এর ভিতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত দর্পণ।
🍂সূচিপত্র থেকে এক ঝলক 🍂
----- -------- ------- ----- ----- ------
📙বইটির প্রথম খণ্ডে আলোচিত হয়েছে সর্বমোট ২১টি অধ্যায়ে যার প্রথম অধ্যায়ে লেখক পাঠককে নিয়ে যাবেন 'শিকড়ের ইতিহাসে' যেখানে আলোচিত হয়েছে ইব্রাহীম (আঃ) -এর মুনাজাত, এরপর ঈসা (আঃ) এর খোশখবর, ইহুদি ও বনি ইসরাইল এরপরে ধারাবাহিক পর্যায়ক্রমে উঠে এসেছে মালাবারে ইসলাম, ভারতের গোড়ার কথা এবং প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলাম প্রচারে ওলি আউলিয়ার অবদান, বঙ্গে ইসলাম প্রচার,বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ , ভারতে মুসলিম শাসনের সূচনা ও অবদান, গজনি বংশ, ঘুর বংশ, দিল্লির তুর্কি সাম্রাজ্য, খিলজী বংশ, তুঘলক বংশ, লোদী বংশ, তৈমুরের ভারত আক্রমণ, আঞ্চলিক স্বাধীন রাজ্যসমূহের উত্থান এবং সর্বশেষ দিল্লির সুলতানদের শাসন, সমাজ ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে।
📙 দ্বিতীয় খণ্ড সন্নিবেশিত হয়েছে ২০ টি অধ্যায়ে যেখানে তিনি পাঠককে নিয়ে গেছেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা এবং গৌরবান্বিত ইতিহাসের আয়নায়। যার সূচনা হয়েছিলো বাবরের শাসনকাল দিয়ে এবং পর্যায়ক্রমে উঠে এসেছে হুমায়ুন ও শের শাহ, আকবরের বঙ্গ বিজয়, সম্রাট শাজাহানের চাকচিক্যময় শাসনকাল, শাসক আওরঙ্গজেবের শাসনকাল এবং মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের বহুমুখী কারন বিশ্লেষণ, মুঘল আমলে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশের চিত্র সবিস্তার তুলে ধরা হয়েছে। মুঘল আমলের সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা, হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক, শিক্ষা সাহিত্য ইত্যাদি চিত্রায়িত হয়েছে। সর্বশেষ আলোচনার বিষয় ভারতবর্ষের সভ্যতা নির্মাণে ইসলামের অবদান।
বইটি পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও বিশেষত্ব(শর্ট পিডিএফ এর আলোকে পাঠ্য অভিমত)
--------------------------------------------------------------------------------
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে অমুসলিমদের হাত ধরে। আমরা যে ইতিহাস পাঠ করি তাতে ভারতবর্ষে ইসলামের উত্থান ও তার বিস্তার, মুসলিমদের অবদান চিত্রায়িত হয়না বললেই চলে।
মুসলিম শাসকদের ইতিহাস আলোচিত হলেও তাদের দেখানো হয় স্বৈরাচারী অত্যাচারি খলনায়ক হিসাবে।
যেখানে মুসলিম বিরোধী শক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের কৌশল হিসাবে ইতিহাসের পাতা থেকে ইসলামের ইতিহাসকে বিবর্ণ করে দিতে সদা তৎপর সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা বিস্মৃত রয়েছি আমাদের পূর্বসূরীদের আগমনী ইতিহাস, বঙ্গে ইসলামের শিকড়ের বিস্তার সম্পর্কে।
সুতরাং এই প্রান্তিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চেতনা প্রকাশনার "সিন্ধু ও বঙ্গ" বইটি সত্য উন্মচনের একটি নিবেদিত প্রয়াস হতে চলেছে অবশ্যই।
ইসলামের শুরুর দিকের ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা এসেছে তেমনি এসেছে মুসলিম শাসনের ভাঙনের ইতিহাস, এখানে বঙ্গে ইসলাম প্রচার,বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ।
শর্ট পিডিএফ ও সূচিপত্র থেকে উপলব্ধি করি, বইটি ভারত ভুখন্ডে মুসলিম জাতির ইতিহাসের দর্পণে অঙ্কিত একটি অমূল্য রতন যেটা সংগ্রহ করে রাখা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে আমার কাছে।
শর্ট পিডিএফ পড়ে উদগ্রীব হয়ে আছি সমগ্র বইটি পড়ার জন্য।নিজের আত্মপরিচয় জানতে, শিকড়ের সন্ধানের টানে পাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে বইটির গভীরে।
এত সুন্দর অথেনটিক রেফারেন্স প্রাঞ্জল উপস্থাপন, ও তথ্যবহুল , শিকড়ের ইতিহাস সমন্বিত বইটিকে একটা আলাদা মাত্রা এনে দেয়।
কেন পড়বেন(বইটির গুরুত্ব)
----------------------------------------
⬛বিশ্বসভ্যতা নির্মাণের একচ্ছত্র দাবিদার পশ্চিমারা। সেই দাবিকে ফোকাস করে তাদের হাতে নির্মিত ইতিহাসে একপাক্ষিক ভাষ্যের জয়জয়কার।
শুধু পশ্চিমারা নয়, মুসলিম বিরোধী উপমহাদেশীয় শাসকদের আগ্রাসী মনোভাবে খুব সচেতনভাবে তারা এড়িয়ে গেছে ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান। তবে তারা ইতিহাসের লম্বা একটি সময়কে যতই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, ইতিহাস কখনোই নীরব ছিল না।
⬛এর বিপরীতে আমাদের যদি ভারতীয় সভ্যতা বিনির্মাণে ইসলাম ও মুসলমানদের অবদান ও বঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে, তাহলে আমরা নিজ আত্ম পরিচয়ের গৌরবে অমলিন হতে পারবো।
⬛সেই সাথে মুসলমানদের সম্পর্কে যে ধরনের সহিংস অত্যাচারি বর্বর ভাবমূর্তির ইতিহাসের মিথ্যা বিকৃতি তুলে ধরা হয়, তার বিরুদ্ধে একটি মোক্ষম জবাব দিতে সক্ষম হব।
বিশেষ ভাবে অস্তিত্বের দাবিতে তরুণ প্রজন্ম সহ সমগ্র মুসলমানের জন্য বইটি অপরিহার্য হতে চলেছে ইন শা আল্লাহ।
⬛কালের ঘূর্ণাবর্তে মুসলিম শাসকদের পালাবদলের ইতিহাস কেমন ছিলো, মুসলিম শাসনকাল বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটা ইসলামের ছাপ রাখতে পেরেছে?এগুলো কি ছিল ইসলামি শাসনব্যবস্থা? উপমহাদেশে এবং এই বাংলায় এত মুসলিম কীভাবে শিকড় গেঁথেছে কী তার উৎস, কী তার ইতিহাস সবকিছুর উত্তর মিলবে "সিন্ধু থেকে বঙ্গ" বইটির অন্দরমহলে ইন শা আল্লাহ।
📚একনজরে বই পরিচিতি
বই : সিন্ধু থেকে বঙ্গ (১-২ খন্ড)
লেখক : মনযূর আহমাদ
প্রকাশক :চেতনা প্রকাশন
বাইন্ডিং :হার্ডকভার