09/05/2024
আল্লাহর রাসুল ﷺ যখন হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন, তখন প্রায়ই খাদিজা (রা) এসে খাবার দিয়ে যেতেন। ৬৩৪ মিটার উচ্চতার এই গুহায় উঠতে যুবকরাও হিমশিম খেয়ে যায়; যদিও এখন সিঁড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। জাবালে নূর পাহাড়ের এই গুহা অবধি পৌঁছার জন্যে প্রায় ৬০০ কদম ফেলতে হয়। আমাদের মা কত কষ্ট করে-যে ওপরে উঠতেন, তা আল্লাহই ভালো জানেন। মক্কা থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আম্মাজান ওই গুহায় খাবার দিয়ে আসতেন। স্বামীর ইবাদতে যেন বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্যেই এই কষ্টকর প্রয়াস। কত পরিশ্রম করেছেন আমাদের এই মা। একদিন তিনি যখন খাবার নিয়ে আসছিলেন, তখন জিবরীল (আ) এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ওই-যে খাদিজা আসছেন! তাঁর হাতে তরকারি, খাবার আর পানীয়। তিনি আপনার কাছে এলে বলবেন, তাঁর রব ও আমি তাঁকে সালাম জানিয়েছি। তাঁকে মুক্তো-নির্মিত একটি জান্নাতী গৃহের সুসংবাদ দিবেন—যেখানে থাকবে না কোনো হট্টগোল, থাকবে না কষ্ট।’ [বুখারি, ৩৮২০; মুসলিম, ৬১৬৭]
আরশের অধিপতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম পেয়েছেন এই মা! সালাম জানিয়েছেন ফেরেশতাদের সর্দার জিবরীল আমিন। সুবহানাল্লাহ! কত সৌভাগ্য তাঁর!
কী করেননি এই মহীয়সী নারী! ‘আমাকে চাদর দিয়ে জড়িয়ে দাও’—যখন এই আহ্বান আসছিল নবিজির কাছ থেকে, তখন কে এগিয়ে গিয়েছিলেন? কে দিয়েছিলেন সান্ত্বনা? মক্কার সবাই যখন নবিজিকে গালাগাল করছিল, তখন তাঁকে কে বুকে আগলে রেখেছিলেন পরম ভালোবাসায়? যখনই নবিজি চেয়েছেন, তখনই নিজের ধন-সম্পদ কে উজাড় করে দিয়েছেন? খাদিজা, আম্মাজান খাদিজা (রা)। তিনি কোনো প্রশ্ন করেননি, কোনো কৈফিয়ত চাননি স্বামীর কাছে। সর্বাত্মক খেদমত করে গেছেন জীবনভর। আজকের ফেমিনিস্টরা তাঁর কাছ থেকে শুধু ব্যবসার প্রেরণা নেয়। অথচ স্বামীর খেদমতের যে-উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেছেন, তার ধারেকাছেও আসতে চায় না। দু-বেলা রান্না করাটাও ফেমিনিস্টদের কাছে ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থি মনে হয়! স্বামী বেচারাকে সাহায্য করবে তো দূরের কথা, সারাক্ষণ রাখে থ্রেটের ওপর। স্বামীর খেদমতের চেয়ে বসের প্রাইভেট সার্ভিসে তারা বেশি আগ্রহী। স্বামীর জন্যে চা বানানো মানে তাদের কাছে দাসত্ব, আর বিমানে চড়ে পরপুরুষের হাতে কফি তুলে দেওয়া নাকি প্রগতি! তোমাদের এই প্রগতির ওপর একদলা থু।
আম্মাজান খাদিজা (রা) ব্যবসা পরিচালনা করেছেন, মেনে নিলাম। কিন্তু কিভাবে করেছেন? দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে? নিজে নিজে প্রোডাক্ট সেল করে? নিজের কণ্ঠ কিংবা শরীর দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে? (নাউযুবিল্লাহ)।
এগুলোর কোনোটিই তিনি করেননি। লোক রেখেছেন, ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে ঘরে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। দেশে দেশে সফর করার প্রয়োজন বোধ করেননি। কিন্তু আমাদের ফেমিপুরা কি এই পদ্ধতি ফলো করে? তারা তো নিজেই প্রোডাক্ট হয়ে যায় খদ্দেরের সামনে! যারা নিজেদের বেহায়াপনাকে জায়েজ করার জন্যে আম্মাজানকে সামনে আনে, তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে! আম্মাজান ব্যবসা পরিচালনা করেছেন ঈমান কবুলের আগে। ঈমান আনার পর তিনি হয়েছেন পুরোদস্তর একজন ঘরনি। এরপর তাঁর সমুদয় সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়েছেন দীনের জন্যে। এই দিকটা আশা করি ফেমিপুরা খেয়াল রাখবেন। ঈমান কবুলের পর নিজেদের অর্জিত সম্পদ দান করে, নিজেকে খাদিজার অনুসারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
ইদানীং আরেকদল পাগলের আবির্ভাব হয়েছে, যারা সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে নবিজির ব্যাপারে নানান কটূকথা বলে বেড়ায়। নবিজিকে বলে নারীলোভী! নাউযুবিল্লাহ! আল্লাহর নবি ﷺ ২৫ বছর বয়সে খাদিজাকে ঘরে তুলে এনেছিলেন। বিয়ের সময় আম্মাজানের বয়স ছিল ৪০। নবিজির সাথে তাঁর বয়সের ব্যবধান প্রায় ১৫ বছর। খাদিজা (রা) যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন নবিজি আর কোনো বিয়ে করেননি। পঁচিশ বছরের সংসার জীবন শেষে যখন খাদিজা (রা) মারা যান, তখন নবিজির বয়স ৫০ ছুঁইছুঁই। আশেপাশের কোনো নারীর দিকে না তাকিয়ে, বয়সে বড় একজন নারীর সাথেই তিনি পার করেছেন যৌবনের পঁচিশটি বছর। সাধারণত ২০-৫০ এর মধ্যেই ছেলেরা একাধিক বিয়ের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী থাকে। কিন্তু এই সময়টার মধ্যে নবিজির স্ত্রী মাত্র একজন। তাহলে কিভাবে তাঁকে যৌনকাতর (!) বলা যায়? নাউযুবিল্লাহ! প্রাচ্যবিদরা এই ধারণা সাপ্লাই করেছে যে, নবি ﷺ নারীলোভী ছিলেন। অথচ যৌবনের দামি সময়গুলোতে নবিজি সংসার করেছেন বয়সে বড় একজন নারীর সাথে। দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন একজন বয়স্কা বিধবাকে।
পুরো দুনিয়ার ইতিহাসে নবিজির চেয়ে সুদর্শন আর কেউ ছিল না। তিনি যদি ইশারা করতেন, মক্কার রুপসী নারীরা এসে লাইন দিত বিবাহের জন্যে। যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্যই তাঁর থাকত, তাহলে উতবার লোভনীয় প্রস্তাবে সাথে সাথে রাজি হয়ে যেতেন। কুরাইশ গোত্র থেকেই তো দশজন নারীকে অফার করা হয়েছিল। কুরাইশরা ছিল মক্কার রয়েল ফ্যামিলি। তিনি কি সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন? হননি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই অপবাদ! কোনো কিছু না পেয়ে এখন ব্যক্তিগত জীবনের ওপর নগ্ন হামলার মানে কী! পশ্চিমারাই তো বলে থাকে, আলোচনার সময় পার্সোনাল অ্যাটাক করা যাবে না। এটা একাডেমিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। কিন্তু নবিজির বেলায় ওদের শিষ্টাচার কি সব জলে ভেসে যায়?
[প্রকাশিতব্য "আমার নবি মুহাম্মাদ ﷺ বই থেকে]
Collect