16/08/2022
বিয়ে হয়েছে মাত্র দুদিন। বউভাতের অনুষ্ঠান ছিল আজ। হয়তো নতুন বউ আর শশুরের মধ্যে শ্রদ্ধার একটা রসায়নও তৈরি হয়েছিল।
শশুর নিজেই ড্রাইভ করছিলেন গাড়ি। উদ্দেশ্যে পুত্রবধুকে তার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন।
কিন্তু এখানে সৃষ্টিকর্তা হৃদয়বিদারক একটা ভিন্ন উপাখ্যান লিখে রেখেছিলেন। তার লীলাখেলা বোঝা যে বড় দায়। উত্তরায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারে গার্ডার তোলার সময় ক্রেন থেকে ছিটকে পড়ে গার্ডার। চাপা পড়ে নববধুর সেই গাড়ি। সাথে সাথেই মারা যান চারজন। একটা শিশু বেশ কিছুক্ষণ জীবিত ছিলেন, কিন্তু বের করে আনা সম্ভব হয়নি। কিছুক্ষণ পরে নিস্প্রভ, প্রাণহীন।
খুব কষ্ট লাগছে না আপনাদের ! আসলেই মৃতেরা দুর্ভাগা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাদের পছন্দ করেছেন, তাই মৃত্যু। আপাতত এটা মেনে নিয়েই তাদের কল্যান কামনা করছি।
তবে দায় আমাদের থেকে যায়। চারদিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়া কিভাবে এমন একটি ব্যস্ততম সড়কে কাজ করা যায় ! ক্রেনটার কি গার্ডার তোলার সক্ষমতা আছে কিনা ! দীর্ঘক্ষণ গাড়িটি চাপা পড়ে ছিল। কোনো যন্ত্র কি ছিলনা, গাড়িটিকে গার্ডারের নীচ থেকে তুলবে ? তাহলে হয়তো কেউ বেচেঁ যেতেও পারতো।
গত মাসে এভাবেই ক্রেন থেকে গার্ডার ধসে একজন নিহত হয়েছিল।
দায় কার! আলাপ তোলেন, চট্রগ্রামের বদ্দারহাটে গার্ডার ধসে যে ১৩ জন নিহত হয়েছিল সেই ঘটনার বিচার কতদূর।
হতভাগা স্বপন সরকার। কাপড়চোপর ব্যাগভর্তি করে রেখেছেন। একদিন পরেই বাড়ি যাবেন। ওমান যাওয়ার টাকা পয়সা যোগার হয়েছে, হোটেলে আর কাজ করবেন না। গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে গিয়েই মেডিকেল চেকআপ করাবেন।
কিন্তু না আজ দুপুরে স্বপন সরকার আগুনে পুড়ে মারা গেছে। কেবল একজন না, ছয়জন মানুষ নিমিষেই আগুনে পুড়ে শেষ।
রাজধানীর চকবাজারের দেবীদাসলেন এলাকায় প্লাস্টিক কারখানা ও গোডাউনে এ আগুন লাগে। এর পর ওই ভবন থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এত বিভৎসভাবে পুড়েছে যে, একজনকেও শনাক্ত করা যায়নি।
একটু আলাপ তোলেন, গত কয়েকবছরে এই প্লাস্টিক কারখানা আর কেমিক্যালের আগুনে পুড়ে কত মানুষ মারা গেছে। মৃতের ঘটনায় কতজন গুদাম মালিক বা বাড়িওয়ালার শাস্তি হয়েছে। আগুন লাগার পরেই পুরান ঢাকা থেকে এসব দাহ্য পদার্থের কারখানা স্থানান্তরের আলোচনা আসে, ওয়াদা আসে, উদ্যোগ আসে। এরপর কেনো সব থেমে যায়, কারা থামায়।
যদি মূল বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারেন, তবে এমন অপমৃত্যু বাড়বে।
প্রশ্ন করুন!