সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় পঁচিশ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। আমাদের এই প্রাণের ভাষা বলার অধিকার রক্ষার্থে প্রতিবেশী দেশে প্রাণ দিয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। এ আমাদের গর্বের ভাষা। তা সত্ত্বেও পথে-ঘাটে, ফোন তুললে বিজ্ঞাপনী কলে, রেস্তোরাঁয় হিন্দি বা ইংরেজির আধিক্য। শেষ কবে “তেলের শিশি ভাঙলো বলে” র মত ছড়া লেখা হয়েছে? শেষ কবে বাঙালি মায়েরা “বেবি শার্কের” বদলে বাংলা ছড়া শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়েছেন বাচ্চাদের? শেষ কবে
বাংলা লেখা হয়েছে মাটির কাছাকাছি থাকা ভাষায়, মানুষের মুখের ভাষায়।
আমরা কি জানি এর কত শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত হয়ে আছে বিভিন্ন জেলা জুড়ে? কথায় বলে, ভাষা বদলায় কয়েক ক্রোশ অন্তর। ভাষা না হোক, উপভাষা তো বদলায় বটেই। বাঁকুড়ার লোকের বাংলা আর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বাংলা এক নয়। উত্তরে কুচবিহারের বাংলা আর নদীয়ার বাংলাও এক নয়। কিন্তু সাহিত্য বলতে কেন আমরা মূলত শুধু একইরকম প্রমিত ভাষায় লেখা বাংলা বুঝি? কেন স্থানীয় ভাষায় লেখা কবিতা পড়ি না তত? উপন্যাস, নিদেনপক্ষে ছোটগল্প? বিশ্বজুড়ে আছি আমরা বাঙালিরা, অথচ আমরা কতজন জানি বিভিন্ন জেলার, এলাকার সংস্কৃতি, বিভিন্ন প্রথা, লুকিয়ে থাকা ইতিহাস, লোকাচার, রান্নাবান্না বা গল্প?
আমরা চাইছি বাংলার, বাংলার প্রত্যেক অঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে। আপনি, যিনি কখনো কলম ধরেন নি, অথচ জানেন কিভাবে স্থানীয় মা-দিদিমার শিখিয়ে যাওয়া হারিয়ে যাওয়া পদটি রাঁধতে হয়, কলম ধরুন। আপনি, যিনি ভাবেন, জঙ্গলমহলের ভাষায় সাহিত্য লিখলে পড়বে কজন, কলম ধরুন। শুধু কলম নয়, কলম না ধরতে পারলে, মুখে বলুন আপনার গল্প। আমরা তাকে ছড়িয়ে দেব বিশ্বময়। আমরা সারা পৃথিবীর কাছে নিয়ে যাবো ই-বুক বা অডিওবুক ফর্ম্যাটে।
আমরা আসছি। ধুলোবালি। জীবনের গায়ে লেগে থাকা নিত্যদিনের ধুলোবালি ফেলনা নয়, অমূল্য। আমরা আপনার মত মাটির কাছাকাছি থাকা সব মানুষের জীবনের ধুলোবালি সরিয়ে দেখাবো তার মাঝের লুকিয়ে থাকা অরূপরতন। আমরা ধুলোবালি, এক সামান্য প্রচেষ্টা বাংলার হারিয়ে ফেলতে বসা ঐতিহ্য ডিজিটালি ধরে রাখার। পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দিয়ে যাওয়ার। আমাদের গর্বের ভাষাকে নতুন করে ভালোবাসার।