08/07/2021
- এই এদিকে কোথায় যাচ্ছিস? দাড়া এখানে।
- উহু...
- দাড়া বাবা।
- কে তুমি?
- এদিকে আয়।
- কোথায়?
- আয় এদিকে মাচালে উঠে বস।
- হ্যাঁ।
- কি খবর? কেমন আছিস?
- ভালোই।
- অনেক দিন পর আসলি কেন?
- আব্বুর কবর জিয়ারত করতে আসছি।
- কখন আসছিস?
- এইতো এশার একটু পরে।
- এই বৃষ্টির মধ্যে?
- হ্যাঁ, টাঙ্গাইল পার হওয়ার পরই ভীষণ বৃষ্টি। কি - যে একটা অবস্থা!
- রাতে খাইছিস?
- হ্যাঁ।
- বাসায় যাবি কবে?
- কালকে সকালেই কবর জিয়ারত করে তারপর চলে যাব।
- হুম।
- তুমি কি কর?
- আচ্ছা তুই তোর বাবাকে অনেক ভালবাসিস?
- হ্যাঁ, অবশ্যই। কেন?
- এমনি।
- শুধু কবর জিয়ারত করেই চলে যাবি? একটু থাকবি না?
- ঠিক বুঝলাম না।
- নাহ, কিছুনা।
- ওহ জানো? একটা কাজ করব ভাবছি।
- কি করবি?
- ভাবছি....
- কি?
- না, তোমাকে বলব না। তোমাকে চিনিনা।
- বল সমস্যা নেই।
- আব্বু রাগ করবে।
- নাহ করবে না।
- করবে।
- আমি বললাম যে করবে না দেখিস।
- আচ্ছা।
- বল......
- ভাবছি আব্বুর কবর থেকে কিছু মাটি নিয়ে যাব।
- কেন?
- আব্বু সবসময় আমার সাথে থাকবে।
- তোর সাথেই থাকে সবসময়।
- হ্যাঁ জানি, তারপরও....
- কবরের মাটি কাছে রাখতে ভয় করবেনা?
- নিজের বাবার কবরের মাটি, ভয় করবে কেন?
- যদি উল্টাপাল্টা কিছু হয়?
- ভয় দেখাচ্ছো?
- না, বললাম।
- কিছু হবেনা বরং আব্বু থাকবে আমার সাথে।
- ঠিক আছে।
- কিন্ত এখানে একা আসাটা ঠিক হয়নি তোর।
- এখানে মানে? আমি কোথায় আছি?
- চারপাশে তাকিয়ে দেখ।
- হু, আরে পরিচিত লাগতেছে জায়গাটা!
- তুই এত্তো ডাল কেন?
- মানে?
- তোর সময় থাকতে আমি কত্তো ব্রেইনি ছিলাম জানিস? রংপুর ক্যাডেট কলেজে পড়তাম। আর তুই?
- হুহ্। আমিও কি কম যাই নাক? ঢাকা কলেজে পড়ি।
- জানি।
- তুমি জানো? কিভাবে? তোমাকে তো....
- কি?
- ওয়েট, এটা রহমতগঞ্জ কবরস্থান না?
- হ্যাঁ, এতক্ষণে?
- কিন্তু আমি না মসজিদে ছিলাম?
- আমিও তো তোকে তাই জিজ্ঞাসা করলাম।(পিঠে হাত দিয়ে...)
- কিন্তু তুমি তাহলে কে? এই তুমি..... তু..তু...তুমি? মানে? কি হচ্ছে?
- কি? (পিঠ থেকে হাত সরিয়ে)
- তোমার স্পর্শ খুব চেনা! খুউব!!!
- মাত্র ১৫ বছরেই ভুলে গেলি?
- আব্বু?
- আয় কোলে মাথা রেখে ঘুমা......
( মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম, তারপর....)
- মামা ওঠেন, ও মামা.... মামা..
- হু! কে?
-আপনে না রাইতে মরজিদে আইলেন? এহেনে ক্যা?
- মানে? কথায়?
- দ্যাহেন কোনে আছেন।
- কবরস্থান?
- হ, তয় আপনে রাইতে এহেনে আইছেন তাও একলা একলা? ভয় করেনাই? ক্যামনে আইছেন?
- কিছু বুঝছি না।
- ওঠেন। এহে আপনের শরীল তো জ্বরে পুইরা জাইতাছে।
- হ্যাঁ, অনেক দুর্বল লাগছে।
- নন দোতালায় আমগোর হুজুর আছে, হ্যার হাতে থাইকেন।
- আচ্ছা চলেন কাকা।
- আপনের জুতা?
- কই?
- আমিও তো তাই কই, কোনে র্যখছেন? আনেন নাইবানি।
- আচ্ছা বাদ দেন, চলেন।
- কিছু বুজলাম না, আপনের হইছেডা কি?
- কি জানি.....
(কবরস্থান থেকে বেরিয়ে ডান পাশেই মসজিদ ৩০ সেকেন্ডের মতো দুরত্বে। বের হতে যাব তখনই হঠাৎ নিচে চোখ পড়ল গেটের আগেই)
- আমার জুতা এখানে কি করে আসলো? আর ওই কবরের পাশে কার পায়ের ছাপ? তাও অল্পের জন্য কবরে পাড়া লাগে নাই?
- আমিও কিছু বুইঝত্যাছিনা, আমি সকালে পিছন গেট দিয়া ঢুকছি, ঝারু দিব্যার নিয়া দেহি আপনে মাচালে ঘুম পারতাছেন, তহনই ডাক দিছিলাম।
- কিন্তু কালকে না সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলো? তার মানে এই পায়ের ছাপ রাতের!!! এজন্যই এতো স্পষ্ট?
- হ, তাই মনে হয়।
- আচ্ছা চলেন কাকা।
(জুতা জোড়া উঠিয়ে নিলাম কবরের পাশে থেকে তারপর মসজিদের দ্বোতলায় হুজুরের কাছে সব বললাম)
- দেখেন হয়তো স্বপ্ন দেখছিলেন আপনি তাই এমন মনে হচ্ছে।
- কিন্তু ওই কবরের পাশে জুতা থাকবে কেন? আর আমিই বা মাচালের উপর ওতো দূর কি করে গেলাম?
(হুজুর কোন উত্তর দিলেন না।)
তারপর প্রায় ঘণ্টা খানেক শুয়ে থাকলাম মসজিদের দ্বোতালার বেলকনিতে... ঘটনা গুলো ছাড়া ছাড়া মনে হচ্ছিল, কিন্তু কাল রাতে আমি কারোও সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম, তার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি এসব পরিষ্কার মনে আছে। তবে কি সবটাই স্বপ্ন ছিল? মানলাম আমার ঘুমের মাঝে হাটার স্বভাব আছে, হয়তো ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুমের মধ্যেই উঠে কবরস্থানে যাই। কিন্তু রাতে যে গেট বন্ধ থাকে? আর ওই কবরের পাশে আমার জুতা আর পায়ের ছাপ তাও ঠিক কবরে পাড়া দেয়ার দুই-তিন আঙুল ফাঁকে? হিসেব মিলছে না।
এই ভাবতে ভাবতেই উঠে পড়ি কিছুক্ষণ পর। কবর জিয়ারত করে কিছু মাটি সাথে নেই, তারপর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই....
বাসে হঠাৎ মনে হলো, নাহ কাল রাতের ওগুলো স্বপ্ন নয়। তাহলে কি এরকম কিছু? আমি হাটতে হাটতে কবরের উপর দিয়ে হয়তো যাচ্ছিলাম? এসময় আব্বু এসে আমাকে ওখান থেকে নিয়ে যায়, তারপর হয়তো তার সাথে বসিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে আর তাকে চিনতে পারলে আমার অবস্থা কি হবে তাই ভেবে হয়তো আবার হারিয়ে যায়!!!!! কিন্ত মাগরিবের পর গেট বন্ধ করে দেয়, জামাল চাচাও বলল কাল উনি নিজে গেট বন্ধ করছে তাহলে ঢুকলাম কি করে?
আজও অজানাই থেকে গেল......