20/11/2024
বিশ্রী একটা স্বপ্ন দেখে হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম।
স্বপ্নে দেখলাম আমার প্রেমিকা এক যুবকের সাথে একই বিছানায় শুয়ে আছে।
'শুয়ে থাকা ' মানে আমি শুয়ে থাকাকেই বোঝাচ্ছি, অন্য কোনো দুষ্টুমি না। কিন্তু একই চাদরের নিচে ঠিকই শুয়ে আছে।
স্বপ্নে এমনটাই দেখলাম।
এই স্বপ্ন দেখে মনটা প্রচণ্ড রকম খারাপ হয়ে গেলো। শরীরটা কেমন যেনো এক অবসাদে ভার হয়ে গেলো। প্রচণ্ড পানির পিপাসা পেলো। এসি অন থাকার পরেও কপাল আর গলা দিয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো। কিছুই ভালো লাগছিলো না।
পাঁচ দশ মিনিট বিছানার উপর টানা বসে থাকলাম। ওটা যে স্রেফ একটা স্বপ্ন ছিল সেটাই যেনো নিজেকে বোঝাতে থাকলাম।
অন্যান্য দিন ঘুম থেকে উঠেই আমি জেরিনকে মেসেজ পাঠাই বা কল করি। জেরিনও তাইই করে।
যেদিন জেরিন আগে ঘুম থেকে ওঠে, সেদিন ও গুড মর্নিং মেসেজ পাঠায়।
এই এক বছর ধরে আমরা সকালে একজন আরেকজনের মেসেজ দেখে চোখ খুলি।
গত এক বছরে আমাদের অনেক কিছুই হয়েছে। অনেক ঝগড়া, হাসি, কান্না, রাগ, ঠাট্টা সবকিছুই। কিন্তু এমন কোন সকাল নেই যেই সকালে আমরা ফ্রেশ স্টার্ট করিনি।
এমনও হয়েছে, আগের দিন রাতে ফাটাফাটি ঝগড়া করে ব্রেক আপ করে আমরা ঘুমাতে গেছি, কিন্তু পরের দিন সকালেই আবার আমি ওকে মেসেজ পাঠিয়েছি। জেরিনও তার রিপ্লাই দিয়েছে। নিমিষেই আমাদের ঝগড়া শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু আজ আমি ফোন হাতে নিয়ে জেরিনকে কোনো মেসেজ পাঠাতে পারলাম না, কল করতে পারলাম না।
স্বপ্নটা যেনো একদম স্বপ্ন নয়, মনে হচ্ছে আমার চোখের সামনে ঘটেছে। আমার প্রচণ্ড ভয় হলো - কল করলেই হয়তো শুনতে পাবো জেরিন গতকাল রাত্রে আসলেই সেই যুবকের সাথে ছিলো।
কিছুক্ষণ এমন ঝিম মেরে বসে থাকতে থাকতেই জেরিন মেসেজ পাঠালো।
আমি কোনো রিপ্লাই দিলাম না।
জেরিন কল করলো কিন্তু তাও আমি রিসিভ করলাম না।
আমি কিছুতেই এই স্বপ্নের ঘোর থেকে বের হতে পারছি না। আমার হয়তো আরো সময় লাগবে।
আধা ঘণ্টা পর ফ্রেশ হতে ঢুকলাম। গোসল টোসল সেরে জামা কাপড় পরে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলাম।
অফিসে ঢুকে জেরিনের সাথে আমার চোখাচোখি হলো, কিন্তু আমি কোনো কথা বললাম না। সরাসরি আমার কিউবিকেলে যেয়ে বসলাম।
জেরিন আমাকে মেসেজ পাঠালো, ইজ এনিথিং রং?
আমি কোনো রিপ্লাই দিলাম না।
আমার রুম থেকে জেরিনকে দেখা যায়। জেরিনের পাশে বসা ছেলেটাকেও দেখা যায়।
ছেলেটা অফিসে নতুন এসেছে, ওর নাম রাসিক। জেরিনের রেফারেন্সেই আমি ওকে চাকরিটা দিয়েছি।
কিন্তু অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছি জেরিন আজকাল রাসিকের সাথে খুব বেশিই হাসাহাসি করছে।
গল্প করতে করতে একদম গায়ের উপর ঢলে পড়ছে।
আমি কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছি , রাসিকের সাথে তোমার এতো হাসাহাসি কিসের?
জেরিন আমাকে বলেছে রাসিক ওর জাস্ট কলিগ, এবং জাস্ট ফ্রেন্ড, এর বেশি কিছু না।
বরং আমি ওদেরকে নিয়ে কেনো এরকম ভাবলাম সেটা নিয়ে অনেকক্ষণ অভিমান করে থাকলো।
আমি আমার এমন কুচিন্তার জন্য অনেক দুঃখ প্রকাশ করলাম। অনেকবার সরিও বললাম।
জেরিন আমাকে আশ্বাস করেছে ওদের ভিতর এমন কিচ্ছু নেই।
কোথায় আমি আর কোথায় রাসিক!
আমি যেনো এরকম বাজে চিন্তা আর কখনোই না করি।
আমি জেরিন আর রাসিককে সন্দেহ করা বন্ধ করলাম।
জেরিন অফিসে আমার আন্ডারে জয়েন করেছে দেড় বছর হলো। অফিসে এসেই ওর রূপে গুণে আমাকে মুগ্ধ করে ফেলেছে। শুধু আমাকে না, সবাইকেই।
ওর সাথে যারা জয়েন করেছিলো তাদের সবার থেকে জেরিন আলাদা। তাই সবার আগে জেরিন প্রমোশন পেয়েছে, আমিই রেফার করেছি।
ছয় মাসের মধ্যেই জেরিন ইন্টার্ন থেকে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হয়ে গেলো। এতো অল্প সময়ে পরপর দুটো প্রমোশন এই অফিসে এর আগে কেউ পায়নি।
এটা রেকর্ড। হ্যা, আমি জানি এটা আমার জন্যই হয়েছে। আমার রিকমেন্ডেশন ছাড়া জেরিন এই মাইলস্টোন কিছুতেই অর্জন করতে পারতো না।
কারণ অফিসিয়ালি আমি জেরিনের ম্যানেজার। ওর কর্পোরেট ফাদার। ওর প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট সব আমার হাতেই।
কিন্তু আমি জেরিনকে সেটা বুঝতে দেইনি। ওকে বুঝিয়েছি ওর পারফরমেন্সের কারণেই ও এরকম সাফল্য পেয়েছে।
প্রথম যেদিন জেরিনের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো, সেদিন ও একটা স্লিভলেস টপস পরে এসেছিলো। মিথ্যা বলবো না, আমি ওর প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলাম।
পরে অবশ্য জেনেছি যে, জেরিনও নাকি প্রথম থেকেই আমার প্রতি..... দূর্বল।
এ কারণেই হয়তো জেরিনই আমাকে প্রপোজ করেছিলো।
প্রপোজ করার আগে আমাদের অনেক চ্যাটিং হতো। একসাথে লাঞ্চ করতে বাইরে যেতাম। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত কথা বলতাম। কিন্তু কেউ কাউকে ভালোবাসি বলিনি।
একদিন।
অফিসের লিফটে শুধু জেরিন আর আমি ছিলাম। খুব সংকোচ নিয়ে ওর হাত ধরেছিলাম। ওমনি জেরিন আমার ঠোঁটে এক প্রকাণ্ড চুমু বসিয়ে দিলো।
আমি সামলে ওঠার আগেই ঠোঁট সরিয়ে জেরিন বললো, তুমি এতো ভীতু, কিছু পারো না।
আমি জেরিনকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলাম। ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম কয়েক সেকেন্ড।
সেদিন থেকেই আমাদের শুরু।
আমরা বাইরে দেখা করি, ঘুরতে যাই, খেতে যাই। কিন্তু অফিসে আমরা খুব রিজার্ভ থাকি। অফিসের কেউ আমাদের সম্পর্কের কথা জানে না।
অফিসে দুইজন একা কথাও বলি না, পাছে কেউ সন্দেহ করে। এভাবেই চলছে আমাদের সম্পর্ক।
যেটা বলছিলাম.... সপ্নের কথা।
আমি রুমে বসে দেখলাম জেরিন আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে, আর ইশারা করছে আমার ফোন দেখতে।
আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম জেরিন আবার মেসেজ পাঠিয়েছে। লিখেছে কিচেনে আসো, কফি খাবো।
আমার কেনো যেনো যেতে ইচ্ছা করছিলো না। এই স্বপ্নের ঘোর না কাটা পর্যন্ত আমার কিছুই ভালো লাগবে না বোধ হয়।
জেরিনকে আজ একটু অগোছালো দেখাচ্ছে। প্রতিদিন যেমন পরিপাটি ফিটফাট হয়ে আসে আজ তেমন আসেনি।
জেরিন আজ গতকালের ব্ল্যাক কামিজটাই পরেছে। ব্ল্যাক কামিজের উপর গোল্ডেন কাজ। এই ড্রেসটা আমিই কিনে দিয়েছিলাম ওকে।
গতকাল আমাদের প্রেমের এক বছর পূর্ণ হলো। আর এই ব্ল্যাক কামিজটা ছিলো ওকে দেওয়া আমার প্রথম গিফট।
তাই আমিই বলেছিলাম প্রথম অ্যানিভারসারির দিন আমার দেওয়া প্রথম গিফটটাই পরে এসো।
তাই জেরিন গতকাল এই কামিজটাই পরে এসেছিলো।
কিন্তু আজকেও পরেছে। পরপর দুইদিন একই ড্রেস জেরিন আগে কখনো পরেনি।
আজ কেনো পরেছে? আমার খুব পছন্দ তাই?
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম জেরিন একের পর এক মেসেজ পাঠিয়েই যাচ্ছে।
আমি কিচেনে গেলাম। জেরিনও এসেছে। ও কফি বানাচ্ছে আমার জন্য। আমি পিছনের টেবিলে হেলান দিয়ে ওকে দেখছি।
জেরিনের চুল এলোমেলো হয়ে আছে। বাম হাতে কালো চুলের ব্যান্ডটা পরে আছে। চুলগুলো কোমরের ঠিক উপরেই এসে থেমে গেছে। এই কারণেই হয়তো কোমর আর নিতম্বের মিলনস্থল এতো আকর্ষণীয় লাগছে।
খুব ইচ্ছা করছে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরতে।
কিন্তু লোভ সংবরণ করলাম। কেউ দেখে ফেললে খুব সমস্যা হবে।
জেরিন কফি বানিয়ে আমার দিকে ফিরলো। জেরিন আজ একদমই উশকো খুশকো। চোখের নিচে কালিও পড়েছে। রাতে ঘুমায়নি নাকি?
আজকাল আমরা রাতে বেশি কথা বলি না। তবুও কি জেরিন গতকাল রাত জেগেছে?
আমি তখনো স্বপ্নের ঘোর থেকে বের হতে পারিনি।
সেই কারণেই কি না, আমি খুব আচমকা জেরিনকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, তুমি গতকাল রাত্রে কোথায় ছিলে?
আমার প্রশ্নে জেরিন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলো যেনো! মুখটা একদম ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। চোর হাতেনাতে ধরা পড়লে যেমন দেখায় একদম তেমন দেখালো।
জেরিন মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কিভাবে জানলে?
আমি বুঝে গেলাম কোথাও কোনো ঘাপলা আছে। বুদ্ধি করে বললাম, আমি যেভাবেই হোক জেনেছি, কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই। খবরদার কিচ্ছু লুকাবে না।
এরকম প্রশ্ন করার সাহস আমার আগে ছিলো না। কিন্তু ওই স্বপ্নের কারণেই আমি হয়তো এতো সাহস পেয়েছি।
জেরিন চুপ করে আছে দেখে আমি আবার বললাম, তুমি রাসিকের সাথে ছিলে, তাই না?
জেরিন মাথা তুলে তাকালো। ওর চোখেমুখে অপরাধীর ছাপ স্পষ্ট। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে আমার আর কোনো কষ্ট হলো না।
এরপর জেরিনের কাছ থেকে সবটা শুনলাম।
বেশ কিছুদিন হলো রাসিক আর জেরিনের সম্পর্ক চলছে।
রাসিক নাকি ওনেক অ্যাগ্রেসিভ আর পজেসিভ। জেরিনকে না পেলে ও সুইসাইড করবে। হাত কেটে জেরিনকে ভয় দেখিয়েছে। সুই ফুটিয়ে জেরিনের নাম হাতে ট্যাটু করে লিখেছে।
তাই জেরিন না করতে পারেনি।
গতকাল রাতে ওরা রাসিকের ফাঁকা বাসায় একসাথেই ছিলো। একই চাদরের নিচে। ওদের মধ্যে সব কিছুই হয়েছে!
আমি জেরিনকে কিছু না বলেই কিচেন থেকে বের হয়ে এলাম।
রুমে এসে ভাবছি এটা কি হলো আমার সাথে! আমার এখন কি করা উচিৎ?
তখনই আমার স্ত্রী কল করলো।
একবার রিং বাজতেই কল রিসিভ করলাম। মৌ বললো, কি ব্যাপার আজকে একবার কল না করতেই রিসিভ করলে যে! কাজের প্রেসার কম নাকি আজকে?
হুম।
আজকাল তোমার অনেক প্রেসার যাচ্ছে, তাই না?
হুম।
এতো কাজ করে কি হবে বলো? তুমি আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
মৌ আমার বিবাহিতা স্ত্রী। পাঁচ বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।
বিয়ের পর আমাদের সম্পর্ক ভালোই চলছিলো। কিন্তু গত এক বছর ধরে কেমন যেনো একটা শীতল ভাব চলে এসেছিলো আমাদের মধ্যে!
আমি মৌকে তেমন একটা ফিল করতে পারছিলাম না।
না মানসিকভাবে, না শারীরিকভাবে।
ঠিক এমনই এক সময়ে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিলো জেরিন।
সেই বিশ্বাসঘাতক জেরিন! আমিও নই কি?
মৌয়ের কাছ থেকে সারপ্রাইজের কথা শুনে মনে হলো ও বোধ হয় সব জেনে গেছে। আমি ফোন রেখেই ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললাম। আধা ঘন্টার মধ্যে বাসায় পৌছালাম।
বাসায় গিয়ে দেখলাম, মৌ আমার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে রেখেছে। কুচকুচে কালো পাঞ্জাবি। তার উপরে গোল্ডেন কালারের কাজ!
আমি মৌয়ের দিকে তাকালাম। লাস্ট কবে ওকে একটা জামা কিনে দিয়েছি আমি মনে করতে পারলাম না।
আমি মৌকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলাম।
আমি আর কখনো সারপ্রাইজ চাই না।
অনেক কুলাঙ্গারের মত আমিও বুঝিনি নরমাল জীবনটাই যে অনেক সুখের!
⛔ সারপ্রাইজ
🖋Nishad R.Prithul