07/08/2024
কোটা আন্দোলন vs ক্ষমতা হারানো vs পারিবারিক জটিলতা।
পারিবারিক চাপের জন্য অনেকেই আছেন আমার মতো যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারিনি।
তাহলে, যারা প্রতিনিয়ত আন্দোলনে গিয়েছিলো তারা কি পারিবারিক সাপোর্টে গিয়েছিলো?
আসুন নিম্নে কিছু ঘটনা দেখি।
০১) Mohammad Amirul Islam ভাই। যার সরকারি চাকরি’র কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। কারণ তিনি বিদেশে সেটেল হবেন অথবা ৫৬% কোটা থাকার পরও যার বিসিএস হবার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও তিনি এই আন্দোলনের একদম শুরু থেকেই ছিলেন তাও কিনা প্রধান সমন্বয়কদের সাথে। সবচেয়ে মজার কথা আমরা একই পরিবারের। তাই পারিবারিক চাপ সমানই ছিল। অথচ কোটা সংস্কার হওয়া তার চেয়ে বেশি আমার জরুরি ছিল। এই আন্দোলনে কারফিউ ১ম নারের মত আসার পর তাকে পরিবারের সবাই মিলে একপ্রকার বন্দি করে রেখেছিল। তবুও লং মার্চের দিন কাউকে না বলে শুধুমাত্র একটি চিঠি দিয়ে ঘর থেকে চলে এসেছিলো। পথিমধ্যে আওয়ামী লীগের হামলায় নিজের সব টাকা(আনুমানিক ১৫০০+), নিজের মোবাইল হারান এবং চশমা টি হামলার কারণে ভেংগে যায়। তার সাথে যেই বন্ধু বের হয়েছিল তার সাথেও একই ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বাসায় এসে টাকা নিয়ে আবার বের হওয়া হয়।
০২) Saiful Islam Palash আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে বড়লোক বন্ধু। যে কলেজের শুরু থেকেই বিদেশে সেটেল হওয়ার কথা। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া তে সেটেল। সেও ২০১৮ এর কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি এবারও বিদেশে বসে আমাদের সাপোর্ট করেছে যার ডকুমেন্টস আমি কমেন্টে দিচ্ছি। বলে রাখা ভালো, সে এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে হুমকিও দিয়েছে। অথচ, কোটা সংস্কার এ তার কোনো পাওয়ার বা হারানোর কিছু ছিল না। শুধুমাত্র দেশের কথা ভেবেই অংশগ্রহণ করেছে।
০৩) Hannan Sarkar ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর পুলিশের হামলার খবর শুনে আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। সবার প্রথমে হান্নান মামাকে খবর দেই। উনি সাথে সাথে বেরিয়ে পড়ে আমার সাথে। এমনকি লং মার্চের দিন উনি গোছল করে মৃত্যু হতে পারে সেই সম্ভাবনায় বাসার ঠিকানা সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। অথচ, কোটা সংস্কার হলে হান্নান মামারও পাওয়ার বা হারানোর কিছু নেই। কারণ, তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। ভবিষ্যতে বড় ব্যবসায়ী হবেন। বর্তমানে Elegant Mart কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
০৪) Emran Hossain Ador ইতালি যাবার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। তবুও ২০১৮ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০২৪ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। এই আন্দোলনের জন্য সে এখনো পরিবারের চোখের শূল। এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ দ্বারা প্রতিনিয়ত হুমকির স্বীকার হয়েছিল। তবুও সে থামেনি। ন্যায়ের পক্ষে থেকেছেন। কোটা সংস্কার হলে তারও কোনো লাভ নেই। কিন্তু তার বিবেক তাকে ন্যায়ের পক্ষে রেখেছে। ২০১৮ এর আন্দোলনের ছবি কমেন্টে দেওয়া হবে।
০৫) প্রবাসী ভাইয়েরা(বিশেষত আমার বন্ধু Md Kalam ) : প্রতিদিন দেশের খবর রেখেছেন। রেমিট্যান্স শাটডাউনে অংশগ্রহণ করেছেন। সর্বোচ্চ সাপোর্ট করেছেন।
এই ন্যায়ের আন্দোলনে অনেক বিবেকবান মানুষও চিনেছি । অনেক নিচু জাতের দালালদেরও চিনেছি যারা বড় হবার পর ভোল পাল্টে ফেলেছিলো কিন্তু এখন এসে ধরা খেলো। এই দেশে তেলবাজ, দলকানা’র বদলে এরকম বিবেকবান মানুষ দরকার; তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম। আনুপাতিক হিসেবে (১০,০০০:১)। তবুও জয় সত্যের, ন্যায়ের। আর, আমি চাই প্রতিবছর আবুসাইদ ভাইয়ের মত বীরদের মত এই মহান উদ্যোগের শামিল মানুষরাও আমার টাইমলাইনে ভাসুক।