22/11/2021
বিয়ের ১৩ বছর পর যখন তাদের প্রথম মেয়ে পৃথিবীর আলো দেখলো, কোন খুশির সীমা পরিসিমা ছিল না তাদের। মেয়ের বাবা পেশায় একজন আর্মি পারসন। বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে বাচ্চার মা সিএমএইচে সর্বোচ্চ কেয়ার পেয়েছিলেন। সম্পুর্ন সুস্থ বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর তাই কেউ কল্পনাও করতে পারে নি যে, এক ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার আধা ঘন্টা পর হঠাৎ বাচ্চার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন দেয়া হল। কোন লাভ হলো না। এক ঘন্টা পর সরাসরি ভেন্টিলেশনে। অক্সিজেনও বাচ্চা নিতে পারছে না। মাত্র আধা ঘন্টার ব্যবধানে পুরো পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। স্কয়ার হাসপাতালের মত হাসপাতালের ডাক্তারদের কপালেও চিন্তার ভাজ। নানা টেস্ট করা শুরু হয়। বিভিন্ন পরিক্ষার পর ডাক্তাররা ফুসফসের এমন একটি রোগের আশংকা করেন, যেটা বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত রেয়ার এবং এর কোন চিকিৎসা নেই। মৃত্যুই একমাত্র অপেক্ষা।
একবার কল্পনা করুন বাচ্চার বাবা মার মনের অবস্থা। ১৩ বছর পর সন্তান। সম্পুর্ন সুস্থ ভুমিষ্টের পর বাচ্চা এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। ছোট মেয়েটাকে একবারের জন্যও মা এখনো কোলে নিয়ে আদর করতে পারে নি। বাবা পারেন নি একটু ছুয়ে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে একেকজনের বেহুশ হবার দশা।
প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব। একজন আল্লাহর ওলী। বাচ্চার বাবার একজন নিকটতম আত্মীয় এই আল্লাহর ওলীর কাছে পরামর্শ চাইলেন এখন কী করা যায়। কী এমন আমল আছে,যা করলে আল্লাহ বাচ্চাটাকে সুস্থ করে দিবেন!
প্রফেসর সাহেব জানালেন তিনি নিজে আসবেন হাসপাতালে। সত্তোর্ধ বৃদ্ধ, দুজনের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না। বয়সের কারনে তার কথা ভাল বোঝা যায় না। তিনি এসে মেয়ের বাবাকে ঠিক নীচের কথাগুলো বললেন,
“তাজা ওজু করে দু’রাকাত নামাজ পরেন। এরপর আল্লাহর সাথে কথা বলেন। আল্লাহকে বলেন, আল্লাহ আমার মেয়েটাকে ভাল করে দেন।”
আর্মি পারসন মেয়ের বাবা। বাহ্যিক ভাবে যতই শক্ত মনে হোক তাকে, ভেতরে অত্যন্ত নরম মনের মানুষ তিনি। প্রফেসর সাহেবের কথাটি তিনি পুরোপুরি আমলে নিলেন।
শুরু হলো দুআ কান্নাকাটি। এতক্ষন কান্না ছিল নিজেদের ভেতর, দুঃখ কষ্ট আর হতাশার। এখনকার কান্নাগুলো পৌছে যাচ্ছে সরাসরি মাবুদের কাছে। সেই সাথে চলছে সদকা, দান।
মেয়ের দাদী এক ভদ্রলোককে এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন সৌদি থেকে অলংকার আনার জন্য। তিনি বলে দিলেন, কিছু লাগবে না। পুরো টাকা হারামের গরীব লোকজনের মাঝে সদাকাহ করে দিতে।
এদিকে বাচ্চার অবস্থা যায় যায়। ডাক্তাররা জানিয়ে দিলেন, যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে। হয়তো আজকের রাতটাও নাও থাকতে পারে। ফুসফুসের সমস্যার পাশাপাশি তারা ব্লাডে ইনফেকশন এবং হার্টে ছিদ্রও পেয়েছেন। সামান্য সময়ের জন্য ভেন্টিলেশন খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাচ্চা অক্সিজেনের অভাবে কষ্টে লাফাতে শুরু করে। সাথে সাথে আবার ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেয়া হয়।
বাচ্চার বাবা আশা হারান না। প্রফেসর সাহেবরে সেই ছোট কথা “আপনি আপনার আল্লাহর সাথে কথা বলেন।”
তিনি কথা চালিয়ে যান। পার হয়ে যায় এভাবেই প্রায় এক সপ্তাহ।
গত পরশুর আগের দিন। সুখবর আসার মুহর্ত। ডাক্তাররা জানান তারা আজকের পরিক্ষায় বাচ্চার হার্টে ছিদ্র আর পাননি। এটা মিশে গিয়েছে। কিছুক্ষন পর তারা জানান, ব্লাডের যে ইনফেকশনটা ছিল, সেটাও কমে আসছে। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা? যেটার কোন চিকিৎসা নেই, সেটার কী হবে?
বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে যারা সবচেয়ে নাম করেছেন, এরকম একজন কার্ডিওলজিস্ট আসলেন। আর্মির ব্রিগেডিয়ার তিনি। আজকের রিপোর্ট দেখে তিনি বলছেন, বাচ্চার ফুসফুসে এই মুহুর্তে কিছু শ্যাডো দেখা যাচ্ছে, যেটা কফের কারনে হতে পারে এবং কিউরেবল।
এটা কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না যে, এতগুলো বাঘাবাঘা ডাক্তার এক্সরে ইসিজি সহ এত শত টেস্ট করে ফুসফুসের শ্যাডো যে কফের কারনে, এটা ধরতে পারেন নি। বরং এখানে অবশ্যই কুদরতের কারিশমা আছে, যা বান্দার সম্পুর্ন ক্যালকুলেশনের বাইরের বিষয়।
আজ সকালে মক্কার একটি রেস্টুরেন্টে আমরা যখন নাস্তা করছিলাম, শেষ খবর পেলাম, বাচ্চার ভেন্টিলেশন কাল খুলে নেয়া হয়েছে। খুব অল্প অক্সিজেন লাগছে এখন, দুএকদিনের ভেতর সেটারও আর প্রয়োজন হবে না,ইন শা আল্লাহ।
দুআ আর সদকা কী করতে পারে, একজন দুর্বল বান্দার জন্য যখন তার মাবুদ যথেষ্ট হয়ে যান, কীসের থেকে কী ঘটে যেতে পারে, তার চাক্ষুস প্রমান এই ঘটনা। নিশ্চয়ই আমার রব যদি অপ্রত্যাশিত ভাবে বিপদে ফেলতে পারেন, তিনি কল্পনাতীত ভাবে সেখান থেকে উদ্ধারও করতে পারেন।
নিশ্চয়ই তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। সর্বাবস্থায়, সর্বক্ষেত্রে।
**-** **রিজওয়ানুল কবির **