Asad's Diary

Asad's Diary আমাদের পেইজে আপনাকে স্বাগতম, নিত্যনত?

23/10/2023

বিয়ের প্রথম রাতেই বউ যখন দুধের পরিবর্তে, কাঁচের গ্লাস ভর্তি সবুজ সবুজ থ্যাকথ্যাকে কিছু একটা নিয়ে এসেছিল, সেদিনই বোঝা উচিত ছিল বিবাহিত জীবনের আরেক নাম বেদনা৷ কিন্তু নতুন নতুন চুল গজাইলে নাকি মানুষ চেরাক জ্বালাইয়া দেখে, আমিও নয়া বউয়ের ভালবাসায় গ্লাস হাতে নিতেই ঝাঝালো আর তিতা গন্ধ যেন নাসিকায় বিশাল আকারে ধাক্কা দিল৷ মিষ্টি হেসে বউয়ের কাছে জিজ্ঞেস করলাম,
___ " ও গো এটা কি এনেছ আমার জন্য... "
আমি তো হাসিতে চিনি ঢেলেছিলাম এক কেজি , ওদিকে বউ আমার কেজি পাঁচেক চিনির মিষ্টি হাসি ফিরায়ে দিতে দিতে বলল,
___ " এটা আমার ভালবাসা।"
ব্যাস এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট, গ্লাসের জিনিসটা ঠোঁটে নিয়ে যেই ঢক করে বড় এক ঢোঁক গিললাম, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। জিব্বা তো ভালই দাঁত, পাকস্থলি, খাদ্যনালী সবাই মিলে যেন আমার বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্টি তুলে গালি দিতে থাকলো। তিতা আর ঝালের কম্বিনশনের সেই অদ্ভুদ পানীয় খেয়ে আমার তো আর মুখ বন্ধ হয় না। কুকুরের মতন জিব্বা ঝুলিয়ে ভালবাসাকে ধাক্কা দিয়ে সাইডে রেখে পানি খুঁজতে যেই খাটের থেকে উঠতে যাবো তখনই বউ হাত ধরে কিউট মুখ করে বলল,
___ " ওগো কই যাচ্ছ, গ্লাসের বাকিটা খাবে কে?"
পারি না নতুন বউয়ের আবদার ফেলতে না পারি কইতে, " যে বউ এই জিনিস খাইলে হয়তো বাসর রাতেই তুমি বিধবা হইয়া যাইতে পারো।"
উপায় না পেয়ে উপরওয়ালার নাম নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সেই ভয়াবহ পানীয়টা গিলে যেই বউয়ের হাতে গ্লাসটা দিলাম সেই বউয়ের মুখে যেন আটশ পাওয়ারের বাল্বের মতন জ্বলে উঠলো। মিনমিনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
___ " ও বউ কি জিনিস খাওয়াইলা আমারে একটু বলবা?, "
___ "করোল্লা, আদা, গোল মরিচ এসব মিলিয়ে একটা নতুন জুস করেছিলাম, এটাই তোমাককে খাওয়ালাম "।
বউ লাজুক হাসি দিয়ে বলল। মানুষ নাকি অল্প শোকে কাতর হয় আর অধিক শোকে পাথর। আমি এই দুই লেভেলের উপরের শোকে হজম হয়ে গেলাম, যে আমি কোন আমলে করোল্লা ভাজি খাই না সেই আমাকে বিয়ের প্রথম রাতেই করোল্লার জুস খাওয়ালো উইথ আদা এন্ড গোল মরিচ। এসব ভাবার আগেই পেটের মধ্যে মোচড় কয় কারে, বউয়ের সাথে রোমান্স বাদ দিয়ে চললাম পেটের ডাকে সাড়া দিতে। সেদিন রাত মোটামুটি বাথরুমেই কাটিয়ে ছিলাম। শেষ রাতের দিক যখন বউ ডাক দিল তখন কথা বলার শক্তিটুকুও পাচ্ছিলাম না, মিনমিন করে বললাম,
___ " ও গো কষ্ট করে একটা বালিশ দিয়ে যাবা, একটু শুইতাম আর কি।"
বউ ওদিক দিয়ে কি উত্তর দিয়েছিল সেটা আমার শোনার মতন ক্ষমতা ছিল না।

পরের দিন যখন রুম থেকে বের হলাম তখন আমাকে দেখে ভাবিরা খালি মুখে কাপড় দিয়ে হাসাহাসিই করেই যাচ্ছে। চাচাতো ভাইয়ের বউ তো মুখের উপরে বলেই দিল,
___ " ইমনরে তো এক রাতেই চুষে নেওয়া আমের মতন দেখাচ্ছে, কাহিনি কি?"
ভাবির কথা শুনে চুপ করে হেটে ডাইনিং রুমের চেয়ারে এসে বসতেই, আব্বা যেন চোখ গরম করে কিছু বলতে যেয়েও বললেন না। চোখ ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগলাম আমার বউ কই? আমিই মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র পুরুষ, যে কি না তার বাসর রাত বাথরুমে কাটিয়েছে। আব্বাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো আম্মার কথা, এমন সময় আমার বউ আর আমার আম্মা এসে ঢুকলো ডাইনিং রুমে, আর আমার বউয়ের হাতে ট্রে ভর্তি হাবিজাবি কি কি জানি। তা দেখেই আমার অন্তর আত্মা যেন খাঁচা ছেড়ে উড়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করল৷ আম্মা গাল ভর্তি হাসি হেসে বলল,
___ " দেখেছিস ইমন, সায়মা কত লক্ষী একটা মেয়ে। একলা হাতেই সব রান্না করেছে, আমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে পর্যন্ত দেয় নি। "
মনে মনে আফসোস করলাম আম্মার জন্য, মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বললাম,
___ " আপনার পছন্দের আসলেই জুড়ি নেই আম্মা।"
আড় চোখে আব্বা দেখলাম খুশিতে গদগদ হচ্ছেন, মনে মনে বললাম, " আব্বা এই খুশি আধা ঘন্টা পরে গালিতে রুপান্তরিত হবে "।
___ " দেও বউ মা আমারে নাস্তা দেও "।
আব্বা খুব আগ্রহের সাথে বলল। সায়মা মানে আমার বউ লাজুক লতা হয়ে বলল,
___ " আম্মা আপনিও বসে পড়েন আব্বার সাথে, আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি সবাইকে।"
আম্মা পারে না দৌড়ায়ে টেবিলে বসে পড়লো। স্যুপের বাটিতে ডাইলের পানির মধ্য কয়েকটা সোলার টুকরা যেন ভেসে আছে। এই খাবার আমি তো ভালই আমার বাপ মাও মনে হয় তাদের বাপের জন্মে দেখছে কি না সন্দেহ সেটা উনাদের দুই জনের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। দুজনে একসাথেই মুখে নিল জিনিসটা আর নিয়েই মাশাল্লাহ, পারতেছে না ফেলে দিতে, না পারতেছে গিলে ফেলতে। আব্বা আম্মা দুজনেই খুব কষ্টে বাটি ভর্তি জিনিসটা গিলতেই সায়মা বাটি এগিয়ে নিয়ে এসে বলল,
___ " বাবা আর একটু নেন.... "
___ " না না আর৷ না আর না... "
আব্বা আঁতকে উঠে বলল। আম্মা পানি খেতে খেতে বলল,
___ " এটা কি ছিল বউ মা,, আগে কখনও খাই নাই তো.! "
___ " আম্মা এটা বটল গার্ডেন স্যুপ উইথ স্পিনিচ জিনজার এন্ড ব্লাক পেপার।"
বউয়ের মুখে খানার নাম শুনে, আমার বাপ আর মায়ের মুখে মাছি যায় আর আসে। আমি বসে বসে মাথা চুলকাচ্ছি আর ভ্যবতেছি, জিনিসটা কি আছিল। সায়মাই খোলসা করলো,
___ " লাউ দিয়ে স্যুপ করেছি বাবা সাথে পালং শাক দিছি৷ আপনাদের বয়স হইছে এখন এসব খাবারই খাবেন!"
এটুকু বলেই সায়মা রান্না ঘরে চলল, কপাল ভাল তখনও ব্রাশ করেছিলাম না, তা না হলে এই জিনিস খেলে হসপিটালে এডমিট হতে হতো। আব্বা এখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন , আমি যে কি করেছি সেটাই তো বুঝলাম না। সায়মা ফিরে আসার আগে আমি আব্বা আম্মা সব ডাইনিং রুম থেকে ভ্যানিশ হয়ে গেলাম।

সেদিনের পর থেকে আব্বা আম্মা বেশিভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে থাকে, আজ এই ফুপুর বাড়ি কাল অমুক মামার বাড়ি। আমি বেচারা সকালে যাই অফিসে, আর... ফিরি গভীর রাত্রে৷ মানুষ নাকি নতুন বিয়ে হলে বাসায় আসার জন্য পাগল হয়, আর আমার কাছে সুযোগ থাকলে, আমি অফিসেই রাত পার করতাম। প্রথম দুই দিন বাসা থেকে বউ লাঞ্চ দিয়েছে দেখে, কলিগরা কাড়াকাড়ি করেছে খাওয়ার জন্য। আর এখন আমি লাঞ্চে বসলে আমার টেবিলের দুই এক কিঃমিঃ মধ্যে কেউ আসে না। আমাকে নিয়ে অফিসে সেই লেভেলের চর্চা হয়, কারো কারো মতে, আমার পেট লোহার তৈরি যা যায় তাইই হজম হয়ে যায়। একদিন বাসায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতেছি, " আচ্ছা বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে আমরা যে প্রায় মার্ডার হতে হতে বেঁচে যাচ্ছি, তাইলে ওর হাতের র‍্যন্না ও খায় কি করে "। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগলো আমার কাছে, তাই ঠিক করলাম আজকে বউ কখন খায়, সে বিষয়টা তো দেখতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ পরের দিন শুক্রবার জুম্মার নামাজ পরে টেবিলে একাই বসেছি খেতে, আজকের মেনু আপেল টার্ট উইথ বিফার ফুলকপির রস মালাই। তরকারির চেহারা দেখেই পেটের ভিতরের খাবার সব মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকলো। বহুত কষ্টে তাদের আটকিয়ে মুখে হাসি টেনে বললাম,
°__ " ও বউ, বউরে আসো না তুমিও আমার সাথে খাও"
বউ এবার কপাট মিষ্টি ঝাড়ি দিয়ে বলল,
___ " ধুর কি যে বলো না, তুমি খেলেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে! "
মনে মনে আফসোস করলাম, " তাইলে আমার পেট খারাপ হইলে, তুমি কেন হাগো না বউ "।
খাওয়া কোন মতে শেষ করে রুমে যাওয়ার কথা বলে, রান্না ঘরের পাশে যেয়ে ঘাপটি মেরে রইলাম। বউ কি করে খায়, সেটা আজকে আমি সেটা উদ্ধার করবোই। বেশ কিছুক্ষন পর বউ এসে হাড়ি পাতিল ধুইলো সুন্দর করে, আব্বা গেছে তার মামার শালার ছেলের বিয়ে খেতে আম্মাও আব্বার লেজ ধরে চলে গেছে৷ তাই সব দ্বায়িত্ব সায়মায় উপরেই৷ সব ধুয়েমুছে সায়মা যখনই প্লেট বের করলো আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যেন সজাগ হয়ে গেল, বউরে দেখলাম এদিক ওদিক ইতিউতি করে রান্না ঘরের উপরের তাক থেকে কি যে একটা নামালো। আমি জিরাফের ভায়রা ভাই হয়ে, একটু গলা টানা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম আছেটা কি ওর ভিতরে৷ বউ আমার বাটির ঢাকনা সরাতেই আমার মাথা যেন ঘোরা আরম্ভ করলো, বাটি ভর্তি মাংস কি সুন্দর তার কালার, দেখলেই পরান জুড়ায়ে যায়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সেই লেভেলের মজার তরকারি, বউ আমার কি তৃপ্ত করে খাচ্ছে, আর আমি কি না আপেল টার্টের গুঁতায় অস্থির হয়ে যাচ্ছি। খাওয়া শেষে বউ সুন্দর করে বাটি প্যাকেট করে ফ্রিজে রেখে ফোন হাতে নিল। কাকে জানি কল করেই খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলল,
___ " দোস্ত তোর আইডিয়াটা হেব্বিরে, এমন খাবার খাওয়াইছি, শাশুড়ী শশুর বর সব কাইত৷ এখন আর কেউ ভুলেও বাড়ি থাকে না আর আমার রান্নার চাপও একদম নেই। তুই আসলেই রক।"
বউয়ের আলাপন শুনে আমার আর কিছু মনে নাই, এখন আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি আর বিড়বিড় করে বলছি," আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায় "।

বুদ্ধি
মারিয়া আফরিন নুপুর

09/10/2023

বাড়িওয়ালা আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। উনার বাসায় গেলাম। উনি কর্কশ গলায় আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,

- ফালাক আজকে মাসের ২৭ তারিখ। তুমি বাসা ভাড়া কখন দেবে?

এমন সময়ে রুমে বাড়িওয়ালার বউ এলো। আমি বললাম,

- আংকেল আর দুই একদিনের মধ্যেই দিয়ে দিবো। এখনও টিউশনির টাকা হাতে পাইনি।

বাড়িওয়ালা আংকেল আমার উপরে খানিকক্ষণ চিল্লাপাল্লা করলো। আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে আংকেলের বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম,

"আপু আপনাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে। দিন দিন আপনি সুন্দর হয়ে চলেছেন। রহস্য কী?"

উনি লজ্জা পেয়ে রুম থেকে চলে গেলেন। তারপর কিছুক্ষণ পরে আবার রুমে ফিরে বললেন,
- ফালাক তুমি আজকে দুপুরে আমাদের সঙ্গে ভাত খেয়ে যাবে। আর ভাড়া নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। যদি পকেট ফাঁকা থাকে তাহলে আমাকে বলবা। আমি তোমাকে হাত খরচের জন্য টাকা দিবো।

বাড়িওয়ালা আংকেল রাগে গরগর করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আর আমি উনার বউয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

- আপু আপনি মানুষটা অনেক ভালো।

উনি দেখি আবারও লজ্জা পেয়ে রুম থেকে চলে গেলেন। এমন সময়ে রুমে বাড়িওয়ালার মেয়ে এলো। ভাবছি তাকে এখন কী ডাকবো?

- আবরিশাম ফালাক

09/10/2023

মাহবুব অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। পায়ে মোজা পরতে গিয়ে দেখলো একটা মোজা পেয়েছে অন্যটা পাচ্ছে না।
সে তখন তার স্ত্রী শাহানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,"আমি এক পাটি মোজা খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় রেখেছো?"
শাহানা তখন অন্য রুমে তাদের দুই মেয়েকে (ছোটো মেয়ে টুতে পড়ে, বড়ো মেয়ে ফাইভে পড়ে) স্কুলের জন্য প্রস্তুত করছিলো।
সে ওখান থেকে বিরক্ত গলায় বললো,"তোমার মোজা আমি কোথাও রাখি নি। তুমিই জানো কোথায় রেখেছো।"
"কোথায় রেখেছি মনে পড়ছে না। এসে খুঁজে দাও না। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো?"
শাহানার কণ্ঠে বিরক্তির সাথে এবার রাগ যুক্ত হলো,"অফিসের দেরি আমার হচ্ছে না? সকালে আমার দম ফেলার সময় থাকে? সবার জন্য নাস্তা বানাতে হয়, টেবিলে সাজিয়ে দিতে হয়, আম্মা আব্বাকে ওষুধ খাওয়াতে হয়, বাচ্চাদের স্কুলের জন্যে রেডি করতে হয়, নিজেকে অফিসের জন্য রেডি হতে হয়। কয়দিক সামলাবো আমি? আমি তো মেশিন নই, মানুষ। নিজে খুঁজে দেখো।"
শাহানার রাগী কণ্ঠের কথাগুলো শুনে মাহবুব আর কিছু বললো না। নিজেই মোজা খুঁজে নিয়ে পায়ে পরে অফিসে চলে গেলো।

রাত সাড়ে সাতটার দিকে মাহবুব টিভি দেখার জন্য টিভির রুমে এলো। কিন্তু টিভি চালানোর জন্য রিমোট খুঁজে পেলো না।
সে তখন বললো,"শাহানা টিভির রিমোট কোথায়?"
স্টাডি রুমে শাহানা তখন মেয়েদের পড়াচ্ছিলো। মাহবুবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সে পড়িয়ে যেতে লাগলো।
মাহবুব তখন আবারো বললো,"কী হলো কথা শুনতে পাচ্ছো না? টিভির রিমোট কোথায় রেখেছো?"
শাহানা স্টাডি রুম থেকে টিভির রুমে এসে চড়া গলায় বললো,"তোমার কি ধারণা আমি সারাদিন টিভি নিয়ে পড়ে থাকি? তুমিই বলো, সারাদিনে কতোক্ষণ আমাকে টিভির সামনে দেখো? অফিস থেকে এসে আমি বাচ্চাদের নিয়ে পড়াতে বসি। আর তুমি ঢোকো টিভির রুমে। তোমারই তো জানার কথা রিমোট কোথায়?"
এই বলে শাহানা স্টাডি রুমে চলে গেলো।
মাহবুবের ছোটো বোন, যে এখন কলেজে পড়ছে, সে এসে মাহবুবকে টিভির রিমোট খুঁজে দিলো।

রাতে খাবার টেবিলে খেতে বসে মাহবুব বললো,"তরকারিতে নুন কম হয়েছে। পানসে হয়ে গেছে তরকারিটা। খেয়ে মজা লাগছে না।"
শাহানা শীতল এবং ক্রুদ্ধ স্বরে বললো,"তোমার যদি বিন্দুমাত্র বিবেচনা থাকতো, তাহলে এ কথা বলতে পারতে না। তোমার ভাবা উচিত ছিলো একটা মানুষ সারাদিন অফিস করে এসে রান্নাবান্না করছে, সেই সাথে ঘরের অন্যদেরও দেখাশোনা করছে, এতো কাজের চাপে মাঝে মাঝে তরকারিতে নুন কম বেশি হতেই পারে। এসব না ভেবে সবার সামনে আমার বদনাম করে বসলে। তোমার তো উচিত ঘরের কাজে আমাকে সাহায্য করা। তা না করে, শুধু এটা কই সেটা কই, তরকারিতে নুন কম কেনো, বেশি কেনো, এসব নিয়ে আছো।"
মাহবুব আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে যেতে লাগলো।

এসব ঘটনা প্রায় দিনই হয়।

এক ছুটির দিনে বড়ো মেয়েকে নিয়ে মাহবুব দোকানে যাচ্ছিলো।
যাওয়ার পথে মেয়েটি বললো,"বাবা তোমাকে একটা কথা বলবো? কিছু মনে করবে না তো?"
"না কিছু মনে করবো না। তুমি বলো।"
"মা তোমাকে একটুও ভালোবাসে না। সব সময় তোমাকে বকে।"
মাহবুব কথাটার জবাব না দেয়ার জন্য অন্য প্রসঙ্গ তুললো,"তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?"
"ভালো চলছে।"
"তুমি অনেকদিন আমাকে কবিতা আবৃত্তি শোনাচ্ছো না। আজ শোনাতে হবে।"
"ঠিক আছে শোনাবো।"
মেয়ে আর বাবার মধ্যে কথা চলতে লাগলো। কিন্তু মেয়েটি বুঝতে পারলো না, তার বাবা যে গোপনে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

অন্য একদিন মাহবুবের ছোটো বোন বারান্দায় গলা নিচু করে মাহবুবকে বললো,"ভাইয়া তোমার জন্য খুব খারাপ লাগে।"
মাহবুব অবাক হয়ে বললো,"কেনো?"
মাহবুবের ছোটো বোন এদিক সেদিক তাকিয়ে গলা আরো নিচু করে বললো,"ভাবী তো তোমাকে একটুও ভালোবাসে না। তোমাকে সহ্যই করতে পারে না।"
মাহবুব বোনের দিকে অল্প সময় তাকিয়ে থেকে হঠাৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,"তুই তো বারান্দাটাকে একেবারে ফুলের বাগান বানিয়ে ফেলেছিস! দারুণ করেছিস তো!"
বোন কিছুটা অভিমান করে বললো,"এতোদিনে তোমার চোখে পড়লো?"
"বিরাট ভুল হয়ে গেছে আমার। তা এতো রকম ফুলের গাছ জোগাড় করলি কীভাবে?"
"ইচ্ছে থাকলে সবই হয়।"
"তোর বাগানে গাছ কেনার জন্য টাকার দরকার পড়লে আমাকে বলবি। ভালো কথা, তুই তো কখনো গাছ কেনার জন্য আমার কাছে টাকা চাস নি। তাহলে এতো গাছ কিনলি কীভাবে?"
"টিউশনির টাকা থেকে।"
"বাপরে, আমার ছোট্ট বোনটা স্বনির্ভর হয়ে গেছে।"
তাদের কথা হতে লাগলো। তবে ছোটো বোনটি ধরতে পারলো না, তার ভাই যে নীরবে একটা গাঢ় দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

মাহবুবের আব্বা আম্মা দুজনই অসুস্থ মানুষ। তারা সমস্ত দিন তাদের রুমেই থাকেন। একদিন মাহবুবকে তার আম্মা রুমে ডেকে পাঠালেন।
টুকিটাকি কথা হওয়ার পর মাহবুবের আব্বা আম্মা দুজনই একসময় মাহবুবকে বললেন,"বউ তো তোকে মোটেই ভালোবাসে না। বরঞ্চ তোকে ঘৃণা করে।"
মাহবুব কথাটা শুনে নড়েচড়ে বসলো। তারপর আব্বা আম্মার দিকে তাকালো। সে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করছে।
বিষয়টা এড়ানোর জন্য সে ঝটপট বললো,"একটা জরুরী কথা তো আপনাদের বলাই হয় নি।"
মাহবুবের আম্মা বললেন,"কী জরুরী কথা?"
"আর কিছুদিনের মধ্যে আমার প্রমোশন হতে যাচ্ছে।"
মাহবুবের আব্বা আনন্দিত হয়ে বললেন,"আলহামদুলিল্লাহ। খুবই ভালো সংবাদ। শুনে খুবই ভালো লাগলো।"
এরপর তাদের মধ্যে প্রমোশন নিয়ে কথা হতে লাগলো। কিন্তু মাহবুবের আব্বা আম্মা উপলব্ধি করতে পারলেন না, তাদের ছেলে যে আড়ালে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

এক সন্ধ্যায় মাহবুব অফিস থেকে বাসায় না এসে নদীর ধারে চলে গেলো। তারপর নদীর ধারে একা বসে রইলো। নদীর কোমল বাতাস মাহবুবের ক্লান্ত শরীরে এসে লাগছিলো। আকাশে ছিলো গোল পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের আলো নদীর পানিতে পড়ে চিকচিক করছিলো। মাহবুব পলকহীন স্থির চেয়ে রইলো সেদিকে।

শাহানাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো। এই নদীর ধারে শাহানাকে নিয়ে বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরে বহুবার এসেছে। এই প্রথম সে একা আসলো। মাহবুব সাধারণত অফিস থেকে বাসায় যায়। আজ প্রতিদিনের নিয়ম ভেঙে এখানে চলে এলো।

তাদের বিয়ে হয়েছে বারো বছর হলো। এই সময়ের মধ্যে শাহানা কী করে এতোখানি বদলে গেলো সে বুঝতে পারলো না। যে মেয়েটি এক সময় তার জন্য জীবন দিতে পারতো, সেই মেয়েটি আজ রাগ, বিরক্তি ছাড়া তার সাথে কথাই বলতে পারে না। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। মাহবুব স্বীকার করে যে, সে অনেক সময় অবিবেচকের মতো কথা বলে বসে। কিন্তু সে কথা কি শাহানা শান্ত ভাবে বলতে পারে না? শাহানার এই রূঢ় ব্যবহার ঘরের সবার চোখে পড়েছে। তার ছোটো বোন, আব্বা আম্মা, এমনকি তার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া মেয়েটা পর্যন্ত বলেছে, শাহানা তাকে ভালোবাসে না। তাকে ঘৃণা করে। তাকে সহ্য করতে পারে না।

শাহানা বলেছে সে বাসার কোনো কাজ করে না। কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। মাঝে মাঝে সে মেয়েদের পড়াতে বসে। ঘরের বাজার সদাই করে। হ্যাঁ এটা ঠিক শাহানা যতোখানি ঘরের কাজ করে ততোখানি সে করে না। এজন্যই কি শাহানা তাকে এখন ভালোবাসে না? সংসারের কাজের চাপে কি শাহানা ভালোবাসাহীন হয়ে গেছে? তবে কি বাকি জীবন এভাবেই কাটাতে হবে?
মাহবুব শূন্য চোখে নদীর দিকে চেয়ে রইলো।
এভাবে ঘন্টা খানিক কাটানোর পর রাত আটটার দিকে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

রাত সাড়ে এগারোটা। মাহবুব তখনো বাড়ি ফেরে নি। শাহানা কিছুক্ষণ পর পরই ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। মানুষটা কখনো অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে দেরি করে না। তাহলে আজ কেনো দেরি হচ্ছে, তাও এতো দেরি? সে একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, একবার দরোজার দিকে তাকাচ্ছে, কখনো বা জানালার কাছে এসে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে।

শাহানার শ্বশুর শাশুড়ি অসুস্থ। তারা প্রতিদিনের মতো রাতের খাওয়া সেরে, ওষুধ খেয়ে বহু আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। শ্বশুর শাশুড়ির দেখাশোনা শাহানা করে। তার ননদ রাত জেগে পড়ছে। মেয়ে দুটো ঘুমাচ্ছে।

শাহানা কী করবে বুঝতে পারছে না। তার দুশ্চিন্তার বড়ো কারণ হলো, মাহবুবকে বহুবার ফোন দেয়া হয়েছে কিন্তু সে একবারো ফোন ধরে নি। রিং হয় কিন্তু সে ফোন ধরে না। মাহবুব এমন কখনো করে না। সে কি কোনো বিপদে পড়েছে?

রাত যতো বাড়তে লাগলো শাহানার অস্থিরতা ততো বাড়তে লাগলো। একটা সময় তার অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা এমন তীব্র আকার ধারণ করলো যে, সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। শাড়ির ওপর একটা চাদর জড়িয়ে সে রাত বারোটার দিকে ঘর থেকে বেরুলো। তাদের ফ্ল্যাট ছয় তলায়। লিফটে ঢুকে নিচ তলার বোতাম টিপলো। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। কিন্তু ঘাম মোছার কথা তার মনে পড়লো না। এই এতো রাতে মাহবুবকে সে কোথায় খুঁজবে, কার কাছে যাবে, এসব কিছুই তার কাছে পরিষ্কার নয়। তাছাড়া এতো রাতে একজন নারীর ঘর থেকে বেরুনো যে নিরাপদ নয়, এ ভাবনাটাও তার মাথায় এলো না। তার মাথায় তখন একটাই চিন্তা, মাহবুব কোনো বিপদে পড়লো না তো?

নিচ তলায় এসে লিফটের দরোজা খুললে সে বেরুতে গিয়ে দেখলো, সামনেই দাঁড়িয়ে আছে মাহবুব। তার দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে লিফটের জন্য অপেক্ষা করছিলো।

এই মাঝরাতে শাহানা কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করার আগেই মাহবুব দেখলো, শাহানা লিফট থেকে বিদ্যুৎ বেগে বেরিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর উন্মাদের মতো বলতে লাগলো,"কোথায় ছিলে এতোক্ষণ তুমি? এতোবার ফোন দিলাম, ফোন ধরছিলে না কেনো? তোমার কি কোনো ধারণা আছে, কী পরিমাণ দুশ্চিন্তার মধ্যে তুমি আমাকে ফেলেছো? কথা বলছো না কেনো?"

শাহানার এই আকস্মিক আচরণে সে হতবাক হয়ে গেলো। যে মেয়ে তাকে ভালোবাসে না বলে তার মনে হয়, শুধু তার নয়, ঘরের সবারই মনে হয়, সেই মেয়ে যে তার বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে বলে দুশ্চিন্তা করতে পারে, মাঝ রাতে তাকে খোঁজার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে পারে, আর তারপর তাকে দেখার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরতে পারে, এগুলো অকল্পনীয় লাগছে তার কাছে।

শাহানা তখনো এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছে,"কী হলো কথা বলছো না কেনো? কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? কোনো বিপদ হয়েছিলো তোমার?"
মাহবুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো শাহানার গলা ধরে এসেছে। মেয়েটা কাঁদতে শুরু করেছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সে অনুভব করতে পারছে শাহানার চোখের পানিতে তার শার্টের বুকের অংশ ভিজে যাচ্ছে। যে মেয়েটা রাগী, বিরক্ত কণ্ঠ ছাড়া তার সাথে কথা বলতে পারে না, সে মেয়েটা তার জন্য বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে? মাহবুব বিশ্বাস করতে পারছে না নিজেকে। তার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।

সে কোনো রকমে বললো,"আমার কোনো বিপদ হয় নি। আমি ভালো আছি। অফিস থেকে বেরিয়ে নদীর ধারে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে কিছু পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে গেলো। ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে সময় যে কী করে পেরিয়ে গেলো বুঝতে পারি নি।"
শাহানা রুদ্ধ গলায় বললো,"কিন্তু তুমি ফোন ধরো নি কেনো?"
"আসলে ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো। তাই টের পাই নি।"
তারপর বললো,"শাহানা এবার শান্ত হও। ভেবো না। আমি আছি।"

তবু শাহানা সঙ্গে সঙ্গে শান্ত হতে পারলো না। আরো কিছু সময় মাহবুবকে জড়িয়ে ধরে সে কাঁদলো। অঝোরে কাঁদলো। ফুঁপিয়ে কাঁদলো। আর মাহবুব পরম অনুরাগে এক হাত শাহানার পিঠে রাখলো, আর অন্য হাত শাহানার মাথায় রাখলো।

ঐ রাতের পর থেকে যে মাহবুবের ওপর শাহানার রাগ, বিরক্তি চলে যায় তা নয়। শাহানা আগের মতোই মাহবুবের সাথে রাগী গলায় কথা বলে। ক্রুদ্ধ ভাবে বিরক্তি প্রকাশ করে।

তবে কেউ যদি এখন মাহবুবকে বলে, শাহানা তাকে ভালোবাসে না, তখন তার প্রতিক্রিয়ায় সে এখন আর গোপন দীর্ঘশ্বাস ফেলে না। সে এখন গোপন লাজুক হাসে। প্রথম প্রেমে পড়া তরুণের মতো।

"দাম্পত্য"
- রুদ্র আজাদ

26/09/2023

অজানা কারণে আমার স্ত্রীর মন খারাপ। মুখে গুমোট অন্ধকার এঁকে বেতের সোফায় আধশোয়া হয়ে পড়ে আছে। তার মধ্যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ভাব বিরাজ করছে, সামান্য ধাক্কা খেলেই প্রচন্ড শক্তি নিয়ে বিস্ফোরিত হবে এতে কোনো সন্দেহ নাই।

আমি অত্যন্ত বিনীত ভাবে তার মুড অফের কারণ জানতে চাইলাম। সে আমার কথার কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে ওপাশ ফিরে মোবাইল স্ক্রল করতে লাগলো। তার ফেসবুকের নিউজফিড জুড়ে আয়মান সাদিক আর মুনজেরিন শহিদের বিয়ের হাস্যোজ্জ্বল কাপল পিক।

প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমি কথা না বাড়িয়ে মিউট মুডে টেলিভিশন অন করলাম। এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার মরণদশা উপভোগ করছি।
হঠাৎ মিসেস সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আমার হাত থেকে রিমোট নিয়ে টেলিভিশন অফ করে বরফশীতল কণ্ঠে বললো,
- আজ যে একটা "স্পেশাল ডে" আছে তুমি জানো?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে বললাম,
- হুম "আজ আন্তর্জাতিক ওজোনস্তর রক্ষা দিবস"।
- ওটা গতকাল ছিলো, আজ সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় রবিবার "Wife Appreciation Day"!
- এটা আবার কি জিনিস? জীবনের প্রথম শুনলাম!
- মানে স্ত্রীকে প্রশংসা করার দিন।
- ও আচ্ছা! তোমার প্রশংসা তো আমি রোজই করি।
- কই? কোনোদিন তো শুনিনি?
- নিজ স্ত্রীর প্রশংসা করার জন্য বিশেষ দিবস বা রজনী নিষ্প্রয়োজন। আমার বন্ধুদের সাথে সবসময় তোমার প্রশংসা করি।
- কবে কখন করছো?
- এই যে গতকাল তুমি লবণ ছাড়াই চমৎকার মুগডাল রান্না করেছো এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
- তাই নাকি?
- কচুর লতি দিয়ে কোয়েলের ডিম রান্নার জাদুকরী রেসিপি খেয়ে আমার অফিসের বস তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বস বলেছে অচিরেই ভাবিকে আমাদের বাসায় পাঠাবে কচুর লতি দিয়ে কোয়েলের ডিম রান্না শিখতে। এটা আমার জন্য কতোটা গর্বের বিষয় চিন্তা করছো?
- এটা কি প্রশংসা হলো ?
- প্রতিভার বর্ণনা নিঃসন্দেহে প্রশংসা। আমার অফিসের নারী কলিগরা তোমাকে দেখার জন্য মুখিয়ে আছে।
- এই কথা তো তুমি কোনোদিন বলোনি?
- তোমার বানানো বেগুন আচারি খেয়ে আমার অফিসের বিলকিস আপার দীর্ঘদিনের কোষ্টকাঠিন্য নিমিষেই ক্লিয়ার। তিনি তোমাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
- এই তোমার প্রশংসা?
- এই যে তিনতলার জুবাইদা ভাবি তোমার সাথে ঝগড়ায় পারেনা এটাও কি কম প্রশংসার?

অতঃপর.....
যখন জ্ঞান ফেরৎ পেলাম তখন দেখি, শনি গ্রহের মতো আমার মাথার চারপাশে একটা সুবৃহৎ বলয় সৃষ্টি হয়েছে। সেই বলয়ে অসংখ্য ছোট ছোট তারা ঝিকমিক করছে। এবং আমার থুতনির নিচে মহাকাশীয় উল্কার আঘাতে কিছু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বাস করেন কোনো প্রকার ব্যথা অনুভূত হয়নি, মনে হয়েছে আমি যেন কোনো দ্রুতগতির বাহনে চড়ে অনন্ত নক্ষত্রবীথির মহাকাশ পরিভ্রমণ করছি।

"Wife Appreciation Day" সফল হওক 🙄

প্রচারেঃ উদ্বাস্তু অনিকেত

20/09/2023

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ক্লাস টেন এ পড়েন এমন কেউ কি এই পেইজে যুক্ত আছেন..? যুক্ত থাকলে প্লিজ ইনবক্সে জানাবেন..!

29/08/2023

নিজের জীবন বদলাতে গিয়ে কখনও অযুহাত দেখাবেন না নয়ত অন্যের সফলতার গল্প শুনেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে।
নিজের গল্প টা কখনও লেখা হবেনা।

29/08/2023

When you feel someone is avoiding you. Let them be. Maybe Allah wants them to distance themselves from you. Because they aren't good for you. So, be grateful Allah is just protecting you.

25/08/2023

আত্মসম্মান #
ফেইসবুকে খুব চলছে একটা লেখা ছেলে এবং মেয়েরা কিসে আটকায়।এই পর্যন্ত শুধু পড়ে গেছি কোন মন্তব্য করিনি।আজ একটা লেখা পড়ে কিছু নালিখে থাকতে পারলাম না।

একজন মেয়ের পোস্ট, সে বিয়ের আগে তার ভালবাসার মানুষ বেকার থাকায় মেয়েটি তার সংসার চালিয়েছে,তার মায়ের চিকিৎসা করিয়েছে। এবং গত দুই বছর ধরে তাদের সম্পর্ক ছিল স্বামীস্ত্রী র মত।এই কথাটার মানে কি, তাদের মধ্যে কি শারীরিক সম্পর্ক ছিল।
ধরে নিলাম সব ই ছিল।এখন ছেলে চাকরি পেয়েছে।ছেলের মা কিছুতেই ওকে বিয়ে করাবেনা।কারন মেয়ের বয়স বেশি ২৬ বছর।( এটা কি অযুহাত হল)এখন ছেলে আগামীকাল বিয়ে করতেছে,ছেলের কোন প্রতিক্রিয়া জানতে পারলাম না।মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফেইসবুকে পোস্ট দিচ্ছে।
আমার মেয়েটার জন্য কষ্ট না হয়ে দু:খ হল।এত কিছু করেও ছেলেটাকে আটকাতে পারলোনা।
বিয়ের আগেই যে মেয়ে শরীর, মন,টাকাপয়সা উজাড় করে দিয়ে দেয় তারপ্রতি কি ছেলেদের আকর্ষণ থাকে।একটা মেয়ে এত সহজ লভ্য কেন হবে।আর যে ছেলে বিয়ের আগেই মেয়ের টাকা পয়সা দিয়ে সংসার চালায়,এমন আত্মসম্মান হীন ছেলের প্রতি ভালবাসা,কান্না আসে কি করে।
এবার দ্বিতীয় গল্পটি হল,একটি আত্মসম্মানহীন মেয়ের।এটাও ফেইসবুক থেকে পাওয়া।

মেয়ে ছেলে দুজনেই রাজশাহী ভার্স্টিতে পড়েছে।শেষের দুইবছর মেয়ের পড়া,এবং যাবতীয় খরচ চালিয়েছে ছেলেটি টিউশনি করে(মেয়েটি কেন টিউশনি করলনা বুঝলাম না)।দুজনেই পাশ করেছে,এবার বিয়ের পালা মেয়ের বাবা,মার মত নেই,মেয়েও বাবা, মার অমতে ছেলেটিকে বিয়ে না করে অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে।(খোঁড়া যক্তি)
আমার প্রশ্ন দুইবছর মেয়ের পড়াশোনা র খরচ কোথা থেকে আসল, বাবা, মা একবার ও জানতে চাননি কেন। মেয়েইবা বলেনি কেন?
ছেলেটি মনের দু:,খে আর বিয়েই করেনি।
মেয়েটি সুখে শান্তিতে ঘর করতে লাগল,তাদের একটি সন্তান হল,কিন্তু সেই সন্তানের জন্মগত ভাবে কিছু সমস্যা আছে।তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার।ছেলেটি বন্ধু মারফত এই কথাটি জেনে মেয়েটির ব্যাংক একাউন্টে বড় অংকের টাকা পাঠিয়ে দিল।( মেয়েটির একাউন্ট নাম্বার জানলো কি করে)
চিকিৎসা টিকিৎসা করে মেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিল,তার এতদিনে মনে হচ্ছে,সে ছেলের কাছে অনেক ঋনী।

আমার সেদিনও মেজাজ খারাপ হয়ে ছিল,একটা মেয়ে বয় ফ্রেন্ডের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিভাবে পড়াশোনা করে।আর এতদিনে বিয়ে করে,বাচ্চা জন্ম দিয়ে, মেয়ের চিকিৎসা খরচ নিয়ে তার বিবেক জাগ্রত হয়েছে।

মাঝে মাঝে খুব অবাক হই,আজকাল ছেলেমেয়েরা কি অবলীলায় বয়ফ্রেন্ড বা গার্ল্ফ্রেডের কাছে বিভিন্ন গিফট, টাকা পয়সা চেয়ে নেয়,অথবা স্বেচ্ছায় দিলেও সেটা সহজেই হজম করে।এ সব আত্মসম্মান হীন ছেলেমেয়েদের শুধু করুনা,আর ঘৃনা হয়।
আত্মসম্মানের ব্যাপারটা হল পারিবারিক শিক্ষা।বাবা,মায়ের মধ্যে যদি আত্মমর্যাদাবোধ থাকে তবে ছেলেমেয়েরাও তাই দেখে শিক্ষা পায়।আটকা আটকির ব্যাপারটা নিয়ে আরেকদিন লিখব।
ভাল থাকবেন সবাই।

18/08/2023

আত্মসম্মান

"বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গুরুত্বপুর্ণ আলাপ করছে আর তুমি রুমে বসে বই পড়ছো ?”
“সেখানে গিয়ে আমি কি করবো ? এই বাসায় দুই মুরুব্বীর কথাই আইন – শুধুশুধু সময় নস্ট !”
“আলোচনা কিন্তু তোমার জন্যেই হচ্ছে !”
“ হ্যাঁ সেটা জানি ,রায় কি হয় জানিয়ে দিও মাথা পেতেই নিবো”
“খাপছাড়া মেয়েমানুষ নিয়ে সংসার করে গেলাম আমি, সবাই একসাথে আড্ডা দেয় ,টিভিতে সিরিয়াল দেখে – উনি একাই বিদ্যার সাগর! সবসময়ই অবসরে বই নিয়ে বসে থাকেন!”
"আসলে ঠিকই বলেছো , পুঁথিগত বিদ্যা মুখস্ত করে কিছুতো হতে পারিনি তাই তোমাদের ভাষায় নভেল পড়েই সময় কাটাই!”
“মানুষ অবসরে কতো কি করে ? মাকে দেখতাম সবসময় হাতের কাজ বা এটা সেটা করতে তুমি পারো কেবল বইয়ের পিছনে ফালতু টাকা নস্ট করতে !”
কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যাবার পর মনে হলো আসলে ওর যেমন আমাকে নিয়ে দুঃখ আছে –আমারও আছে কিন্তু সেসব শোনার কেউ নাই বলে বলা হয়না। কি সুন্দর করে ক্ষোভ ঝেড়ে হাল্কা হতে পারে কিন্তু আমি কাকে বলবো ?
৩০ বছর দুজন একই ছাদের নীচে কাটিয়ে দিলেও আপন হতে পারলাম আর কই ? সামাজিকতার পোশাকটা বয়ে বেড়িয়েছি মাত্র !
“চাচ্চু ড্রয়িং রুমে চা দিতে বলেছে”
ভাশুরের মেয়ের কথায় বুঝতে অসুবিধা হলোনা আমাকে কাঠগড়ায় নেবার জন্যেই বাহানাটুকুর আশ্রয়!
চা-নাস্তা নিয়ে রুমে ঢোকার সময়ই শুনলাম ভাশুর বলছে---
“শত হলেও আমরা মেয়েপক্ষ আমাদের এতো তেজ দেখানো চলে না , বুঝলাম ছেলের মা একটু সেকেলে – আমাদের উচিত হবে ইরাকে বোঝানো আরে একটা সময় পর ইরা রাজরানী হবে , মা আর কয়দিন?”
আমি প্রস্তুত হয়েই ছিলাম আজকে মুখোমুখি হবোই
“উনার ছেলে উনার কাছে যেমন হীরের টুকরো আমার কাছে আমার মেয়েও তাই ভাইয়া। অনেক ভেবেচিন্তে বলেছি মেয়েকে সেখানে আর দিবো না”
ঘরে বাজ পড়লো এই কথায় কারণ এই বাড়ির প্রধান দুজনের উপরে এই প্রথম আমি নিজের মতামত জানিয়েছি!
“তুমি কি বলতে চাও মেঝ বউ ? এই বংশের একটা মান-ইজ্জত আছে আর এই বংশের কোনো মেয়ে আগে কখনো স্বামী ছেড়ে আসেনি ,তোমার জন্যে কি মানসম্মান সব যাবে ?”
“ আমার কাছে সবার আগে আমার মেয়ের ভালো থাকা মা”
আবারও রুমের পরিবেশ চুপ হয়ে গেলো। আমি আমার স্বামীর চোখের ভাষা দিব্যি পড়তে পারছি কিন্তু ও আমাকে বুঝতেও পারছে না । ৩০ বছর ধরে জমে থাকা বুকের ভেতরের অভিমানটুকু আজ বর্ষন ঝরাবেই ! যা হবার হবে ! বিয়ের পর অনেক চোখের জল ঝরেছে – উঠতে বসতে শুনতে হয়েছে
" বংশবতী মেয়েরা এটা করেনা ওটা করেনা "
কিছু বলার আগেই এক ভাঙ্গা রেকর্ড বেজেই চলতো। স্বামীও মা ভাইয়ের উপর কথা বলতো না --- বড়ো তুচ্ছ হয়েই বইয়ের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম । বংশ নিয়ে অহংকার করা মানুষ গুলোর পুঁথিগত বিদ্যার বাহিরে কোনো জগত ছিলো না। এদের ঝুড়িতে সার্টিফিকেট ঝুললেও মনের বাড়িতে আলো ঢুকেনি তাই বাড়ির বউগুলোকে মেয়েমানুষই ভেবেছে মানুষ ভাবতে শিখেনি কখনো ।
“যা হওনের হইছে আমি নাতী জামাইরে ডেকে ইরাকে নিয়ে যেতে বলবো বউ, ভালো বংশের মেয়েরা সংসার ভাঙ্গে না”
“নতুন একটা পরিবেশে গেলে কেনো একটা মেয়েকেই সবকিছু মেনে নিয়ে চলতে হবে মা ? কে দিয়েছে এই দায়িত্ব ? সংসারের কোনো ব্যাপারেই মেয়ে কথা বলার অধিকার পর্যন্ত নাই । প্রায় দুই বছরের মতন সংসার করলো মেয়ে। ওরা কি সামান্য ছাড় দিয়েছে কিছুতে? শুধু রান্নাবান্না করার জন্যে বউ নিয়েছে ওরা ?”
“আজিব কথা কইও না বউ , মেয়েদেরকেই সব মাইন্না চলতে হয়”
“আমার মেয়ের মুখে হাসি নাই ,দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে আর এখন সে ডিপ্রেশনের রোগী তারপরেও সেই সংসারেই ঠেলে পাঠাতে হবে ? আমি মা জল্লাদ না"
“আহ এতো রেগে যাচ্ছো কেনো তুমি ? চিকিৎসা চলছে দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে”
" মেয়ের কস্ট বুঝে গোপনে তাকে টাকা দাও মানে তোমার কাছে সামাজিকতার ভয়, অবশ্য স্বামী হয়ে বউয়ের কষ্ট বুঝোনি। আজীবন সবার চোখে ভালো হয়ে থাকার জন্যে যে মানুষ স্ত্রীর অধিকার কি বুঝেনি তার কাছে এরচেয়ে বেশি কি আশা করবো আমি?”
“তুমি কি বলতে চাও আমি মেয়ের ভালো চাইনা ?”
"ভালো চাইলে জামাইকে ডেকে শক্ত করে বলতে পারতে কেনো মেয়ে ভালো নাই? "
"এটা কি সম্ভব নাকি?
অনার্স শেষ করার আগেই ভালো চাকুরী করা একজন পেয়ে তোমরা পাগল হয়ে মেয়েটাকে বিয়ে দিলে। হ্যাঁ পাত্র হিসাবে সে অবশ্যই ভালো পজিশনে আছে কিন্তু তার মানে এই না স্বামী হয়ে নিজের স্ত্রীকে বুঝবে না! মেয়ের কোনো শখ আহলাদ থাকতে পারবে না আর গ্রামের বাড়ি থেকে রাজ্যের মেহমানরা আসবে তাদের আপ্যায়ন করার দায়িত্ব মেয়ের। মেয়ের কোনো শখ থাকতে পারবে না, ঘরের সবকিছুই মুরুব্বি ঠিক করবে। উনি যেভাবে বড় হয়েছেন আমার মেয়েটি সেভাবে বড়ো হয়নি। কেনো মেয়ের উপর চাপিয়ে দিবেন? জামাই কি শিক্ষিত হইছে যে সাধারণ এসব না বুঝে দিনের পর দিন মেয়েকে ভাংগা রেকর্ডের মতন বলতেই থাকে মায়ের উপর কথা বলা যাবে না? যার যা অধিকার তাকে সেই হক কেনো দিবে না?
ভবিষ্যৎ ভালো হবে এই আশায় তার বর্তমান নষ্ট করতে হবে,?"
"তাই বলে সংসার ভাংগা কি এতো সহজ?"
"আম্মা অনার্স শেষ করার পর তাদের সংসারের চাপে মাস্টার্স করতে পর্যন্ত পারলো না আর তার শ্বাশুড়ি, জামাই বলে আর নাকি পড়াশোনার দরকার নাই, আপনি কি বুঝতেছেন মেয়েটাকে এভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে জীবন দুর্বিষহ করে ফেলছে? "
“তুমি কি নিজের সিদ্ধান্তে অটল মীরু ?”
“জ্বি ভাইয়া আমি জামাই আর বেয়াইনের সাথে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের একই ভাঙ্গা রেকর্ড শুনে আমি নিজেই ক্লান্ত। কত কস্ট করে সন্তান মানুষ করেছেন সেই গল্প ! আরে যে পুরুষ নিজের স্ত্রীকে সম্মান দিতে পারেনা , নিজের মাকে বুঝাতে পারেনা একটা পরিবেশ থেকে আরেকটা পরিবেশে এলে বউদেরকেও একটু ছাড় দিতে হয় সে আসলে স্বামী হবার উপযুক্তই হয়নি। মেয়েটা কি বানের জলে ভেসে এসেছে আমার ? মায়ের জায়গায় মা থাকবে আর বউয়ের জায়গায় বউ এই বোধই নাই জামাইয়ের । সেই বাসায় সবকিছুই বেয়াইনের মর্জিমাফিক চলতে হবে। শখ করেও কিছু করার অধিকার নেই মেয়ের!"
"বেশতো জামাইয়ের সাথে আমরা আরেকবার বসতে পারি”
“আমি কথা বলেছি আর জামাই আমাকে স্পষ্ট করে বলেই দিয়েছে সে মায়ের কথাতেই চলবে। স্যাক্রিফাইস শুধু মেয়েকে করতে হবে । যার যার অধিকার, প্রাপ্যতা যে পুরুষ বুঝে না তার বিয়ের আগেই জানানো উচিত ছিলো। আজীবন আমার মেয়েকে স্যাক্রিফাইস করে চলতে হবে , এটাকে নিশ্চয় সংসার বলে না ,বলে সঙ সার – কেনো করবে মেয়ে এই সংসার?”
“বংশের মান- সম্মানের কথাটা ভাবলে না মেঝ বউ?”
“ বংশ মর্যাদা ধুয়ে কি আমি পানি খাবো মা ? আপনাদের এতো সমস্যা হলে আমি না হয় মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি তবু সেই নরকে পাঠাবো না। সন্তানদের পড়ার পাশাপাশি মানবীয় গুণাবলী না শিখালে তারা সনদধারী হয় কিন্তু সত্যিকার মানুষ আর হয় না। এতোটা বছর এই সংসারে থেকে দেখলাম আপনাদের কাছে বংশ আর সার্টিফিকেটের মুল্য মানুষের চাইতেও বেশিই !”
“কি বলতে চাও তুমি ? এটা তোমার মেয়ে মনে রেখো ডিভোর্স হলে আত্মীয়-স্বজনের সামনে মুখ দেখাবো কি করে ?”
“ আমার কাছে ছেলেমেয়ে বলে আলাদা কিছু নাই --সবই সন্তান। এই যে মেয়েকে গোপনে টাকা দিচ্ছে তাতে করে এই বাড়ির ছেলেগুলো কি শিখছে ভাবুন একবার? অন্যায়ের কাছে নত হওয়াটা অন্যায়ই। মেয়ে অসুস্থ বলে তারা বলে বেড়ায় আমরা নাকি গোপন করে বিয়ে দিয়েছি তবু ও নিজেদের ভুল দেখতে পায় না। কি হবে এই সংসার করে? আজীবন নিজের সবটা দিলেও সে আসলে কারোই আপন হবে না আমিতো অন্তত জানি। নিজে যে পথে হেঁটেছি মেয়েকে সেই পথে আর দেখতে চাইনা, মায়েদের কাছে সবাই সন্তান হওয়া উচিত। বউ --সেও কারো আদরের সন্তানই ”
“তুমি দেখি নয়া যুগের কথা কও বউ”
“আম্মা আপনি বউদের কখনো আপন ভাবেননি কেবল নিজের ইচ্ছাগুলো চাপিয়ে দিয়েছেন। আপনার সন্তানেরা বাধ্য ছেলের মতো সেসব শুনে গেছে – একবার ভাবুন বউদের কথা ! তারাও মানুষই ছিলো তাদের সুখ-দুঃখের সাথী স্বামীরা হয়নি শুধু মুখ বুঝে সংসার করেছে। আজ আমার মেয়ের বেলায় এসে মনে হচ্ছে – বহু বছর আগেই আমাদের প্রতিবাদী হওয়া উচিত ছিলো -সন্তানের মায়ায় পড়ে সবাই সয়েই গেছি কিন্তু আর কতো ? যে স্বামীদের কাছে স্ত্রীদের দুই আনার মুল্য নেই সেখানে কেনো পড়ে থাকবে মেয়ে ? মায়ের পায়ের নীচে জান্নাত – সেজন্যে কি স্ত্রীদের অবহেলা করতে বলেছে ? মায়ের প্রতি যেমন দায়িত্ব আছে স্ত্রীদের প্রতিও দায়িত্ব আছে , শুধু ভরণ –পোষণের দায়িত্ব নেয়াটা স্বামী নয় এই বোধই অনেক পুরুষের নাই। মেয়ের জামাইকে দোষ দেইনা – যেমন গাছ তার ফল তেমনই হবে তাই না ? একদিন সে রাজরানী হবে এই আশায় এখন তার জীবন নরক হবে ? এই সময় এই দিন তার জীবনে ফিরে আসবে কি ? যে পুরুষ স্ত্রীর কষ্ট বুঝতেই চায়না সে বিয়ে করেছে কেনো ? যে মাকে সম্মান করে সে অবশ্যই স্ত্রীকে সম্মান করবে কারণ একজন দুনিয়াতে এনেছে আরেকজন তার দুনিয়া ছেড়ে স্বামীর সাথে সংসার করতেই এসেছে --- এটাও বুঝতে হবে”
কথাগুলো বলে নিজের রুমে চলে এলাম। আমি জানি কেউই ভাবেনি আমি এভাবে বলতে পারি!
সত্যি বলতে মেয়ে যদি আজকে বিপদে না পড়তো হয়তো এভাবেই আমার বাকি দিনগুলো ও কেটেই যেতো। এদেশের বেশিরভাগ মেয়ে মেনে নেয় ,মানিয়ে নেয় আর নিজের ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হতেই থাকে । মেয়ের শ্বাশুড়ির শখ দাদী হবার কিন্তু আমি জানি একবার মা হলে সেই নরকে আমিও হয়তো ঠেলে দিবো। বাস্তবতা কঠিন তাই অসহায়ত্বের মুখে বেশিরভাগ মেয়ে নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দেয় একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ঠিক আর হয়না । আমার পথ বড়ো পিচ্ছিল আর কর্দমাক্ত ছিলো আমি সয়েছি কিন্তু মেয়ের কস্ট, মেয়েকে করা অপমান আর নিতেই পারছি না অথচ এই দিন আমারও গেছে কিন্তু প্রতিবাদী হয়ে উঠা আর হয়নি। দেরীতে হলেও বুঝেছি যে আত্মসম্মান বড়ো দামী জিনিস ! যেখানে তোমার মুল্য নেই সেখানে পড়ে থেকে নিজেকে অর্থহীন করতে নেই। যে কদর করতে জানে না সেখান থেকে নিজেকে বের করে মাথা উঁচু করে একাকী থাকাও সম্মানের।

ফাহমিদা খানম

১৮/৮/২০২৩

14/08/2023

আমরা তিন বন্ধু ভালো চাকরি করি। আমাদের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। আমাদের পছন্দ ভিন্ন।

এক বন্ধু চায় এমন পরিবারের মেয়ে বিয়ে করতে যাদের আর্থিক অবস্থা তার পরিবার থেকে উঁচু। আরেক বন্ধু চায় ভালো চাকরি করা অর্থাৎ স্বনির্ভর মেয়ে বিয়ে করতে। আর আমি চাই এমন পরিবারে বিয়ে করতে যাদের আর্থিক অবস্থা আমার পরিবার থেকে নিচু, এবং মেয়ে চাকরি করতে পারবে না।

দুই বন্ধুসহ সবাই আমাকে বললো, সচ্ছল ঘরের মেয়ে বিয়ে করার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দুর্বল ঘরের মেয়েকে কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছি?
উত্তরে বললাম,"সময় হলে জানাবো।"

আমাদের বন্ধুদের পছন্দ ভিন্ন হলেও একটা জায়গায় আমাদের মিল ছিলো। সেটা হলো, আমরা এ ব্যাপারে একমত যে, সংসারের শান্তির জন্য স্ত্রীদের শাসনে রাখতে হবে। মুখের কথায় যদি স্ত্রীরা সোজা না হয়, তাহলে মার দিতে হবে। স্ত্রীদের মারা অন্যায় নয়। আমাদের বাবারাও তাদের স্ত্রীদের প্রয়োজনে মেরেছেন।

এই মনোভাব নিয়ে পছন্দ অনুযায়ী আমরা বিয়ে করলাম।

প্রথম দিকে আমাদের তিন বন্ধুর সংসার ঝামেলাহীন ভাবে গেলো। পরে নানা বিষয় নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে টুকটাক ঝামেলা হতে লাগলো।

লক্ষ্য করে দেখলাম তিন পরিবারের ঝামেলাগুলোর মূল কারণ একটাই। তা হলো, আমরা স্বামীরা যা বলি স্ত্রীরা যদি তা না করে তাহলে আমাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যেতো।

স্ত্রীকে হয়তো একটা কাজের কথা বললাম। এবং কীভাবে করতে হবে সেটাও বললাম।
স্ত্রী যদি তখন বলতো,"কাজটা তুমি যেভাবে করতে বলছো, সেভাবে না করে অন্য ভাবে করলে বেশি ভালো হবে।"
রেগে গিয়ে তখন বলতাম,"আমার থেকে বেশি বোঝো? আমি যেভাবে বললাম ঠিক সেভাবেই করবে। অন্য ভাবে না।"

স্ত্রীরা আমাদের আদেশ, হুকুম, মেজাজ বেশ কিছুদিন সহ্য করার পর একদিন তারা রেগে গেলো। তাদের রাগ হলো, আমাদের কাছে বেয়াদবি। আর স্ত্রীদের বেয়াদবি কী করে দূর করতে হয়, তা আমাদের বাবারা শিখিয়ে গেছেন। অর্থাৎ মার।

তিন বন্ধুও স্ত্রীর গায়ে হাত তুললাম। হাত তোলার পর তিন স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া তিন রকম হলো।

ধনী ঘরের মেয়েটি বাবার বাড়ি চলে গেলো। বন্ধু মেয়েটিকে যেতে দিতে চায় নি। কিন্তু মেয়ের পরিবার ক্ষমতাবান হওয়াতে সে আটকাতে পারে নি।

মেয়ের বাবা বললেন, নারী নির্যাতনের মামলা করবেন। এবং তালাকের ব্যবস্থাও করছেন।

বন্ধু মাথায় হাত দিয়ে বললো,"ধনী পরিবারে বিয়ে করে বিরাট ভুল করলাম।"

আর যে বন্ধুর স্ত্রী ভালো চাকরি করে অর্থাৎ স্বনির্ভর, তার গায়ে হাত তোলার পর স্ত্রী বললো,"তোর মতো অসভ্যের সাথে না থাকলে আমার কী ক্ষতি হবে? আমি কি খেতে পারবো না? পরতে পারবো না? থাকতে পারবো না? আমার গায়ে হাত তোলার ফল তুই পাবি। একটু অপেক্ষা কর।"

সেদিনই বন্ধুর স্ত্রী চলে গেলো। এবং বন্ধুর নামে নির্যাতনের মামলা এবং তালাকের আয়োজন করতে লাগলো।

এই বন্ধুও মাথায় হাত দিয়ে বললো,"স্বনির্ভর মেয়ে বিয়ে করে বিরাট ভুল করলাম।"

দুই বন্ধুর দু:খ দেখে খারাপ লাগলেও মনে মনে বিজয়ীর হাসি হাসলাম। কারণ, আমার স্ত্রী মার খেয়ে কোনো প্রতিবাদ করলো না। বাপের বাড়িও চলে গেলো না। শুধু নীরবে কাঁদলো।

দুই বন্ধু তখন আমাকে বললো,"দুর্বল ঘরের এবং স্বামীর উপর নির্ভরশীল মেয়ে বিয়ে করে তুই বুদ্ধিমানের কাজ করেছিস। তুই বউকে মারিস, কাটিস, যা ইচ্ছে করিস, কিন্তু মেয়েটা কিছু বলতে পারবে না। তোকে ছেড়েও যেতে পারবে না। তুই কেনো এমন মেয়ে বিয়ে করেছিস এবার বুঝতে পারলাম।"

বন্ধুদের কথা ঠিক। বন্ধুরা তাদের স্ত্রীদের গায়ে একবার হাত তুলে এখন নাকানিচুবানি খাচ্ছে। আর আমি একাধিকবার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেও দিব্যি সংসার করে যাচ্ছি। মেয়েটা প্রতিবাদহীন চুপচাপ সব মেনে নেয়।

অবশ্য স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার সময় মা আমাকে আটকানোর চেষ্টা করতেন। এবং বকাঝকা করতেন। কিন্তু মা'র কথা শুনতাম না।

যাই হোক, আমার সুখ বেশিদিন স্থায়ী হলো না।
স্ত্রীর এক ভাইয়ের পুলিশে চাকরি হয়ে গেলো। যেদিন চাকরি হলো, ঠিক সেদিন আমার চুপচাপ থাকা স্ত্রী ব্যাগ গুছিয়ে প্রবল ক্রোধের সাথে আমাকে বললো,"নিরুপায় হয়ে দিনের পর দিন তোর নোংরামি সহ্য করেছি। কিন্তু আর না। এবার তোকে এমন শিক্ষা দেবো, সারাজীবন মনে রাখবি।"

এমন তীব্র আক্রমণ করার পরও স্ত্রীকে কিছু বলার সাহস হলো না। কারণ শ্যালক এখন পুলিশ। আমাকে হাজতে ঢোকানো তার জন্য কোনো ব্যাপার না।

দুই বন্ধুর বিপদের চেয়ে আমার বিপদ আরো ভয়াবহ হয়ে দেখা দিলো। ভেবেছিলাম, দুই বন্ধুর মতো আমিও নারী নির্যাতনের মামলা এবং তালাকের সম্মুখীন হবো। কিন্তু আমারটা হলো আরো সাংঘাতিক!

স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার পর পুলিশ শ্যালক ফোন করে শীতল গলায় বললো,"দুলাভাই, আমার বোনকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে আপনি পুরষ্কার হিসেবে ক্রস ফায়ার পেয়েছেন। অভিনন্দন আপনাকে।"

তারপর থেকে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেলো।

তিন বিধ্বস্ত বন্ধু আমার বাসায় বসে আলোচনা করছিলাম, আমাদের বাবারা স্ত্রীদের সাথে যে আচরণ করে পার পেয়ে গেলেন, একই আচরণ আমাদের স্ত্রীদের সাথে করে আমরা কেনো পার পেলাম না?

কথার এক পর্যায়ে মা এসে বললেন,"পুরুষেরা সবচেয়ে বড়ো যে ভুলটা করে তা হলো, তারা স্ত্রীদের ভাবে তাদের অধীনস্থ, আশ্রিত এবং শারীরিক সুখ পাওয়ার বস্তু মাত্র। এই মনোভাবের কারণে স্ত্রীদের কোনো কিছু স্বামীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। স্ত্রীদের কথা, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত সব তুচ্ছ মনে হয়। আর তুচ্ছদের বকলে, মারলে কিছু যায় আসে না। আমরা এসব অত্যাচার মুখ বুজে মেনে নিলেও এখনকার মেয়েরা এসব মানতে রাজি নয়। কারণ এখনকার মেয়েরা শিক্ষিত এবং স্বনির্ভর হচ্ছে।"

তারপর বললেন,"পুরুষেরা নিজেদের বড়ো ভেবে স্ত্রীদের সাথে মিশলে, কোনোদিন স্ত্রীদের ভালোবাসা পাবে না। বড়ো ভাবা স্বামীর সাথে কোনো মেয়ে ঘর করতে চাইবে না। সুযোগ পেলে মেয়ে চলে যাবে। স্ত্রীদের ভালোবাসা পেতে হলে এবং চিরটাকাল তাদের ধরে রাখতে হলে, তাদের অধীনস্থ, আশ্রিত, এবং শারীরিক সুখ পাওয়ার বস্তু মাত্র না ভেবে বন্ধু ভাবতে হবে। অর্থাৎ তাদের সমান ভাবতে হবে। তোমরা যেটা করতে পারো নি।"

মা'র কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার কারণ নেই। কেননা, আমরা কখনো স্ত্রীদের বন্ধু অর্থাৎ আমাদের সমান ভাবি নি। ভেবেছি আমাদের অধীনস্থ, আশ্রিত এবং শারীরিক সুখ পাওয়ার বস্তু মাত্র।

এরপর মা বললেন,"আর পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো, স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা। যারা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে, তেমন পুরুষদের স্ত্রীরা আজীবন ঘৃণা করে।"

এই নিকৃষ্ট কাজটাও আমরা করেছি। স্ত্রীরা আমাদের ঘৃণা করবে এটাই স্বাভাবিক।

এখন তো আমরা ভুল বুঝতে পারলাম। এবং এখন যদি স্ত্রীদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাই, এবং তাদের ফিরিয়ে আনতে চাই, তারা কি আসবে? যে অপরাধ আমরা করেছি, তাতে ফিরে না আসার কথা। অবশ্য লেখক যদি চান তাহলে ভিন্ন কথা। শুনেছি রুদ্র আজাদ হ্যাপি এন্ডিং পছন্দ করেন। এই গল্পটাতেও যদি হ্যাপি এন্ডিং দেন, তাহলে ভীষণ খুশি হবো।

( লেখক হিসেবে আমি খুবই নরম মনের। ভাঙা পরিবার দেখলে খারাপ লাগে। তাই আমার প্রায় গল্পে ভাঙা পরিবার জোড়া লাগিয়ে দিই। কিন্তু এই গল্পে জোড়া লাগাবো না। কারণ, স্ত্রীর গায়ে হাত তোলাকে আমি মেনে নিতে পারি না। তাই এই তিন স্বামীকে শাস্তি অবশ্যই দেবো। )

দু:খের বিষয় লেখক হ্যাপি এন্ডিং এ রাজি হন নি। তাই আমরা তিন বন্ধু অনেক চেষ্টা করেও স্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে পারি নি। আমাদের তালাক হয়ে গেলো। স্ত্রীদের দেনমোহরের পুরো টাকা দিতে হলো। সেই সাথে তিন মাসের ভরণপোষণের টাকাও দিতে হলো। ভালো চাকরিটাও চলে গেলো। শুধু তাই নয়, স্ত্রী নির্যাতনের অপরাধে এখন জেলে পড়ে আছি।

অবরুদ্ধ জেলখানায় শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি, স্ত্রীকে অধীনস্থ, আশ্রিত এবং শারীরিক সুখ পাওয়ার বস্তু না ভেবে যদি বন্ধু ভাবতাম, তাহলে জীবনটা শূন্য না হয়ে আলোয় পূর্ণ হয়ে উঠতো! অপূর্ব সুন্দর আলোয়।

"অপূর্ব সুন্দর আলো"
- রুদ্র আজাদ

Address

Dhaka, Tejgaon, South Begun Bari
Dhaka
8320

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Asad's Diary posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Asad's Diary:

Videos

Share

Nearby media companies


Other Book & Magazine Distributors in Dhaka

Show All

You may also like