23/10/2019
আমাদের আহলে সুন্নাতের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়া হয়, কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ হাদীস বলা হয় না বিধায় পুরো বিষয়টার অন্তনিহিত গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারি না। তেমনি প্রিয়নবীর একটি হাদীস যেটা পূর্ণ বলা হয় না আংশিক বলা হয় “তোমরা আমার সাহাবীদের কাউকে গালি দিবে না”। পুরো হাদীসটা কেউ বলেন না। আজকে আমরা পূর্ণ হাদীসটা তুলে ধরছি যাতে অন্তনিহিত গুরুত্ব বুঝতে পারি।
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي، سَعِيدٍ قَالَ كَانَ بَيْنَ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ وَبَيْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ شَىْءٌ فَسَبَّهُ خَالِدٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَسُبُّوا أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِي فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَوْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ " .
উসমান ইবন আবু শায়বা (রহঃ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার খালিদ ইবন ওয়ালীদ ও আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর মধ্যে (অপ্রীতিকর) কিছু একটা ঘটেলছিল। তখন খালিদ (রাঃ) তাকে গালি দেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমার সাহাবীদের কাউকে গালি দিবে না। কেননা, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলেও তাঁদের এক মুদ কিংবা অর্ধ মুদের সমান হবে না। (সহীহ মুসলিম)
এইখানে সারমর্ম হল কোন এক কারণে হযরত খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রাঃ) এবং হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর মধ্যে তর্ক, কথা কাটাকাটি হল এবং খালিদ ইবন ওয়ালীদ হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) কে কটু বাক্য বা কোন গালি দিয়ে বসেন। সেই সময়ে আল্লাহর রাসূল হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর পক্ষ নিয়ে খালিদ ইবন ওয়ালীদকে তিরস্কার দিয়ে বললেন যে “তোমরা আমার সাহাবীদের কাউকে গালি দিবে না”।
এখন প্রশ্ন হল হযরত খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রাঃ) কি সাহাবী নন?
○তিনিই তো সেই মহান ব্যাক্তিত্ব যাকে সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তলোয়ার) উপাধি দেওয়া হয়েছে
○আজীবন অপরাজিত ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি
○খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে মুতার যুদ্ধে বাইজেন্টাইন মুসলমানদের দখলে আসে। রোমানদের বিপক্ষে এটি মুসলিমদের প্রথম লড়াই ছিল। এই যুদ্ধের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে খালিদের নয়টি তলোয়ার ভেঙে গিয়েছিল।
এখানে কিন্তু বিবাদমান দুইজনই সাহাবী
কিন্তু এই সময়ে আল্লাহর রাসূল হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর পক্ষ না নিয়ে হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর পক্ষ নিয়ে তাকে সাহাবী বললেন।
আমাদের অনেকের কাছে হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এই নাম খুব পরিচিত নাও হতে পারে।
হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) কে তিনি
○প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করে যাঁরা 'সাবেকিনে আওয়ালীন'-এর অন্তভূক্ত
○আল্লাহর রাসূলের সাথে বদর, উহুদ, খন্দক, হুনাইনের যুদ্ধ অংশ নেন
○দুমাতুল জানদালে অভিযানে আব্দুর রহমান ইবনে আউফকে আমির নিযুক্ত করা হয় এবং আল্লাহর রাসুল নিজ হাতে তাঁকে পাগড়ি পরিয়ে দেন।
○হজরত উসমানের পর সাহাবাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
○শুধু তাই নয় একমাত্র এমন ব্যাক্তি যার পিছনে একবার ইকতেদা করে আল্লাহর রাসুল নামাজ আদায় করেন।
মোটকথা এতসব ফযীলতের মধ্যে প্রধান যেটা সেটা হল ইসলামের Crisis time তথা Primary stage যখন হাতে গোণা কিছু মুসলমান ছিলেন সেই হাতে গোণার একজন ছিলেন হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ)। যখন সুবিধাজন সময় থাকে তখন স্বাভাবিক ভাবে আপনার পাশে অনেক সহযোগী থাকবে, প্রকৃত সহযোগী তো তারাই যারা আপনার বিপদের সময় আপনার পাশে থাকবে।
যেমন আমাদের প্রিয়নবী অনেক স্ত্রী ছিল, সকলই আমাদের মা তথা উম্মাহাতুল মুমিনীন, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ফযীলত কার জানেন???
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ) এর, কারণ সেই ইসলামের Crisis time তথা Primary stage প্রিয়নবীর পাশে যেই এক রমণী ছিলেন তিনিই তো খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ)। যতদিন খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ) জীবিত ছিলেন আল্লাহর রাসুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন নাই, কারণ তিনি একাই একশ ছিলেন।
একইভাবে সকল সাহাবীরাও সম মাকামের ছিলেন না। বিশেষ করে হিজরতের পূর্বে যারা মুসলমান হয়েছেন তাদের মর্যাদা এবং যারা হিজরতের পর মুসলমান হয়েছেন কোনভাবেই এক না। বিশেষ করে হুদাইবিয়ার সন্ধি থেকে মুসলমানদের সুদিন শুরু হয়ে যায়। তখন থেকে ধীরে ধীরে মক্কার মুশরিকরা মুসলমান হওয়া শুরু করে, মক্কা বিজয়ের পর তো মক্কার আবাল বৃদ্ধ বণিতা যারা যারা আজীবন ইসলাম ও প্রিয়নবীর বিরোধিতা করে তারাও মুসলমান হয়ে যায়। যেহতেু তখনও প্রিয়নবী জীবিত ছিলেন তাদের ভাগ্যে প্রিয়নবীর দীদারও লাভ হয় এবং মাকামে সাহাবীয়াতেও চলে আসেন তারা। কিন্তু এরা কখনই সেই সাহাবীদের সমমর্যাদায় যেতে পারবেন না যারা মক্কায় হিজরতের পূর্বে মুসলমান হয়েছেন, কাফিরদের মার যুলম অপমান সহ্য করেছেন , বদর উহূদ খন্দকের মতো অসম যুদ্ধে প্রিয়নবীর সাথে ছিলেন তাদের মর্যদায় যেতে পারবেন না।
তাই যখন কোন এক কারণে হযরত খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রাঃ) এবং হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) এর মধ্যে তর্ক, কথা কাটাকাটি হল বিষয়টি রাসুলে করীম (সা.) অবগত হয়ে হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে ডেকে সাংঘাতিকভাবে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, 'সাবেকিনে আওয়ালীন' একজন সাহাবির সঙ্গে এভাবে তর্ক ও ঝগড়া করা তোমার জন্য শোভনীয় নয়। আল্লাহর শপথ তুমি যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণের মালিক হয়ে যাও এবং তার সম্পূর্ণটা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দাও, তাহলেও তুমি আমার ওই সব সাহাবির কারো সমকক্ষ হতে পারবে না।'
আশারায়ে মুবাশশারাহ তথা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবী, এরা কিন্তু প্রত্যেকেই মক্কী জীবনেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন, ইসলামের প্রাথমিক দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন।
আল্লাহপাক আমাদের দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করুক, আমীন।