21/06/2024
তার সাক্ষাৎকার:
মতিউর রহমান এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য।
মতিউর রহমানের হুবহু বক্তব্য এ রকম:
'আমি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করি ২০০৮ সাল থেকে।
ফরচুন শুজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, আমার এক ছোট ভাইকে বললাম তাদের নিয়ে আসেন। তারপর তাদের সঙ্গে আমি বসলাম। এই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ অবিশ্বাস্যরকমের ভালো মুনাফা পেয়েছিলাম। ৮ টাকার শেয়ার ৫৪ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। তাদের সঙ্গে আমার কন্ট্রাক্ট হয়েছিল যে আমাকে ৮ টাকা দরে শেয়ার দেবেন। যেটা আমি ফুল কনসালট্যান্সিতে করেছিলাম। একদিকে আমি আইপিওর কাজ শুরু করেছিলাম।
‘আরেকটা দিক হচ্ছে আমি সব সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে আলাদা ছিলাম। আমি যা করি তা হচ্ছে, প্রতিবছর আমি দেখি যে কোন কোম্পানিটা সম্ভাবনাময়। কিন্তু কোনো একটা কারণে হয়তো খারাপ অবস্থায় আছে। সেই কোম্পানির সঙ্গে মালিকসহ বসি, তাদের কোম্পানি পরিদর্শন করি, তাদের খারাপ অবস্থা কেন, সেটা বের করি, এরপর দেখি কীভাবে তাদের উন্নতি করা যায়। খারাপ অবস্থায় আমি শেয়ারটা কিনি, কোম্পানির উন্নতির পরে সেই শেয়ার বিক্রি করি। এর ফলে একটা ভালো লাভ হয়।
‘যেমন একটা উদাহরণ দিই। এই মুহূর্তে আমরা কাজ করছি সিলভা ফার্মা নামের একটা ওষুধ কোম্পানি নিয়ে। সামনে কোম্পানির বৃদ্ধি বাড়বে তিন গুণ। এই বৃদ্ধিটা হবে আগামী এক বছরে। এই তথ্যটা আপনি জানলেন। তারপর সেই বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করলেন। ব্যবস্থাপকদের সহযোগিতা করলেন। এখন যেমন সিলভা ফার্মার দাম আছে ১৬-১৭ টাকা। এই শেয়ারটা কিন্তু এক বছরে হয়ে যাবে ৩০-৩২ টাকা। যারা এভাবে বিনিয়োগ করে, মার্কেট ভালো-খারাপ যা–ই থাকুক। তারা কিন্তু শেয়ার কিনে মুনাফা করতে পারে। আমি সব সময় এভাবে সুচিন্তিত বিনিয়োগ করি।’
মতিউর রহমানের এই বক্তব্য এবার বিশ্লেষণ করা যাক। ফরচুন শুজের শেয়ার তিনি পেয়েছিলেন ৮ টাকা দরে। ফরচুন শুজ বাজারে প্রাথমিক শেয়ার (আইপিও) ছাড়ার জন্য প্রসপেক্টাস প্রকাশ করেছিল ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। এর অভিহিত মূল্য ছিল ১০ টাকা। এর অর্থ মতিউর রহমান অনেক কম দামেই এর শেয়ার কিনতে পেরেছিলেন। যাকে বলা হয় ‘প্লেসমেন্ট’-এর শেয়ার।
সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান বলেছেন, তিনি কোম্পানির ব্যবস্থাপক ও মালিকদের ডাকতেন, বুদ্ধি–পরামর্শ দিতেন, কোম্পানি পরিদর্শনে যেতেন, বৃদ্ধির উপায় বাতলে দিতেন। অর্থাৎ পরামর্শকের কাজ করতেন। তাতে কম দামে শেয়ার পেয়েছিলেন। এনবিআরের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এটা পারেন কি না, সেই প্রশ্ন তো আছেই। উল্টো দিকে এসব কোম্পানি এনবিআর থেকে বাড়তি কোনো সুবিধা পেয়েছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠবে এখন। আমরা আরও জানি, কয়েক বছর ধরেই ফরচুন শুজ নিয়ে ব্যাপক কারসাজি হয়েছে এবং তাতে লাভবান হয়েছেন এসব কারসাজিকারীরা।
সাক্ষাৎকারে তিনি সিলভা ফার্মার কথা বলেছেন। তিনি এখন কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি জানেন এক বছরে কোম্পানিকে আরও বড় করা হবে। ফলে এর আকার তিন গুণ বাড়বে। এখন এই কোম্পানির শেয়ারদর হচ্ছে ১৬ টাকা ৪০ পয়সা। মতিউর রহমান জানাচ্ছেন এই দর ৩০ টাকার বেশি হবে। কারও যদি এভাবে ভেতরের খবর বা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানার সুযোগ থাকে, আর তিনি যদি এই কোম্পানির শেয়ার কেনেন বা অন্যকে কিনতে পরামর্শ দেন, তাহলে তাকে ইনসাইডার ট্রেডিং বলে, যা আইনত অপরাধ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আইনেই তা দণ্ডনীয় অপরাধ।
এখন যদি বিনিয়োগকারীরা দলে দলে সিলভা ফার্মার শেয়ার কিনতে থাকেন, তাহলে এক বছর লাগবে না, অল্প কয়েক দিনেই এর দর ৩০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এভাবে দর বাড়ানোকে শেয়ারবাজারের ভাষায় কারসাজি বলে। এটাও অপরাধ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ছাগল–কাণ্ড থেকে এখন বিষয়টি শেয়ারবাজার–কাণ্ডে রূপ নিয়েছে।
আমার কিন্তু মনে হয় পুরো ঘটনার পেছনে অন্য কোন ঘটনা, যা আমাদের সামনে আসছে না ⚠️