24/04/2022
জনপ্রিয় দেশি ফুড রিভিউ চ্যানেলগুলোর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশে আসেন Trevor James, প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের চ্যানেল The Food Ranger চালান তিনি। ২০১৯ সালের দিকে তিনি আসেন, ঢাকার পথে স্ট্রিট ফুড, পুরান ঢাকা, মেজবানি খেয়ে যান তিনি। সম্পুর্ন ট্যুর তিনি কভার করেন ৪ টি ভিডিওতে। তার লোকাল গাইডকে তেমন একটা ক্যামেরার সামনে দেখা যায়নি।
এরপর আসে Best Ever Food Review Show এর Sonny, আর তার লোকাল গাইড হিসেবে ছিলেন রাফসান, বাংলাদেশী ফুড রিভিউয়ার। ২০২০ সালে এসে তারাও প্রায় একই পথ অনুসরণ করে যান, তবে ব্যতিক্রম হিসেবে তিনি বাংলাদেশের ফুড ভিলেজটা কভার করে যান। তিনিও চারটি ভিডিও দিয়েছিলেন, যার মধ্যে দুটো চট্টগ্রামে, একটা পুরান ঢাকায়, আর একটা ফুড ভিলেজ নামের সেই গ্রামে। Best Ever Food Review Show এর সাবস্ক্রাইবার ৮.৩ মিলিয়নের বেশি।
বর্তমানে যার বাংলাদেশ ট্যুরের ভিডিও আসছে, সেই Mark Wiens কে ফুড রিভিউ এর একজন প্রথমদিকের লোক বলা যায়। প্রায় এক দশক ধরে ফুড রিভিউ করে আসছেন তিনি সারা বিশ্ব ঘুরে ঘুরে। এখন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের উপর চারটা ভিডিও ছেড়েছেন, সামনে আরও ছাড়তে পারেন। এরমধ্যে একটা করেছেন পুরান ঢাকায়, একটা মাওয়া ঘাটে, একটা কুষ্টিয়ার এক গ্রামে, আর একটা করেছেন মেজবানি। লোকাল গাইড হিসেবে ছিলেন পেটুক কাপল। Mark Wiens এর চ্যানেল সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৮.৭ মিলিয়নের বেশি।
ফুড রিভিউ এর মাধ্যমেও যে একটা দেশের ট্যুরিজম প্রোমোট করা যেতে পারে, তার দুইটা unfortunate উদাহরণ হচ্ছে পাকিস্তান ও মিশর। পাকিস্তানের উদাহরণটা আমরা কাজে লাগাতে পারতাম, কিন্তু পারি নাই। প্রয়োজনবোধ করেনি প্রশাসন, এইটাই কথা। পাকিস্তান ট্যুরিজম বোর্ড এদেরকে দাওয়াত দিয়ে, লোকাল, রুরাল এলাকার খাবার খাইয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় এরা ঘুরে বেড়িয়েছে, এদের ভিডিও দেখে মানুষ বলেছে, ' আরে পাকিস্তান দেখি সেইফ এলাকা! এলাকাও সুন্দর... এখানে যাওয়া যেতে পারে। '
মিশরের উদাহরণটা খারাপ। Best Ever Food Review Show এখানে ফুড রিভিউ করতে গিয়ে পদে পদে পুলিশের, লোভী লোকাল মানুষদের কাছে হয়রানি হয়েছে। তাদের ভিডিওর সরঞ্জামাদি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাদের পুলিশ ভিডিও পারমিট থাকার পরেও রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে থানায়, ভিডিও ডিলেট করিয়েছে। এছাড়াও মিশরের লোকাল গাইড তাদের ক্যামেরার সামনে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। পুরো সিরিজ আইফোনে শুট করতে হয়েছে এদের। ভিডিওগুলো দেখার পর মানুষজন অবাক হয়েছে, মানুষ জানতে পারছে মিশর ট্যুর দেয়ার মতো এলাকা একদমই না।
এখন আমি পাকিস্তানের উদাহরণটা আনফরচুনেট বললাম এই কারনে, যে এই একই কাজ চাইলে আমরাও করতে পারতাম। আমরা করিনি কেন, তা উপরে বলেছি। পোস্টটা লিখছি এই কারনে, যে যতটুকুও হচ্ছে, তাও যথেষ্ঠ না।
ছোট বড় যেকোনও ফুড রিভিউয়ার বাংলাদেশে আসে, এই এক পুরান ঢাকা আর মেজবান দিয়ে কাজ চালিয়ে দিতে হচ্ছে কেন? বাংলাদেশে কি আর কোথাও কোনও ভালো খাবার পাওয়া যায় না? এদের জার্নি করিয়ে চট্টগ্রামে মেজবানি খাওয়াতে নিয়ে গেলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে কেন নেয়া হলো না? সেখানে কি খাবারের মধ্যে Seafood এর একটা আধিক্য ছিলো না? অথবা, পাহাড়ি অঞ্চলগুলো কি দোষ করেছিলো? সেখানকার খাবার কি খাওয়ানো যেতো না?
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকায় কোনও না কোনও একটা জনপ্রিয় খাবার অবশ্যই থাকে। সেই খাবারগুলোর ব্যাপারে গবেষণা কি আদৌ করা হয় এই ট্যুর প্ল্যানিং করার সময়? নাকি ' পুরান ঢাকা, মেজবানি, আমার বাসায় খাওয়ায় দিবো আর এক্কা দোক্কা খেলে এক এলাকায় গিয়ে মাটিতে বসে খেয়ে আসবো, ব্যস হয়ে গেলো... ' নামক কোনও প্যাকেজ আছে? যেই আসছে, তাকে মনোরম পরিবেশে নেয়া হয় না, সুন্দর লোকেশনে নেয়া হয় না, খেতে আসছে, পুরান ঢাকায় নিয়ে ফেলে দিয়ে আসি! বাংলাদেশে বিরিয়ানির কয়টা ভ্যারিয়েশন আছে বলতে পারেন? কোথায় কিভাবে বিরিয়ানি খায়, কোন জায়গায় ভালো বিরিয়ানি পাওয়া যায়, এইসব খবর কি লোকাল গাইডগুলো রেখেছিলেন? রাখার তো কথা, তারা নিজেরাই তো ফুড রিভিউয়ার!
এই চিন্তা তখনই চলে যায়, যখন দেখি ওই বিদেশী ফুড রিভিউয়ার আর দেশী লোকাল গাইড/ফুড রিভিউয়ার এর বাংলাদেশের খাবার সম্পর্কে জ্ঞান প্রায় সমান। Best Ever Food Review Show রাস্তার ধারে যাই খাচ্ছে, রাফসান বলছে, 'This is also my first time...' তাহলে তার কাজটা কি ছিলো, সাথে সাথে থাকা, একটা বাংলাদেশী গাইড শুধুমাত্র? এই কাজ যে কেউ করতে পারতো। সে বট খায় নাই, সে আগুন পান খায় নাই, সে কোয়েলের মাংস খায় নাই, সে এইটা খায় নাই ওইটা খায় নাই, প্রথমবার খাচ্ছে প্রথমবার দেখছে, এদের দেয়া চারটা ভিডিওতে এগুলো ছাড়া তার আউটপুট আর কিছুই নাই। তবে গাইড হিসেবে সে বেশ এনার্জেটিক ছিলো, সেইটা মানতে হবে। পেটুক কাপল এর তো সেইটাও দেখলাম না। They were repeating everything Mark was saying... নিজেদের আউটপুট শুধুমাত্র এদিক সেদিন নিয়ে যাওয়া।
আমার কথা হচ্ছে, Food Ranger যেখানে ফুড রিভিউয়ার না নিয়ে ভিডিও করলো, সেখানে বাকিরা ফুড রিভিউয়ার নিয়েও কেন বেশি আউটপুট দিতে পারলো না? দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় খাবার, ইউনিক খাবার, খাবার যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ হারহামেশা খায় কিন্তু শহরে সেইসব খাবার তেমন দেখা যায় না, এগুলো কি একদমই দেখানোর মতো না? বর্ডার সংলগ্ন এলাকায় যে ভারতীয় ফ্লেভারের একটা মিলন চোখে পড়ে, সামুদ্রিক মাছ, পাহাড়ী এলাকার খাবার, নির্দিষ্ট এলাকার কোনও জনপ্রিয় খাবার, এভাবে কি দেখানো যেতো না? নাকি ফুড রিভিউয়ারদের সময় নেই? এই একই চ্যানেল যখন ভারত, পাকিস্তানে যাচ্ছে, ডজন ডজন ভিডিও আপলোড করে আসছে। আমাদের বেলায় চারটা ভিডিওতেই কেন সব আটকে যায়, আর সব কেন ওই পুরান ঢাকা আর মেজবানিতেই ভরসা খুজে পাচ্ছে? পুরো বাংলাদেশের খাবারের মান কি তাহলে পুরান ঢাকার সরিষা বিরিয়ানি আর চট্টগ্রামের মেজবানি দিয়ে নির্ধারণ করা হচ্ছে?
Dear Bangladeshi Food Reviewers, we need more than this... ঢাকার চিপায় চাপায় রেস্টূরেন্ট খুললেই আপনারা ছুটে যাচ্ছেন, আর দেশের বাইরে থেকে এসে বিদেশী ভাইয়েরা টিএসসির পাশে কলা ভর্তা, বট এর রিভিউ দিচ্ছে। আর আপনারা পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, এইসব আমি আজই প্রথম খাচ্ছি। Please up your game, and represent our food better...