24/11/2024
ভালো থেকো প্রিয়,
আমার ছোটো খালা, ফিরোজা ফেরদৌস পেশায় ডাক্তার, যেখানেই থাকতেন, নিজের বাসার একটা ঘর পাড়ার মানুষের বিনে পয়সার মেডিকেল এমার্জেন্সি বানিয়ে রাখতেন, আমি তখন পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র, পাশের বস্তির এক অল্প বয়সী পোয়াতি মেয়ের রাত ১ টায় পেটের বাচ্চা উল্টে, পানি ভেঙ্গে গেল। সারা খুলনায় বিদ্যুৎ নেই। অগত্যা খালাই সমাধান। আমরা মোমবাতি হ্যারিক্যান জড়ো করলাম, তখন নানা বাড়িতেই সবাই থাকি। খালা কিশোরী মাকে নিয়ে ঢুকলেন, বেরুলেন প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে, ওফ্ খালার সে হাসি মুখ মৃত্যুবধি ভুলবো না।
খালা আমার বড়ই আলসে ছিলেন, ডাক্তারি পাশ করেছেন তাঁর ইমিডিয়েট বড় বোন পড়তেন, তিনি শুয়ে শুনতেন, এভাবে। সবার ছোটো হলে কি হবে, আমার মা সবার বড় ছিলেন, কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফিরেই ঘ্যান ঘ্যান করতেন, বড় বু মাথা টিপে দে, পানি দে নানা কিছু, হয়তো তখন মাও কলেজ ঠেঙ্গিয়ে ফিরলেন। আমি তো আমার এই খালাকে হিংসে করেই বড় হয়েছি। কত গুচ্ছের স্মৃতি আছড়ে পড়ছে। তখন ২ কি ৩ বয়স আমার, নানাভাই দুজোড়া ঝুনা নারকেল বেঁধে দুবগলে দিয়ে সাঁতার শেখাতেন, এ দেখে ছোটলা সিলেট মেডিকেলে গেলেন, প্রথম ছুটিতে ক"মাস বাদে ফিরে দেখলেন আমরা নারকেল নিয়েই সাঁতরাচ্ছি। রেগে গিয়ে দিলেন ছুঁড়ে মাঝপুকুরে, পড়ি মরি করে ঘাটে উঠে বুঝলাম, সাঁতরাতে পারি।
নিজের ভুলে পথ হারিয়েছি অনেকবার, মা খালারা সবাই হতাশ, শুধু ছোটলা বলতেন, "ওকে নিয়ে চিন্তা নেই, ও হারালেও ফিরবে", জানি না কেন, এ কথায় এত জোর ছিলো, ঠিক সাঁতারের মতো, পথ হারাতে হারাতেও বিপথে যেতে পারিনি।
খালা তোমার ফুলস্টপ সময়টা একটু আগেই এসে গেল। আমি আরেক বার মা হারা হলাম, আদর।
ছবিটা: ২৮ এপ্রিল ২০২৩