21/01/2017
আমি এবং সে, পর্ব- ১৪
শামীমের মনটা একদম খারাপ হয়ে গেলো, মনে পড়লো সেই ভয়াল দৃশ্য। বাবার বাৎসরিক ছুটিতে শাহনাজ এর পরিবারসহ ঢাকায় এসেছিলো শাহনাজদের বড় মাইক্রোবাসে চড়ে। অনেক ঘোরাঘুরি করলো, প্রচুর মার্কেটিং করলো আর সিনেমা দেখলো সবাই। হোটেলে থাকা খাওয়া, আর শাহনাজের সাথে হাত ধরে লবিতে ঘুরে বেড়ানো এবং প্রেম প্রেম খেলা, আহ সে কি যে আনন্দ, কতই না মধুর। শাহনাজ শামীমের হাত ধরে বলতো, ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি, কতো ভালোবাসি জানো? শামীম বলতো কতো ভালোবাসো? শাহনাজ বলতো এই যে এত ভালোবাসি বলেই দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে উত্তর দিতো নীল আকাশ এর মতো ভালোবাসি, নীল আকাশের যেমন কোন সীমানা নেই তেমনি আমারও ভালোবাসার কোন সীমানা নেই। শামীম মনে মনে ভাবতো এত সুন্দর সুন্দর কথা শাহনাজের আসে কোথা থেকে, তার নিজের মুখ থেকে থেকে কিছুই বের হতো না।
আজকে শেষ দিন থাকা ঢাকায়, কাল ভোরে রওনা দিবে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে তাই সবাই ব্যস্ত গোছগাছ নিয়ে। হটাৎ শাহনাজ এসে শামীমকে বললো ভাইয়া চলো একটা দারুন যায়গা তোমাকে দেখিয়ে আনি।
শামীম- কোথায়?
শাহনাজ- লালবাগের কেল্লা।
শামীম- কিভাবে যাবো?
শাহনাজ- রিক্সায় যাবো, ২০ টাকা ভাড়া। আমি বাবার পকেট থেকে ১০০ টাকা চুরি করেছি। চলো জলদি।
শাহনাজ আর শামীম নামলো রিক্সা থেকে লালবাগের কেল্লায়। দুপুরবেলা কড়া রোদ, কেল্লার ভিতর মানুষজন নেই। সাধারণত দুপুরে কেউ এখানে আসে না। মনের আনন্দে দুজনে হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। শামীম লক্ষ্য করলো আজকে শাহনাজকে একটু অন্যরকম লাগছে। কেন যেনো ছটফট করছে। বার বার বলছে ভাইয়া তুমি কথা দাও আমাকে ছেড়ে কখনও কোথাও যাবে না, আমার হাত ঠিক এভাবেই শক্ত করে ধরে রাখবে। শামীম বললো, ঠিক কথা দিলাম। কিন্তু শামীম তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারে নাই। কথা বলতে বলতে তারা কেল্লার সেই ইতিহাস বিখ্যাত সুরঙে উপস্থিত হলো।
শাহনাজ- এটা কি জানো?
শামীম- জানি, বইতে পরেছি, আজকে প্রথম দেখলাম।
শাহনাজ- দেখো, ডানদিকে একটা গলি আর বাম দিকে একটা গলি মধ্যে যেই বড় গলিটা দেখছো সেটা দিয়েই মনে হয় মোঘল সৈন্যরা সবাই যাতায়াত করতো। শুনেছি ঘোড়ার পিঠে চড়ে নাকি যেতো, চলো আমরা হেটে হেটে যাবো।
শামীম- চলো ভিতরে ঢুকে দেখি।
শাহনাজ- সাইনবোর্ডের লেখা দেখছো না, ভিতরে যাওয়া সম্পূর্ন নিষেধ। তবে যাওয়া যায় ভাইয়া কারণ আসে পাশে কেউ দেখার লোক নেই। ঐ যে দুরে একটা গার্ড আছে কিন্তু ঘুমাচ্ছে। চলো।
শামীম- আমি আগে নামি, তারপর তুমি আমার হাত ধরে নামো।
ভিতরে নামলো দু'জন। অসম্ভব গন্ধ, পেশাব পায়খানার গন্ধ পাচ্ছে। শাহনাজ নাকে ওড়না পেঁচিয়ে শামীমের হাত শক্ত করে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যের বড় গলিটা দিয়ে। ডান দিক এবং বাম দিকের গলি দুটো মোটা রড দিয়ে মুখ বন্ধ করা। শাহনাজ খুব দ্রুত ভিতরের দিকে যাচ্ছে। শামীম তাল মিলাতে পারছে না। অন্ধকার পথ আর তীব্র গন্ধে শামীম দিশেহারা। শামীমের জুতোর নীচে নরম কি যেনো লাগলো এবং শামীম স্লিপ কেটে পড়ে গেলো। শাহনাজের হাত ছুটে গেলো, শাহনাজ চিৎকার দিয়ে বলছে, ভাইয়া হাত ধরো, প্লিজ হাতটা ধরো, ভাইয়া তুমি কোথায়, ভাইয়া ভাইয়া, শাহনাজের কথাগুলো আস্তে আস্তে দুরে মিলিয়ে গেলো। মনে হলো শাহনাজ অন্ধকারে দৌড়ে ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে। শামীম কিছুই বলতে পারছে না, পড়ে যেয়ে কোমরে ব্যথার চোটে কিছুই বলতে পারলো না। একসময় আর কোন শব্দ পেলো না। শামীম ভয়ে, তীব্র গন্ধ এবং ব্যথার যন্ত্রনায় জ্ঞান হারালো।... চলবে।