26/11/2024
বিতর্কিত পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি তার বি চি দুটো কেটে ফেলে দেবেন। পুরুষ হয়ে জন্মানোই ছিলো তার আজন্ম পাপ, এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত তিনি করবেনই।
ছোটবেলা থেকেই মতির ইচ্ছে ছিলো একটা প্রেম করবেন। সেই ক্লাস ফাইভ থেকে। কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারণে তিনি এখন পর্যন্ত কোনো মেয়ের কাছে পাত্তা পান নাই। শেষমেশ কলেজে উঠে তিনি মরিয়া হয়ে পিরিয়ড নিয়ে লম্বা লম্বা রচনা লেখা শুরু করলেন।
এবার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলো। কলেজে তিনি কিছু মেয়ে ভক্ত জোটাতে সমর্থ হলেন। মাঝেমধ্যে সিনিয়র আপুরা উনাকে দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনাইতেন। বেঁচে যাওয়া খুচরো পয়সাগুলো আর ফেরত নিতেন না। এটা নিয়েও মতির আহ্লাদের কমতি ছিলো না। যদিও বন্ধুরা তাকে আড়ালে আবডালে ন্যাপকিন যোদ্ধা বলে ডাকতো।
কিন্তু মতির সিনিয়র আপুর ন্যাপকিন কিনতে চাননি। তার ইচ্ছা ছিলো গার্লফ্রেন্ড এর ন্যাপকিন নিজের হাতে কিনবেন। কিন্তু কেন যেন, তার এই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছিলোই না।
মতি অবশ্য দমলেন না। মেয়েদের প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়ার পক্ষে বিপুল লেখালেখি শুরু করলেন। এবং এবার তিনি ছক্কা হাকালেন। এক বিড়িবাদী আপু তার প্রেমে পড়ে গেলো। আপুর নাম মিস বেনসনী বেগম।
বিড়ি যে কত উপকারী, মতি বুঝলেন প্রেম শুরু করার পর। উনার অন্য বন্ধুরা যখন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ক্যাপাচিনো আর পিজ্জা খাওয়াইতে ব্যস্ত, মতি তখন এক প্যাকেট গোল্ডলিফ দিয়েই কাজ চালাইয়া নেন। দুজন বসে বসে বিড়ি টানেন। তারপর দুজন দুজনের রুমে চলে যান।
বেনসনী আপু ছিলেন খাঁটি ফেমিনিস্ট। তিনি চরম ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। মতিও বেনসনী আপুরা সাথে সাথে ফেমিনিস্ট হয়ে গেলেন। না, ফেমিনিজম বা লিবারেলিজম নিয়ে তার কোনো চিন্তা ছিলো না, ইনফ্যাক্ট ফেমিনিজমের সংজ্ঞাই তিনি জানতেন না। মতির কথা ছিলো পরিষ্কার। ফেমিনিস্ট হয়েই যদি তার মতো ফাত্রামার্কা ছেলে হয়েও একটা গার্লফ্রেন্ড জোটানো যায়, তবে সেইই ভালো। ফেমিনিস্ট হয়ে যদি একটা সিগারেট দিয়েই একটা ডেটিং পার করে দেওয়া যায়, তবে সিগারেই ভালো।
মতি খুশিতে গদগদ হয়ে যান। বেনসনী আপুকে নিয়ে মনে মনে কত স্বপ্নই যে আঁকেন!! তারা দুজন একদিন বিয়ে করবেন। তাদের বাসর ঘরটা হবে সিগারেটের খোল আর গাঁজার পাতা দিয়ে সাজানো। না, বউকে ভাত দেওয়ার মুরোদ তার ছিলো না। তাতে কী? দুজন মিলে সিগারেট আর বিড়ি টেনেই একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন।
কিছুক্ষণ ভাবার পর মতির বিয়ের চিন্তাটা মাথা থেকে আউট করে দিলেন। ধুর, দেনমোহর টোহরের এসব ভেজালে যাওয়া যাবে না। বিয়ের দরকারটাই বা কী? তারচেয়ে লিভ টুগেদার ভালো।
তবে বেনসনি আপু ততদিনে বিয়ের ডিসিশন নিয়ে ফেলেছেন। সুন্দরী মানুষ। এক পরহেজগার ব্যবসায়ী দেখে পছন্দও করে ফেললেন। নারীবাদ ছেড়ে ততদিনে তিনি খাঁটি ইসলামিস্ট। ইসলামে নারীর অধিকার বইটা মুখস্থ করা শুরু করলেন। পঞ্চাশ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে ঠিক হলো। বিয়ের অনেক প্রস্তুতি বাকি। প্রথম কাজ নাম চেঞ্জ করা। বেনসনী নামের মধ্যে একটা সিগারেট সিগারেট গন্ধ আছে। আজকাল আপু আবার সিগারেট একদমই সহ্য করতে পারেন না।
বেনসনি আপুর বিয়ের কার্ড পেয়ে মতি হার্ট এটাক করলেন। বিড়ি টানা দুর্বল হার্ট, কতক্ষণ আর সহ্য করতে পারে? তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ডাক্তার বললেন, এ যাত্রায় বেঁচে যাবেন। তবে তিনি কোনদিন বিয়ে করতে পারবেন না। তিনি চিরতরে অক্ষম হয়ে গেলেন।
না, বেনসনী আপু মতিকে দেখতে যাননি। বেগানা পুরুষের সাথে দেখা করার ইচ্ছা তার নাই। তবে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি মতিকে বলেছেন, দ্যাখো, মতি, এসবের মানে কী? শক্ত হও।কান্নাকাটি বন্ধ করো। তুমি তো ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করো। আমি কাকে বিয়ে করবো, সেটা একান্তই আমার ব্যাপার। আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হাত দিতে এসো না। আমার ডিসিশন আমি নিজেই নিতে পারি। নাকি মেয়ে বলে আমি ডিসিশনটাও নিতে পারবো না? ডিসিশন নিতে হলেও বিচি থাকা লাগে নাকি, মতি?
মতি আর কিছু বলেন না। সারাজীবন তিনি ফেমিনিজমের সংজ্ঞা না জেনেই ফেমিনিজমের পক্ষে লিখে গেলেন। মেয়েদের সিগারেট খাওয়া, গাঁজা খাওয়ার পক্ষে জোর ক্যাম্পেইন করলেন। বিয়ের বিরুদ্ধে, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, দেনমোহরের বিরুদ্ধে লিখতে লিখতে তার ধ্বজভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলো, একটা ফেমিনিস্ট সমাজের স্বপ্নে স্বপ্নে তার স্বপ্নদোষ হয়ে যেতো, তবুও ভাই স্বপ্ন দেখা থামাননি। কিন্তু শেষমেশ কী পেলেন? জীবনে চাওয়া পাওয়ার হিসেব যে কিছুই মিললো না? সারাজীবন কলম যুদ্ধ করে বেনসনী বেগমকে পটিয়েও লাভটা কী হলো? তবে কি একসঙ্গে তিনবেলা গাঁজা খাওয়ার স্বপ্নটা শুধুই একটা স্বপ্নদোষ হয়েই থাকবে? কখনওই সত্যি হবে না?
মতির চোখে পানি আসে। তিনি কিছু বলতে পারেন না। ফোনটা চেপে ফিসফিস করে বলেন, বড় কষ্ট বেনসি, বড় কষ্ট!!
বেনসনী বেগম তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন। তার মুখের লাগাম ছুটে যায়। বলেন, শাট আপ ননসেন্স। আমি আর কারো বেনসি টেনসি না। আমি নাম চেঞ্জ করে ফেলেছি। আরে ভাই, ব্রেকাপ তো আমাদের দুজনেরই হইসে। কই আমার তো কোনো কষ্ট হচ্ছে না? আমি তো ঠিকই কষ্ট চেপে জাতির স্বার্থে বিয়ে করছি। নারী পুরুষের সবকিছুতে সমান অধিকার। কষ্টেও সমান অধিকার। তুই শালা এতো কষ্ট কষ্ট করিস কেন? তোদের পুরুষদের এই এক সমস্যা। তোদের বিচি আছে দেখে সবকিছুতেই তোদের বেশি বেশি। ফোন রাখ, শালা সেক্সিস্ট, নাটকিস্ট। আর একদিন ফোন দিলে তোর নামে আমি ইভ টিজিং এর মামলা দেবো।
মামলার হুমকি শুনে মতি আরো একবার হার্ট এটাক করলেন। ডাক্তার বললেন, এরপর আর একবার হার্ট ফেইল করলে আপনাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না।
মতি ভাবছিলেন, তার কেন এতো কষ্ট? এতো কষ্ট থাকলে হার্ট এটাক হবে না তো হার্ট ডিফেন্স হবে নাকি? হঠাৎ মনে পড়লো, বেনসনী বেগমের সেই কথা!! পুরুষের বিচি আছে বলেই পুরুষের অঙঢঙ বেশি। কষ্ট বেশি।
মতির সব রাগ গিয়ে পড়লো তার বি চি দুটোর উপর। এই রাগের কারণ কী ছিলো? অক্ষমতা? সারাজীবন পরিশ্রম করেও গার্লফ্রেন্ড জোটাতে পারার মনোকষ্ট? নাকি ফেমিনীজমের ডিপ্রেশন?
জানি না। শুধু জানি, এর পর থেকে মতি কেন যেন
বি চিওয়ালা সক্ষম পুরুষদের আর দুই চোখে দেখতে পারতেন না।
মতির এই প্রতিবাদ শুধু তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, ধীরে ধীরে এটা বি চিহীন পুরুষ আন্দোলনে রূপ নিলো।
মাঝেমধ্যেই আশেপাশে বি চিহীন একদল পুরুষ দেখবেন। এরা সেই মহান আন্দোলনেরই নগণ্য কর্মী। এদের উপর কঠোর হবেন না। এদের সহানুভূতি দেখান। ভালোবাসাহীন অক্ষমতাই তাদের এই পথে ঠেলে দিয়েছে। তাদের প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিন।
#সহমতভাই