03/06/2019
#ভ্যামপায়ার_হাসবেন্ড (পর্ব - ১)
অবশেষে জোর করে বিয়েটা করতেই হলো আমার। বাবা পাঁচ-ছয় না ভেবেই শুধু টাকাটা দেখেই, তুলে দিলো অন্যের হাতে। তবে বাবা মার জন্য যে নিজের জীবনটাও উৎসর্গ করে দিতে রাজি আছি,তা ভালো করেই জানেন আমার বাপ! আজ বিকেলেই চার্চে বিয়ে পরানো হলো লিওনের সাথে! শুনে আশ্চর্য হবেন, বিয়েতে শুধুমাত্র গোনায় ১২ থেকে ১৫ জন মানুষ এসেছে।এতবড় একটা ফ্যামিলির মাত্র কয়েকজন মানুষ আসায়, তারা বললো- তাদের নাকি যারা আত্বীয়রা আছেন তারা সবাই নর্থ আমেরিকাতে থাকেন আর বিয়েটা সেরে ফেললেই আমায় নিয়েও সেখানে পাড়ি জমাবেন! হ্যা আর এজন্যই বাবা দেরী না করে, ইনফ্যাক্ট আমাকে না জানিয়েই জোর পুর্বক বিয়েটা দিয়েই দিলেন!
আমি এলিনা গোম্বস্! অনার্স শেষ করে এখন একটি মাল্টি ইন্টার-ন্যাশনাল কম্পানিতে গত ৭ মাস যাবৎ কাজ করছি! বাবা ছোট খাটো ব্যবসা করেন, মা সাড়ে ৩ বছর আগেই মারা গিয়েছেন, আমি পরিবারের বড় মেয়ে আর আমার ছোট ভাই স্যামস্ ,এবার ইন্টারে পড়ে। মধ্যবিত্ত হওয়ায় আর বাড়ির বড় সন্তান হওয়ায় ,পরিবারের সমস্ত কিছু আমাকেই দেখতে হয়। যাক এখন মেইন কথায় আসি!
বিগত ৯ মাস পুর্বে, রেজাল্ট আউটের পর কাজ খুঁজতে শুরু করে দেই এবং অনেক চেষ্টার ফলে এই কম্পানিতে জয়েন করি, জয়েন করার পুর্বে শুনেছি এটা বেশ বড় একটা কম্পানি,এখানে ভালো অঙ্কের বেতনও দেওয়া হয় কিন্তু কাজে মনোযগী হতে হবে। আর হ্যা টাকাটা আমার জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল কারন, আমি চায়নি আমার ভাইটাও অভাবে বড় হোক তাই, যত সেক্রিফাইস সবটুকু ওর জন্যে! জয়েনের পর জানতে পারলাম এখানের যিনি প্রাক্তন এমডি তিনি বেশির ভাগ সময়ই বাহিরে থাকেন তাই উনার উত্তরাধিকারী হিসেবে উনার বড় ছেলে কম্পানি পরিচালনা করেন। দেখতে নাকি বেশ হ্যান্ডসাম, কম্পানির সমস্ত মেয়েদের ক্রাস উনি, কিন্তু উনি নাকি বেশ রাগি, কারো সাথে কাজ ছাড়া কোনো বাড়তি কথাই বলেন না, ইভেন উনার এতো সুন্দর পি এ জেরিন,যে কিনা এখানের সব ছেলেদের ক্রাশ-ওর সাথেও কাজ ছাড়া কোনো কথাই বলেন না, যদিও জেরিন পটানোর বেশ চেষ্টা করেছিল কিন্তু বেচারি অলওয়েজ ব্যর্থ হয়! আরও শুনেছি উনি বেশ ড্যামকেয়ার টাইপের প্যারসন, কারো কাজ যদি পছন্দ না হয়, সাথে সাথে বের করে দেন! এসব কথা আমার কলিগ সুমি আমায় বলেছিল! হ্যা মাস-খানিকের মধ্যেই ওর কথায় বেশ মিল পেলাম ! মি. লিওন ম্যাথইউড বেশ অদ্ভুত একটা মানুষ, প্যান্ট সার্ট পরে,চোখে গ্লাস লাগিয়ে,চুলে ইস্টালিস্ ব্রাস করে, হুর হুর করে হেটে নিজের চেম্বারে যান আবার,কাজ শেষ করেই বেড় হয়ে পরেন, উইথ আউট কোনো হাই হ্যালো ছাড়াই! আর উনাকে পটানোর জন্য জেরিন সবসময় অনর-বরত চেষ্টা করেই যাচ্ছে।আর নিজের কাজগুলো সব আমাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে! যদিও আমার তেমন সমস্যা হয় না কারন, মাস শেষে টাকাটা যে বেশ প্রয়োজন তাই হয়তো করতে না ইচ্ছে করলেও মুখ বুঝে সব সহ্য করি!
প্রতিদিনের মতোই সেদিনও কাজের বেশ চাপ ছিলো, সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, বাবা ফোন করে বললো আসার সময় তার জন্য ঔষুধ নিয়ে আসতে আমিও ভাবলাম কাল যেহেতু ওফ তাই কালই এসে বাকিটুক করবো, লিফটে উঠে গেলাম।ফোনের দিকে তাকিয়ে, কানে হেডফোন দিয়ে ইউটিউবে নাটক দেখছিলাম, প্রথম সাত তালা পার হবার পর বুঝতে পারলাম কেউ একজন মাত্র লিফটে উঠেছে, আমি আর সেদিকে ধ্যান না দিয়েই নাটক দেখচ্ছিলাম। চার তালা পার হবার পর হঠাৎ লিফ্ট ওফ হয়ে গেলো, ভয় পেয়ে গেলাম, সামনে তাকিয়ে দেখি চারদিক অন্ধকার, শুধু ঘনকালো অন্ধকারে পাশে থাকা মানুষটার অবয়ব বুঝা যাচ্ছিলো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো! আস্তে আস্তে ফোনের চার্জটাও শেষ হয়ে গেলো। আমার সামনে যিনি ছিলেন বুঝতে পারলাম উনি এক পা দু পা করে আমার দিকে আসছে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, বারবার বলতে লাগলাম “আমার কাছে আসবেন না বলে দিচ্ছি” সে আস্তে আস্তে করে আমার সামনে এসে পরলো! তার নিশ্বাসের উত্তাপ পরছে আমার নাকের উপর, হাত পা ঠান্ডা হয়ে পরলো আমার কিছুই বুঝতে পারছি না কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে! সে তার এক হাত আমার কোমরে রাখলো, আর একহাত দিয়ে আমার ঘাড়ে ধরলো, বরফের মতো তীব্র শীতল হাতগুলো খুব শক্ত করে আমাকে তার কাছে টেনে নিলো, আমি বার বার ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু, তার অশরীরী শক্তির কাছে হেড়ে গেলাম! ধীরে ধীরে নিশ্বাসের উত্তাপ বারতে লাগলো, চোখের এক কোণা জুড়ে পানি বেরিয়ে আসলো আমার হঠাৎ, একজোড়া শীতল ঠোঁটের ছোয়া পরলো আমার ঠোঁটের উপর, সাথে সাথেই চোখদুটো বন্ধ করে ফেল্লাম! কতক্ষণ যাবৎ সেভাবে ছিলাম কিছুই মনে পরলো না, চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করি।পাশে তাকিয়ে দেখি বাবা আর স্যামস্ দারিয়ে আছে! বাবা বললো, আমি নাকি অজ্ঞান অবস্থায় লিফ্টে পরে ছিলাম, তারপর তারা আমার একাউন্ট থেকে বাবার নাম্বার নিয়ে বাবাকে কল দিয়ে এখানে আসতে বলে।
এলিনা- আর উনি কোথায়?
বাবা- কে? কে কোথায়???
এলিনা- আমার সাথে যিনি লিফ্টে ছিলো? সে কই?
বাবা- আমাকে তো সিকিউরিটি গার্ড বললো তুই ওখানে একাই পরে ছিলি! আর কেউ ছিলো না সেখানে!
এলিনা- কিহ!!! এটা কিভাবে সম্ভব?
বাবা- কি হয়েছে বলতো? তুই কার কথা বলছিস!
এলিনা- না ... না কিছু না!
আমি আর কিছু বললাম না, মনে মনে ভাবতে লাগলাম “তবে এটা কি আমার হ্যালুসিনেশন!” , “না হতেই পারে না আমি স্পষ্ট তার স্পর্ষ ফিল করেছি, কিভাবে সম্ভব!”
পরের দিন সকালে রিলিস পেলাম, বাসায় গিয়ে বিছানায় বসতেই না বসতেই পাশের ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চোখ পরলো, খেয়াল করলাম আমার নিচের ঠোঁটের মাঝবরাবর রক্ত জমাঠ বেঁধেছ আছে! ঘাড়ের মধ্যে তিন আঙ্গুলের হাল্কা ছাপ দেখা যাচ্ছে, বুঝতে আর বাকি রইলো না! এটা আমার হ্যালুসিনেশন নয় বরং, বাস্তবে আমার সাথে ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত ঘটনা! সারাটা রাত ঘুমাতে পারিনি, বারবার গতরাতের ঘটনা মনে পরতেই শরীরের পশম্ দাড়িয়ে যাচ্ছে! “কে সে? কেনো এমনটা করলো আমার সাথে? না এই অজনা তথ্যের রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে আমাকে?!
পরেরদিন সকালে অফিসে গেলাম, সিকিউরিটি গার্ডকে সেদিন রাতের ঘটনা জিজ্ঞাস করতেই, সে বাবাকে বলা কথা আমাকেও বললো, কয়েকবার জিজ্ঞাস করায় উনি একি কথা বললো “না ম্যাম! আপনি ওখানে একাই ছিলেন, আপনার সাথে কেউই ছিল না!” হতাশ হয়ে নিজের কেবিনে যেতে যেতেই দেখি সবাই বেশ হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সুমি দৌড়ে এসে আমার পাশে বসলো-
সুমি- কিরে কি অবস্থা তোর এখন? শুনেছি পরশু রাতে অজ্ঞান হয়ে পরেছিলি?
এলিনা- হুম! এখন ঠিক আছি!
সুমি- কি হয়েছিল বল আমাকে?
এলিনা- কি করে বলি! তুই কি বিলিভ করবি আমার কথা!
সুমি- অবশ্যই বল!
সেদিনের পুরো ঘটনাটা সুমিকে বললাম!
সুমি- ওহ্ মাই গড! হাউ ইটস্ পসিবল!
এলিনা- কিছুই বুঝতে পারছিনা, কি হল আমার সাথে!
সুমি- থাক তুই কেয়ারফুল থাকিস! এগুলো নিয়ে আর বেশি চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে পরবি! কফি খাবি?
এলিনা- হুম!!!
সুমি- ওয়েট নিয়ে আসছি!
সুমি চলে গেলো আর এর মধ্যেই জেরিন এসে হাজির হলো!
জেরিন- কেমন আছ?
এলিনা- ভালো!
জেরিন- গুড! এনিওয়েস্! বস ইস কলিং ইউ!
এলিনা- ওকে! আম কামিং!
হঠাৎ, বসের কথা শুনে আমি বেশ অবাক হয়ে যাই, বেশ টেনশন হচ্ছিল কেনো হঠাৎ বস আমাকে ডাকবে!
চলবে....
(Don't copy or share)