09/01/2024
চার মাযহাবের পরবর্তীকালের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলিমের মতে, মুকাল্লিদের (অর্থাৎ মাযহাবের অনুসারীর) জন্য ইচ্ছে অনুযায়ী বেছে বেছে সহজ বিষয়গুলো মেনে চলা সমীচীন নয়; বরং এরূপ কাজ মোটের ওপর অবৈধ।
ইবনু হাযম আয-যাহিরী [৩৮৪-৪৫৬ হি.] ও ইবনু আবদিল বার [৩৬৮-৪৬৩ হি.] রহ. প্রমুখসহ কেউ কেউ এ বিষয়ে ইমামগণের ইজমা (ঐক্যমত)ও নকল করেছেন।[১]
ইমাম আবূ ইসহাক আল-মারওয়ায়ী [মৃ. ৩৪০ হি.] রহ. মনে করেন, এরূপ করা জঘন্য পাপ।[২]
কাযী ইসমা‘ঈল [মৃ. ২০০-২৮২ হি.] রহ. তো এ ব্যাপারে খুবই রূঢ় মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন,
ما من علم إلا وله زلة، ومن جمع زلل العلماء ثم أخذ جل ذهب.
— ‘প্রত্যেক আলিমের ই কিছু না কিছু পদস্খলন আছে। কাজেই যে ব্যক্তি আলিমদের পদস্খলনগুলো সংগ্রহ করে আমল করতে থাকে, তার দ্বীনই নষ্ট হয়ে গেল।’[৩]
বলাবাহুল্য যে, পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে এ মতটি অধিকতর বাস্তবসম্মত।
কারণ বিভিন্ন মাযহাবে অধিকতর সহজ মতগুলো তালাশ করে আমল করতে থাকলে একপর্যায়ে মুকাল্লিদ দ্বীন থেকেও বের হয়ে যেতে পারে। খুব সম্ভব, এভাবে সে তার মন যা চায় তা-ই করতে প্রবৃত্ত হবে।[৪]
ফলে হালাল-হারাম ও বৈধ-অবৈধ সকল কিছুই তার স্বার্থ ও মর্জির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।
যেমন ধরা যাক— ইমাম শাফি‘য়ী রহ.–এর মতে, দাবা খেলা নিষিদ্ধ, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফর রহ.–এর মতে, গানের আসরে যোগদান বৈধ।
ইমাম আবু হানিফা রহ.–এর মতে, কাফির রাষ্ট্রে যুদ্ধকালীন সময় কাফিদের সাথে সুদি লেনদেন বৈধ। তদ্রূপ ইমাম কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ রহ. সম্পর্কে বলা হয় যে, ছবির বৈধতার ব্যাপারে তাঁর ফাতওয়া রয়েছে।
ইমাম আ‘মাস রহ.–এর মতে, ফজর উদয়ের পরিবর্তে সূর্যোদয় হচ্ছে রোজার প্রারম্ভিক সময়।
ইমাম ‘আতা ইবনু রাবাহ রহ.–এর মতে, একই দিনে জুমুআহ এবং ঈদ হলে জুমুআহ ও যুহর উভয় নামাজ মওকুফ হয়ে যায়। অর্থাৎ আসর পর্যন্ত কোনো ফরজ সালাত নেই।
ইমাম দাউদ আয-যাহিরী ও ইবনু হাযম রহ. প্রমুখের মতে, বিয়ের উদ্দেশ্যে যেকোনো নারীর নগ্ন শরীর দেখা যেতে পারে। আর ইমাম ইবনু সাহনুন রহ.–এর মতে, স্ত্রীর ***দ্বারে মিলিত হওয়া বৈধ।
এখানে মাত্র কয়েকটি মাস‘আলা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হলো। এ ধরনের বহু মাস‘আলা মুজতাহিদগণের ফাতওয়াগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।
এরূপ অবস্থায় যদি প্রত্যেক মাযহাব থেকে সহজতর ও সুবিধাজনক বিষয়গুলো বেছে বেছে আমল করার সুযোগ থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে একথা বলা যায় যে, এ জাতীয় ফাতওয়া ও মাস‘আলাসমূহের সমন্বয়ে একটি পাঁচমিশালী মাযহাব তৈরি হবে, যার প্রবর্তককে শয়তানের সাক্ষাত মুরীদ ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।
———
[১] মিরদাভী, আত-তাহবীর..., ৮/৪০৯১; ইবনু আমীরিল হাজ্জ, আত-তাকরীর ওয়াত তাহবীর, ৩/৪৬৯; ইবনুন নাজ্জার, শারহুল কাওকাবুল মুনীর, ৪/৫৭৮; ইবনু ‘উলাইশ, ফাতওয়া, ১/৭৬
[২] যারকাশী, আল-বাহরুল মুহীত, ৪/৬০২; শাওকানী, ইরশাদুল যুহূল, ২/২৫৩
[৩] যারকাশী, আল-বাহরুল মুহীত, ৪/৬০৩; শাওকানী, ইরশাদুল যুহূল, ২/২৫৩
[৪] সুবকী, জাম‘উল জাওয়ামি, (বৈরূত: মাতবা‘আতু আল-হালাবী, ১৩৯ হি.), ২/৪০০
[তূলনামূলক ফিকহ – ড. আহমাদ আলী, পৃ. ৬৮৫-৬৮৬]