13/02/2024
অনলাইন রিলেশনশিপ --- ১ ম পর্ব
এটা কোনো গল্প না। এটা সত্য ঘটনা। প্রথম বার লিখছি ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সময়টা ছিলো ২০২০। পৃথিবী থমকে গিয়েছিল করোনা ভাইরাস এর এক ভয়াল থাবায়। পৃথিবীর সাথে সাথে সকল কিছুই থমকে গিয়েছিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সকল কর্মক্ষেত্রো। বসে বসে অলস সময় কাটছিলো তখন। তখন সময় কাটানোর জন্য মোবাইল ফোনে ফেইবুকিং করাটা ছিলো অন্যতম উপায়। আমি তখন ডিপ্লোমা ইন ইন্জিনিয়ারিং এর মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এ অধ্যায়নরত ছিলাম। তো আমারও সময়টা ফেইসবুকিং করে কাটিয়ে দিতাম। একদিন হটাৎ করে আমার এক ফেইসবুক ফ্রেন্ড আমাকে একটা লাভ স্টোরির লিংক সেয়ার করল
আমি খুব আগ্রহের সাথে গল্প টা পরলাম তখন থেকে গল্প পরা শুরু হলো। একদিন গল্প পরার জন্য আলাদা একটা আইডি খুলে নিলাম। আইডির নাম দিলাম অবহেলিত মানব। সময়টা বেশ ভালো কাটছিলো গল্প পরে পরে। দেখতে দেখতে অনেক টা সময় কেটে গেলো কুরবানির ঈদ চলে আসলো। সময়টা ছিলো ঈদের পরের দিন ২ আগস্ট। হটাৎ করে অচেনা একটা ফেইসবুক আইডি থেকে রিকুয়েষ্ট আসলো। আইডিটা একটা অপরিচিতা মেয়ের ছিলো। আর আমার এই আইডি টা যেহেতু প্রোফেশনাল না তাই কোনকিছু না ভেবেই ঐ ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে নিলাম। আর ঘটনা টা ঠিক এখান থেকেই শুরু। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার ৫ মিনিট পর ঐ আইডি থেকে মেসেজ আসলো
(ও হ্যা ঐ আইডির মেয়ের নাম ছিলো নুসরাত আর আমার আইডির নামেই নিজেকে তুলে ধরছি )
নুসরাত : hi
অবহেলিত :hi
নুসরাত: আপনার নামটা কি জানতে পারি
অবহেলিত: আপনি কি আমাকে চিনেন বা কখনো দেখেছেন।
নুসরাত : না
অবহেলিত : তাহলে অপরিচিত একটা ছেলেকে মেসেজ দিচ্ছে যে।আপনার মতলব কি?
নুসরাত : মানে 😡
অবহেলিত :কিছু না এমনি
নুসরাত : ও ভালো
অবহেলিত : আমার নাম রাব্বি
নুসরাত : আমি নুসরাত মিম
অবহেলিত : ভালো
নুসরাত : আপনার একটা পিক দেন তো
অবহেলিত : আমার পিক দিয়ে কি করবেন
নুসরাত: দিতে বলছি দিবেন
অবহেলিত : আচ্ছা দিতে পারি তবে আপনারটাও দিতে হবে
এভাবে তাদের অনেক কথা হলো। দুজন দুজনের পিক দেখলো।তাদের পরিবার, ঠিকানা সব কিছু সম্পর্কে তারা জেনে নিলো। ছেলেটি একটু বেশি সহজ সরল ছিলো। যাকে এই সমাজের মানুষ বোকা/ বলদ বলে। অপরদিকে মেয়েটা ছিলো খুবই চালাক।
আর ছেলেটা আগে কখনো তেমন কোনো মেয়ের সাথে তেমন কথা বলতো না।
কারন কোনো মেয়েদের সমনে দারাতে খুব ভয় পেত। হার্টবিট বেরে যেতো। কথা বলতে গেলে তুতলিয়ে যেত। খুব প্রয়োজন ছারা কারোর সাথে বেশি কথা বলতো না ছেলেটি।
ছেলেটির বন্ধ ছিলো ঐ স্কুল কলেজ পর্যন্তই। এর বাইরে তেমন কারোর সাথে মিসতো না।সারাদিন বাসয়ই থাকতো। মায়ের কথায় উঠতো বসতো।
কথার একদম সহয সরল।
আচ্ছা গল্পে ফেরা যাক আপনারা গল্পটা পরতে থাকেন এমনিতেই সব জানতে পরাবেন। ছেলেটা আর মেয়েটা চ্যটিং করতে করতে সারাটা দিন অতিবাহিত করে দিলো।
এদিকে ছেলেটা প্রথম কোনো মেয়ের সাথে চ্যটিং করছে ছেলেটা অনেকটা এক্সাইটেড ছিলো আর মেয়েটার সাথে কথা বলতে অনেক বেশি ভালো লাগছিলো ছেলেটার। সন্ধার পর ছেলেটা তার মায়ের কথায় পরতে বসে তখন মেয়েটা মেসজ পাঠায়
নুসরাত : এই কি করেন
অবহেলিত : এইতো পরার টেবিলে বসে আছি
নুসরাত : এহহহ
অবহেলিত : হুম
নুসরাত : আমার বিশ্বাস হয় না। আজকে ঈদের পরের দিন আর কেউ আজকে পরতে বসছে।
অবহেলিত : আচ্ছা বাদ দিন। নাস্তা করছেন
নুসরাত : হ্যা। আপনি
অবহেলিত : হুম। আচ্ছা এখন অফলাইনে যেতে হবে। আম্মু চিল্লাচিল্লি করছে ফোন নিয়ে বসে আছি তাই
নুসরাত : আচ্ছা good night
অবহেলিত : ফজরের নামাজ পড়ে নিয়েন
good Night
এভাবে প্রথম দিনের মতো তাদের এভাবে দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেলো। কিন্তু ছেলেটা একয় দিনে মেয়েটার প্রতি একটু দুর্বল হয়ে যায়।
একদিন ছেলেটা মেয়েটিকে বলে আচ্ছা আমরাতো এখন ভালো বন্ধু। তাহলে আপনার ফেইজ হাইট করা পিক ছাড়া অন্য একটা পিক দেন।
মেয়েটা বলে
নুসরাত : কেন পিক দিয়ে কি হবে? আর ঐ দিন তো দিলামই
অবহেলিত : আরে ঐটাতে তো হাত দিয়ে আপনার মুখ ঢেকে রাখা।আর আমি আপনাকে আমার আসল পিক দিয়ে দিলাম।😔😔
নুসরাত : আপনি তো গাধা একটা
অবহেলিত : মানে কি
নুসরাত : আপনার সাথে কথা বলতে বলতে বুঝতে পারলাম আপনি খুবই সরল একটা মানুষ।
অবহেলিত : ঢপ দিচ্ছেন।
নুসরাত : আমি কাওকে ঢপ দেইনা।
অবহেলিত : আপনি পিক দিবেন কি না বলেন।
নুসরাত : পিক দিয়ে কি করবেন।
অবহেলিত : দেখি ক্রাশ খাওয়া যায় কি না।
নুসরাত : বন্ধুত্বের মাঝে এসব ক্রাশ খাওয়া আসছে কোথা থেকে।
অবহেলিত :দেখেন কোথায় যেন পরেছিলাম একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পরারে না।তারা কখনো না কখনো প্রেমে পরবেই।হয়তো কম সময়ের জন্য হলেও প্রেমে পরবেই।
নুসরাত : আসলে সব ছেলেরাই এক
মেয়েরা একটু কথা বললেই উল্টো পাল্টা ভেবে বসে থাকে।
আরনার সাথে আর কথাই বলবো না। এখনই ব্লক করে দিচ্ছি
অবহেলিত : এই প্লিজ না। আর কখনো এসব বলবো না
নুসরাত : চুপ আছে কোনো রিপ্লাই দিলো না
অবহেলিত : আচ্ছা সরি বলছি তো। আর কখনো পিক চাইবো না।আর এসব বলবো না।
নুসরাত : নিশ্চুপ
অবহেলিত : আমি আমাদের বন্ধুত্বটা রাখতে চাই।
নুসরাত মেসেজ সিন না করেই অফলাইনে চলে গেলো।
এদিকে ছেলেটা বসে বসে ভাবছে এ কয়দিনে মেয়েটার প্রতি কেমন যেন দূর্বল হয়ে গেছি। ওকে যেভাবেই হোক প্রেমে ফেলতেই হবে।তারপর থেকে থেকে ছেলেটা ঠিক করলো বন্ধু হিসেবে কথা বলবো আর ওকে প্রচুর সময় দিবো তাহলে ও হয়তো একটু হলেও আমার প্রতি দূর্বল হয়ে যাবে। এর পর থেকে ছেলেটা অনেক বেশি সময় দিচ্ছে মেয়েটাকে। আর অনেক বেশি কেয়ার নিচ্ছে।কিন্তু মনের কথা টা কখনো মেয়েটাকে বলছে না।হারিয়ে ফেলার ভয়ে
এভাবে আর কয়েটা দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো।একদিন সকালে ছেলেটা দেখলো মেয়েটা অনলাইনে আসে নাই আর good morning ও বলে নাই। ছেলেটা মেসেজ দিলো কিন্তু মেসেজ টা সিন হলো না।
এভাবে যতো সময় যাচ্ছে ছেলেটা তত অস্থির হয়ে যাচ্ছে। খেলার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হার্ট বিট অনেক বেরে গেলে ছেলেটা ভাবছে তাকে কি হারিয়ে ফেললাম। নাকি তার কোনো বিপদ হলো।এদিকে ছেলেটা মেয়েটার ফোন নম্বর ও নেয় নাই যে কল দিবে।এদিকে দুপুর গরিয়ে বিকেল হলো ছেলেটা শুয়ে শুয়ে কান্না করতে লাগলো আর প্রতি ১০ মিনিট পর পর একটা করে মেসেজ দিতে লাগলো এভাবে রাত হয়ে গেলো ছেলেটা খুব হতাশ হয়ে ফোন চার্জে বসিয়ে ডাটা অফ করতে যাবে তখনই টং করে একটা নোটিফিকেশনে আসলো
নুসরাত : সরি
ছেলের যেন দেহে প্রান ফিরে এলো।ছেলেটার অজান্তে মুখের কোনে হাসি ফুটলো।
কি আজব একটা বিষয় চোখের কোনে পানি আর ঠোঁটের কোনে হাসি। একেই হয়তো ভালোবাসা বলে এক নিমিষেই সব কিছু শেষ আবার এক নিমিষেই সব কালো অন্ধকার কাটিয়ে মুখের কোনে হাসি।প্রিয় মানুষটির একটু উপস্থিতি আমাদের পৃথিবীটা রাঙ্গিয়ে দেয়।
নুসরাত : আসলে আজকে আমাদের পাশের বাসার ভাবির পিচ্চি টার বার্থডে ছিলো। ৪ বছর এ পরলো পিচ্চি টার বয়স ওখানে তাদের সাথে আমার পরিবারসহ ছিলাম ফোনটা রুমে ফেলে রেখে গেছি
অবহেলিত: 019********** এটা আমার নম্বর
নুসরাত : ও ভালো
অবহেলিত : নম্বর টা সেইভ করে রাখো
নুসরাত : আচ্ছা
এদিকে তার নম্বর টা চাওয়ার সাহস করে উঠতে পারল না ছেলেটি
অবহেলিত: আচ্ছা তোমার বাবা কি করে
নুসরাত : আমার বাবা পুলিশের ইন্সপেক্টর
অবহেলিত : ও ভালো। আর আমার বাবা
দোকানি।আমাদের কাপরের দোকান
নুসরাত :ও ভালো
অবহেলিত : তোমার আম্মু কি করে
নুসরাত : উনি একটা প্রাইমারি স্কুলের হেড টিচার।
অবহেলিত : ও ভালো।
এখানে মেয়েটি খুব কম কথা বলে।সব সময় চুপ করে থাকে। ছেলেটি যা প্রশ্ন করে ঠিক তার উত্তর দেয়। এর বেশি কিছু বলে না মেয়েটি। ছেলেটি নিজে থেকেই সব কিছু বলে দেয়। মেয়েটির বাড়ি ছিলো নোয়াখালী আর ছেলেটি তার পরিবার এর সাথে বরিশাল থাকতো।মেয়েটি ইন্টার ফাস্ট ইয়ার এ ভর্তি হয়েছে মাত্র।
এভাবে কথা বলতে বলতে কেটে গেল একটি সপ্তাহ ছেলেটা মেয়েটিকে বললো একটি বার তোমার পিক দাও তোমাকে দেখবো। মেয়েটি একটা পিক দিলো বোরখা ও হিজাব পরা। পিকটা সেন্ড করে সাথে সাথে রিমুভ করে দিলো মেয়েটা। এদিকে পিকটা দেখে আমার মোটামুটি ভালো লাগলো।মোটামুটি ভালো লাগার কারন ঐযে ফেইস হাইট করা পিক দেখে যেমন একটা ছবি একে ছিলাম মনের ভিতর তার সাথে তেমন কোনো মিল নেই।
তবুও মেয়েটা যেমনই দেখতে হোক না কেন চেহারায় কি আসে যায়। সুন্দর একটা মন হলেই তো হলো।কিন্তু ঐ পিকে মেয়ে দেখতে অনেক সুন্দরী হলেও ছেলেটা তো মনে মনো অন্য ছবি একেছিলো। পরের দিন সকাল বেলা হটাৎ করে দেখি মেয়েটা আমাকে ব্লক করছে
আমার পৃথিবী টা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তখনই ফোন দিলো৷ মেয়েটা বললো তার বড় ভাইয়া নাকি তার ফোন নিয়েছিলো সে নাকি আমাকে ব্লক করছে
আমি বললাম আনব্লক করো নুসরাত বললো সে পারে না
আমি বললাম আচ্ছা আমার নম্বর এ ইমো খোলা আছে আমেকে মেসেজ করো আমি স্কিন সর্ট নিয়ে দেখাচ্ছি কিভাবে আনব্লক করতে হয়।তারপর ইমোতে আমি স্কিন সর্ট নেওয়া ফোল্ডার টা পাঠিয়ে দিলাম ভুল করে। সে ঐ সকল স্কিন সর্ট এর মাঝে তার নিজের দেওয়া পিক এর স্কিন সর্ট দেখতে পেয়ে অনেকটা রেগে গেলো আর আমার মেসেজ এর রিপ্লাই দেওয়া বন্ধ করে দিলো। আমি অনেক বার ক্ষমা চাইলাম কিন্তু তার ঐ একটাই কথা। আসলে তোমাকে সহজ সরল ভেবে অনেক টা বেশি বিশ্বাস করেছি।কিন্তু আমি ভুলছিলাম। ভালো থাকো। এটা বলে সে অফলাইনে চলে গেলো। .......চলবে