22/03/2024
ধিক্কার মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ধিক্কার
আজ সেহরীতে আলু ভর্তা আর লাল শাক দিয়ে রোযা রাখার জন্য আধপেটা ভাত খেয়ে অযু করার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই চোখ পড়লো একটা চটের বস্তায়। যেখানে লেখা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, ভিজিডি কর্মসূচি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর লেখাটার বরাবর একটা লাথি দিতে ইচ্ছে করলো! কি পরিমাণ ক্ষোভ জমে গেলে একটা মানুষ একটা নির্জীব বস্তুর উপর রাগ ঝাড়ে! অথচ কতই না মায়া ছিল এই "মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর" নামটার প্রতি! কতইনা আবেগ ছিল এই দপ্তরটার প্রতি! অথচ আজ সেটা সবচেয়ে ঘৃণার বস্তুতে পরিণত হয়েছে! কি পরিমাণ ক্ষোভ জমলে সন্তানও হয়ে যায় মায়ের খুনি! স্বপ্ন ছিল এই দপ্তরটাকে নিজেদের সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে সাজাতে! যোগ দিয়েছিলাম "আইজিএ প্রশিক্ষণ প্রকল্পে"। কপালের ফেরে পোস্টিং ছিল উত্তরের শেষ জেলা জন্মভূমি থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন বৃহৎ দ্বীপে! সমস্যা নেই! তারুণ্যের রক্তে ভয় থাকেনা! প্রথম বারের মত লঞ্চে ভেসে যোগ দিয়েছিলাম কর্মস্থলে! হাতে ধরে প্রশিক্ষণ প্রদান করে সেই এলাকার পিছিয়ে পড়া মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্মার্ট উদ্যোক্তা বানাতে ভূমিকা রেখেছিলাম! কতজন অসহায়, বিধবা কিংবা নিগৃহীতা যে আর্থিক শান্তির দেখা পেয়েছিল, কাগজে কলমের চেয়ে বাস্তবতা সাক্ষী! ধীরে ধীরে নিজের পেশাদারিত্বের এতই আবেগ জমে গেল আর পিছু ফেরার সুযোগ পাওয়া গেলনা! ভাল লাগা কাজ করলো, মায়া বাড়লো! আর সেই মায়ার মোহে জীবনের সোনালী সময় আর শ্রেষ্ঠ মেধা সপে দিলাম এই মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে! সেদিন আমাদের মাথা থেকে প্রথম এসেছিল অনলাইনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী আবেদন, যা এখন সকল প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত দপ্তর/প্রকল্প ব্যবহার করছে! আমরাই বের করেছিলাম উৎপাদন ও স্মার্ট বিপননের সহজ রাস্তা! যার ফল পেয়েছে বা পাচ্ছে সেই সব পিছিয়ে পড়া গরীব আর অসহায় মহিলারা! যাদের অনেকেই স্মার্ট উদ্যোক্তাই শুধু না, শক্তিশালী জনপ্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছে! যে মহিলা প্রশিক্ষণের জন্য ভাইভায় অংশগ্রহণ করতে এসে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল, সেই মহিলা এখন মঞ্চে ভাষণ দেয়! এত এত অর্জন! এই অর্জনগুলোই ছিল জীবনের ভাল লাগা! আর এই ভাল লাগা এতই কাজ করলো যে ভুলেই গেলাম এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেই সব শেষ! মনের ভেতর সাহস প্রিয় দপ্তর আমাকে স্থায়ী করবে! কিন্তু নাহ, বরং প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে পাপের বোঝা টা আরও শক্ত করলো! কিন্তু ভাললাগা বলে কথা! দপ্তরের আশ্বাস, লেগে থাকো, ভাল কিছু হবে! প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস, রাজস্ব খাত থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হোক! কিন্তু কে শোনে কার কথা! দেশটা এখন চালায় আমলারা! আমলাদের পাপ ঢাকতে আর আখের গোছাতে হতে থাকে একের পর এক নীতিমালা! আর সে নীতিমালার ফল ভোগ করে আমলা আর মারা পড়ে কামলা!
শেষ হয়ে গেল আইজিএ প্রকল্প! কফিনে ঠোকা হয়ে গেল শেষ পেরেক! আমরা এই আইজিএ প্রশিক্ষণ প্রকল্প তথা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরকে স্মার্ট বানাতে গিয়ে নিজেই বেকার হয়ে পড়লাম, তাদের আশ্বাস দেওয়া হলো, আবার নতুন করে আইজিএ প্রায় প্রকল্প শুরু করা হবে সেখানে আপনারাই থাকবেন! যেন মুলো ঝোলানো হলো! সেই আশ্বাস নিয়ে আবারও অপেক্ষা! অপেক্ষা করতে করতে পার হয়ে যাচ্ছে ন'মাস! দপ্তরকে দিয়ে যাচ্ছি বিনামূল্যের শ্রম! সদর কার্যালয় জানে আমরা তাদের মুক্তি দিছি কিন্তু মুক্তি মেলেনা। সব কাজ মন থেকেই করতে হয়! আর সেজন্য দপ্তরটা এখনও সচল! কারণ, সকল কম্পিউটারজনিত কাজ, ডি-নথি, আইবাস++, পোর্টাল অপারেটিং যে আমরাই করি! বাল্যবিবাহ কিংবা নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর পেলে এখনও ছুটে যাই! কিন্তু সেই নিজেরাই অভুক্ত আমরা!
এর দায় কে নেবে? আজ আমার সন্তানের খাবার নাই, অসুস্থ বয়স্ক বাবার ওষুধ নাই, বাড়ি ভাড়া নাই, চারদিকে শুধু নাই আর নাই! কতদিন চলে! প্রতিটা রাত যেন একেকটা জাহান্নাম মনে হয়! কত চোখের জল ফেললে সান্ত্বনা মেলে?
আর অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে বোঝানো হয় সবকিছু ঠিকই আছে! দারুণ ভাবে চলছে আমাদের দপ্তর! বাহ সেলিউকাস! বাহ্! এতগুলো পরিবারের দিনরাত অভিশাপ আর হাহুতাশে যে পুরো দপ্তরের বাতাস দূষিত হয়ে পড়ছে সে খবর কি তারা রাখেন!! কতদিন পার হয়ে গেল অথচ প্রকল্প পাশ হয়না! আরও শোনা যাচ্ছে, অর্থ বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত আসছে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগের! তাহলে এতদিন ধরে যে এতগুলো মানুষকে আশ্বাস দেয়া হলো, সেগুলোর কি হবে! আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া হলে নিযুক্ত কোম্পানি তাদের পছন্দমত নিয়োগ দেবে সেটাই স্বাভাবিক। তারা যে জনবলের তালিকা দেবে সে জনবল দিয়েই চলবে প্রশিক্ষণ! প্রশিক্ষকরা যোগ্য নাকি অযোগ্য সেসব বিবেচনাও করা হবেনা! অথচ পূর্ণ সরকারি নিয়োগবিধি অনুসরণ করে যে পূর্ব সমাপ্ত প্রকল্পের নিয়োগ করা অভিজ্ঞ জনবল ছিল, সেগুলোর কোন মূল্য থাকবেনা! সব জেনে বুঝেও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলো দপ্তর! নীতিমালার দোহাই দেখিয়ে পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে পারলোনা! হায় রে জ্ঞানী দপ্তর! আমাদের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে আউটসোর্সিং কোম্পানিকে আমরা বলে দেব যেন আমাদের রাখা হয়! হাসি পায় কষ্টে! নিজের যোগ্য সন্তানকে বর্গা দিয়া আবার সে সন্তানকে নিজের বাড়িতে কামলা খাটানো আরকি! আর বঙ্গতাজ কন্যা কে ভুল বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হলো বিচক্ষণ সচিব মহোদয়, "আমরা তাদের রাখছি"! কি বিচিত্র দেশ! জানিনা এখানে কার কি স্বার্থ কাজ করছে! আর দেশটা কে চালাচ্ছে! জাতির পিতার আদর্শ নাকি নীতিভ্রস্টরা! এখন দেখার অপেক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যে ভাগাড় থেকে জন্ম নিয়েছিল নারী পূর্নবাসন কেন্দ্র, আজকের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তথা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আবার সে ভাগাড়ে পরিণত হতে যাচ্ছে কি না! যেদিন আমার মত উচ্চ শিক্ষিত একটা মেয়ে শুধুমাত্র পেট আর সংসারের দায়ে নিজেকে বিক্রি করে দেবে! আর আমার ভেতরের আর্তনাদে অভিশপ্ত হবে পুরো দপ্তর!