27/06/2024
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং কী?
____________________
ঘটনা ১: ছোট্ট রিয়ানা। স্কুলের বন্ধু অনিন্দ্য তার টিফিন কেড়ে নিয়েছে, স্কুলে তাই তারা ঝগড়া করেছে। কাঁদতে কাঁদতে মাকে এসে জানাল রিয়ানা। ব্যাপারটা আর দশটা শিশুর জীবনের সাধারণ ঘটনা হলেও রিয়ানার মা সেটা মানতে পারলেন না। তিনি কল করে বসলেন অনিন্দ্যর মাকে। ঘটনাটা আর ছোটদের ঘটনা হয়ে থাকল না।
ঘটনা ২: পঞ্চম শ্রেণির অঙ্কগুলো বেশ কঠিন মনে হয় সানার কাছে। অনেকগুলো বাড়ির কাজ, অথচ একটা অঙ্ক করতেই সানার অনেক সময় লেগে যাচ্ছিল। এদিকে সানার মা অধৈর্য হয়ে উঠলেন। শেষ পর্যন্ত উনি নিজেই করে দিলেন মেয়ের অঙ্কগুলো।
ঘটনা ৩: ঘরের কোনো কাজই সৌরভকে করতে হয় না। তার মা-বাবার একটাই কথা। ছেলে শুধু পড়ালেখা করবে। বিছানা করা, রুম গোছানো, এমনকি পানির বোতলটাও ভরে এনে দেন তার মা।
ওপরের তিনটি ঘটনার চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও ঘটনাগুলো আমাদের চারপাশ থেকে নেওয়া। সন্তান পালন করতে গিয়ে বেশির ভাগ মা-বাবাই সন্তানকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চান, সব ধরনের পরিস্থিতিতে তার সুরক্ষা, এমনকি সাফল্যও নিশ্চিত করতে চান। শিশু-কিশোরকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়ার এ মানসিকতাকেই হেলিকপ্টারের সঙ্গে তুলনা করা হয়। একটি হেলিকপ্টারকে যেমন সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ করা লাগে, এ ধরনের প্যারেন্টিংও সেই পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। তাই আপনার সন্তানকে যখন আপনি সর্বক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন, তখন এ অভিভাবকত্বের প্রক্রিয়াকে বলে হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং।
গবেষণার তথ্য বলছে, হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের ফলে আপনার সন্তানের ভালোর চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, সন্তানকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করলে বা তার করণীয় কাজ সহজ করে দিলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বিঘ্নিত হয়। সব কাজে তারা মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এমনকি কোনো সমস্যায় পড়লে নিজে সেই সমস্যা থেকে বের হয়েও আসতে পারে না।
সন্তানের পরবর্তী জীবনেও এর প্রভাব পড়ে। তারা বড় হওয়ার পর শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে না। ব্যর্থতা যে জীবনেরই একটি অংশ—এ কথা তারা মানতে পারে না। কারণ, ছোটবেলা থেকে মা-বাবা তাদের সম্ভাব্য সব ব্যর্থতা থেকে আগলে রেখেছেন। এতে সন্তানটি যখন বাস্তব জীবনের নানান সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখন সে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে না। এমনকি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তও নিতে পারে না।
যদিও মা-বাবা ভালোবাসা এবং সন্তানের প্রতি স্নেহ থেকে কাজটি করে থাকেন, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এটি সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে। আপনার কিশোর অথবা প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান যখন বুঝতে পারে আপনি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, তার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছেন, তখন সে পরিবারের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা কমাতে থাকে। একটা সময় মা-বাবার সঙ্গে তার দূরত্বও বেড়ে যায়।
#সংগৃহীত
সূত্র: প্রথম আলো