23/07/2023
রায়ান নীল টেন ডোসেট! এক ভবঘুরে ক্রিকেটার!
আমার দেখা পৃথিবীর অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার 💚
তার সমমানের অলরাউন্ডার টেস্ট খেলার অনুমতি না পাওয়া দেশগুলোর ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় কেউ আর আসেনি।
তার সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলেন কেবল কেনিয়ান কিংবদন্তি স্টিভ টিকোলো।
আইসিসির বিবেচনায় রায়ান টেন ডোসেট সহযোগী দেশের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার!(২০০৮,২০১০,২০১১)! তিনি ব্যাতিত যে পুরস্কার একাধিকবার জিতেননি আর কোনো ক্রিকেটার!
ভবঘুরের মতো এদেশ ওদেশ ঘুরে ক্রিকেট খেলেছেন তিনি!!
পেশাদার ক্রিকেট খেলেছেন ভারত,অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড,ইংল্যান্ড,বাংলাদেশ সহ বহু দেশে।
ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে তার নামটি আছে কিংবদন্তিতুল্য হয়ে।
এসেক্সের অধিনায়ক হয়ে জিতেছেন কাউন্টি শিরোপা।
প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ১৮৮টি, করেছেন ১১ হাজার ৫৯৭ রান। এর মধ্যে আছে ২৯টি সেঞ্চুরি, ৪৯টি হাফ সেঞ্চুরি। পেয়েছেন ২১২টি উইকেট!
এমন ব্যাটসম্যান কিনা কোনোদিন টেস্ট খেলারই সুযোগই পেলেন না!
একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলতে পারলেন না।
অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের টেস্ট খেলার অনুমতিই নেই!
২০১৮ সালে বাংলাদেশের লীগে খেলতে এসে আফসোস করে তিনি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ কেন! পৃথিবীর যেকোনো টেষ্ট খেলুড়ে যেকোনো দেশের হয়ে খেলতে আমি ইচ্ছুক! এতেও যদি টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেওয়া যায়!’
পৃথিবীতে হওয়া প্রায় সবকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগেই খেলেছেন তিনি।সাফল্যও পেয়েছেন!
টি২০ ক্রিকেটে ৩৩৯ ইনিংসে ১৩৪ স্ট্রাইকরেটে ৭৫৯৭ রান!! ২ টি সেঞ্চুরি ,৩৪ টি হাফ সেঞ্চুরি!!
জন্মসূত্রে টেন ডোসেট একজন ‘প্রোটিয়া’। জন্ম, বেড়ে ওঠা,শিক্ষা কিংবা ক্রিকেট খেলার সূচনা – সবই হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
ছোটবেলা থেকে রাগবি, ফুটবল,ক্রিকেট,গলফ সবই খেলেছেন তিনি। পুরোদস্তুর স্পোর্টস পার্সন যাকে বলে!
বর্ণবাদী কোটাভিত্তিক সিস্টেমের কারণে প্রোটিয়া দলে জায়গা না পেয়ে তিনি চলে যান তার মায়ের দেশ নেদারল্যান্ডসে।
ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় এক অমুল্য সম্পদ!
তবে নেদারল্যান্ডসের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে টেন ডোসেট কখনোই খুব একটা সিরিয়াস ছিলেন না।
জাতীয় দল নেদারল্যান্ডসের হয়ে তিনি তাই খেলেছেন খুবই অল্প কিছু ম্যাচ (২০০৬-২০১১ পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচ)!
তাতেই তার যা অর্জন, তা রীতিমতো ঈর্ষণীয়।
ওডিআই ক্রিকেটে কমপক্ষে এক হাজার রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেন ডোসেটের গড় ই পৃথিবীতে সর্বোচ্চ!
৩২টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ইনিংস খেলে ৬৭ গড় এবং ৮৭ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ১,৫৪১ রান! এর মধ্যে আছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও নয়টি হাফসেঞ্চুরি! দুইটি ৯০+ ইনিংস (৯৮*,৯০)!
তার মধ্যে দু’টি সেঞ্চুরি ও ৩ টি হাফ সেঞ্চুরিই বিশ্বকাপে!! পুরো ওডিআই ক্যারিয়ারে শূন্য রানে আউট হয়েছেন মাত্র ১ বার!
মিডিয়াম ফাস্ট বোলিংয়ে ২৪.১২ গড় ও ৫.০৩ ইকোনমিতে পেয়েছেন ৫৫ টি উইকেট।
আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে ২২ ম্যাচে ৪২ গড় এবং ১৩৩ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ৫৩৩ রান! সেইসাথে ১৩ টি উইকেট।
২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ বলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের জয়ের নায়ক তিনি!
ওডিআই বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ৬২ গড়ে! ৪৩৫ রান!
২০০৭ বিশ্বকাপে- ৫৭,১,৭০*!
২০১১ বিশ্বকাপে- ১১৯,৭,১১,১১,৫৩*,১০৬!
এছাড়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ২ ম্যাচে ১৭৩ গড়ে! ১৭৩ রান!
২০১১ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি এবং ২ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা! শেষ ম্যাচেও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করেন সেঞ্চুরি।
তখনও কেউ জানতো না, সেটাই ছিলো তার শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ।
২০১১ সালের পর থেকে শুরু করে ছয়-সাত বছর তিনি নেদারল্যান্ডসকে সময়ই দেননি।
অবশ্য এই সময়ে নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ব্যাতিত ম্যাচ ই খেলেছে মাত্র ৩ টি। ৭ বছর পর ২০১৮ সালে তিনি জাতীয় দলের ডাকে সাড়া দিয়ে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ফেরেন নেপালের বিপক্ষে।পরিত্যক্ত সেই টি২০ ম্যাচে খেলেন ৩৮ রান!
এরপরের ৫ বছরে নেদারল্যান্ড ম্যাচ খেলে হাতেগোনা কয়েকটি।
২০২১ সালে একেবারেই জাতীয় দল ত্যাগ করেন তিনি।
ততদিনে তার বয়স ৪০!
এমন একটা দেশের প্লেয়ার তিনি যে দেশ ২৮ বছরে খেলেছে মাত্র ১১৪ টা ওডিআই ম্যাচ!!
বছরে ৩-৪ টা ম্যাচ।কখনো কখনো বছরের পর পর কোনো ম্যাচই খেলতে পারেনি!
ম্যাচ খেলার অনুমতির(ওডিআই স্ট্যাটাস) জন্য যাদেরকে খেলতে হয়েছে,লড়তে হয়েছে!
যারা ১৬ বছরে T২০ খেলেছে মাত্র ৯৮ টি (৪৯ টি জয়),যার মধ্যে বিশ্বকাপ,বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের সংখ্যাই ৬০+!!
৪ বছরে টানা ১০০ ম্যাচ খেলা দল আর ৩০ বছরে সব মিলিয়ে ১০০ ম্যাচ খেলা দলের পরিস্থিতি এক না।
বছরে ৩-৪ টা ম্যাচ খেলা কোনো ক্রিকেটারের পিক টাইম বলে কিছু থাকার কথা না।এই কারণেই সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেটারদের পরিসংখ্যান সাধারণত ভালো হয়না।
তারপরও কিছু ক্রিকেটার থাকেন যারা তাদের সেরা সময়কে জিইয়ে রাখেন বহু দিন/বহু মাস পরবর্তী ম্যাচ পর্যন্ত।
রায়ান টেন ডোসেট তাদের মধ্যে অন্যতম।
বিশ্বকাপ,বিশ্বকাপ বাছাই,ত্রিদেশীয় সিরিজ চার দেশীয় সিরিজ ,দ্বিপাক্ষিক সিরিজ,ঘরে-বাইরে কিংবা নিরপেক্ষ ভেন্যু! যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন প্রতিটা যায়গাতেই নিজের রেকর্ড অনন্য করেছেন।
মহাদেশীয় গড়!
আফ্রিকা মহাদেশ ৭১!, আমেরিকা মহাদেশ ৬৪!, এশিয়া মহাদেশ ৬১!, ইউরোপ মহাদেশ ৬৭!
হোম ম্যাচে গড় ৬৯!, এ্যাওয়ে ম্যাচে গড় ৬২! নিরপেক্ষ মাঠে গড় ৬৭! সব মিলিয়ে গড় ৬৭!
যতদিন খেলেছেন ততদিন তিনি সবার সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন।
নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড় বলে তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বলতে অনেকের আপত্তি থাকবে। কিন্তু তিনি আমার দেখা পৃথিবীর অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার!
বিনম্র শ্রদ্ধা ডাচ/প্রোটিয়া কিংবদন্তি রায়ান নীল টেন ডোসেট ❤
লেখা: Abdur Rahim Chistia