24/11/2023
একজন মা খুব কষ্ট নিয়ে বললেন, "আজ ১৫বছর আমি আমার ছেলেকে দেখি না, কথা বলি না অথচ আমরা দুজনেই সুস্থ আছি, বেঁচে আছি। আমার ছেলে তখন সদ্য গ্যাজুয়েশন শেষ করে সবেমাত্র ঘরে ফিরেছিল। ইচ্ছে ছিল বিদেশ যাবে বাকি পড়াশুনা শেষ করতে। কিন্তু আশেপাশের কথায় আমার কান ক্রমশ ভারী হতে থাকলো, উঠতে বসতে ছেলেটাকে গালমন্দ করতাম, ভাতের খোটা দিতাম, ওর বেকারত্বটাকে অভিশাপে পরিণত করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কথার দাপটে তাকে চাকরী করিয়ে থিতু করতে পারবো। ছেলে কখনো প্রতিউত্তর করতো না, তবে ওর বাবা চাইতো ছেলে আরো পড়ুক। আমি বাদ সাধতাম। কি দরকার বিদেশ যাওয়ার, দরকার কি বা ঢাকা যাওয়ার আরো পড়ালেখা করার, চাকরী বাকরি নাই সব বসে বসে খাওয়ার ধান্দা। ছেলে আমার তখনও নীরব থাকতো, হয়তো আমার ব্যবহারে দিন দিন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। একদিন ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিল ঢাকা যাবে, চাকরীর পরীক্ষা দিবে, প্রথমবার খুশি হলাম। দু চারটা খাওয়ায় হাসি মুখে বিদায় দিলাম। ছেলে আমার তখনো চুপ। কিন্তু সেই যে গেল আর ফিরলো না। দুইদিন পর জানলাম সে দুবাই চলে গেছে তার দুবছর পর ক্যানাডা পারি দিল। তারপর পনেরটা বছর কেটে গেল আর দেশে ফিরলো না। না কখনো আমার সাথে আর কথা বললো। টাকা চাইলে টাকা পাঠায়, বোনের বিয়ে ওর টাকাতেই হল। আমাদের বড় বড় অপারেশনের টাকাও দিত শুধু ওর বাবার সাথে যোগাযোগ ছিল। ছোট বোনেরও খোঁজখবর নিত শুধু আমি কেন জানি তার জীবন থেকেই মুছে গেলাম একবারে। ওর বাবা মাঝে মাঝে নাতি নাতনীদের ছবি দেখায়, বউটাও একদম চাঁদের টুকরা যেন। কিন্তু ছেলের কন্ঠ শুনি না, তাকে ছুঁয়ে দেখা হয় না কয়েকটা যুগ যেন কেটে গেল..........."
মা হওয়ার পর বাচ্চার হক নিয়ে আমি সর্বদা সচেতন থাকার চেষ্টা করি বিশেষ করে রাগের বশে। আমরা মায়েরা কথায় কথায় বলে ফেলি না, "মরস না কেন তুই? হাজার হাজার টাকা ঢালতেছি তোর পিছে কি রিটার্ণ দিলি, তুই আমার জীবনে না আসলেই ভাল ছিল" এসব বলবেন না। আপনি রাগের মাথায় হয়তো বলে ফেললেন আজকে আপনার বাচ্চা কোন রিয়েক্ট করলো না অথচ কালকে পরশু এই এক অভিমান পাহার সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিল। আপনার বাচ্চা আপনার জন্য কোন ইনভেস্টমেন্ট না যেখান থেকে আপনি প্রতি মাসে ইন্টারেস্টের আশা করবেন। বাচ্চা আপনার জন্য একটা বিশেষ নেয়ামত সবাইকে এই নেয়ামত আল্লাহ দেন না। আল্লাহ আপনাকে বলেন নি, ওকে বুয়েটে না দিলে আপনি ব্যর্থ মা কিংবা সরকারী চাকরি না করতে পারলে তার জীবন বৃথা যাবে। পারতপক্ষে একটা সুন্দর সুস্থ জীবনের সে হকদার এবং আপনি এইক্ষেত্রে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য। সুতরাং বাচ্চাকে কম্পিটিশনে না, সুন্দর সিস্টেমে মানুষ করুন। কবে বুঝবেন, "রিজিক এমন একটা জিনিস যার আছে তার কাছে উড়ে চলে আসে, আর যার কপালে নাই এসেও ঘুরে যাবে। যাযাকাল্লাহু খায়ের 🤲
@ফাইজা আরুশা