KBA Creations

KBA Creations Offtrack story writer
(5)

একটা ছাগল ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবার কথা ছিল....১) ছাগলটা যে ছেলে কিনতে চেয়েছিলো সে নাকি ফ্যামিলি নিয়ে দেশ ছেড়েছে।২) ছাগল ...
01/07/2024

একটা ছাগল ১৫ লাখ টাকায়
বিক্রি হবার কথা ছিল....

১) ছাগলটা যে ছেলে কিনতে চেয়েছিলো
সে নাকি ফ্যামিলি নিয়ে দেশ ছেড়েছে।

২) ছাগল বালকের পিতার চাকরি চলে গেছে

৩) সেই ছাগলের খামারটা
কাল সকালে উচ্ছেদ হয়ে গেছে।

শুধু ঐ ছাগলটাই এখনও
বহাল তবিয়তে টিকে আছে...

G - Greatest
O- Of
A - All
T - Time.

পৃথিবীর ইতিহাসে ওমন ছাগল আর আসেনি,
গিনেস রেকর্ড এর জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
এমন মেধাবী, দুর্দান্ত স্পাই, ইনটিলিজেন্স, ডিবি, পুলিশ পৃথিবীতে জন্ম হয়নি, যেখানে দেশের কোন সিস্টেম ধরতে পারেনি সেখানে এই GOAT কত জনের মুখোশ উন্মোচন করে দিল !!! এমন কপাল, মেধা, প্রতিভা নিয়ে জন্মেনি কোন ছাগল। 🤣

আচ্ছা, কেমন হয় ? অভিধানে "The Goat Effect" নামে একটা বাগধারা চালু হোক। কি বলেন ?

"হোঁচট যাপন" ......✍️"""" """""""  """""""  """""" """"পরের কয়েকটা বছর খুব দ্রুত কেটে যায়। মোটামুটি টাকা পয়সা, ঘরবাড়ি সব...
06/06/2024

"হোঁচট যাপন"
......✍️
"""" """"""" """"""" """""" """"
পরের কয়েকটা বছর খুব দ্রুত কেটে যায়। মোটামুটি টাকা পয়সা, ঘরবাড়ি সব গুছিয়ে ফেলেছি। কতো ঈদ পেরিয়ে কুরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ছোটার সৌভাগ্য জুটেছে কেবল।
অর্ধযুগ পরে এক কোমল রোদরাঙ্গা বিকেলে আমি আমার জেলাশহরে মায়ের পায়ের উপর শুয়ে শুয়ে ভুট্টা ভাজা খাচ্ছিলাম। বাবা ঈদে গরুগুলো হাট ওঠানো উপলক্ষে তাদের যত্নেই মশগুল। বৈয়ম ভর্তি ভুট্টা ভাজা তখনও আমার হাতে। আম্মা পাড়াপড়শি, সমাজনীতি সবকিছু নিয়ে বক্তৃতা শেষ করে সংসারনীতি নিয়ে আলাপ শুরু করলেন। আমাকে একটু কড়া ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন, এই ছন্নছাড়া জীবন আরও কতদিন বাইবি? একটা মেয়ে দেখছি। আমাদের সাথে যাবি কালকে?

আমি আম্মাকে কিছু বললাম না। কিছু বলে লাভ নেই। গত তিনবছর যাবৎ ফোন করলেই আম্মা আমাকে এই ধরনের নানান চাপ প্রয়োগ করে আর এবার তো হাতের নাগালেই পেয়েছে। ফোনে আমি ভংচং দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতাম। এইবারও এমন কিছু করা যাবে কিনা আমি জানিনা। আপাতত বৈয়ম খালি করায় মনোযোগ দেয়া আবশ্যক। আম্মা ঘ্যানর ঘ্যানর করতে লাগলো, আমি শুনতে থাকলাম। রাতে খাওয়ার সময় বাবা আমাকে একই কথা আবার বললেন। আমি ভাত খাওয়া থামিয়ে বললাম, বাবা পরেরবার বাড়ি আসলে এই ব্যাপারে চিন্তা করা যায়না?
বাবা হেসে বললো, অবশ্যই যায়। আপাতত মেয়েটাকে দেখে রাখ। বেশি দূর যেতে হবে না। মেয়েটা এখন বাড়িতে এসেছে। বগুড়ায় পড়ে, ওখানে হলে থেকে পড়াশোনা করে। ভদ্র পরিবার, থানা মোড়েই বাসা। মেয়েটা খুব ভালো। তুই একবার কথা বলে দেখ।

আমি হতাশ হয়ে গেলাম। বাবা মা এইবার সত্যি সত্যি জেকে ধরছে। আমি কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে উঠে গেলাম। রাতে লিপিদের বাড়ি যেতে হবে। আমার বন্ধু ফজলে মাহবুবের বউ লিপি বেগম। ফজলের চেয়ে লিপি বেগম আমার বেশী কাছের বন্ধু, একসাথেই চাকরিতে থাকার সুবাদে। লিপির সাথে আমি ফজলের পরিচয় করিয়ে দেয়ার তিনদিন পরই ওরা প্রেম করা শুরু করে। যদিও দুই পরিবারে কোন আপত্তি ছিলোনা তবুও তারা পালিয়ে বিয়ে করে। বন্ধুর বিয়েতে জোর করে আমাকে সাক্ষী দেওয়ানো হয়েছিলো। দুই প্লেট বিরিয়ানীর লোভে আমি এই গর্হিত অপরাধ করতে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাই। প্রবল ভালোবাসা নিয়ে তারা বিয়ে করলেও জামাই বউ আজকাল দিনের অর্ধেক সময় প্রতিবেশীদের জন্য বিপুল বিনোদনের ব্যবস্থা করে থাকে বলে শুনেছি। লিপির ছোটবোনের সাথে আমার বিয়ে দেয়ার অনেক চেষ্টা তারা চালালেও আমি প্রতিবার অভাব অনাটনের দোহাই দিয়ে পলায়নপূর্বক নিজেকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছি। লিপির বোনের এখন দুই বছরের একটা মেয়ে আছে। সেই মেয়ে সেদিন আমার কোলে উঠার পর মাহবুব বললো, আজকে এই বাচ্চাটা তোরও হতে পারতো। আমি ভয়ে বাচ্চাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আবারো প্রস্থান করি।
পরেরদিন বিকাল বেলা অনেক চেষ্টার পরও ব্যর্থ হয়ে আমি পাত্রীর বাসায় যেতে বাধ্য হই। পাত্রীর নাম সুমনা। এই যুগে সুন্দর মেয়েদের এমন নাম কেউ রাখে না, নামটা আরও বিশেষ কিছু একটা হবে আশা করেছিলাম। সুমনার আব্বা আম্মা আমাকে দেখে মনে হয় খুশি হতে পারেন নাই। নাস্তার আয়োজন খুব একটা ব্যাপক ছিলোনা। এই এলাকার লোক এইসব ব্যাপারে সাধারণত অনেক অমিতব্যায়ী হয় বলে ধারণা ছিলো। একটু পর সুমনার মায়ের কথাতে বোঝা গেলো ঘটনা কি। আমতা আমতা করে বললেন, দেখেন আসলে একটা ব্যাপার হয়তো আপনারা জানেন না। আমার মেয়ের এর আগে একটা বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো প্রায়। আংটি বদল করার পর ছেলের পরিবার কেন যেন বিয়েটা বাতিল করে দেয়। আমরা ভদ্র পরিবারের মানুষ। এটা নিয়ে ঝামেলা করার আমাদের সুযোগ ছিলোনা।
আমার বাবা মা একে অন্যের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলো। পাত্রীর বাবা এবার বললেন, আমি আপনাদের কাছে দুঃখিত যদি আমাদের তরফ থেকে কোন ভুল হয়ে থাকে। আপনাদেরকে যিনি আমার মেয়ের ব্যাপারে জানিয়েছেন তিনি হয়তো ভুলে এ ব্যাপারে বলেনি। নাহলে আপনাদের এতো আগ্রহ আমরা নিজেরাও খুব একটা আশা করিনি।
আমার বাবা গলা খুক খুক করে পরিষ্কার করে বললো, আপনার মেয়েকে আমার স্ত্রী আসলে দেখে খুব পছন্দ করেছে। মেয়ের যেহেতু বিয়ে হয়নি এখন আমার ছেলের সিদ্ধান্তই এ ব্যাপারে আসলে মূল ভূমিকা রাখে। আমি আমার ছেলেকে যতদূর জানি, তার এসব নিয়ে আপত্তি নাই।
মেয়ের মা কষ্ট করে আটকে রাখা নিঃশ্বাস ঝেড়ে বললেন, আমরা কি মেয়েকে তাহলে ডাকবো?

ডাক দেয়ার পর মেয়েটা বাংলার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী আরো কিছু নাস্তা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে বেশ জবুথুবু হয়ে বসলো। আমি মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়েই বুঝলাম মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই। তার সাথে একবার চোখাচোখি হলো। সে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিলো। আমি বিরক্তির বদলে তাঁকে হাসি উপহার দিলাম।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময়, দুই বাবা মা আমাদের ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ করালেন। বাসায় পৌছেই বাবা-মাকে হেসে বললাম, আব্বা আর চেষ্টা করোনা এসব বিয়ে শাদীর। এই মেয়ে যে বিয়েতে রাজী না এটা নিশ্চয়ই তোমরাও বুঝছো। আমাকে এইবার একটু ঠিকমত এক সপ্তাহ ছুটি কাটাতে দাও আল্লাহর দোহাই লাগে।
মা রাগ করে বললেন, বয়স তো ৩০ ছুঁতে চললো, আর কত দেরী করবি বিয়ের। তোর সব বন্ধুদের বিয়ে হয়ে এখন তিন চারটা কোলে নিয়ে ঘুরে। আমাদের বড় ছেলে তুই। থাকিস তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এভাবে খেয়ে না খেয়ে আর কতদিন পার করবি?
আমি মুখ ফিরিয়ে বললাম, আম্মা পরেরবার এসে বিয়ে করবো। এখন আর না। মন খারাপ করার কিছু নেই।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমার কাছে মেসেজ আসলো পাত্রী সুমনার থেকে। সে আমাকে লিখেছে, আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে?
আমি তাঁকে ফোন করলাম। সে অনেকক্ষণ ইতস্তত করে বললো, ভাইয়া আমি খুব দুঃখিত আপনাকে এই রাতে বিরক্ত করছি তাই। আমার পক্ষে আসলে বিয়ে করাটা একটু ঝামেলা। আপনি কি কারণ জানতে চান?
আমি তাঁকে কন্ঠে বেশ আন্তরিকতা নিয়ে বললাম, আপা কারণ বলতে হবেনা। আমি আপনাকে দেখেই বুঝেছি। আপনি অনুগ্রহপূর্বক এটা নিয়ে ইতস্তত করবেন না। আমার নিজেরও একটু সমস্যা ছিলো। আপনার পরিবার যথেষ্ট ভালো। আপনিও অনেক ভালো। আশা করি আপনার জন্য আরো ভালো কেউ অপেক্ষা করছে।
মেয়েটা বেশ অবাক হলো। আমি তাঁকে না দেখেও এটা বুঝলাম। সে আশা করেনি আমি তাঁকে এভাবে আন্তরিকতা দেখাবো। সে খুব খুশি হয়ে বললো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার বাবা মাকে আশা করি বুঝিয়ে বলতে পারবেন। উনারা কত কষ্ট করে এসেছেন আমাদের বাসায়। আমি খুব দুঃখিত আবারো।
আমি হেসে বললাম, উনারাও আসলে বুঝতে পেরেছেন যে আপনি এই বিয়েতে রাজী না। আমার বয়সের ছাপ পরা আতেল চেহারা পছন্দ করার কোন কারণ নেই ভাই।
সুমনা হেসে দিলো। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতাম। আজকে নাস্তার সময় দেয়া সিংগারাটা খেতে খুব ভালো হয়েছিলো। আমিও নিজেই রান্না করে খাই, আপত্তি না থাকলে আমাকে রেসিপি দেয়া যাবে?
সুমনা আপা এবারেও খুব হতবাক হলেন। তিনি আমাকে বললেন, আজকে সব কিছু আমি নিজেই রান্না করেছিলাম। আপনার এতো ভালো লাগলে আপনাকে আমি আরেকদিন খাওয়াতে পারি। আর রেসিপি, আপনি চাইলে আমার ইউটিউবে একটা চ্যানেল আছে রান্নার। সেখানে দেখে নিতে পারেন। আমি কাল পরশু ইউটিউবে সিঙ্গারা রান্নার একটা ভিডিও আপলোড করে দিবো।

আমি তাঁকে শুভরাত্রি জানিয়ে ফোন রেখে দিলাম। এরপর সে আমাকে প্রায় এক সপ্তাহ পর ফোন করলো। আমি বললাম, ভালো আছেন? রান্নার ভিডিও করেছেন?
সুমনা আপা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বললেন, ভাইয়া একটু দেরী হয়ে গেছে। আমি খুবই দুঃখিত।
আমি তাঁকে আশ্বস্ত করে বললাম, কোন সমস্যা নেই। আপনি যে আমার জন্য এই বিশাল কষ্টটা করলেন এর জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি মনে হয় খুব ভালো রান্না করেন?
সুমনা প্রথমবার এমন মন খুলে হাসলো। আমাকে বললো, জ্বী আমি বেশ ভালো রান্না করি। এটা আমার শখ। রান্নার ভিডিও করতেও খুব ভালো লাগে। আমার ইউটিউব চ্যানেলের নাম নিতু’স আর্টিফ্যাক্টস।
আমি শুয়ে শুয়ে "আহারে জীবন...." শুনছিলাম। বুকের ভিতরটা আচমকা ধক করে উঠলো। উঠে বসে জিজ্ঞাসা করলাম, নিতু কেন?
সুমনা অবাক হয়ে বললো, আমি ভাবলাম আপনি জিজ্ঞেস করবেন আর্টিফ্যাক্টস শব্দটা ব্যবহার করলাম কেন! যাই হোক, আমার ডাকনাম নিতু। আপনি জানতেন না?

আমি ফোনটা কেটে দিলাম। কতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও নিতু নামটা শুনে আমি থমকে যাই। নিতুর সাথে সেই হতভাগা সকালের পর আর কখনো আমার দেখা হয়নি, কথা হয়নি। ও কখনো যোগাযোগ করতে চেয়েছিল কিনা জানিনা। আমি আমার সাথে ওর যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিলাম। মাঝে মাঝে যখন রাজধানীর ফুটপাত ধরে হেটে যেতাম মনে হতো ও হয়তো পাশ দিয়ে হাটছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলতাম। আপনা আপনি আসলে বন্ধ হয়ে যেতো। আমি চাইতাম না আরেকটা হোঁচট খেতে। আমি ভয় পেতাম নিতুকে। যেই অচেনা নিতুর সাথে অনেক বছর আগে বৈশাখ পরিচয় করিয়েছিল, সেই নিতুকে আমি এখন বৈশাখেও ভয় পাই। যে নিতুর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা নেই, সেই নিতুকে আমি আর কখনো অনুভব করতে চাইনা। তবে আমি ওর সাথে এখনও ৭৩ বার দেখা হওয়ার স্মৃতি, ২৮ বার হাত ধরার অনুভূতি অথবা ৪২টা চিঠির ছিমছাম শব্দগুলো আকড়ে ধরে থাকি। ওই নিতুটা, নিতুর সাথে কাটানো সময় সবটা আমার ছিলো। সেই নিতুর প্রতি আর কারো অধিকার নেই।
সুমনা আমাকে আরো দুবার ফোন দিয়েছিলো। আমি ফোন ফেলে বিছানায় মূঢ় হয়ে বসে ছিলাম। চলে যাওয়ার দুদিন আগে আমি ওকে ফোন দেই। ফোন করেই প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। সে জিজ্ঞাসা করলো, আমি কি কিছু অন্যায় করেছি? আপনি এভাবে ফোন কেটে দিয়ে আর কথাই বললেন না।
আমি আস্তে আস্তে বললাম, না আসলে আপনাকে মিথ্যা বলবোনা। নিতু নামটা শুনে একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম। আর কিছুনা। আপনি কেমন আছেন?
সুমনা শুধু একটা ‘ও’ বললো। তারপর বললো, আপনাকে একটা অনুরোধ করলে কি রাখবেন? জানিনা এমন অনুরোধ করা ঠিক হবে কিনা। তবুও সাহস করে ...
আমি বললাম, বলুন না। কোন সমস্যা নেই।
সুমনা কিছুক্ষন ইতস্তত করে বললো, আমি বগুড়া চলে যাবো কয়েকদিন পর। আপনিও মনে হয় ঢাকা চলে যাবেন খুব দ্রুতই। আপনার সাথে কি তার আগে একবার দেখা হওয়া সম্ভব।
আমি এবার অবাক হলাম। সেটা সুমনাকে বুঝতে না দিয়ে হেসে বললাম, আমার কোন সমস্যা নেই যদি আপনি সিংগাড়া বানিয়ে খাওয়ান। আমারও আসলে আর দুইদিন পরই ছুটি শেষ।
সুমনা কিছুক্ষণ ভেবে বললো, আমি বুঝতে পারছি আপনি খুব ব্যস্ত। এটা কি সম্ভব আপনি ঢাকা যাওয়ার পথে আমার সাথে গেলেন। আমি নাহয় একটু আগেই বগুড়া চলে যাই।
আমি বুঝলাম পালানোর রাস্তা নেই। সুমনাকে বললাম, আমি টিকিট করেছি ইতিমধ্যেই। ওটাতে অবশ্য একাই যাচ্ছিলাম। আপনি চাইলে সেটা বাতিল করতে পারি, করবো কি?

দুদিন পর সুমনার সাথে আমার দেখা হলো। আমি একটু আগে আগে বের হয়েছিলাম। থানার সামনে একটা কনফেকশনারিতে বসে আছে। সেখানে তার কথা শুনবো এরকমটাই ইচ্ছা ছিলো। সেখানে বসেই সুমনা আমাকে একটা হটপট থেকে সিঙ্গাড়া বের করে দিলো। তারপর আরেকটা বড় টিফিনবক্স হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, এটা আপনি সাথে করে নিয়ে যেতে পারবেন। একদম ভালোমত ইন্ট্যাক্ট করা। কিচ্ছু হবেনা। আমার ভাইয়াকে এভাবেই দেই সবসময়।
আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর পর বেশ কিছুক্ষণ দুজন চুপচাপ বসে থাকলাম। ও নিজে থেকে আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো। অন্য দিকে তাকিয়ে বললো, আমি একটু অগোছালো স্বভাবের। আপনাকে কেন যে ওইদিন রাত্রে এভাবে অনুরোধ করলাম জানিনা। আমি খুব দুঃখিত।
আমি সিঙ্গাড়া মুখে দিয়ে বললাম, এটা কোন ব্যাপার না। আপনি এখন কিছু বলতে না চাইলেও সমস্যা নেই।
সুমনা বললো, না আসলে আমার কেন যেন মনে হলো আপনাকে বলি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমার একটা বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। আংটি বদল হয়েছিলো। কিন্তু একটা ব্যাপার আসলে আমার পরিবার ছাড়া আর কেউ জানেনা।
আমি আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে মাথা নিচু করে বললো, আমি আসলে কোন বিয়েতে এখন আর রাজি হইনা। আমার একটা সমস্যা আছে। যেই ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তার সাথে ঢাকাতে গিয়ে একসাথে দুদিন থেকেছিলাম। বাসায় জানতোনা। ও অনেক অনুরোধ করলে আমি বোকার মত রাজী হয়ে গিয়েছিলাম।
আমি সিঙ্গারায় কামড় দিয়ে বললাম, আপনি সেজন্য অপরাধবোধে ভুগছেন?
সুমনার চোখ ভরা জল। মেয়েদের এমন জলভরা নয়নে খুব মায়াবতী লাগে। এটা নিয়ে একটা গবেষণা করা যেতেই পারে।

সুমনা কাচের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বললো, আপনার নিশ্চয়ই আমাকে খুব খারাপ মনে হচ্ছে। আপনি বিশ্বাস করেন আমি অনেক বোকা হতে পারি, কিন্তু খারাপ না। ছেলেটা অনেক ভালো ছিলো বলেই আমি জানতাম। ও এমন করবে বুঝিনি একদম। আপনাকে এগুলো কেন বললাম আমি জানিনা। বাসায় বিয়ের জন্য অনেক জোর করছে। আপনার বাবাকে মনে হয় কাল পরশু ফোন করবে আমার বাবা। উনারা আপনার ব্যাপারে খুব আগ্রহী। আপনি আপনার বাসায় একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? বলবেন যেন আমাকে একেবারে না করে দেয়। আমি চাই আমার বাবা মা বুঝুক যে আমি পছন্দ করার মত মেয়ে না। আমি চাইনা তারা আমাকে আর বিয়ের কথা বলুক। আমার এইসব বিয়ে টিয়ে আর ভালো লাগেনা।
আমি সাহস করে সুমনার হাত ধরে বললাম, ভাই আপনি এতো ভালো সিঙ্গারা বানান যে এই সিঙ্গারা খেলে যে কেউ সংসার বাধতে চাইবে। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, একটু চিলি টমেটো সস দিয়ে পাত্রকে এটা খাইয়ে দেবেন, আর সাথে সাথে সে বাবা-মা সহ বিয়েতে রাজী হয়ে যাবে। আর আপনি এইসব আজগুবী কথা বলছেন কেন? আপনি তো কারো সাথে প্রতারণা করেননি তাই না?
সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, করেছি। আমার নিজের সাথে করেছি। আমার বাবা মায়ের সাথে করেছি।
আমি তাকে বললাম, সেটা আপনি ভুল করেছেন। না বুঝে। আমি বেশ বুঝতে পারি, আপনি অনেক ভালো একজন মানুষ। মাঝে মাঝে আপনার মত ভালো মানুষগুলো খারাপ কিছু সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। আপনি দেখবেন আপনার সামনে অনেক চমৎকার একটা সময় আসবে। বিশ্বাস করুন।
সুমনা চোখ মুছতে মুছতে বললো, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। নিতু নামে কারো সাথে আপনার কোন একটা সম্পর্ক ছিলো তাই না?
আমি হেসে বললাম, কথা সত্য। কিন্তু এর বাহিরে আর কিছু বলতে চাচ্ছিনা। চলুন আমরা রওনা দেই।
সুমনা আমার সাথেই বগুড়া পর্যন্ত আসলো। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি কখনও বিয়ে করবেন?
আমি তাকে আরো অবাক করে দিয়ে বললাম, হ্যা যদি আপনার মত কেউ সিংগাড়া বানাতে পারে, তাহলে ভাবতে পারি।
সেও হাসলো, আমিও হাসলাম। তারপর বিদায় নিয়ে আবার যন্ত্রের শহরে যাত্রা শুরু করলাম।

ঢাকা পৌছানোর প্রথম ঘন্টার মধ্যেই সুমনা আমাকে আবার ফোন করলো। ঠিকমত এসেছি কিনা জিজ্ঞেস করলো। আমি তার সাথে দুইমিনিট কথা বলে বিশাল একটা ঘুম দিলাম। ক্লান্ত লাগছে খুব। ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে একটা সিঙ্গাড়া খেলাম আবার। সুমনার বানানো সিংগাড়া।

মাসখানেক সুমনার সাথে আমার অনেক কিছু নিয়ে কথা হয়েছিলো। একদিন তাকে হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম, সুমনা আপনি কি ওই ছেলেটাকে ভালোবাসতেন?
সুমনা কিছু বললোনা প্রথমে। তারপর বললো, আমার তার জন্য এখন ঘৃণা হয় শুধু। তবে মাঝে মাঝে আমার খুব ইচ্ছা করে তাকে একবার জিজ্ঞাসা করতে, সে আমার সাথে এমন করলো কেন!
আমি ওকে বললাম, নিতু নামের একজনকে খুব চাইতাম একসময়। ভয়ংকর ভালোবাসতাম। হঠাৎ করে একদিন বুঝলাম, আমি তাকে হয়তো ঠিকমত ভালোবাসতেই পারিনি। তার সাথে সেইদিনটার পর আর কখনো দেখা হয়নি। হ্যা তার কাছে অনেক জিজ্ঞাসা থাকতে পারতো আমার। কিন্তু আমি আমার মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সব। সুমনা, সম্পর্কের মাঝে জিজ্ঞাসা রাখতে নেই। আপনাকে তা নিত্যদিন শুধু যন্ত্রণাই দেবে, আর কিছু না।
বাবার সাথে এর কিছুদিন পর কথা হলো। বাবা সুমনার বাবার সাথে কথা হয়েছে জানালেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার মতামত কি সুমনাকে বিয়ের ব্যাপারে। আমি বাবার থেকে একদিন সময় নিয়ে সুমনাকে মেসেজ করলাম, আপনার পরিবার চায় আমি যেন আজীবন আপনার মজার মজার রান্না খাই। আমি কি বলবো বাসায় বলুন।
সুমনা ঘন্টাখানেক পর আমাকে ফোন করলো। খুব কাঁদতে কাঁদতে বললো, আপনি আমাকে কেন বিয়ে করবেন? আপনি তো জানেন আমার সব কিছু। আপনাকে তো বলেছিলাম আমি না করে দিতে।
আমি হেসে বললাম, আচ্ছা তাহলে না করে দিচ্ছি...
সুমনা সাথে সাথে বললো, না দাড়ান। আপনি আসলে কি চান বলেন তো?
আমি কিছু চাইনা। মাঝে মাঝে কারো সাথে একটু কথা বলতে পারলেই চলবে। আর কিচ্ছু না। - এটুকু বলে ফোন রেখে দিলাম।
রাতে তাকে মেসেজ লিখলাম, প্রিয় সুমনা, আমি অনেক আগে ভালোবাসাবাসি ব্যাপারটা হারিয়ে ফেলেছি। আপনিও আমার মতই একটা ধাক্কা খেয়েছেন জীবনে। আমি জানিনা আপনি কি চাচ্ছেন এখন জীবনে। তবে আপনি যাই সিদ্ধান্ত নেন আমি আপনার প্রতি কোন অভিযোগ রাখবোনা। কিন্তু আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। অনেক ভালো লেগেছে।

সুমনা গভীর রাতে আমাকে মেসেজ দিয়ে জানালো, আপনাকে আমার আপনার থেকেও বেশি ভালো লেগেছে...

বিয়ের কথা চিন্তা করতে পারবো এমনটা কখনোও ভাবিনি। আমি সুখী ছিলাম কিনা জানিনা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো আমার সিদ্ধান্তটা সঠিক। সুমনাকে আমার ভালো লেগেছিলো। আমি ক্লান্ত যাযাবর ছিলাম। আমার একটা ঘর, একটা স্নেহাতুর হাতের স্পর্শ খুব দরকার ছিলো।আচ্ছা আমি কি স্বার্থপর হয়ে গেলাম? আমি হয়তো ওকে কখনো নিতুর মত ভালোবাসতে পারবোনা। তবুও কেন এমন করছি? সুমনাও হয়তো পারবেনা। আমাদের ভালোবাসার জায়গাটায় একটা বিরাট ক্ষত হয়ে আছে। আমি জানিনা, এই ক্ষত কখনো সারবে কিনা।
সুমনা আজকাল আমার সাথে কথা বলতে খুব লজ্জা পায়। সে সারাদিন আমার জন্য অপেক্ষা করে। আমার কথা শুনতে চায়। আমি তার সাথে জীবনের গল্প করি। রাজধানীর বেরসিক যাপনের বুলি আওড়াই। এমনকি তাকে পুরো দিনের হিজিবিজি গল্পও শোনাই। সে কখনো বিরক্ত হয়না। একদিন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে?
সুমনা চুপ হয়ে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর বললো, আগে ভালো লাগতো। এখন না।
আমি ওর নিস্তব্ধটার কারণটা যেন বুঝে গেলাম। ঠিক নয় তবুও বললাম, আবীর নামের মানুষটা আপনাকে অনেক আইসক্রীম খাওয়াতো তাই না?
সুমনা ফোন কেটে দিলো। দুদিন আমাদের মধ্যে আর ওভাবে কথা হয়নি। এরপর যখন কথা হলো তখন বললো, আপনি আবীরের কথা আর কখনো বলবেন না। আমার ভালো লাগেনা।
পরের মাসে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হলে আমি বাড়ি চলে গেলাম বিয়ের কয়েকদিন আগে। বাবা মা দুজনই খুব খুশি ছিলো বিয়ে নিয়ে। আমি আর সুমনা কি খুশী ছিলাম? জানিনা। সুমনার সাথে পরেরদিন দেখা হলো। ওর মনটা ভালো নেই, কেন জানিনা। তাকে নিয়ে জেলায় যেয়ে পছন্দ করে বিয়ের শাড়ি এবং আরো অনেক কিছু কিনলাম। সে বারবার আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলো। আমিও তাকে বারবার বলছিলাম, আমাকে যেন জানায়। সুমনা কিছু বলতে পারেনি।
বিয়ের দুদিন আগে সুমনার বাবা মা ফোন করে বিয়েটা ক্যানসেল করে দিলো। আমার বাবা খুব রেগে গিয়েছিলো, আমি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলাম। আমি সুমনাকে ফোন করলাম না। কারণ বিয়ে ভাঙ্গার কারণটা খুবই যৌক্তিক ছিলো। আবীর নামের ছেলেটা ফিরে এসেছে। সে এতোদিন একটা রাজনৈতিক মামলায় জেলে ছিলো। বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় অনেকটা কারণ ছাড়াই জেলে ছিল এতোদিন। লজ্জায় তার পরিবার এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেনি। দুদিন আগে ছেলেটার বাবা মা এসে প্রায় হাতে পায়ে ধরে সুমনার বাবা মাকে রাজী করিয়েছে। আমি সুমনার বর্তমান অবস্থাটা বেশ বুঝতে পেরেছি। তার প্রতি আমার কোন রাগ ছিলোনা।

ঢাকা ফিরে আসার দুই মাস পর হঠাৎ একদিন সকালবেলা সুমনা আমাকে আবার ফোন করে। আমি ওকে প্রথমেই নতুন বিয়ের জন্য অভিনন্দন জানালাম। সে আমাকে বললো, এখনও বিয়ে হয়নি। পরশুদিন বিদায় হয়ে বিয়ে উঠবে। আপনি কেমন আছেন?
আমি হাসিমুখে বললাম, ভালো নাই। চাকরিটা চলে গেছে। ভাবছি বাড়ি যাবো। এক সপ্তাহ পর ফিরবো। কিছু ঠিকমত গুছিয়ে উঠতে পারছি না। ঝামেলায় আছি।
সুমনা কিছু বলছেনা, আমিও বলছিনা। শুধু ফোন ধরে আছি। অপেক্ষা করছি কে আগে কথাটা বলবে। যখন বুঝতে পারলাম সে কিছু বলতে পারছেনা আমি এগিয়ে আসলাম। তাকে বললাম, আপনার দুঃখিত হওয়ার মত কিচ্ছু নেই। আমি কিছুই মনে করিনি। এই ছেলেটাকে আপনি ভালোবাসতেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। এখন সেটা নাই। আমি মাঝখানে এসে পড়েছিলাম ঝামেলা করতে। ঝামেলা এখন নেই। সব মিটমাট।
সুমনা বললো, আমি আবীরকে বিয়ে করতে চাইনি। বাবা মা জোর করে আমাকে রাজী করিয়েছে। মেয়ে তো, পরিবারের বাহিরে যেতে পারিনা চাইলেও। আমি আপনার কাছে কোন মুখে ক্ষমা চাইবো জানিনা। লজ্জায় আপনাকে এতদিন ফোন করতে পারিনি। আজকে অনেক সাহস করে ফোন দিয়েছি।
আমি সুমনাকে আস্তে আস্তে বললাম, সুমনা আমার প্রতি করুণা করে আপনি কেন আপনার ভালোবাসার মানুষকে দূরে ঠেলে দেবেন। আপনার মনে আছে আপনাকে একদিন আইসক্রিমের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমি সেদিন খেয়াল করেছি আপনি আবীরকে কখনও ভুলেন নাই। আপনি আমার সাথে কখনো সুখী থাকতেন না। তাই, এসব নিয়ে আর মন খারাপ করবেন না। আমি ভালো আছি, বেশ যাচ্ছে জীবন।
সুমনা ফোনের ওপাশে খুব কাঁদছে। আমাকে সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আপনি অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু আপনি অনেক কিছু বোঝেন না।

টুক করে ফোনটা ও কেটে দিলো। আমি হাত থেকে ফোন রেখে মেঝেতে বসে আলু ভর্তায় তেল মাখাচ্ছিলাম। একবার মনে হচ্ছিলো, এখনই টিকেট কেটে সুমনার কাছে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলি, আমি বুঝি। কিন্তু আমি অধিকার চাইতে জানি না। কখনো পারিনি। এখনও পারবো না।

একটু পর বাসার নিচের চায়ের দোকানগুলো পেরিয়ে খানিকটা দূরে গিয়ে একটা দোকানে বসলাম। এই দোকানের রং চায়ে মিষ্টি বাড়িয়ে দিলে চা টা খুব মজার হয়। তবে আমার চায়ে প্রতিবার চিনি বাড়িয়ে দিতে দোকানদার বেশ বিরক্ত হন।
আমার বর্তমান আবাসের আশপাশের দোকানগুলো খুব জঘণ্য চা বানায়। সেই তুলনায় এখানকার আয়োজনটা ভালো। আমার চা পান করার থেকে গরম চায়ের ধোঁয়াটে আমেজটা বেশি ভালো লাগে। কারণ ধোঁয়ার মাঝে আমি অন্য একটা জগতকে খুঁজে পাই, সেই জগতে নিতু 'সুরভী উদ্যান'র পুকুর পাড়ে বসে থাকে। একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, আমাকে অনেক ভালোবাসো?
আমার মনটা এখনও নিতুর কাছে পড়ে আছে, ও কি সেটা জানে?

চা খাওয়া শেষে আমি রাস্তায় হাঁটতে থাকি। আজ ঝলমলে রোদ নেই। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে। বৃষ্টি ছেটানো পথে নতুন একটা চাকরির খোঁজে অন্য সব দিনের মত আরেকবার আমি হন্যে হয়ে যাই।

আমাকে হারিয়ে দিচ্ছে শহুরে মেঘ গুলো। তাদের পিছু ছুটতে গিয়ে আমি পথ হারিয়েছি রপ্তানি এলাকার তীব্র ভীড়ে, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বারবার আশ্রয় নিচ্ছি আকাশ পানে উঠতে চাওয়া বড় বড় ভবন গুলোর ফুলওয়ালা গেটে।
নিপু আজ তুমি থাকলে বৃষ্টির গল্পটা অন্যরকম হতো, আমি একটুও বৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইতাম না।
এই বৃষ্টিটা তখনি দামি ছিল! যখন তুমি আমি রাস্তার টঙ দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেই।
কিছুটা ক্লান্ত বোধ হচ্ছে, তুমি বরঞ্চ আবার সেই পুরনো চায়ের দোকানে চলে আসো। তুমি আসলেই ঝুম বৃষ্টি আসবে।
রিকশায় উঠে বৃষ্টির আদুরে ফোঁটায় চিৎকার করে বলবো, "একা একা ভালো থাকা যায়না নিপু, খুব কষ্ট হয়, নিস্তেজ লাগে আমার"......! কিংবা সেই বিকেলটায়, যেদিন প্রথম তোমার হাত ছুঁয়ে বলেছিলাম- দেখো দেখো, এই এইটুকুন ভালোবাসার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি! ভালবাসা নিপু.... এটাই ভালোবাসা.....
আসবে? আরেকটিবার সেই বৃষ্টির মূহুর্ত নিয়ে, সেদিন বৈশাখী দর্শনটায় যেমন দেখেছিলাম!!!
আমি দুমুঠো ভর্তি করে আবার কিছু নীলাভ সুখ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই নিপু........
.... ✍️
KBA Creations
Misir Himu
KiBu Ahsan
KiBu Ahsan Photography ™️.

"বৈশাখের পয়লা" ..... ✍""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""নিপু,সেদিন তোমায় নিউমার্কেটে দেখলাম। একটা ছাপা শাড়ীর...
06/06/2024

"বৈশাখের পয়লা"
..... ✍
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
নিপু,সেদিন তোমায় নিউমার্কেটে দেখলাম।
একটা ছাপা শাড়ীর দরদাম করছিলে।
জানো, দোকানদারের উপর বড্ড রাগ হচ্ছিলো, মনে মনে খুব গালাগাল করেছি। কতটা বেকুব! তোর সৌভাগ্য নিপু তোর দোকানে গিয়েছে। আবার সাহস দেখিয়ে দরদাম করা হচ্ছে!
তারপর কি হলো!
তুমি শাড়ি না কিনেই চলে গেলে।
আমি লুকিয়ে পড়েছিলাম। অবশ্য না লুকালেই বা কি হত বলো?
তুমি কি আমায় চিনতে? জানি চিনতে না!
কি করে চিনবে বলো? তুমি তো আর আমার প্রেমে পড়োনি!
জানো বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিলো শাড়িটা আমি কিনে নেই... এই শাড়ির পাড়ে, জমিনে তোমার স্পর্শ লেগেছে যে!
মানিব্যাগ টা বের করে দেখি- মাত্র ছাপ্পান্ন টাকা। এই দিয়ে কি আর শাড়ি হয় বলো?
জানো নিপু,
আজকাল তোমাকে আমার সব বলতে ইচ্ছে করে, আমার ঘরে একটা পাখি বাসা বেধেছে- এই গল্পও বলতে ইচ্ছে করে। মনে হয় তোমায় এই গল্প বলার ইচ্ছেই প্রেম। যেদিন ইচ্ছেটা ফুরিয়ে যাবে, সেদিন? সেদিন প্রেম বলে কিছু থাকবে না নিশ্চয়!.সেদিন কি হয়েছে শোনো, গিয়েছি একটা চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে।
মোটাসোটা এক লোক আমায় কি জিজ্ঞেস করেছে জানো?
ভারি গলায় বলল, আপনি কি বিবাহিত?
এটা কোনো প্রশ্ন হলো বলো?
আমি বললাম, জি না!
তিনি বললেন, গুড! বেকারেরা প্রেম করবে বিয়ে নয়।
আবার জিজ্ঞেস করলেন, প্রেম করেন?
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।
তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন।
আমি বললাম, জি না। তবে একজনকে খুব ভালোবাসি। মেয়েটার নাম নিপু।
তিনি হো হো করে হেসে দিলেন।
এখানে হাসার কি ছিলো বলো?
অথচ তিনি হাসলেন। হাসি থামিয়ে বললেন, ইয়াংম্যান, নামটা জিজ্ঞেস করি নি।
তারপর বললেন, আপনি এবার আসতে পারেন।
জানো, আমি যেই না চেয়ার ছেড়ে উঠেছি আর- উনি বলে উঠলেন, নিপু! ছোট্ট নাম। বেশ সুন্দর।
আমি তখন তোমার অন্য নামটাও বললাম, শ্রাবণ।
তখন তিনি খুব আগ্রহ করে তোমার আমার গল্প শুনতে চাইলেন।
আমি আবার না করিনি.... ..
বসন্তের শেষ বিকালের মৃদু হাওয়ায় অনেক কষ্টে পুরাতন স্মৃতিগুলোকে খুঁজে পেলাম । ধুলোবালি জমে একাকার হয়ে আছে । শেষ কবে স্মৃতিগুলো কথা বলেছিল মনে করতে পারছি না । কাপা কাপা মস্তিষ্কে আজ আবার ভাবতে শুরু করলাম....
..প্রথম দেখা পহেলা বৈশাখের দিন!
দিন, তারিখ কিছুই মনে না রাখার অনেক চেষ্টা করেছি! এইসব এক সময় স্মৃতি নামক স্মরণশক্তিতে বিশেষ ছাপ ফেলে যায়,তাই ইচ্ছে করেই ভুলে যেতে চেয়েছি, কিন্তু দিনটা এতটাই বিশেষ ছিল.... আর ভুলে যাওয়াই হলো না!
শুরুটা বেশ একটা রোমাঞ্চকর না হলেও সমাপ্তিটা ছিল না বলার!.....বছরের প্রথম বৃষ্টি।
মোন বলছিল_ কি হয় একটু আয়োজন করে ভিজলে? আমার আবার হাঁপানির টান আছে। তাই কোন মতে মাথা বাঁচিয়ে গেলাম টং দোকানে চা খেতে।
-কি ভাইজান কি অবস্থা? দিনকাল কেমন যায়?
আজকাল শেখ হাসিনাও আমারে ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট দেয়।
দিন বদলাইতাছে রে! ভালো না থেকে উপায় নেই।
মমিন, চা দে ভাই গলাডা ঠান্ডা করি।
-কিন্তু ভাইজান, চা তো গরম! গরম দিয়া ঠান্ডা কেমনে করবেন?
-কেন দুটি উত্তেজিত শরীর মিলিত হয়ে ঠান্ডা হতে পারলে। গরম চা আমার গলা কেন ঠান্ডা করতে পারতো না?
- ভাইজান ইদানীং আপনে বড় রশিক হইয়া গেছেন!
-কি আর করবো বল, মানুষ ভালো জিনিস চায় না। নষ্ট জিনিস চায়।
-ভাইজান তা অবশি ঠিক কইছেন।
-গরুর খাটি দুধের চায়ের চাইতে ডানো দুধের চা খাইয়াই মাইনষে বেশি আরাম পায়।
-দে চা দে। খাটি থাকলে তাই দিয়া ই দে। আর নইলে রঙচা দে।
-যে ভাইজান দিতাছি।
হঠাৎ ই ঠাণ্ডা বাতাস। কয়েকদিন আগের শীতে গাছগুলির মরে যাওয়া পাতা গুলি ঝরে ঝরে পড়ছিল। দুপুর গড়িয়েছে কেবল। বৈশাখে উৎসবমুখর গ্রামটা হুট করে অন্ধকার। আমি ভাবছিলাম বৃষ্টি যেন না থামে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনুভব করছিলাম সব। ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পরছে। পিচ ঢালা রাস্তা থেকেও মাটির সাদা গন্ধ আসছে। আসলেই মাটির গন্ধ কি? হোক না, যেটাই হোক না কেন। আর সেই গন্ধের সাথে মিশেছে ঝরে পরা আমের মুকুল। কয়েকটা চেনা অচেনা গন্ধ মিলেমিশে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে অন্তরটাকে।..হঠাৎ কখন যে নজরটা তার দিকে চলে গেছে বুঝতে পারি নি। হালকা আলোয় নিপুকে দূর থেকে দেখতে পাই। এই ঝুম বৃষ্টিতে একটা লেডিস্ ছাতা হাতে, ভিজে ভিজে কোত্থেকে যেন আসছিল.... আবার মাঝে মাঝে কি যেন কুড়োচ্ছিল। পরে ভালো করে নজর দিয়ে বুঝতে পারলাম, একটু আগে বাতাসে যে আমের কঁড়াগুলো পরেছে, তার থেকে বেছে বেছে তুলনামূলক বড়গুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিল। যদিও বড্ড অগোছালো, তবুও সাজসজ্জা দেখে যতদূর মনে হচ্ছে_ স্কুলের বৈশাখী উৎসব থেকে ফিরছিলো।

কোথায় যেন হারাচ্ছি... ক্ষনিকের জন্য মনে হচ্ছে_ নভেল থেকে লেখকের অনুমতি ব্যাতিত এই জনবহুল, প্রান ওষ্ঠাগত, সেমি কালারফুল, আলো অন্ধকার গায়ের টং দোকানের পাশ দিয়ে যে রাস্তা টা তার উপরে অনেকটা নিশ্বব্দে একটা ভালোবাসা আবির্ভূত করলাম।.. গাড়ো লাল, আর কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি, দু হাতে দূরথেকে মনে হোলো ১২ টি করে লাল চুড়ি। সব কিছুই ভালো লাগছিল। ছাতা থেকে বেয়ে বেয়ে পড়া টুপটুপ পানি, পিঠে লেপ্টে থাকা অগোছালো চুল। চুল ছেড়ে হাটা মনে হয় দীর্ঘদিনের অভ্যাস, মিশরের নীল নদের মত দীর্ঘ চুল মেলে কোন এক জরুরী কাজ থেকে ফেরা। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমার দেখা এই প্রথম খুব প্রিয় একটা দৃশ্য।
আচলটা রাস্তা ঘেঁষে, ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে। যেন খুব পরম ভাবে, চরম অবহেলা হচ্ছে ওই আচলের প্রতি। মেয়েটা কেন যে আচলের প্রতি এই অবহেলা টা করছিল।
দেখতে ভীষন অন্যরকম ওই অবহেলা।
...বৃষ্টি আরো বেড়ে গেছে। এখন লোকজনের পরিমাণ জায়গার তুলনায় বেশি।
-দেখি দেখি দেখি, ভাই একটু সরেন, একটু চেপে দাড়ান বলেই ব্যতিব্যস্ত লোকটা তার বিশাল ভুঁড়ি খানা চাপিয়ে দিল, হঠাৎ ভুঁড়ির চাপে অন্যমনস্ক আমার দম প্রায় আটকে আসছিল। পাশের দুএকজন মহাজ্ঞানী নিপুকে দেখিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলছিল_ এতবড় ধিঙ্গী মেয়ে এমন অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কোত্থেকে আসছে দ্যাখ। আর একজন বলছে_ ফ্যামিলির শাসন ভালো না হলে যা হয়। অন্যজন_ এই মেয়ের যা চাল চলন, তাতে আমার তিনটে ছেলেও হার মানবে... পুরা চ্যাংড়া মার্কা চলন বলন।
তবুও সবকিছু ভাল লাগছে, নিপুর প্রতি মানুষের সমালোচনা, ছোট্ট চালায় সবার হুরোহুরি, বৃষ্টি থেকে মাথা বাচানোর জন্য একটু ঠাই। টং এর টিনের চালে রিমঝিম, চায়ের কাপে পানির ফোটার টুপটাপ শব্দ...... ভালো লাগছিল সবকিছু।
সবার চোখে তার নামে অভিযোগ করার হাজারটা কারণ ছিল। কিন্তু কাউকে ভালোবাসার জন্য যে কারণটা দরকার, হয়তো তখন তার মাঝে সেটা শুধু আমিই খুঁজে পাচ্ছিলাম।
হতেই পারে সে উপন্যাসের কোন চরিত্র, তাতে কি। বাস্তবে রুপ কেউ যদি দিতে চায়, ঠেকানোর সাধ্য কার?

ভিজে যাওয়া ঠাণ্ডা হাত দিয়ে নিজের কপালটা চেপে ধরলাম, যেন মাথার ভেতরটাও শীতল হয়ে উঠল। একটুখানি ভিজতে ইচ্ছে করছিল। যে বৃষ্টি নিপুকে ছুয়ে গেল... তার স্পর্শ নিতে, কি হয় একটু ভিজলে? এত কিছু ঘটে গেল এই অল্পখানি বৃষ্টির মধ্য দিয়ে।.থেমে গেল বৃষ্টি। সবাই চলে যাচ্ছে। আমিও বের হলাম।
দোকানদার মমিন ডেকে বলল, ভাইজান সব নিছেন তো? এক্কেবারে ভিজা গ্যালেন যে।
হা নিয়েছি।
-কই কিছু তো সাথে দেখিনা।
নিয়েছি, অনুভব। একান্ত ই আমার তা।
-ভাইজান বৃষ্টি কিন্তু চলবই... বিড়ি সিগারেট যা লাগে এখনি নিয়া যান।
নাহ... আজ আর ওসব লাগবে বা।..
এই মেয়ের উদাসীনতাকে ভালোবাসতে পারলে যে প্রেমটা হবে
ওইটাই বোধহয় জগতের সুন্দর প্রেম!!! তাকে ভালোবাসতে না পারলে মনে হয় জীবনের অতি মূল্যবান ভালোবাসা ও অনুভূতিটাই নিখোঁজ রয়ে যাবে।...সন্ধেবেলা। কারেন্ট চলে গেল। আর এই সুযোগে মেঘাচ্ছন্ন আকাশটা তার সব কালো ঢেলে দিয়ে পুরো গ্রামটা ঘুটঘুটে আঁধারে ডুবিয়ে দিলো। ভালোই হয়েছে, এতক্ষণ অনেকবার দুপুরের সময়টা চোখের সামনে আনতে চেয়েছি আসেনি। এখন ঘুটঘুটে অন্ধকারে সব স্পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছি।
অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিপুকে একটা চিঠি দিলেই ভালো হবে।
মানুষের মুখের কথা কখনো কখনো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়,
কিন্তু চিঠির লেখা হারায় না। গেঁথে থাকে কাগজে,গেঁথে থাকে অন্তরে।
.হারিকেন এ আগুন ধরালাম।
হাতে কলম নিয়ে বসে আছি।
চিঠি লিখবো। কিন্তু কি লিখবো? হঠাৎ মনে হলো_ কাল নিপুর কপালে টিপ খুঁজে পাই নি। তাই টিপ দিয়েই শুরু করলাম...

"আমাকে তোমার কপালের টিপ বানিয়ে নিও। আমার কপালে তুমি না থাকো, অন্তত তোমার কপালে যেনো আমি থাকি।
আর যদি কপালে জুটেই যাও.... প্রতিদিন একবার ঝগড়া করিও।
একদিন শীতের রাতে সব ঝগড়া থামিয়ে তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবে। আমি খুব সকালে এক কাপ চা নিজ হাতে বানিয়ে খাওয়াবো। সাথে দু-চারটা খোলা বিস্কুট।
তারপর একটা চাদর জড়িয়ে পূবের যে শর্ষে ক্ষেত আছে, সেখানে ঘুরে বেড়াবো। খালি পায়ে সিক্ত শিশির।
সেদিন পর্যন্ত অভিমানটা পুষে রেখো।
ভালবাসার দায় এড়িয়ে গেলে ভিন্ন কথা। সংসারে চাল,ডাল,
লবন আর রুনু-মুুনু ছাড়াও যে আমিও থাকব সেটা না হয় সেদিন হদিস করে নিও।.
আর কোনো কিছুই খুজে পেলাম না!
আকাশ চিৎকার করছে। একটু পর কেঁদে দিবে। তার আগেই চিঠি শেষ করলাম।
আর একটি মাত্র লাইন,.....
"পরের বৃষ্টিতে তোমাকে নিয়ে ভিজতে চাই''...হঠাৎ টেলিফোনের ক্রিং ক্রিং।
আর গল্পটা বলাই হলো না। লোকটা আবার হো হো করে হেসে উঠলেন, ইয়াংম্যান ভালো লাগছিল। চিঠির গতি কিন্তু ভয়ানক। প্রেমের প্রস্তাব না দিতেই সংসারে প্রবেশ, হা হা হা.... গল্পটা শেষ অব্ধি শোনার ইচ্ছে আছে। আপনার নাম্বারটা দিয়ে যাবেন, আমি যোগাযোগ করে নেব। আর বাইরের ছেলেটার কাছ থেকে আমার একটা কার্ড নিয়ে যাবেন। বুধবারের মধ্যে আমি যোগাযোগ করতে না পরলে আপনিই একবার মনে করিয়ে দেবেন। ....নিপু, ওনার কথা শুণে এবার কিন্তু আমারি হাসি পাচ্ছিল..., আমার মতো একজন সাধারণ বেকারের কথা কি ওনার মনে থাকবে বলো......??? আমিই বরং মনে করিয়ে দেব। বর্তমান আমার যা অবস্থা, তাতে করে চাকরি একটা ভিশন প্রয়োজন। তোমার গল্পটা শুণিয়ে যদি চাকরিটা পেয়েই যাই... তাহলে তোমাকে সেই শাড়িটা কিনে দিব। কিন্তু তুমি কি নেবে???.... আর তোমাকে পাবই বা কোথায়?
আমি বরং শাড়িটা আমার এই ব্যাগটাতে রেখে দিব। এই ব্যাগটা সবসময় আমার কাছেই থাকে। যেদিনই দেখা হবে শাড়িটা নিও।.... না বলতে পারবে না কিন্তু......
....✍️
.....✍
KBA Creations
Misir Himu
KiBu Ahsan
KiBu Ahsan
KiBu Ahsan Photography ™️.

13/05/2024

"শূন্যতা"
..... ✍️
"""" """"" """""" """""" """"
অদ্ভুত শূন্যতায় দিন কাটে আমাদের,শূন্য ভীষণ শূন্য!
মাথার উপর ভরসার হাত,সুন্দর দেহে ছড়িয়ে আছে অবহেলা,আত্না ভীষণ তৃষ্ণায় ডুবে আছে একটু খানি ভালোবাসার নেশায়।

একটু খানি ভালোবাসা পেলে পার্থক্য দেখা যায়-
ভালো মন্দ থাকার অভিধানে।আমাদের স্মৃতি ঘিরে রেখেছে মৃত দেহকে।স্মৃতির দাম কত??

তোমার আমার ভালোবাসায় কত টুকু মিল ছিলো?
কতবার আফসোস করেছি-অমিলের হিসাব করে।
কত সুন্দর সময় নষ্ট করেছি-অভিমান লুকিয়ে রেখে?
ভালোবাসার সাথে রাগের ভীষণ সুন্দর সম্পর্ক আছে।
প্রেমময় ভালোবাসায় রাগ থাকবে।
তুমি যখন সংসারী হবে তখন রাগের কারণ জেনে যাবে।

অথচ এই রাগের কারণ খুঁজতে যেয়ে তুমি সংসারী হয়ে গেলা।

মদের গ্লাসে বরফ থাকে কারণ ওখানে তোমার ছবি নেই।
ওখানে রোমান্সকর কিছু দৃশ্য আছে।
প্রেমিকা হারানোর ভয়ানক দৃশ্য।আবার রাত পরীও আছে।মদ্যপানে রাত পরী সময় বিক্রি করে।
টাকা দিয়ে অস্থায়ী সুখ এবং চিরতরে হারিয়ে যাবার দুঃখ কিনে নিতে হয়।

জেলখানার কয়েদীর মৃত্যুর সময় তার সকল চাহিদা মেটানো হয়।

আত্নহত্যার সময় মানুষ ভীষণ ভাবে বাঁচতে চায় কিন্তু সময় শেষ হয়ে যায়,বেঁচে থাকার কৌশল হারিয়ে ফেলে।

বৃষ্টির সময় একাকীত্ব চেঁপে বসে,তখনও মানুষ আত্নহত্যা করতে চায়,মদের গ্লাসে পুরনো অতীত ফিরে পায়।কবি মদের গ্লাস হাতে নিয়ে বারান্দায় পায়চারী করে।

কবি মদ খেয়ে সাদা আকাশকে বাড়ির ছাঁদ ভেবে,তোমার সঙ্গ খুঁজে পায়।
তুমি সংসারী হয়ে,চড়া দামের স্মৃতির বাজারে শূন্য ক্রেতা।
.... ✍️

Misir Himu
KiBu Ahsan
KiBu Ahsan
KiBu Ahsan Photography ™️.

"পাড়ের চিহ্ন"  (পর্ব ১-২) .....✍️"""" """""  """""""  """"""""  """"১.⇨ আমি ঘুম থেকে উঠে আপনাকে দেখতে চাই, এবং ঘুমতে যাও...
30/04/2024

"পাড়ের চিহ্ন"
(পর্ব ১-২)
.....✍️
"""" """"" """"""" """""""" """"
১.
⇨ আমি ঘুম থেকে উঠে আপনাকে দেখতে চাই, এবং ঘুমতে যাওয়ার আগেও। জেনে রাখুন, আমি ভালোবাসলে আপনি ভালো থাকবেন। আর না বাসলে? বেঁচে থাকবেন....
আপনাকে দেখার পর থেকে মনে হচ্ছে আমি কষ্টে আছি, যার অনুবাদ I am in love. যদিও আপনার মধ্যে হৃদয় বলে কোনো উপদ্রব নেই। তবুও আমি অক্ষত হৃদয় নিয়েই প্রেমের সাথে আপনার প্রেমে পড়েছি। নাহলে আমার একই মনে, নানা রকমের ইচ্ছে কেন জাগে? রোজ!

➤তোমাদের ডাক্তারী পড়ুয়া মেয়েরা বড্ড নির্লজ্জ হয় এতে কোনো সন্দেহ রইলো না আর। তোমাদের থেকে আমার শিশুতোষ জীবন অনেক শালীন, অনেক সাবলীল।

⇨শিশুই তো! আচ্ছা বলেন তো, আপনি কোনো মেয়ের সান্নিধ্য নিয়েছেন কিংবা পেয়েছেন কখনো?”

➤অশ্লীল অশ্লীল অশ্লীলতা... ?

⇨এবার হলো তো প্রমাণ?

➤মানে?

⇨মানে, আপনি একটা শিশু, কচি, কচি পোলা; আটাশ বছরের কচি পোলা৷

গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললাম, “আচ্ছা, গতরাতে ভার্জিনিটি বিষয়ক কিছু একটা বলছিলে….”

⇨“হ্যাঁ৷ আপনি তো জলজ্ব্যান্ত একটা ভার্জিন বস্তু! আপনি কোনোদিন সিগারেট স্পর্শ করেননি, উল্টাপাল্টা পানীয় পর্যন্ত খাননি; মানে, আপনার হাত-ঠোঁট-গলা সব— সবকিছুই ভার্জিন, এক্কেবারে ইনটেক! আচ্ছা, মেইনটেইন কীভাবে করেন?”

নিপুর হিউমার প্রয়োগটা বুঝতে পেরে বেশ গর্বিত আমি ছোট্ট করে হেসে দিলাম; যে হাসিতে অহংকার স্পষ্ট৷

কিন্তু অবাক করে দিয়ে নিপু বললো, “এ বুড়ো বয়সেও ভার্জিন থাকাটা যতটা না অহংকারের, তার চাইতে বেশি সন্দেহের৷”
কথাটা শুনে আমি খানিকটা অপ্রস্তুত৷

সেসব থোড়াই পরোয়া করে নিপু বললো, “যাকগে, আপনার হাতের ভার্জিনিটি তো গেছে, সিগারেট তো স্পর্শ করেই ফেললেন; আপনার ঠোঁটের অহংকারও আজ শেষ করে দেবো৷” আচ্ছা তার আগে বলুন তো, "আপনার কি বন্ধু বান্ধব নেই, থাকলে তো দুএকবার সিগারেট খাওয়াটা অন্তত হয়েই যেতো!"

➤বন্ধু বান্ধব থাকবে না কেন? আছে... একটা ঘটনা বলি শোনো,
আমাদের জে.এস.সি পরীক্ষার শেষ দিন আমরা বন্ধুরা ঠিক করলাম আজ সিগারেট খাবো। তারপর পরীক্ষা শেষে কোথায় খাবো, কোথায় খাবো.... শহরে জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।...

⇨হোয়া..ট..

➤হ্যা। তখন ফখরুদ্দীনের তত্বাবধায়ক শাশনামল কেবল শেষ হয়েছিল। কিন্তু তখনও আর্মি ক্যাম্পগুলো শহরে বেশ সক্রিয়। সামান্য পান থেকে চুন খসলেই বেধড়ক পিটুনি। আর আমাদের তখন দাড়ি-গোফ সবে উঠছিল। এমন নাবালকদেরকে সিগারেট হাতে দেখলে আর্মি কি যে করবে সেটা ভাবাটাই আহটের।

⇨তারপর?

➤আমরা আমাদের বাজারে এসে একটু সাহস পেলাম। কিন্তু সিগারেট কেনা নিয়ে বিড়ম্বনা, কেউ কেনার সাহস পায় না... শেষমেশ আমিই সাহস করে পা বাড়ালাম। দু প্যাকেট মেরিস সিগারেট কিনে টাকা দেওয়ার সময় দোকানদার মুখ দেখেই নানার নাম বললেন। আমি তখন নানার বাড়িতেই থাকতাম। দোকানদার টাকা ফেরত দিয়ে জিগ্যেস করলেন, "পরীক্ষা কেমন হলো!" ঘার বাকিয়ে চলে আসছিলাম, দোকানদার পিছন থেকে ডেকে টাকা ফেরত দিয়ে বললো, "টাকা লাগবে না, তুমি সিগারেট নিয়ে যাও। বিকেলে তোমার নানার কাছে টাকা নিয়ে নিব, তাছাড়া এখানে তোমার নানার নামে খাতাও খোলা আছে।"

⇨হা হা হা.....হা... তারপর...

➤তারপর আর কি, সিগারেটের প্যাকেট ওনার দোকানেই রেখে আমি দৌড়...

আবার নিপুর হাসি; এ হাসিটা কেমন যেন অন্য রকম বিশ্রী শুনতে, তবে মায়া আছে যে... এ হাসি অন্য কোনো জগতের সৃষ্টি৷ দুটো টানটান ঠোঁটের মাঝখানে শরতের শুভ্রতা; খেয়াল করলাম নিপুর ঠোঁটের সীমানা ভেঙে এক কোণে খানিকটা লিপস্টিক লেপ্টে আছে; খুব সামান্য, কেবল সুগভীর দর্শনে চোখে পড়ে৷ সাথে সাথে আমার সারা শরীরে এক অসম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো— আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় সেটা মুছে দেবো, না কি দেবো না?

দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টিতে আমার চোখ নিপুর ঠোঁটের কোণে৷ নিপু বললো, “আপনাকে একটা কথা বলি শুনুন; পৃথিবীর প্রায় সকল পুরুষই মনে করে তারা চোরাদৃষ্টিতে নারীশরীরের কোন দিকে তাকাচ্ছে সেটা সে নারী বুঝতে পারে না৷”

একটা বিশাল কথার ধাক্কা; নিপুর ঠোঁটের ওপর থেকে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম৷

নিপু বলতে থাকলো, “কিন্তু পুরুষের ধারণাটা একদম ভুল৷ আসলে একশো হাত দূর থেকেও পুরুষের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা মেয়ে বলে দিতে পারে পুরুষটি তার শরীরের ঠিক কোন অংশে তাকিয়েছে৷”

➤বেশিরভাগ পুরুষের আফসোস তো এখানেই৷

⇨মানে?

➤মানে, পুরুষ কোন দিকে তাকিয়েছে নারী এটুকুই কেবল বোঝে, দৃষ্টির ভাষাটা কখনোই বোঝে না৷

নিপু উচ্চতানে হেসে উঠলো; সে হাসিতে নিস্তরঙ্গ হাওয়ায় এক দারুণ সুরঝংকার খেলে গেল৷

➤হাসলে যে?

⇨কারণ, ছেলেদের এই এক সমস্যা, তারা চোখের ভাষা বোঝাতে চায়৷ শুনুন, চোখের কোনো ভাষা থাকে না; ওসব ভ্রম ৷

➤মানুষের চাহনির কোনো অর্থ থাকে না?

⇨না৷ কারণ প্রতারক ও প্রেমিকের দৃষ্টি সচরাচর একই রকম হয়৷

আমার উল্টো প্রশ্ন, “প্রেমিক আর প্রতারকের মধ্যে কোনো পার্থক্যই দেখতে পেলে না?”

⇨এই যে ধরুন, আজ আপনি প্রেমিকের অবস্থানে; কে জানে, এই আপনিই হয়তো কাল প্রতারকের বেশে৷ এখন আপনিই বলুন, এই মুহূর্তে আপনার যে দৃষ্টি, তাকে আমি প্রেমিকের চাহনি বলবো, না-কি সম্ভাব্য প্রতারকের?

নিপুর কথাবার্তায় আমি কিছুমাত্রও আহত হলাম না; কারণ আমি এতটুকু নিশ্চিত, নিপুর সৌন্দর্য এখানেই!

নিপু বললো, “ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন; বলুন তো একটা নারীর সৌন্দর্য বলতে আসলে কী বোঝায়?”

আচমকা হকচকিয়ে গেলাম; সৌন্দর্য বিষয়টা এইতো মনে মনে ভাবছিলাম, নিপু সেটা কীভাবে ধরতে পারলো? প্রশ্নসংকুল বিভ্রান্ত চোখে নিপুর দিকে তাকালাম৷

নিপু বললো, “এতে এত অবাক হবার কী আছে? আমি তো জানিই যে আমার সবকিছুই আপনার সুন্দর লাগে; আমার মুখ থেকে এমন কঠিন একটা কথাও আপনার সুন্দর লেগেছে— এটা খুবই সাধারণ একটা সমীকরণ৷ তাছাড়া সুন্দর মন যাদের, তারা অসুন্দরেও সুন্দর খুঁজে পায়৷”

কিছু একটা বলতে যাবো, এমন সময় নিপু থামিয়ে দিল, “থাক, সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আপনার দেয়া লাগবে না; আপনি বরং সিগারেটটা একটু ধরান৷”

হাত বাড়িয়ে সিগারেটটা নিলাম৷ নিপুকে বেশ খানিকক্ষণ ব্যাগ হাতড়ে দেয়াশলাই বক্সটা বের করতে দেখে আমি বেশ কৌতুহলী হয়েই বলেছিলাম, “আমার কাছে এ পৃথিবীর সবচাইতে বড় রহস্য কোনটা, জানো? আমার কাছে সবচাইতে বড় রহস্য হলো….মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ৷”
শুরু করা বাক্যটি শেষ করলো নিপু৷

⇨কী এত থাকে ব্যাগের ভেতর?

➤একটা সমৃদ্ধ জাদুঘরে যা যা থাকে৷

নিপুর উত্তরে আমি পূনরায় প্রশ্ন জুড়লাম, “যেমন!”

⇨জী; আমাদের ভ্যানিটি ব্যাগ হচ্ছে রীতিমতো একটা জাদুঘর— নেইল কাটার থেকে আই লাইনার, টুথপিক থেকে লিপস্টিক— সব পাওয়া যায় এ জাদুঘরে৷

দেয়াশলাই বক্সটা হাতে দিয়ে সিগারেটটা নিয়ে নিল; এরপর সেটা ঠোঁটে ধরে নিপু বললো, “আগুনটা জ্বালান তো একটু৷”
আগুন জ্বাললাম; মুখটা এগিয়ে সে আগুনে সিগারেট ধরালো নিপু৷ তারপর দলা পাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো সরাসরি আমার মুখের ওপর৷

সিগারেটে কয়েকটা টান দিয়ে ঠোঁট থেকে বের করে সেটা পুনরায় এগিয়ে দিলো আমার দিকে; বললো, “ধরুন তো একটু৷”
জ্বলন্ত সিগারেটটা হাতে নিলাম৷ নিপু কোনো কথা না বলে চুপচাপ তাকিয়ে থাকলো চোখের দিকে, মুখের দিকে; দারুণ একটা খেলা শুরু হয়ে গেছে৷

সিগারেটের দিকে তাকিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম— সেখানে লেগে থাকা ঠোঁটে কি ঠোঁট ছোঁয়াবো, না-কি মধুমাখা বিষপেয়ালার আকর্ষণ থেকে নিজেকে নিবৃত করে সারাজীবনের আফসোস কিনবো?

কয়েক মুহূর্তের ভাবনাপর্ব শেষে হাতে ধরা সিগারেটে লিপস্টিকের দাগ লক্ষ করে ঠোঁট এগিয়ে; ঠোঁটের সাথে মিলে গেল ঠোঁট! একটা টান দিতেই বুকের মধ্যে একটা ধাক্কার মতো লাগলো৷ প্রচণ্ড কাশিতে গলার শিরাগুলো রীতিমতো ছিঁড়ে যাবার জোগাড়৷

নিপুর লাল লিপস্টিকে হাসির দাগ৷ আমার চোখের কোণে রীতিমতো জল জমে গেছে৷

নিপু বললো, “থাক, আর খাওয়া লাগবে না; দিন আমাকে৷”

কোনো উত্তর না দিয়ে পুনরায় টান দিলাম; মাথা খানিকটা ঝিম ধরে এল৷ নিপু কাছে এগিয়ে এসে বাম হাতের উপর তার হাতটা রাখলো; বললো, “কী হলো? মাথা ঘোরাচ্ছে?”

মাথা খানিকটা তুলে বললাম, “একটু৷”

কথাটুকু বলেই খেয়াল করলাম আমার হাতের উপর নিপুর হাত; সমস্ত শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে গেল! চট করে সিগারেটে আরেকটা টান দিলাম; মাথার মধ্যে একটা চক্কর দিয়ে উঠলো৷ নিপু হাত থেকে সিগারেটটা কেড়ে নিল; আমার হাতটা শক্ত করে ধরে থাকলো, “খুব বেশি খারাপ লাগছে?”.....
হা হা হা.... অথচ এই মেয়েটাকে প্রথম যখন দেখতাম তখন এতোটা বিগ্রে যাওয়া কখনোই মনে হয় নি।

একদিন নিয়মমাফিক শেষ বিকেলে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছি। নানার বাড়িতে আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে। পরিশেষে অনেক তালগোল পাকিয়ে আমি মাস তিনেক যাবৎ তখন নিজের বাড়িতে স্থায়ী হয়েছিলাম।

চারালকাটা নদী। বর্ষার মৌসুম। ছোট্ট নদী কিন্তু বর্ষায় অনেক বড় হয়। স্রোত নেই তবে এখনও পানিতে ভরপুর। এখন এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। আসরের আজান অনেক্ষণ আগে হয়েছে, মাগরিব ছুঁই ছুঁই। আকাশে আলো ফুরিয়ে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে। ওপার থেকে নৌকা নিয়ে আসছে যহর মাঝি। সারা বছর মোটামুটি সে ই পারাপারের একমাত্র ভরসা। নৌকা চালায় আর ভুট্টা লাগায় নদীর ধারের বালু জমিতে। নৌকার উপর দুটো ব্যাগ রেখে আয়েশ করে বসে আছে, নিপু। ডাক্তারি পড়ছে, এ গ্রামের বেশ সম্মানিত পরিবারের মেয়ে। নৌকা এপাড়ের কাছাকাছি আসলে, আধো অন্ধকারে এপাড় স্পষ্ট হয়ে উঠে। বড় তালগাছটার নিচে, বাসের মাচালিতে বসে আছে কেউ একজন। যহর মাঝি দেখেই চিনতে পারে। মুখে হাসি ফুটে ওঠে তার।
-আপা দেখেন, আমাগো বেনু ভাই। পাগল মানুষ।
নিপু তালগাছটার দিকে তাকিয়ে মানুষটাকে দেখতে পেল।
-পাগল কেনো?
-রোজ রোজ এইখানে বসে থাকে। কি যে দেখে আল্লা জানে!
-এখানে বসে থাকলে খারাপের কি হলো?
-আরো তো কারণ আছে আপা। আমারে ঠিক করছে তারে নৌকা চালান শিখাইতে হবে। রোজ তারে আমার নৌকা চালানো শিখাইতে হয়। রোজ পঞ্চাশ টাকা দেয়। তয় মাথা ভালা। শিখা ফালাছে প্রায়। অথচ জীবনে বৈঠা ধরে নাই।
ঘাটে নৌকা বেঁধে নিপুর ব্যাগ হাতে নিয়ে পিছনে পাড়ে উঠে আসে যহর মাঝি। নিপুকে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত তার কাজ। তালগাছের সামনে এসে মানুষটার দিকে তাকায় নিপু। মাচালির উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কি দেখছে সে ই জানে। সামনে আকাশ ভরে উঠছে অন্ধকারে।
মাচালির উপর মানুষটা আমি, বেনু।

গ্রামের সবার কাছে আমি এখনও অপরিচিত। মেশার মতো কেউ নেই। তাই শেষ বিকেলে নদীর ধারে আসি...
প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে বাজারে গিয়ে এককাপ চা খেয়ে নদীর দিকে হাটা শুরু করি। তারপর পারে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। এই সময়, আকাশ আর নদীর ঠান্ডা বাতাসটা ভীষণ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা পেরোয়, রাত নামে। রাতের আকাশে যখন তারায় তারায় ভরে উঠে, আকাশটাকে বিয়ে বাড়ির মাথার উপরের আকাশ মনে হয়। দাদীর ভীষণ ইচ্ছে ছিলো আমার বউ দেখার। বলতেন,
"নাত বউ হইবে ধলা,
রাইধবার দেইম হামার খ্যাতের মূলা।"
কিন্তু তিনি সে ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসতে পারেন নি। প্রায় তিন বছর হতে চলল, তিনি মারা গেছেন। মরার আগে বছরখানেক চোখে দেখতেন না। সামনে কেউ এলে, ভাঙা কন্ঠে বলতেন, কাঁয় তোমরা?
.. তো এমন করে নদীর ধারেই ৭দিন পর পর নিপুর সাথে আমার দেখা হয়ে যেত। এই হঠাৎ সাক্ষাৎ একসময় পরিচয়ে এবং আধো বন্ধুত্বে গড়িয়েছে। বন্ধুত্বের খোলস ছেড়ে পরবর্তীতে প্রণয়।
সে সিগারেট খায় সেটা তার সাথে পরিচয়ের ১০দিনের মাথায়ই আমাকে জানিয়েছে।
হঠাৎ রাত ১১টায় একদিন ফোন করে বললো, "সুরভী উদ্যানের আশপাশ আপনার কোন পরিচিত বন্ধুসূলভ কেউ আছে?"
আমার পরিচিত অনেকেই থাকায়, আমি সহজভাবেই সম্মতি দিলাম, "হ্যা অনেকেই আছে, কিন্তু কেন!"
সে গুরুতর সমস্যা জানিয়ে কাউকে তার হোস্টেলের সামনে পাঠাতে বললো এবং আমি তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে পাঠালাম। পরবর্তীতে পাঠানো বন্ধুকে কারণ জিজ্ঞেস করায়, বন্ধু আমাকে বেশ রাগান্বিত উপস্থাপনায় জানালো : নিপুর সিগারেট শেষ হয়ে গিয়েছে এবং হোস্টেলের বাইরে যাওয়ার সময় শেষ হওয়ায় তাকে দিয়ে সিগারেট আনিয়ে নিতেই এমন গুরুতর কারণ দর্শানো।

নিপুর সাথে যখন আমার সম্পর্কের চার মাস বয়স তখন আমি "কিছু একটা করতে হবে" এই ভেবে ঢাকায় আসলাম। অপরদিকে নিপুও স্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে উঠলো।
আর আমি ঢাকায় উঠলাম নজরুল ভাইয়ের সাথে। একা মানুষ উনি, তাই আরেক পাগলরে রুমমেট বানিয়ে নিলেন। বাসাটা একটা সুন্দর জানালাওয়ালা পুরাতন রুমের। আমার রুমমেট নজরুল ভাই স্কুলের অংকের শিক্ষক, অংকের জাহাজ নামে খ্যাতি আছে তার। বেশ অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের ছেলে তিনি। প্রতি কুরবানির ঈদে দুইটা করে গরু কুরবানির সুনাম আছে তার পরিবারের। তবে তিনি তুলনামূলক কিঞ্চিৎ কৃপণ স্বভাবের হওয়ায় ভাড়া বাঁচাতে আমাকে রুমে তুলেছেন। আমাদের রুমে অনেক জিনিসপত্র, তবে আমার নিজস্ব সম্পত্তি বলতে একটা টেবিল আর একটা আলনা। চকি একটা কিনতে চেয়েছিলাম তবে নজরুল ভাইয়ের খাট থাকায় আর কেনা হয় নি।
..
২.
নিপুর সর্দি লেগেছে। বারবার নাক টানছে। আমি ফোনের এপাশ থেকে বুঝতে পারছি ওর দিনকাল খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। হোয়াটসএ্যাপে খুব একটা ভালো কথা শোনা যাচ্ছেনা। আমি আবার মেসেঞ্জারে চেষ্টা করলাম কথা বলতে। নিপু বারবার বলছে, আমি ভালোবাসি। আমি তারপরও আরেকবার আরেকটু স্পষ্ট করে শোনার জন্য ওকে ফোন করেই যাচ্ছি। ও ১৪ তম চেষ্টায় ফোন ধরার পর আমাকে বললো, বেনু থামো। হবেনা তো ওমন? বুঝতে পারছোনা?
আমি মৃদু হেসে বলি, না হতে হবে। আমার ভালো লাগেনা। দিন কাটেনা। আমরা প্রতিবার যখন কাছাকাছি বসে থাকতাম, তুমি হাত ধরে যেভাবে ভালোবাসি বলতে ওভাবে বলতে হবে।

নিপু হাসে। আমি কল্পনা করতে পারি ও এখন ডান চোখের ভ্রু উচিয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসছে। ওর হাসি প্রথম যখন শুনেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো মেয়েটার ঠান্ডা লেগেছে। এখন মনে হয়, আচ্ছা এমন হতে পারে যে মৃত্যুর পর আমি খোদার সাথে একটা চুক্তি করলাম। চুক্তিনামায় একটাই চুক্তি। আমার প্রতিটা ভালো কাজের বিনিময়ে ওর খসখসে বিচ্ছিরি রকমের হাসিটা এক মিনিট করে শুনতে দিতে হবে।
নিপুর হাসি কমে আসলে আমাকে বললো, তুমি এমন পাগল পাগল করো মাঝে মাঝে। আমি তোমার থেকে এখন প্রায় ৪০০ কিমি দূরে তোমার প্রাক্তন শহরে বসবাস করছি। তোমার হাতটাও ছুয়ে দিতে পারছিনা।
আমি দীর্ঘশ্বাসটা টেনে আরেকটু বড় করে ওকে বললাম, এ আর কতটুকু দুরত্ব নিপু, আসল দুরত্ব তো আমার দারিদ্রতা। দারিদ্র্যতার কাছে একদিন যদি হেরে যাই, কিংবা তুমিই পরাজিত ঘোষণা করো!
নিপু খুব মনঃক্ষুণ্ন স্বরে এমনটা পরবর্তীতে না বলার অনুরোধ করলো, এবং ইতিমধ্যেই জয়ী ঘোষণার প্রবল আশ্বাস প্রদান করলো।
আমিও সেটা শুনে আপ্লুত কন্ঠে তাকে শোনালাম,.তুমি আমার মনে এসো
কাউকে না জানিয়ে, বৈশাখী ঝড় তুলে
খুব করে ভালোবেসো...

নিপু আবার হাসছে। আমি জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ওর হাসি শুনি। একটু পর বলি, বেশি সস্তা হয়ে গেছে লাইন ক'টা, আমি তো পারিনা জানোই।
নিপু আমাকে ফোনের ওপাশ থেকে বলে, তোমাকে অনেক ভালোবাসি।সত্যি, সত্যি, তিন সত্যি।

ফোনটা রেখে দেওয়ার পরও কানে বারবার ভালোবাসি কথাটা বাজতেই থাকলো। এমন কেন লাগে? যখন খুব ভালোবাসার মানুষটা তার মনটা মেলে ধরে, তখন এমন কেন লাগে? আমি উত্তর খুঁজিনা।

আমার মাঝে মাঝে কাঁদতে ইচ্ছা করে। এই যেমন এখন ইচ্ছা করছে। এই কান্নাটা আনন্দের। আনন্দটা হয় যখন মনে হয় নিপুর মত একটা অসাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে এটা ভেবে। মেয়েটা আমার থেকে গুনে গুনে ৭ বছরের ছোট। কিন্তু যখন কথা বলি মনে হয় ও আমার থেকে অনেক বড়, অনেক পরিপক্ব।
পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল সমস্যাটা আমার মত প্রেমিকদের। এরা হাজার লক্ষবার চেষ্টা করলেও বলতে পারেনা কাউকে কতটা ভালোবাসা যায়। আমিও পারিনি।
নিপুকে আমি বলি, তোমার নামটা নিপু রেখেছে কে?
নিপু হেসে বলে, তোমাকে আগেই বলেছি। নিপু শব্দের অর্থ হলো "নিশ্চিত"। আমার ফুফু, আমি হওয়ার পর আমাকে দেখে বাবাকে বলেছিলো, আল্লাহ এই মেয়ের তো কপাল অনেক বড়, নাকটায় কি শান, আর চোখ জোড়া দ্যাখ কেমন ডাগর কালো....। নিশ্চিত এই মেয়ে রাজ কপালে পয়দা। ভাই তুই এর নাম নিপু রাখ। নিপু নামটা শুনেই ছেলেরা সাবধান হয়ে যাবে। বুঝে যাবে, এ যেন তেন মেয়ে নয়। এ হলো রাজকুমারী।
আমি হাসি। যতবার এই গল্পটা ওর কাছে শুনি ততবার হাসি। নিপু তোমাকে হাজারটা জেগে থাকা রাতের জ্যোৎস্না উপহার দিলাম। তুমি আমার কবিতা হয়ে থেকো, সবচেয়ে প্রিয় কবিতা।
...

একদিন শুক্রবার সকাল বেলা বাসার বারান্দায় বসে আছি। হাতে এক কাপ চা। চিনি নেই ঘরে, চিনির ঠোঙ্গা ঝেড়ে দিয়ে আদা দিয়ে চা বানিয়েছি। খেতে ভালো হয়নি, আজকাল যাই মুখে দেই বিস্বাদ লাগে। মুখের সমস্যা নয়, বরং প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাব। বন্ধু ছোটন সকালে ফোন করে বলে, দোস্ত ২০০ টাকা ধার দে।
আমি পিচিক করে বেসিনে থুথু ফেলে ওকে বললাম, দোস্ত আমাকে ১০০ টাকা ধার দিয়ে যা। তিনদিন ধরে দুইবেলা বনরুটি আর চা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। মাসের স্যালারী পেয়ে টাকা দ্বিগুণে শোধ দিবো।

ছোটন ফোন কেটে দিলো দুটো অশ্লীল গালি দিয়ে। ছোটন আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। বর্তমানে সে একটি গরুর খামারে চাকরী করে। ক্যাশিয়ার টাইপ একটা কাজ। ওর একটু চোরা অভ্যাস আছে তাই বেশিদিন ওকে কেউ চাকরীতে রাখেনা। শেষ চাকরীতে তাঁকে রীতিমত গণপিটুনি দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছিলো। আমার মনে হয় তার বর্তমান চাকরীটাও এখন আর নেই। ওর বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। প্রায়ই তাঁকে স্কুলের হেডস্যার ক্লাসে এসে মারতে মারতে বলতো, আলিমের ঘরে জালিম হইছে। গতবছর ওর বাবা রিটায়ার্ড হওয়ার পর ২ লাখ টাকা পেয়েছিলো। কোন একভাবে ছোটন সেই টাকাটা চুরি করে পালিয়ে যায়। তিনমাস পর যখন বাসায় ফিরে তখন তার বাবার জানাযা পড়ানো হচ্ছে। ওর মা ছোটকালে পুলিশের এক হাবিলদারের সাথে ভেগে গিয়েছিলো। ভাই বোন নেই। সে খুব যত্ন করে বাবার কবরে হাত তুলে দোয়া পড়িয়েছিলো। রাতে আমার বাসায় ভাত খেয়ে সিগারেট ফুঁকে বলছিলো, একদিন অনেক বড় মানুষ হবো বুঝলি। তুলিরে বিয়ে করে গাড়িতে ঘুরাবো। তোরে ব্যাকসিটে চড়ায় আইসক্রিম খাওয়াবো।
আমি ওকে বললাম, দোস্ত তুই আর পড়াশোনা করবিনা?
সে খ্যাক খ্যাক করে হেসে বলে, ধুর বাল। পড়াশোনা করে কে কবে বড় হইছে। আমি ব্যবসা করমু। টাকার ব্যবসা। নিজে টাকা ছাপায় মানুষরে বান্দি বানায় খাটামু।
আমি হাসিমুখে বলি, তুলি কে?
ও আমার দিকে তাকিয়ে রহস্য করে বলে, আছে এক মাইয়া। ঢাকায় পরিচয় হইছে। ১০০ টাকা লাগে ওরে খাইতে। কিন্তু আমার থিকা টাকা নেয়না। ভালো মাইয়া দোস্ত। মন অনেক ভালো। মেয়েটার অসুখ করছে। আমি ওরে এখন আমার থাকার জায়গায় আইনা রাখছি। বহুত ভালো মেয়ে। আমারে ভাজি ডাল রাইন্ধ্যা খাওয়ায়।

আমি যখন মায়ের শাকের পাটিতে পানি দিতাম আর মা আমাকে ১০/২০টাকা পারিশ্রমিক দিতো তখন ছোটনের জীবনটা আমার অনেক আকর্ষণীয় মনে হতো। তখন ওর কাছে অনেক টাকা পয়সা থাকতো।
একদিন রাতে ওরে আমার কাছে থাকতে দিয়েছিলাম, আর হারামিটা সেইরাতে আমার ঘরে চুরি করে পালিয়ে যায়। আহারে ছেলেটা আমার কাছে চাইলেই আমি আমার জমানো টাকা দিয়ে দিতাম। শুধু শুধু আম্মার জমানো টাকা নিয়ে গেলো। ছোটন অবশ্য চুরি করে লজ্জা পায়না। অনেকদিন পর ঢাকা শহরে আবার হঠাৎ আমাকে দেখা হলে বলে, দোস্ত সেদিন মিসটেক হয়ে গেছে। খালারে আমি নিজে হাতে একদিন সোনার চুড়ি কিনা দিয়া আসবো। একটু সবুর কর। ব্যবসা করতেছি।

ছোটন গালি দিয়ে ফোন কাটার পর, ১৯দিনের বিরতি ভেঙে সেদিন সকাল বেলা নিপুকে ফোন দিলাম। নিপুর শহরে তখন ঝকঝকে সকাল বেলা। ওর গলা ঠান্ডায় মনে হয় জমাট বেধে গেছে। নাক টেনে টেনে কথা বলছে। আমি একটু সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসা করলাম, নিপু তুমি কি কান্না করছো?
নিপু চুপ করে থাকলো অনেকক্ষণ। আমিও নিশ্চুপ থাকলাম। স্থবিরতায় উত্তর খুজছিলাম, কিন্তু সব কেমন যেন শূণ্য হয়ে রইলো। ও আস্তে আস্তে বললো, জানো মাঝে মাঝে খুব একা লাগে। তখন কাউকে কাছে পাইনা। এমনটা হওয়া শুরু করছে এইবার আসার পর থেকে। কেমন যেন একটা স্তব্ধতা কাজ করে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে মনে পড়ে খুব?
নিপু অনেকক্ষণ পর ভেবে উত্তর দিলো, জানিনাহ! তুমি তো জানো আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা কেমন যেন দূরের মানুষের মত হয়ে গেছে। খুব খারাপ একটা সময়ে তোমার সাথে পরিচয় হয়। তুমি কি সুন্দর করে আমাকে জীবন কি তা বোঝাতে। আমার খুব ভালো লাগতো তোমার জীবনদর্শন। আমি তোমার সাথে আমার চিন্তা মিলাতে পারতাম না। কারণ আমি তোমার মত না বেনু। কিন্তু আমার খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা করতো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসছি জানো তো?

আমি কিছু বললাম না। ওর সব কথা এতো ভালো লাগে কেন আমি জানিনা। আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, আমিও খুব শীঘ্রই চলে আসবো। আমি তোমার হাত ধরে পুরাটা শহর হেটে বেড়াবো। আল্লাহর কাছে প্রতিদিন ভিক্ষা চাইবো যেন আমার সবকয়টা ঘুমভাঙ্গা ভোরে তোমার জন্য নতুন করে ভালোবাসা হয়।
কিন্তু আজকে নিপু কাঁদছে। আমি জানি নিপু কাঁদছে। ওকে বললাম, কি হয়েছে বলো তো?
নিপু ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে, বেনু তুমি জানো তো আমি তোমাকে ভালোবাসছি অনেক। তুমি জানো তো তাই না? কিন্তু আমার মধ্যে একটা একাকীত্ব ছিলো, তুমি কি সেটা কখনো বুঝতে পেরেছো?
আমি ওকে আদর করে বলি, কি হইছে তোমার বলো তো? আমাকে বলো?

নিপু নিজেকে সামলে বলে, আমার কিছুই হয় নাই। আমি জানিনা তুমি বুঝবে কতটা। কিন্তু আমার নিজেকে কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে আমি আর সেই মানুষটা নেই যেই মানুষটাকে তুমি চিনতে।
আমি বললাম, তুমি কেমন ছিলে, এখন এই তুমিটা কেমন আমি হয়তো বুঝিনা। কিন্তু আমি জানি তুমি অনেক ভালো। তুমি আমার পরী, মেডিকেল এপ্রন পরা সাদা পরী। আমি খুব দ্রুত তোমার কাছে এসে পরবো দেখো। হয়তো একদিন তোমার হোস্টেলে তোমার রুমের দরজায় এসে হাজির হয়ে যাবো। আমাকে সেদিন রান্না করে খাওয়াবে তো? তোমার হাতের খিচূড়ি আর ডিম?
নিপু হাসছে। আমি ওর হাসির শব্দে নদীর শান্ত জলে মাছারাঙ্গা পাখির ডানার গল্প খুজতে থাকি।

চলবে(To be continue).....

"পাড়ের চিহ্ন"
(পর্ব ৩-৪)
......✍️
""" """""' """"" """"" """"''' """
৩.
এরপর কেটে গেছে অনেকদিন। এর মাঝে নিপুর সাথে আমার আর কথা হয়নি।
প্রেমের শুরুর গল্পগুলো সবার এমন মধুর হলেও ধীরে ধীরে সেটা ফিকে হতে থাকে। আবেগ গুলো ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণতা হারিয়ে ভোঁতা হয়ে যায়।
আমাদের ক্ষেত্রেও এমন হচ্ছিল। নিপুর পড়াশোনা, আমার অনটন, জীবনযুদ্ধ, নানান ব্যস্ততায় আমরা অনিয়মিত হতে থাকলাম। প্রতি ঘন্টার সোহাগ দিনে, দিনের সোহাগ গিয়ে ধীরে ধীরে সপ্তাহ পেড়িয়ে মাসে গিয়ে ঢেকলো।
এভাবে বছর পার হয়ে গেলো। আগের মতো না হলেও টুক টাক কথা হয় আমাদের। আমার পক্ষ থেকে "সে আছে, চিরদিন থাকবে, নিশ্চয়ই থাকবে" এই বিশ্বাসে ভর করেই যোগাযোগ না থাকলেও ভরসা কাজ করতো।...

শুক্রবার। সকাল সকাল উঠে খুব নিপুকে মনে পরছিল। একটু কথা বলবো ভেবে ফোনটা তুলতেই ছোটনের ফোন। আমার সাথে "জরুরি কথা আছে, দেখা করতে হবে" বলেই ফোন রেখে দিলো।

১০টার দিকে বাসা থেকে বেড় হতেই বাড়িওয়ালির সাথে দেখা। ওনারা পরিবার সমেত নাস্তা করছিলেন। আমাকে সুন্দর করে ডেকে নাস্তা খাওয়ার জন্য বসালেন। খুব ইতস্ততভাবে হাসিমুখে তার দেয়া এক কাপ চা আর বিস্কিট দুপুরের লাঞ্চ হিসেবে গ্রহণ করছিলাম আর মহিলার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। আমাকে নাস্তা করাচ্ছেন বলে ওনাকে ভদ্রমহিলা ভাবার কোন কারণ নাই। আমাদের বাসা ভাড়াটা ঠিক ঠিক ভাবে নজরুল ভাই পরিশোধ করেন বলেই আমাদের প্রতি তার এতোটুকু সৌহার্দ্য। ওনার নাম সুফিয়া বেগম। বিশিষ্ট কবির নামে নাম। নাম সুফিয়া হলেও তার আচরণে কোথাও সুফি ভাব নেই। ভাড়া একটু দেরী হলে তিনি লোকজনের মান ইজ্জত সব খেয়ে হজম করে ফেলে দেন। একবার আফজাল ভাই তিনদিন দেরী করেছিলেন। উনার সাথে নিচে যাচ্ছিলাম চা খেতে। তখন দেখা হয়ে গেলো সুফিয়া খালার সাথে। আফজাল ভাই সিনিয়র মানুষ, বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি। উনাকে সুফিয়া খালা দেখে সরাসরি বললেন, অফিসে বেতন দেয়না? ভাড়া দেন না ক্যান?
আফজাল ভাই থতমত খেয়ে আমার দিকে একবার তাকান। আরেকবার খালার দিকে। বিস্ময় কাটতে আমতা আমতা করে বললেন, আপনি এভাবে বলছেন কেন? আমি সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়াতে টাকা তুলতে পারিনি। আমি কালকে রবিবার দিয়ে দেবো।
সুফিয়া খালা আরো ভয়ংকর স্বরে বললেন, আমি কিভাবে কথা বলি মানে? পছন্দ না হইলে উঠায় দিবো। দিন রাত ছাদে যেয়ে বিড়ি টানতে তো ভুল হয়না। প্যান্ট টাইট দিয়ে অফিসে যাইতে তো ভুল হয়না। ভাড়া দিতেই খালি ভুল হয়, হাঁ?
আফজাল ভাই সেদিনই বাসা ছেড়ে দিলেন। ছেড়ে দেয়ার আগে একটা প্রেমপত্র লিখে আন্টির বাসার দরজার নিচে রেখে যান। সেখানে শুধু একটা ছোট্ট বাক্য লেখা ছিলো, আপনে একটা মহান মা*ী।

ছোটন আমার বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখেই পেটে হাত দিয়ে বললো, দোস্ত খুব ক্ষুধা লাগছে। নাস্তা খাওয়া।
আমি নিচের হোটেলে ওকে পরোটা ভাজি কিনে খাওয়ালাম। সে দাঁত খিলাল করতে করতে বললো, দোস্ত একটা ঝামেলা হইছে। আমার বউয়ের বাচ্চা হইছে আজকে। ভয়ে যাইতে পারতেছিনা হাসপাতালে। এক সপ্তাহ ধইর‍্যা ধান্দাবাজি করতে একটু বরিশাল গেছিলাম। আজকে সকালে ওর ফুপু ফোন কইর‍্যা বলে বাচ্চা হইয়া গেছে। হাসপাতালের বিল লাগবো। কিছু টাকা ধার দিবি?
আমি চিন্তা করলাম, আমার কাছে রংপুর ফেরার জন্য সামান্য কিছু টাকা আছে। রংপুর যেতে সামনের স্যালারী পর্যন্ত ঢের সময় আছে। টাকাটা দিলে খুব সমস্যা হয়তো আমার হবেনা কিন্তু ওর বড্ড উপকার হবে। আমি কিছুক্ষণ পর বললাম, দোস্ত আমি তো কয়েকদিনের ছুটিতে রংপুর চলে যাচ্ছি ০৯ তারিখ। কিছু টাকা আছে বাড়ির সবার কেনাকাটার জন্য। আমি তোকে টাকাটা দিতে পারি পাঁচ হাজারের মত।
ছোটন শিস বাজিয়ে বললো, আলহামদুলিল্লাহ। তাতেই চলবো। কিন্তু তুই হঠাৎ রংপুর যায়া কি করবি? এই টাকা পয়সা নষ্ট না কইরা ঈদে গেইলেই পারোস। বরং এই ৫/৭ হাজার থাকলে রাজার মত থাকতে পারবি। একটা কাম করোস না ক্যান, তোর যা টাকা পয়সা আছে ওইগুলা দিয়ে আমার সাথে বিজনেস কর। চাকরি বাকরি আর কতদিন করবি। মাসের শেষে ফকিন্নির মতন থাহস।
আমি হাসিমুখে ওকে নিয়ে হোটেল থেকে উঠে বাসায় গেলাম। ছোটন আমাদের বিছানায় শুয়ে বললো তার সাথে যেয়ে যেন তার সদ্য জন্মানো মেয়েটাকে দেখে একটা নাম দিয়ে আসি। আমি রাজী হয়ে ওকে বললাম, দোস্ত আমার নামের পছন্দ ভালো না। পুরানা আমলের নাম শুধু মনে হয়। মনে কর, বকুল ফুলি জবা। এইসব নাম তোর পছন্দ হবেনা।

হাসপাতালে ছোটনের মেয়েকে দেখে মনটা শান্ত হয়ে গেলো। জন্মের পর বাচ্চারা সাধারণত ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে থাকে। এই বাচ্চাটা অন্যরকম। সে বড় বড় গোল চোখে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে। আমার ভুল না হলে তার সাথে মজা করলে সে হাল্কা করে ঠোট বাকিয়ে হাসিও দেবে। আমি ছোটনকে বললাম, নিপু। এক ভালোবাসা ভরা মানুষের সম্মানার্থে নামটা দিলাম। আমার খুব প্রিয় কেউ। তোর বউকে জিজ্ঞাসা কর রাজী আছে কিনা?

ছোটনের বউয়ের নাম তুলি(এই সেই "তুলি" যার কথা ছোটন আগে একবার বলেছিল)। মেয়েটার সারাটা মুখ জুড়ে ক্লান্তি। চোখ দেখে মনে হয় লজ্জায় কুঁকড়ে আছে নতুন আগন্তুক আসার অপরাধে। আমি তার পাশে যেয়ে বললাম, ভাবী আপনি কি খুব চিন্তিত? ছোটন সব ব্যবস্থা করে ফেলবে। টেনশন নিয়েন না।
তুলি কিছু বললোনা, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো শুধু। মেয়েটার বয়স আন্দাজ ১৭ কি ১৮ হবে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে এই অসহনীয় সমাজে সে হাজার বছরের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দে যেন সে অনেকগুলো গল্প বলে ফেললো। এই দেশে গরীব ঘরের মেয়েরা গেরস্থের উঠোনে বিছানো পাটির মত। যখন প্রয়োজন শক্তিশালী সমাজ তাতে পা মুছে যলে যায়। ছিড়ে যাক ভেঙ্গে যাক, তার ব্যবহার কমবেনা। কিন্তু দিন শেষে কেউ সেই পাটিতে লেগে থাকা ময়লাটা মুছে দিয়ে যায়না, যত্ন তো দূরের কথা। মোসাম্মাত তুলির জীবনটা হয়তো এমনটাই ছিলো। তার চোখে আছে সামনে অনাগত ভবিষ্যতের ভয় আর হৃদয়ে ছোট্ট আত্রলিতার হামি দেয়া গুঞ্জনের অপ্রকাশিত আনন্দবার্তা।
ছোটন তার বউকে কিছুক্ষণ কথা বলার পর বললো, আমি হাসপাতালের বিল দিয়া আসতেছি। তু্মি একটু অপেক্ষা করো। আজকেই তোমারে নিয়া যামু।
তুলি কিছু বললোনা। ও চলে যাওয়ার পর হঠাৎ কান্না শুরু করলো।আমি কিছু না বুঝে বাহিরে দাড়িয়ে থাকলাম। একটু পর তুলির ফুফু এসে বললো, তোমার বন্ধু তো আর আইবোনা। হেয় কি টাকা পয়সা নিয়া আসছিলো? দুইদিন ধইর‍্যা মাইয়াটা এহানে আটকায় পইড়্যা আছে। ওই পোলা হইলো নেশাখোর। টাকা পাইলে নেশা ছাড়া আর কিছু করেনা।
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, আমি ওকে কিছু টাকা দিয়েছি। ও বিল দিয়ে এখুনি এসে পড়বে। আপনারা আরেকটু অপেক্ষা করেন।
বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম আমি। এরপর ছোটনের বউকে যেয়ে বললাম, ওকে কি একটা ফোন করবেন।
তুলির ফুফু বললো, অনেকবার ফোন দিছি। ধরেনা। আপনে একবার দেন। বাচ্চার গায়ে জ্বর আইছে।
আমি তুলির দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি এতো চিন্তা করবেন না। আমি ছোটনকে ফোন দিচ্ছি। ওর তো এতো দেরী করার কথা না।
আমি ছোটনকে তিনবার ফোন দিলাম। একবারও ফোন ধরলোনা। চতুর্থবার সে ফোন ধরে নেশাগ্রস্ত গলায় বললো, দোস্ত আমি আইতেছি তোর বাসায়। তুই কই?

আমি মেজাজ শান্ত করে বললাম, ছোটন তুই হাসপাতালের বিলটা দিয়ে তোর বউকে নিয়ে যা। একটু পর পর আয়া এসে জঘণ্য ভাষায় কথা বলছে বেড খালি করার জন্য।
ছোটন চুক চুক করে বললো, দোস্ত তোরে আসলে বলা হয়নাই। এই মাগীর পয়দা যেইটা হইছে ওইটা আমার না। আজকে চেহারা দেইখ্যা শিউর হইছি। এইজন্য রাগ কইর‍্যা আর আসিনাই। দোস্ত তুই চইল্যা আয়। এই মাগী ওর পুরুষরে ডাইক্যা বাচ্চা ক্লিয়ার কইর‍্যা দিবো।
আমি হতভম্ব হয়ে ওর কথা শুনছিলাম। একটু পর আবারও বললো, দোস্ত তুই একটা কাম কর। তুই মাগীরে ফোন দে।
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা দিলাম ওর বউকে। ওর বউকে কি বললো ও জানিনা। ওর বউ ফোনে অঝোরে কান্না শুরু করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, তোর মত বেজন্মার বাচ্চা আমি রাখমুনা।
প্রায় ১৫ মিনিটের মত আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কি বলবো এই পরিস্থিতে বুঝতে পারছিলাম না।
আজ যদি নিপু ডাক্তার হয়ে এই হোমেই থাকতো বিষয়টা অন্যরকম হতে পারতো।
আমার কাছে আর কোন টাকা নেই। আমিও ছোটনের মতো কিচ্ছু না বলে নার্সিং হোমের পার্শ্ব গলি ধরে পালিয়ে আসি। আসার পথে বারবার বাচ্চাটার চেহারা চোখে ভাসছিলো। নার্সিং হোমের সাথে লাগানো ফ্ল্যাডলাইটের আলোয় যখন আমার দেহের ছায়া দেখলাম তখনও হলদেটে আলোয় বাচ্চাটার হাসির ছবিটা আমার কল্পনা থেকে মুছে যাইনি। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল আমার। ফোনটা বের করে নিপুর নাম্বার খুঁজতে লাগলাম, কল লিস্টের অনেক নিচে চলে গেছে নাম্বারটা। অনেকদিন কথা হয় না। নাম্বার বের করে খুব আশা নিয়ে কল করলাম, আজ অনেক কথা বলবো, মন খুলে একটু কাঁদবো, সে ডাক্তার হলে যেনো এমন পরিস্থিতি গুলো এতটা জঘন্য না হয় বলবো,...... ৪/৫ বার কল করলাম কিন্তু নিতু কলটা তুললো না। দুঃখের বোঝায় শরীরটা আরও ভারী হয়ে উঠলো। পালাচ্ছি ভেবে যতই দ্রুত হাটতে চাইছি, পা গুলো ততই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে.....

৪.
ভোর ভোর সময় রংপুরে বাস থামালো, আমি নামলাম।
আধো-আলো আধো-অন্ধকারে সুরভী উদ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দুই মিনিট হাটলেই নিপুর হোস্টেল। আমার নিপু সেখানে আছে ভাবতেই আমি আনন্দিত হচ্ছিলাম।একটা ফুলের দোকানের বাহিরে দাড়িয়ে ভাবছিলাম ওর জন্য একটা বিশাল সাইজের বুকে নিয়ে ওর হোস্টেলের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো। আরেকবার ভাবলাম, ওর বন্ধুরা তো অনেকেই আছে, তাছাড়া হোস্টেলের কেয়ারটেকার। বুকে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা। একটু পর ওকে ফোন দিলাম। কিন্তু ও ফোন ধরতে পারলোনা। আমার খুব খিদে লেগেছিলো, কিন্তু প্রেমিকার জন্য অপেক্ষার উত্তাপটা আরো তীব্র করলাম। ওর সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিনগুলোর কথাগুলো বারবার মনে করছিলাম। নদীর ধার ধরে সন্ধ্যাবেলায় হাঁটা

Address

DEPZ
Savar

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when KBA Creations posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share

Category

Nearby media companies



You may also like