01/01/2023
বছরের প্রথম জৈবনিক খবর, পুরানো ধাঁচে! জৈবনিক এর খবরগুলো পড়তে ও সরাসরি ইমেইলে পেতে চাইলে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করতে হবে এখানেঃ https://yameenhamid.substack.com/p/4b9!
**টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় নতুন ইমপ্ল্যান্ট**
একটি পয়সার কাছাকাছি আকার এবং ওয়েফারের সমান পাতলা ইমপ্ল্যান্ট বদলে দিতে পারে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি। নতুন ধরণের এই ইমপ্ল্যান্টটি উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টন মেথডিস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট। নেচার কমিউনিকেশনস গবেষণা পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারা দেখিয়েছেন এই ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রচলিত চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ইনসুলিন কিংবা আইলেট সেল ট্র্যান্সপ্লান্ট, কোনটিরই প্রয়োজন হবে না।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস কি?
এই ধরণের ডায়াবেটিস অটোইমিউন প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে, অর্থাৎ, শরীরের রোগ প্রতিরোধে নিয়োজিত কোষেরা ভুলবশত শরীরের নিজস্ব কোষকে আক্রমণ করে বসে। এক্ষেত্রে, প্যানক্রিয়াসের আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স এর বিটা কোষকে আক্রমণ করে। আর এই বিটা কোষ বা আইলেট কোষ থেকেই নিঃসৃত হয় ইনসুলিন যা রক্তের গ্লুকোজকে শরীরের কাজে লাগায়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো সাধারণত জীবনের প্রথম দিকেই দেখা দেয়, তাই একে জুভেনাইল ডায়াবেটিসও বলে। এই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, রোগিদের ইনসুলিন ইনজেকশনের উপর আজীবন নির্ভরশীল থাকতে হয়, মুখে খাওয়ার ডায়াবেটিসের ঔষধ এক্ষেত্রে এককভাবে কাজ করে না।
কিভাবে কাজ করবে এই ইমপ্ল্যান্ট?
এই ইমপ্ল্যান্টের মাঝখানে থাকবে সেল রিসার্ভার যেখানে ন্যানোপোরাস মেমব্রেন এর মাঝে আইলেট সেলগুলো অবস্থান করবে। সেল রিসার্ভারের বাইরে থাকবে ড্রাগ রিসার্ভার, যেখানে থাকবে ইমিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ। সাধারণত অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্লান্ট (যে ট্র্যান্সপ্লান্টে দাতা বা ডোনারের কাছ থেকে কোষ বা টিস্যু নেয়া হয়) এ ইমিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ ব্যবহার করা হয় যেন গ্রহীতার (হোস্ট) শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষ দাতার কোষ বা টিস্যু আক্রমণ করে না বসে। তবে প্রচলিত ট্র্যান্সপ্লান্টে ব্যবহৃত ইমিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধের থেকে পার্থক্য হলো এখানে লোকাল ইমিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ ব্যবহার করা হয়, ফলে ঔষধের সিস্টেমিক বা সার্বজনীন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার (যেমন, ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া) সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইমপ্ল্যান্টটি শরীরের প্রতিস্থাপনের পর প্রতিদিন ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন হবে না, সেল রিসার্ভারে থাকা আইলেট কোষ ইনসুলিন উৎপাদন করতে থাকবে। শুধুমাত্র প্রয়োজন মত ইমপ্ল্যান্টের একপাশে থাকা সিলিকন পোর্ট দিয়ে ইমিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ রিফিল করে নিতে হবে। গবেষকেরা এই ইমপ্লান্টটির নাম দিয়েছেন নিওভাস্কুলারাইযড ইমপ্ল্যান্টেবল সেল হোমিং অ্যান্ড এনক্যাপ্সুলেশন, সংক্ষেপে নিশে। এই ইমপ্ল্যান্টটি এক ধরণের বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার্ড প্যানক্রিয়াস।
গবেষণায় যা দেখা গেল
এই ইমপ্ল্যান্টটি গবেষকেরা টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ইঁদুরের মডেলে প্রয়োগ করেছেন এবং দেখেছেন ১৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে এই ইমপ্ল্যান্টটি কার্যকর থাকে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই গবেষণা দলের প্রধান আলেসান্দ্রো গ্রাটোনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার একটি প্রধান ফলাফল এই যে কোষ ট্র্যান্সপ্লান্টে লোকাল ইমিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ কার্যকরি ভূমিকা রাখে সেটা নির্ধারণ করেত পারা’। তিনি আরও বলেন, ‘এই ডিভাইসটি টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা তাদের জীবন যাপনের গুণগত মানের উৎকর্ষে একটি পরিবর্তনীয় ভূমিকা রাখতে পারে’। আগামি বছর তিনেকের মধ্যে এই ইমপ্ল্যান্টটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানবদেহে প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে গবেষকদের। এই গবেষণা অর্থায়ন করেছে জুভেনাইল ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ভিভিয়ান স্মিথ ফাউন্ডেশন, হিউস্টন মেথডিস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ডায়াবেটিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট ও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ।
ছবি বৃত্তান্তঃ বামপাশে দেখা যাচ্ছে সাদা রঙের ইমপ্ল্যান্ট, ছবির মাঝের অংশে দেখানো হচ্ছে ডিভাইসটির বিভিন্ন অংশ (সূত্রঃ মূল গবেষণা প্রবন্ধ)
মূল গবেষণা প্রবন্ধঃ https://www.nature.com/articles/s41467-022-35629-z