29/12/2023
লেখকের টাইমলাইন থেকে নেওয়া।
#১লক্ষ_টাকার_নিলাম_বিষয়ক_আপডেট
গত ১৮ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় বুকলেট ডট কম পেইজে আমার লেখা দ্বিতীয় বই “সালেম নো গ্রেনি” নিলামে তোলা হয়। ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় একেবারে শেষ সময়ে এসে ফারাবী ভাই ৯৯ হাজার ৯শত ৯৯ টাকা দিয়ে প্রথম কপিটি নিলাম থেকে কিনে নেন।
আর ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই। উনি ওনার পরিচিত ভাইয়ের বই ৯৯ হাজার ৯শ ৯৯ টাকা দিয়ে কেন কিনলেন? এটাই হচ্ছে তার সবচেয়ে বড়ো অপরাধ। বিগত এই ৭-৮ দিন যাদের যোগ্যতা নাই দুইটা কথা বলার তারাও বাজে, বিশ্রী ভাষায় মন্তব্যগুলো করেছেন। লেখক হিসেবে আমাকে, প্রকাশনা হিসেবে বর্ণলিপিকে আর সবচেয়ে বেশি গালি খেয়েছেন নিলাম বিজয়ী ফারাবী ভাই। একজন রেপিস্টকে না যতটা বাজে চোখে দেখা হয়, যতটা না গালি দেওয়া হয়, তারচেয়েও বেশি বাজে এবং বিশ্রীভাবে বই জগতে বসবাস করা কিছু বইপ্রেমী মানুষগুলো গালাগালি করেছেন ওনাকে। অথচ বই জগতের মানুষ হিসেবে হওয়া উচিত ছিল ভদ্র, সভ্য, রুচিসম্মত এক মানুষ।
আচ্ছা কিছু প্রশ্ন করি, একটু উত্তর দেবেন যারা এই কদিন গালি আর জঘন্য মন্তব্যগুলো করে গেছেন।
ফারাবী ভাইয়ের দোষ কী ছিল যে এতগুলো কথা শুনতে হলো তাকে? ওনাকে বাজে মন্তব্যগুলো করার স্পর্ধা আপনাকে কে দিয়েছিল? কোন অপরাধের ভিত্তিতে তাকে এতগুলো কথা শোনালেন আপনারা? [আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছেন, আমাকে গালি দিয়েছেন, অসংখ্য অগণিত বাজে মন্তব্য করেছেন সেগুলো নিয়ে ভাবছি না বা জিজ্ঞেস করছি না। লেখক হিসেবে করতেই পারেন, কিন্তু তাকে ঠিক কোন অপরাধের দায়ে এতগুলো কথা আপনারা শোনালেন?]
বিগত ৭-৮ দিনে যেভাবে তাকে বকা দিয়েছেন, বাজে মন্তব্য করেছেন, বিশ্বাস করেন, আমি আমার জীবনে এমন কোনো কাজ করি নাই যার জন্য মাথা নিচু হতে হবে বা লজ্জায় মিইয়ে যেতে হবে। অথচ আপনাদের এসব মন্তব্যগুলো দেখার পর যতবার ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি, যতবার ওনার ব্যাপারে ভেবেছি, প্রত্যেকটাবার মনে হয়েছে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাই অথবা যদি সম্ভব হতো তবে মাটি ফুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেতাম। সত্যিই, আপনারা আমাকে গালি দিয়েছেন, বাজে মন্তব্য করেছেন এ নিয়ে আমার একটুও আফসোস নাই। আপনাদেরকে আমার সালাম রইল সেই সাথে বইমেলায় এসে অন্তত একবার দেখা করবেন। বই কেনা লাগবে না আমার, আপনাদের সাথে আড্ডা দেবো, আপ্যায়ন করব। কিন্তু এই যে ফারাবী ভাইকে যতগুলো মানুষ এরকম বিশ্রী মন্তব্যগুলো করেছেন, তীর্যক মন্তব্যগুলো করেছেন, এরজন্য আমার এখনও লজ্জায় মিইয়ে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমি আমার জীবনে জ্ঞান থাকা অবস্থায় বুকে হাত রেখে বলতে পারব আমার জন্য বিনা অপরাধে কোনো মানুষকে কখনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি, বিনা অপরাধে লজ্জিত হতে হয়নি। অথচ আপনারা এই ইস্যুতে আমাকে জীবনের জন্য তার কাছে ছোটো করে দিলেন।
আচ্ছা এবার কিছু প্রশ্ন করি ও জবাব দিই।
একজন লেখকের বই তখনই নিলামে কেন ওঠাতে হবে যখন তিনি দুনিয়ার খুব বড়ো কিছু হয়ে যাবে? কেন সেলিব্রিটি ছাড়া নিলাম একজন নবীন লেখক তুলতে পারবে না? না কি ওঠানোটা পাপ হবে? আপনাদের মন্তব্যগুলো দেখে মনে হচ্ছিল নিলামে বই তুলে আমি আমার জীবনেও সবচেয়ে বড়ো ভুল করে ফেলেছি। আর নিলামে ফারাবী ভাই ১ লাখ টাকা বলে খুব সম্ভবত এই দুনিয়ার যত বড়ো পাপ আছে সেটা করে ফেলেছেন।
আর নিলামের বইটা একজন বই পড়ুয়া পাঠকই কিনে নিবে সবসময় এমনটা আপনারা কীভাবে ভাবেন? একজন বই পড়ুয়া পাঠক কখনোই নিলামে বই কিনবে না। কারণ সে, সেই টাকা দিয়ে আরও শত শত বই ক্রয় করতে পারবেন। সাধারণত নিলামে বই কেনেই সেসব মানুষ; যারা লেখকের কাছের কেউ হয় অথবা লাইমলাইটে আসতে চায়। ফারাবী ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় মোটামুটি লম্বা সময়ের। সেই হিসেবে উনি আমার বইয়ের নিলাম সর্বোচ্চ দাম দিয়ে ক্রয় করেছেন আনন্দ ও স্নেহের বশে। তো এখানে তার ভুলটা কোথায়? আর অন্যায়টা কোথায়? নিলাম মানেই তো যে যত বেশি প্রাইজে জিনিসটা ক্রয় করতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাদের কেন আক্রমণাত্মক আচরণ প্রকাশ পেল? চাইলে আপনারাও এতে অংশগ্রহণ করতে পারতেন অথবা পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু দুটোর একটিও না করে, অস্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন নিকৃষ্ট চিন্তা-ভাবনাকে। এখন এই কাজের পরিপ্রেক্ষিতে আমি বা আমার প্রকাশনা আপনাদের সাধুবাদ জানাই কী করে? না কি সেটাও এ স্বাধীন দেশে হরণ করা হয়েছে?
এছাড়া কিছু মানুষ হাসাহাসি করলেন স্পেশাল অটোগ্রাফ নিয়ে। আবার কিছু মানুষ হাসাহাসি করলেন বইটা কি সোনা দিয়ে বাঁধানো হবে কি না। অরও কত কী যে ছিল শেষ করা যাবে না। স্বল্প কথায় উত্তর দিচ্ছি। স্পেশাল অটোগ্রাফ বলতে বুঝানো হয়েছিল, গতানুগতিকভাবে একজন পাঠককে যেভাবে অটোগ্রাফ দেওয়া হয়, সেভাবে না। ধরুন যে-কোনো পাঠক ঠিক কীভাবে বই কেনে? হয় বুকশপ, না-হয় প্রকাশনা অথবা বইমেলা। ওখানে লেখক কখনো থাকেন আবার কখনো থাকেন না। অটোগ্রাফের নামে ‘শুভকামনা’, ‘ভালোবাসা নিবেন’ লেখা আর একটা সিগনেচার ছাড়া এর বেশিকিছু থাকে বলে মনে হয় না। হাতে গোনা কিছু লেখক হয়তো দারুণ সব উক্তি/উদ্বৃতি লিখে থাকেন পাঠকদের ভালোবেসে। সেখানে, আমি সেই নিলামধারী মানুষটাকে স্পেশাল ফিল করাতে, সাক্ষাৎ নিজে উপস্থিত হব ওনার দোরগোড়ায়। প্রকাশিত বইয়ের প্রথম কপিটি, নিজের পছন্দের কিছু লেখা ওখানে লিখে ওনাকে সেটা উপহার হিসেবে দিব। সাথে সেইসব মুহূর্তের যে ফটোগ্রাফি হবে, ওগুলো পরবর্তীতে প্রকাশনার পেইজ ও লেখক আইডি থেকে শেয়ার করা হবে। এবং তা অবশ্যই সেই মানুষটির অনুমতি নিয়ে। অনেকে আছেন নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন, সেদিক থেকে নিলামধারী মানুষটা যেভাবে কম্ফোর্ট হবেন, সেভাবেই সব করা হবে। অর্থাৎ লেখক নিজে উপস্থিত হয়ে, বইয়ের প্রথম কপিটি অটোগ্রাফ দিয়ে যে মানুষটাকে দিচ্ছে সেটা কি স্পেশাল হলো না? যদি না হয়, তাহলে লেখক হিসেবে কোন কাজটিকে আপনারা স্পেশাল হিসেবে ভাবেন সেটা জানালে উপকৃত হতাম এবং শিখে নিতেও পারতাম।
তবে যেভাবে ব্যাপারটাকে নিয়ে হাসাহাসি করা হচ্ছিল, আসলেই মর্মান্তিক ব্যাপার।
অন্যতম শকিং ব্যাপার হচ্ছে ফ্ল্যাপ পড়ে টিটকারি দেওয়া, হাসাহাসি করা থেকে শুরু করে যাচ্ছে-তাই মন্তব্য আসছে। এমনকি এ-ও বলা হয়েছে, “এই ফ্ল্যাপের বই এত টাকা নিলামে কেনা ফাজলামি কিংবা অন্যকিছু।” এছাড়া সিরিয়াল কপি, সব মুভিতে একই রকম, সাধারণ একটা থ্রিলার, বমি করার মতো ফ্ল্যাপ কিংবা আরও জঘন্যসব মন্তব্য! আর এই মন্তব্যগুলো করার একমাত্র কারণ ১ লক্ষ টাকা নিলাম! অথচ বইটা প্রকাশই পেল না, সেই বই নিয়ে এখনই এত বিশ্রী মন্তব্য দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বই আসার পর জ্ঞান আর ভদ্র মানুষগুলোর আচরণ কতটা বিশ্রী হবে।
যারা সন্দেহ করছিলেন যে, ফারাবী ভাই আসলে ফেইক কিংবা আমার সেকেন্ড আইডি। তাদের জন্য নিচে কিছু স্ক্রিনশর্ট শেয়ার দিলাম। সেই সাথে ফারাবী ভাই লাইভে এসেছিলেন সেটার লিংকও দিয়ে দিলাম। সেই সাথে উনি এর আগেও অসংখ্য বই উপহার দিয়েছেন অপরিচিত বইপড়ুয়া পাঠকদের, সেগুলোর স্ক্রিনশর্ট এবং লিংক দিলাম। আর সবচেয়ে বড়ো এলিগেশন যেটা দিয়েছিলেন, এই টাকা দিবে না, এটা সম্পূর্ণ ভুয়া। তাদের জন্য টাকার ট্রানজেকশন ডিটেইলস দিয়ে দিলাম। এমনকি এই টাকা গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিলি করা হবে সেটা শুনেও অনেকে অনেক রকমভাবে টিটকারি দিয়েছেন, হাসাহাসি করেছেন। তাদের জবাব দেওয়ার জন্য সামান্য ছবি দিলাম। দুটি খাতে নিলামের বড়ো অংশ দান করা হয়েছে। একটি গরীব-দুঃখীদের শীতবস্ত্র বিতরণ এবং অপর দানটির ব্যাপারে সম্পূর্ণ গোপণ রাখতে চাচ্ছি। চেয়েছিলাম দান করব সম্পূর্ণ গোপনভাবে। দানদাতা আর যে দান গ্রহণ করছে এই দুই পক্ষ জানবে। আমার কোনো ইচ্ছে নেই কেয়ামতের মাঠে দানশীল নামধারী হয়ে জাহান্নামের আগুনের জ্বালানোর পাপী হওয়ার, কিন্তু পরিস্থিতি এমন সৃষ্টি হয়েছে যে, বাধ্য হয়েছি প্রকাশ্যে দানের কয়েকটা ছবি তুলে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরার। আর অপর দানটি যেহেতু প্রকাশ্যের দান নয়, সেহেতু ওটা গোপন রাখার চিরসিদ্ধান্ত।
#পরিশিষ্ট: আমি জানি, এরপরেও অনেকের বিশ্বাস হবে, অনেকের বিশ্বাস হবে না। অনেকে বাহবা দিবেন, অনেকে আবার গালি দিবেন। কিন্তু সর্বশেষ একটা কথাই বলব, আপনি আপনার মতামত অথবা আপনার চিন্তাভবনা রাখতে পারেন, কিন্তু আমার অথবা আমাদের সততাতে আপনার চিন্তাভাবনায় বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হবে না। আমাদের সততা আমরা আর আমাদের আল্লাহ জানেন। আপনার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে কিছুই যাবে আসবে না। সেই সাথে একটা চক্র আমাকে ইতোমধ্যে লক্ষ করে রেখছেন, বই প্রকাশের পরপরই বইয়ের মাঝে ভুল থাকুক কিংবা না থাকুক, এরপরেও যাচ্ছে-তাইভাবে তুলোধুনা করবেন। আপনাদের গ্রুপের সেসব আলাপ-আলোচনাও আমার কান অবধি এসেছে। সমস্যা নেই, আপনি আপনার চেষ্টা চালিয়ে যান। শুভকামনা রইল, আর দেখা করার অনুরোধ রইল বইমেলায় কিংবা বাংলাবাজার। চায়ের বিলটা আমার।
নোট: ফারাবীর বিষয়ে শেষ আরেকটা ভিডিও আসবে। অপেক্ষা করবেন একটু সময়।
ধন্যবাদ সবাইকে।