02/12/2022
পাশ দিয়ে ট্রেন চলে যাচ্ছে।
বাসার ছাদে
দাঁড়িয়ে আছে রোদ।কিন্তু সে
ট্রেনের
কোনও শব্দ অনুভব করছে না।সে
ভেবে
যাচ্ছে নিজেকে নিয়ে।
নিজের জীবন কে
নিয়ে।পরিবার কে নিয়ে।এসব
ভাবার
কারনে বাইরের কিছুই সে অনুভব
করতে
পারছে না।ইচ্ছে করছে ছাদ
থেকে লাফ
দিয়ে সুইসাইড করতে।কিন্তু
সেটা কি
সম্ভব?বেঁচে থেকেই বা কি হবে?
ইচ্ছের
তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।দুই দিন
পরই তার
বিয়ে। কিন্তু রোদের কোনও
উপায়
নেই।না পারবে এই বিয়েটা
আটকাতে সে
আর না পারবে নিজেই বিয়ে
করতে।
-এই ভাইয়া , শুনিস না কেন?
খেতে
আয়।
হঠাৎ করে মেঘ এসে জোরে
ধাক্কা দিয়ে
বলে রোদ কে।
মেঘ রোদ এর একমাত্র বোন।এই
দুনিয়ায় রোদ এর মেঘ আর আম্মু
ছাড়া
কেউ নেই।হ্যাঁ, ইচ্ছে নামের
মেয়েটি
হয়ত ছিল তার কেউ একজন,বাট
সেও
অন্য জনের হয়ে যাচ্ছে।
-কই ডাকলি তুই?
-এই যে অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি।
কিন্তু
তুমি শুনতেই পাচ্ছ না ভাইয়া।কি
হয়েছে
তোমার?
-কই, কিছু না তো। তুই যা, আমি
আসছি।
না, রোদের সুইসাইড করা যাবে
না।সে
ছাড়া তো তার মা আর বোনের
কেউ
নেই।সে চলে গেলে মা বোনকে
কে
দেখবে?মেঘকে পড়ালেখা শেষ
করাতে
হবে, ভালো ছেলে দেখে তার
বিয়ে দিতে
হবে।অনেক কাজ যে রোদের
বাকি
আছে।।কিন্তু ইচ্ছেকে ছাড়া
রোদ
বাঁচবে কিভাবে?সে তো ইচ্ছে
কে নিজের
জীবনের চেয়েও বেশি
ভালোবাসে।
রোদ আর ইচ্ছের পরিচয় ভার্সিটি
র
প্রথম দিনেই।প্রথম দেখাতেই
রোদকে
ভালো লেগে যায় ইচ্ছের ।সেই
থেকে
ফ্রেন্ডশিপ তারপর প্রেম।রোদ
প্রথম
দিকে এ রিলেশনে যেতে চায়
নি।কারন
রোদ জানত এটা সম্ভব না।কিন্তু
ইচ্ছের ভালোবাসার সামনে
তা বেশি
দিন টিকে নি।অবশেষে
ভালোবেসে ফেলে
ইচ্ছে কে।
আসলে রোদ এর মত ছেলেদের জন্য
ভালোবাসা নয়।যাদের ঘরে
বাবা
নেই,এমন কি বাবা তেমন বেশি
সম্পদ
ও রেখে যায় নি, তারা
ভালোবাসার কথা
ভাবতেই পারে না।তাদের
পরিবার কে
চালাতে হয়।মা বোনকে দেখে
রাখতে
হয়।বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করে
যেতে
হয়।
রোদের ফোনে একটা টেক্সট
আসলো
ইচ্ছের।
"ভালো থেকো রোদ।আমি
বুঝেছি তুমি
আমাকে একটুও ভালোবাসো নি।
সব
অভিনয় ছিল তোমার।আমি
তোমাকে
কোনও দিন ক্ষমা করবো না।"
রোদের চোখ দিয়ে কয়েক
ফোঁটা অশ্রু
ঝরে পড়লো।হয়ত তা কেউ
দেখলো না।
বুঝতে পারবে না ইচ্ছে কোন
দিন।
ইচ্ছে বিয়ের খবর শোনার পর রোদ
কে
সব বলে।ইচ্ছে চায় রোদ যেন
তাকে
নিয়ে পালিয়ে যায়।কিন্তু রোদ
তা চায়
নি।ইচ্ছেরা অনেক বড়লোক।
ইচ্ছের
বাবা কোনও মতেই রোদের
সাথে বিয়ে
দিবে না । হয়ত বিয়ে দিত যদি
রোদ
কোন জবে থাকতো।কিন্তু সে
বেকার।
রোদ একদিন ভালো অবস্থায়
যাবে,তবে
এত দিন কোন মা বাবাই তার
মেয়েকে
রাখবে না।তাই পালানো
ছাড়া ইচ্ছের
কোন উপায় ছিল না।
রোদ ইচ্ছেকে বলে সে যেন তার
বাবা
মার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে
করে ফেলে।
তাতেই সে হ্যাপি হবে।রোদকে
যেন ভুলে
যায়।কথা গুলো শোনার পর ইচ্ছে
কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।
একবারও
পিছনে তাকায়নি।যদি তাকাত
তবে
হয়ত অনেক কিছু দেখতে পেত।।
ভালোবাসা রোদদের মত
ছেলেদের জন্য
নয়।হয়ত পালিয়ে যেতে পারতো
কিন্তু
তাতে কেউ সুখী হত না।প্রচন্ড
অর্থবিত্তের মাঝে বেড়ে ওঠা
একটা
মেয়ে রোদের কাছে ভালো
থাকতো না।
কারন রোদের তেমন টাকা পয়সা
নেই।
হয়ত একদিন সব ই হবে, ,,তখন ইচ্ছে
থাকবে না।রোদের বিয়ের কথা
ভাবতে
অনেক দেরি আছে।টিউশনি করে
মা
বোন নিয়ে বেঁচে থাকা যায়।
তবে বউ
নিয়ে না।।
হয়ত রোদ ইচ্ছেকে বিয়ে করতে
পারতো।যদি তারা সমবয়সী না
হত।
ধীরে ধীরে কালো মেঘে
ঢেকে যাচ্ছে চাঁদ
টা।ট্রেন একটার পর আরেকটা
আসছে।
দাঁড়িয়ে আছে রোদ।।অনেক
গুলো ট্রেন
চলে গেল।রোদ দাঁড়িয়েই আছে।
হয়ত
সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকবে,,,,
(সংগৃহীত)