14/08/2022
রবীন্দ্রনাথের পৈতৃক ব্যবসার মধ্যে অন্যতম সফল ব্যবসা ছিলো পতিতালয় ব্যবসা আফিম ব্যবসা ও চড়া সুদ।
সেন্ট্রাল এভিনিউ থেকে শোভাবাজারের রাস্তা ধরে এগিয়ে চললে, পথে পড়ে গৌরী শঙ্কর লেন। এখানেই অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ যৌনপল্লী সোনাগাছি। আজও সাধারণ মানুষের কাছে যারা পরিচিত তথাকথিত 'বেশ্যা' নামে।
ঊনবিংশ শতকের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসের পাতা ওল্টালে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িকে অস্বীকার করা যায় না কিছুতেই। দ্বারকানাথের বেলগাছিয়ার বিরাট বাগানবাড়ির তো খুবই নামডাক। রবীন্দ্র সরণী - যার আদিনাম চিৎপুর রোড, সেই রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়বে দ্বারকানাথ ঠাকুরের গলি। এই গলির পাঁচ ও ছয় নম্বর বাড়ি ছিল ঊনবিংশ শতকের বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণের পীঠস্থান। তবে ঊনবিংশ শতকের ঠাকুরবাড়ি নিজেদের শুধুমাত্র সাহিত্য-সংস্কৃতি বা বিজ্ঞানচর্চার মধ্যে আবদ্ধ রেখেছিল ভাবলে ভুল ভাবা হবে। সাহিত্য সংস্কৃতির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও ঠাকুরবাড়ি ছিল একমেবাদ্বিতীয়ম। আর এই ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে তৎকালীন বাঙালি সমাজের পথিকৃৎ হয়ে ওঠেন দ্বারকানাথ।
দ্বারকানাথ যখন পৈতৃক বিষয় পান তখন তার আয় ছিল খুবই অল্প। কিন্তু দ্বারকানাথ কর্মজীবনের শুরু থেকেই সংসার চালিয়ে উদ্দ্বৃত্ত টাকার সঠিক বিনিয়োগ ও উপার্জন বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী ছিলেন। সেই সময় জমানো টাকা নিরাপদে রাখার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তাই তিনি জমানো টাকা চড়া সুদে ধার দিতে লাগলেন এবং এতে তার উপার্জনও মন্দ হতো না। সেই সময় সুদের ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় ছিল এমনকি রামমোহন রায় ও রংপুর সেরেস্তায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে এই কারবারে নেমে পড়েন। শোনা যায় বিদ্যাসাগরের মাও নাকি এপন্থায় কিছু রোজগার করেছিলেন। আসলে এই তেজারতির ব্যবসা ছিল বেশ আরামের ব্যবসা, তার উপর প্রভাবশালী কেউ যদি এ ব্যবসা করে থাকে তাহলে তা বেশ সহজসাধ্যও বটে। কারণ সুদ আসল আদায়ের জন্য বেশি পরিশ্রম করতে হয় না তাকে। দ্বারকানাথের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরবর্তীতে সকলের সামনে দেখা যায় তাতে তিনি রক্তচোষা সুদখোর মহাজনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তখনকার সমাজ জীবনের একজন খলনায়ক হয়ে থাকেন।
এটাকে আবার একেবারে ভুল বলেও অবশ্য এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কারণ তার চরিত্রে অর্থলিপ্সা অবশ্যই ছিল। শুধু যে উদ্বৃত্ত টাকা তেজারতির ব্যবসাতেই খাটিয়েছেন তা নয়, যখন কোনও জমিদারি, তালুক নিলামে উঠেছে তা কিনে ফেলতেন। এভাবে নিজের জমিদারিকে বহুলাংশে বিস্তৃত করেছেন, আর এই বিস্তৃতির পেছনে ছিল তার আইন সম্পর্কে পান্ডিত্য। তেজারতি, জমিদারি তো ছিলই সেই সাথে আইনি উপদেষ্ঠা হিসেবেও দ্বারকানাথের রোজগার কম ছিল না। যখনই কোনও মামলা মোকদ্দমা হত তিনি আইনি উপদেষ্ঠা হিসেবেও বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করতেন। আমদানি রপ্তানির কারবারও শুরু করেছিলেন ইউরোপীয় বন্ধুদের সাথে। কর্মজীবনে প্রবেশে সাথে সাথে পারিবারিকভাবে ইংরেজদের সাথে সখ্যতার দরুন তার চলার পথ অনেক মসৃণ হয়ে গিয়েছিল। ইউরোপীয় অর্ডার অনুসারে তিনি রেশম, চিনি, সোডা, নীল রপ্তানি করতেন। ১৮২২ সালে তিনি চব্বিশ পরগনার আবগারি বিভাগে লবণ দপ্তরে কাজ নেন। পরে তিনি আফিম বোর্ডের ডিরেক্টরও হয়েছিলেন। দ্বারকানাথই প্রথম ভারতীয় যিনি এই পদে বসতে পেরেছিলেন। এভাবেই নিজের দক্ষতা, কার্য-কুশলতার মধ্যে ও ইংরেজ বন্ধুদের সাহায্যে তিনি একে একে বহু ভূসম্পত্তির অধিকারী হন। ওড়িশা ও পূর্ববঙ্গে তিনি বহু জমিদারি কেনেন ও সেইসব জায়গায় কুঠিবাড়ি নির্মাণ করেন।
এবার আসা যাক সোনাগাছির প্রসঙ্গে। ১৮৫৩ সালে প্রকাশিত একটি সার্ভে রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কলকাতা শহরে ৪৪৪৯টি ঠেক আছে, যেখানে বসবাস করেন প্রায় ১২,৪১৯ জন যৌনকর্মী। যার মধ্যে অন্যতম সাড়া জাগানো যৌনপল্লী ছিল 'সোনাগাছি'। সোনাগাছির সম্পর্কে কথিত ছিল, প্যারিসের যৌনকর্মীরাও কলকাতার এই যৌনালয় সম্পর্কে জানতেন। বস্তুতপক্ষে তার আগেই দ্বারকানাথ ঠাকুর বেশ কিছু যৌনপল্লীর মালিক হয়ে উঠেছিলেন। এ-ব্যাপারে সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনীটি প্রণিধানযোগ্য। বইটি থেকে জানা যায়, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার একটি এলাকাতেই প্রায় তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন। এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কী এমন প্রয়োজন পড়ল দ্বারকানাথের, যার জন্য তাঁকে হয়ে উঠতে হল কিছু এতগুলি বেশ্যালয়ের মালিক? এমনকি বলতে গেলে তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হল সোনাগাছির মতো যৌনপল্লী।
এই প্রশ্নের উত্তরও লুকিয়ে আছে দ্বারকানাথের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতির মধ্যে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যের সূত্রেই কলকাতায় আগমন হয় প্রচুর রাজকর্মচারীর। তাঁরা বেশিরভাগই ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিচুতলার কর্মী এবং বেশিরভাগই অবিবাহিত। ফলে এই ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের আপ্যায়নের জন্যই দ্বারকানাথ প্রায় তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক হয়ে বসলেন। বেশিরভাগ কোঠাতেই ইংরেজ কর্মচারীরা তাদের আমোদ-স্ফূর্তির জন্য রাখতেন এক বা একাধিক নেটিভ উপপত্নী। এই নেটিভ উপপত্নীরা বিবেচিত হতেন ইংরেজ কর্মচারীদের আনন্দের ‘উপকরণ’ হিসেবে। তবে শুধুমাত্র ইংরেজ কর্মচারীরাই নন, তৎকালীন সময়ে অনেক বাঙালি 'বাবু'-র মুক্তাঞ্চলও হয়ে ওঠে এইসব যৌনপল্লী, যার মধ্যে অন্যতম ছিল সোনাগাছি।
৪৩টি বেশ্যালয়ের মালিকানা গ্রহণ বা সোনাগাছির মতো যৌনপল্লীর শুরুয়াত হয় দ্বারকানাথের হাত ধরেই। একে দ্বারকানাথের তুখোড় বাণিজ্যিক বুদ্ধির প্রয়োগ বলে গণ্য করা চলে। বেলগাছিয়ার বাগানবাড়ি যেমন ইংরেজ কর্মচারী এবং বাঙালি বাবুদের কাছে আনন্দের অন্যতম উৎস ছিল, তেমনই তার অন্য একটি ধারা হয়তো প্রবাহমান ছিল এই যৌনপল্লীর হাত ধরেই। করে দেন। দ্বারকানাথের নারী আসক্তি ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই আর এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় জার্মান পরিব্রাজক ও পর্যটক ক্যাপ্টেন লেওপোন্ড ফন ওরলিস এর লেখায়৷ তিনি যখন কলকাতায় আসেন তখন বেলগাছিয়ায় নিমন্ত্রিত হন। ভিলার প্রদর্শনী কক্ষে একটি ভারতীয় অভিজাত মহিলার ছবির কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। দ্বারকানাথ তাকে গর্ব করে বলেন মহিলাটির প্রতি তার অনুরাগ সর্বজনবিদিত।
যাই হোক এগুলো এখানে উল্লেখ করার কারন হল পতিতালয়ের ব্যবসা ঠাকুরবাড়ির জন্য অস্বাভাবিক না। রামলোচন ঠাকুর নিজেও কলকাতার একজন বিখ্যাত শিল্প সমঝদার ছিলেন। তিনি প্রায়ই বাইজি বাড়ি যেতেন। দ্বারকানাথ কলকাতা থিয়েটারের একজন ভক্ত ও অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৮৩৫ সালে লসের কারণে চৌরঙ্গি থিয়েটার নিলামে উঠলে দ্বারকানাথ সেটি কিনে নেন। এই থিয়েটারের প্রধান অভিনেত্রী ছিলেন এক ইংরেজ সৈনিকের মেয়ে এথলার লীচ। শোনা যায় দ্বারকানাথ নাকি তাকে প্রলুব্ধ করার জন্য অশোভন পন্থা অবলম্বন করেন।
ঠাকুরবাড়ির অন্যতম প্রধান ব্যবসা ছিল মদের ব্যবসা। এখনকার সময়ের থেকে অনেক বেশি মদ আমদানি হত সে সময়। ভারতবর্ষে যে বৃহৎ কোম্পানিগুলো মদের আমদানিকারক ছিল তার মধ্যে ‘কার টেগোর’ ছিল অন্যতম। দ্বারকানাথ তার অনুগত এক ব্যবসায়িক বিশ্বনাথ লাহাকে দিয়ে খুচরো মদের ব্যবসা করাতেন। তিনি লাহাকে ধর্মতলায় একটি মদের দোকানও খুলে দেন। ক্ষিতীন্দ্রনাথ পারিবারিক সূত্রে জেনেছিলেন দ্বারকানাথ প্রতিদিন রাতে ডিনারের পর এক গ্লাস করে শেরি পান করতেন। এছাড়াও বেলগাছিয়ার ভিলায় নাকি নিয়মিত মদের স্রোত বইত। জনশ্রুতি ছিল দ্বারকানাথ নাকি কলকাতা শহরকে মদের স্রোতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তার মদের ব্যবসা এতদূর বিস্তৃত ছিল যে এটা নিয়ে পালাগান ও রচিত হয়েছিল-
“কী মজা আছে রে লাল জলে,
জানে ঠাকুর কোম্পানি।
মদের গুণাগুণ আমরা কী জানি,
জানে কার ঠাকুর কোম্পানি।”
এই মদের উৎপাদন কী ব্যাপক হারে ছিল তা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। ঠাকুর কোম্পানির উৎপাদিত রাম ১৮২১ সালে ২৬০ টন জাহাজ ‘রেজোল্যুশন’-এ ভর্তি করে বুয়েনস আয়ার্সে যায়। লন্ডনে ১৮২৬ সালে কার ঠাকুর কোম্পানির নিজস্ব একটি জাহাজে করে ১৫০ টন মদ নিয়ে যায়। বেলগাছিয়ার ভিলায় নাকি একরাতের পার্টিতে এত মদের স্রোত বইত যা দিয়ে নাকি একটি এলাকা ভাসিয়ে দেয়া যেত।
বেলগাছিয়া নিয়ে পালাগান ছিল এমনঃ
“বেলগাছিয়ার বাগানে হয়
ছুরি কাটা চামচের ঝনঝনি।
খানাপিনার কত মজা,
আমরা কী জানি,
জানেন ঠাকুর কোম্পানি।”
মূল প্রশ্ন হলো কেমন ছিলেন জমিদার দ্বারকানাথ? ব্লেয়ার বি কিং বলেছেন অন্য আর পাঁচটা জমিদারের মতো তিনি শুধু জমিদারি থেকে আসা আয় নিয়েই সন্তষ্ট থাকেননি, রীতিমতো পরিণত করেছিলেন ব্যবসায়িক মেশিনে। তিনি রায়তি প্রথায় জমিদারি চালাতেন যেখানে দয়ামায়া বলতে কোনও শব্দ ছিল না। এই রায়তি প্রথার দরুন ছোটবড় অসংখ্য কর প্রজাদের ঘাড়ে এসে পড়ত এবং সেই সাথে তাদের জমিতে রায়তের চাহিদামত ফসল উৎপাদন করতে হত। দ্বারকানাথ কখনোই প্রজাদের মা বাপ হতে চাননি। এছাড়া তিনি জমিদারি পরিচালনার জন্য ব্রিটিশ সদস্যদের নিয়ে কমিটি বানিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে দ্বারকানাথ যদি আগুন হন কমিটি ছিল ঘি। এর উপর ছিল নীলের চাষ। দ্বারকানাথ তার জমিদারিতে প্রজাদের দিয়ে নীলের চাষ করাতেন।
সে সময় এ ব্যবসায় এত অত্যাচার করতে হত যে অনেক সময় দেশীয় লোকজন কোনও নীলকুঠির ম্যানেজার হতে চাইত না। তাই দ্বারকানাথ শাহজাদপুর পরগনা, রংপুরের স্বরূপপুর পরগনা, যশোরের তালুকে ইউরোপীয় ম্যানেজার রেখে নীল চাষ করাতেন। ১৮২৪ সালে বিহরামপুর পরগনার ১১৬ জন রায়ত অভিযোগ করে যে, জমিদার বাঁধ তৈরি করতে না দেওয়ায় বসতবাড়িতে জল ঢুকছে। দ্বারকানাথ দাবি করেন বাঁধ হলে জমি জলমগ্ন হবে এবং নীলের চাষ ব্যাহত হবে। ১৮৩৬ সালে যশোরের রায়তরা আবারও দ্বারকানাথের কর্মচারী নির্যাতন নিয়ে মামলা করেন। পরে দ্বারকানাথ যশোরের ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্ল্যাকমেল করে ঘটনা ধামাচাপা দেন। একটি গ্রাম থেকে যত খাজনা আদায় সম্ভব তার থেকে অনেক বেশি টাকায় দ্বারকানাথ নীলকরদের কাছে জমির ইজারা দিতেন। যেমন শাহজাদপুরের একটি গ্রামকে তিনি হিজবুল কনসার্ন নামে একটি নীল কোম্পানিকে দশ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামের খাজনা কোনওভাবেই সাত হাজারের বেশি হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া খাজনা না দেওয়ার দরুন শাহজাদপুর পরগনার তালুকদার শিবচন্দ্র ভট্টাচার্য ও তার পরিবারকে দ্বারকানাথ ভিটেছাড়া করেন। ১৮২১ সালে শিলাইদহে পদ্মার তীরে স্থাপিত নীলকুঠি প্রজাদের বহু হাহাকারের গল্প শোনায়।
দ্বারকানাথ তার জমিদারিতে নীলের সাথে আখের চাষও শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি চিনি উৎপাদন করতেন এবং ইউরোপে রপ্তানি করতেন। কার টেগোর কোম্পানি চিনি, নীল, রেশম, আফিম, রেশমের থান, আখ থেকে তৈরি রাম, চামড়া, কাঠ, সোডা, চাল রপ্তানি করত। এ সমস্ত কাঁচামাল দ্বারকানাথ সংগ্রহ করতেন জমিদারি থেকে। ১৮৩৩ সালে যখন চার্টার বা সনদের স্থায়িত্বকাল শেষ হয়ে যায় তখন দ্বারকানাথ জঙ্গিপুর, কুমারখালির রেশম কুঠিগুলো কিনে নেন। ক্ষিতীন্দ্রনাথ লিখেছেন, রেশমের চাষ ও গুটি উৎপাদন যারা করত তারা দ্বারকানাথের প্রজা ছিল। চীন দেশ থেকে ভারতবর্ষে প্রথম ওই গুটি রেশমের আমদানি করে কার টেগোর কোম্পানি। ১৮৪২ সালে দ্বারকানাথ প্রথম যেবার বিলেত যান সাথে করে রানির জন্য রেশম ও উপহার হিসেবে নিয়ে যান।
দ্বারকানাথের আরও একটি ন্যক্কারজনক ব্যবসা হলো আফিমের ব্যবসা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চার্টার শেষ হয়ে যাবার পরেও তারা যেকরেই হোক আফিমের ব্যবসাকে ধরে রাখতে চাইছিল। ১৮৩০ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক গাঙ্গেয় সমভূমিতে আফিম চাষের জমি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হলে দ্বারকানাথ বাংলার জমি দখল ও ব্যবহার নাম দিয়ে হাইকোর্টে পিটিশন দিয়ে মামলা করেন। স্থানীয় মানুষের সমর্থনে দ্বারকানাথ জিতে যান এবং আফিম ব্যবসার অনুমতি পান। দ্বারকানাথ ব্যক্তিগতভাবে এতটাই স্বার্থান্বেষী ছিলেন যে ব্যবসার খাতিরে তিনি কখনও ইংরেজদের বন্ধু, পদলেহী, আবার তাদের বিরুদ্ধচারণও করেছেন। আফিম চাষের জন্য মামলা জেতার পর পাঁচ হাজার কৃষককে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং এই ব্যবসা দেখাশোনার জন্য একজন ক্লার্ক, অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ করে একটি পূর্নাঙ্গ ব্যবসায়িক আঙ্গিক তৈরি করা হয়েছিল।
_____________________________________________
(তথ্যসূত্রঃ ১/দ্বারকানাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী -ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২/Partner in empire by Blair B king.
৩/ঠাকুরবাড়ির ব্যবসা-সুমনা দাসদত্ত।
৪/মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী-দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৫/ডারলিং ডোয়ার্কি-রঞ্জন বন্দোপাধ্যায়।
৬/Memories of Dwarkanath Tagore by Krishna kripalini.
৭/ঠাকুরবাড়ির গোপনকথা-রঞ্জন বন্দোপাধ্যায়।
৮/ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল-চিত্রা দেব।
৯/রবিজীবনী-প্রথম খণ্ড -প্রশান্তকুমার পাল।
১০/রবীন্দ্রজীবন কথা-প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।
১১/ এ এক অন্য ইতিহাস, অধ্যায়: অসাধারণ দ্বারকানাথ, লেখক: গোলাম আহমদ মর্তুজা, পৃষ্ঠা: ১৪১।
১২/ কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা,২৮শে কার্তিক,১৪০৬, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়)
_____________________________________________
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সাথে কি প্রেমের সম্পর্ক ছিল?
কাদম্বরী দেবী ছিলেন বাঙালি নাট্যকার, সঙ্গীতস্রষ্টা, সম্পাদক এবং চিত্রশিল্পী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রবধু এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৌদি।
জুলাই ৫, ১৮৫৯ সালে কলকাতায় কাদম্বরীর জন্ম। পৈতৃক নাম মাতঙ্গিনী। কাদম্বরী দেবী ছিল ঠাকুর বাড়ির কর্মচারীর মেয়ে। তার বাবা ঠাকুরদের বাজার হাট করে দেয়ার, ফরমায়েশ পূরণ করার কাজ করত।বাজার সরকার শ্যাম গাঙ্গুলির তৃতীয় কন্যা। মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯ বছর বয়সী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কাদম্বরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শিক্ষার বন্দোবস্ত করেছিলেন। তার পিতামহ জগন্মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন একজন গুণী সংগীত শিল্পী। তার থেকেই কাদম্বরী এবং রবীন্দ্রনাথ বাল্যকালে গান শিখেছিলেন।
সমবয়সী হওয়ার সুবাদে কাদম্বরীর সাথে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তিনি রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গল্প, কবিতা, নাটক আর গান রচনায় উৎসাহ যুগিয়েছেন তার সৃষ্টিশীল মতামত প্রদানের মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ এবং কাদম্বরী ছিলেন খুবই ভালো বন্ধু এবং সহপাঠী। যার কারণে এই দুজনের সম্পর্ক নিয়ে সেই সময়ে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন বিতর্ক এখনো বিদ্যমান রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহের (১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর) চার মাস পরে এপ্রিল ১৯, ১৮৮৪ সালে কাদম্বরী দেবী আফিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, এবং তার দুই দিন পর এপ্রিল ২১ তারিখে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার এই আত্মহত্যার বিষয়ে নিরব ছিল।
মুলত পারিবারিক সমস্যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে বিতর্ক রয়েছে। হিন্দু প্রথা অনুযায়ী তাকে মর্গে পাঠানো হয় নি, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেই বসানো হয়েছিল করোনার কোর্ট। গবেষকরা মনে করেন, স্বয়ং মহর্ষির উদ্যোগেই করোনার রিপোর্ট লোপ করা হয়, সঙ্গে লোপাট করা হয় 'সুইসাইড নোট'। ৫২ টাকা ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করা হয় সংবাদ মাধ্যমের। তাই কাদম্বরীর মৃত্যু সংবাদ তখন কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়নি।
কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং তার স্মৃতি নিয়ে মৃত্যুর দীর্ঘদিন পরেও একাধিক কবিতা, গান ও গল্প রচনা করেছেন। উপরের কথা গুলো পড়ে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন বা আর বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না!
রবীন্দ্র ঢাকায় আসত এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা নোঙর করত প্রসিদ্ধ গঙ্গাজলীর (বিশাল পতিতালয়ের ঠিকানা) বিপরীতে এবং লিখত “বাংলার বধু বুকে তার মধু”। ২০১৭ সালের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইএ সাহিত্য কণিকার ৭৮ পৃষ্ঠায় দুই বিঘা জমি কবিতাটি এসেছে এবং সেখানেও এসেছে ঐ ছন্দময় সংযোজনটি “বুক ভরা মধু, বঙ্গের বধু।”
লেখার প্রথমেই বলেছি রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক ব্যবসাও ছিল পতিতালয়ের ব্যবসা। শুধু তাই নয় সে পতিতালয়ে গমন করতো। আনন্দবাজার পত্রিকার ১৪০৬ এর ২৮শে কার্তিক সংখ্যায় লিখা হয় “তবে চুরি করে সাহিত্য রচনা করলেও রবীন্দ্রনাথের পতিতা সাহিত্যের উপর মারাত্মক দক্ষতা ছিলো, আরো সহজ ভাষায় বলতে অশ্লীল সাহিত্যের উপর রবীন্দ্রনাথের পিএইচডি ডিগ্রি ছিলো। সত্যি কথা বলতে, ঐ সময় কলকাতায় বিশেষ কারণে সিফিলিস খুব কমন ছিলো। তাই ১৯২৮ সালে অবতার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ এর সিফিলিস রোগের খবরটা তেমন গুরুত্ব পায় নি”।
অর্থাৎ রবিন্দ্রঠগ ছিলো নষ্টপল্লীতে গমনকারী সিফিলিস রোগে আক্রান্ত রোগী।
(রবীন্দ্রনাথের সিফিলিস হয়েছিলো এর সূত্র: বই-নারী নির্যাতনের রকমফের, লেখক: সরকার সাহাবুদ্দিন আহমদ, পৃষ্ঠা: ৩৪১,)
রবিন্দ্রনাথ ব্যক্তিগত জীবনে সে লুকিয়ে লুকিয়ে নারীর বক্ষ অবলোকন করতো। যা ‘নিদ্রিতা’ কবিতায় প্রকাশ করেছে।
মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে,
বাজিল বুকে সুখের মত ব্যাথা ।
মেঘের মত গুচ্ছ কেশরাশি
শিথান ঢাকি পড়েছে ভারে ভারে ।
একটি বাহু বক্ষ-'পরে পড়ি,
একটি বাহু লুটায় এক ধারে ।
আঁচলখানি পড়েছে খসি পাশে,
কাঁচলখানি পড়িবে বুঝি টুটি---
পত্রপুটে রয়েছে যেন ঢাকা
অনাঘ্রাত পূজার ফুল দুটি ।
চিত্রাঙ্গদা নাট্যকাবে বলা হয়েছে –
কারে, দেব, করাইলে পান! কার তৃষা
মিটাইলে! সে চুম্বন, সে প্রেমসংগম
এখনো উঠিছে কাঁপি যে-অঙ্গ ব্যাপিয়া
বীণার ঝংকার-সম, সে তো মোর নহে!
বহুকাল সাধনায় এক দণ্ড শুধু
পাওয়া যায় প্রথম মিলন, সে মিলন
কে লইল লুটি, আমারে বঞ্চিত করি।
সে চিরদুর্লভ মিলনের সুখস্মৃতি”।
আজকাল ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি প্রায়ই বলে থাকে ভারতের সকল মুসলমানই হিন্দু। ফলে তাদেরকে ঘরে ওয়াপসি করতে হবে। পুরোপুরি হিন্দু হয়ে যেতে হবে। কথাটা কিন্তু ভারতের জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথই প্রথম চালু করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন: মুসলমানরা ধর্মে ইসলামানুরাগী হলেও জাতিতে তারা হিন্দু। কাজেই তারা ‘হিন্দু মুসলমান’। (সূত্র: আবুল কালাম শামসুদ্দিনের লেখা অতীত দিনের স্মৃতি, পৃষ্ঠা: ১৫০)
গোড়া হিন্দুদের মত সতীদাহ প্রথাকে সমর্থন করে কবিতাও লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লিখুন, সমস্যা নেই। কিন্তু স্বামীর চিতায় জীবন্ত স্ত্রীর পুড়ে যাওয়াকে মুসলমানরা অপছন্দ করেন বলে তিনি 'যবন ' গালি দিয়ে মুসলমানদের হুমকি দিচ্ছেনঃ “জ্বল জ্বল চিতা ! দ্বিগুন দ্বিগুন পরান সপিবে বিধবা বালা জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন জুড়াবে এখনই প্রাণের জ্বালা শোনরে যবন, শোনরে তোরা যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালালি সবে স্বাক্ষী রলেন দেবতার তার এর প্রতিফল ভুগিতে হবে” (জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জ্যোতিন্দ্রনাথের নাট্য সংগ্রহ, কলকাতা: বিশ্ব ভারতী ১৯৬৯, পৃষ্ঠা: ২২৫)
রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে এক সময় কোনো মুসলমান ছাত্রের প্রবেশাধিকার ছিল না। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে চাঁদা চেয়েছিলেন হায়দরাবাদের নিজামের কাছেও। নিজাম তাকে চাঁদা দেন এক লাখ টাকা। এক লাখ টাকা সে সময় ছিল অনেক। রবীন্দ্রনাথ ভাবতে পারেননি নিজাম এতটা চাঁদা দেবেন। নিজামের চাঁদার সুত্র ধরেই সামান্য কিছু মুসলিম ছাত্র সুযোগ পায় বিশ্বভারতীতে লেখাপড়া শেখার।
সাহিত্যিক মুজতবা আলী হলেন যাদের মধ্যে একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপিত হয় ১৯২১ সালের জুলাই মাসে। হিন্দুরা চাননি ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপিত হোক। এমনকি ঢাকার হিন্দুরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপনের বিরুদ্ধে ছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে আসলে একটি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথও চাননি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপিত হোক (সেক্যুলারদের অতিমাত্রায় রবীন্দ্রপুজার রহস্য উন্মোচন-এবনে গোলাম সামাদ :০৭ মে,২০১১, শনিবার, বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কমে প্রকাশিত)।
১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ কলিকাতার গড়ের মাঠে এক বিরাট সমাবেশ করা হয়। ঠিক তার দু’দিন পূর্বে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছিল। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, ঢাকায় ইউনিভার্সিটি হতে দেওয়া যাবে না। উক্ত উভয় সভার সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ (তথ্যসূত্র: কলকাতা ইতিহাসের দিনলিপি, ড. নীরদ বরণ হাজরা, ২য় খণ্ড, ৪র্থ পর্ব)।
" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কলকাতার গড়ের মাঠে যে সভা হয়, তাতে সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এসব বাধার কারণে ১৯১১সালে ঘোষণা দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি আঁতুর ঘরে পড়ে থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনছিল। অবশেষে নানা বিষয়ে সমঝোতা হয়, যার মধ্যে ছিল মনোগ্রামে ‘সোয়াস্তিকা’ এবং ‘পদ্ম’ ফুলের প্রতীক থাকবে। প্রতিবাদকারীরা খুশি হন। এরপর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়"(তথ্যসূত্র: ডক্টর কাজী জাকের হোসেন: দৈনিক ইনকিলাব, ১০ মার্চ, ২০০২)।"
১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয় [তথ্যসূত্র: আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা, লেখক, মেজর জেনারেল(অব.) এম এ মতিন (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা)]।
সেসময় রবীন্দ্রনাথ এক অনুষ্ঠানে দাম্ভিকতার সাথে বলেছিলেন “মূর্খের দেশে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়, তারাতো ঠিকমতো কথাই বলতে জানেনা!” অন্যত্র এক অনুষ্ঠানে এদেশের মানুষকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করে রবী ঠাকুর বলেছিলেন “সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি”।
কয়েক পুরুষ ধরে প্রজাদের উপর পীড়ন চালিয়েছেন জোড়াসাকোর ঠাকুর পরিবার। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলেন না। "১৮৯৪ সনে রবীন্দ্রনাথ চাষীদের খাজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, খাজনা আদায়ও করেছিলেন [তথ্যসূত্র: শচীন্দ্র অধিকারি, শিলাইদহ ও রবীন্দ্রনাথ পৃঃ-১৮, ১১৭]।"
সব জমিদারা খাজনা আদায় করত একবার, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এলাকার কৃষকদের থেকে খাজনা আদায় করত দুইবার। একবার জমির খাজনা দ্বিতীয় বার কালী পূজার সময় চাদার নামে খাজনা। (তথ্যসূত্র: ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র-নজরুল চরিত, লেখক সরকার শাহাবুদ্দীন আহমেদ)।
কর বৃদ্ধি করে বল প্রয়োগে খাজনা আদায়ের ফলে প্রজাবিদ্রোহ ঘটলে তা তিনি সাফল্যের সঙ্গে দমন করেন।
"শোষক রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে শিলাইদহের ইসলাইল মোল্লার নেতৃত্বে দু’শঘর প্রজা বিদ্রোহ করেন। [তথ্যসূত্র: অমিতাভ চৌধুরী, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, দেশ শারদীয়া, ১৩৮২।]"
‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকে প্রতাপাদিত্যের মুখ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলাচ্ছেন- "খুন করাটা যেখানে ধর্ম, সেখানে না করাটাই পাপ। যে মুসলমান আমাদের ধর্ম নষ্ট করেছে তাদের যারা মিত্র তাদের বিনাশ না করাই অধর্ম।"
‘রীতিমত নোবেল’ নামক ছোটগল্পে মুসলিম চরিত্র হরণ করেছেন-“আল্লাহু আকবর শব্দে বনভূমি প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছে। একদিকে তিন লক্ষ যবন (অসভ্য) সেনা অন্য দিকে তিন সহস্র আর্য সৈন্য।.. পাঠক, বলিতে পার...
কাহার বজ্রমন্ডিত ‘হর হর বোম বোম’ শব্দে তিন লক্ষ ম্লেচ্ছ (অপবিত্র) কণ্ঠের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি নিমগ্ন হয়ে গেলো। ইনিই সেই ললিতসিংহ। কাঞ্চীর সেনাপতি। ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র"
রবীন্দ্রনাথ তার ‘কণ্ঠরোধ’ (ভারতী, বৈশাখ-১৩০৫) নামক প্রবন্ধে বলেন, "কিছুদিন হইল একদল ইতর শ্রেণীর অবিবেচক মুসলমান কলিকাতার রাজপথে লোষ্ট্রখন্ড হস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহার মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে-উপদ্রবের লক্ষ্যটা বিশেষ রুপে ইংরেজদেরই প্রতি। তাহাদের শাস্তিও যথেষ্ট হইয়াছিল। প্রবাদ আছে-ইটটি মারিলেই পাটকেলটি খাইতে হয়, কিন্তু মূঢ়গণ (মুসলমান) ইটটি মারিয়া পাটকেলের অপেক্ষা অনেক শক্ত শক্ত জিনিস খাইয়াছিল।"(রবীন্দ্র রচনাবলী, ১০ খন্ড, ৪২৮ পৃষ্ঠা)।
এমনকি মরহুম মোতাহার হোসেন চৌধুরী শান্তি নিকেতনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার লেখায় ইসলাম ও বিশ্বনবী সম্পর্কে কোনো কথা লেখা নেই কেন? উত্তরে কবি বলেছিলেন, ‘কোরআন পড়তে শুরু করেছিলুম কিন্তু বেশিদূর এগুতে পারিনি আর তোমাদের রসুলের জীবন চরিতও ভালো লাগেনি।[তথ্যসূত্র: বিতণ্ডা, লেখক সৈয়দ মুজিবুল্লা, পৃ-২২৯]"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইংরেজি লেখার কারিগর ছিলো সি. এফ অ্যানড্রুজ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একজন প্রধান সহযোগী ছিল মি. অ্যানড্রুজ। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর যার নাম দিয়েছিলেন ‘দীনবন্ধু’। (তথ্যসূত্র: আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ-অখণ্ড সংস্করণ, দ্বিতীয়খণ্ড, কলকাতা, পৃষ্ঠা-১০৮)।
এই রবীন্দ্রনাথই ড.ডেভিসের মধ্যস্থতায় এন্ডারসনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ‘চার অধ্যায়’লেখেন। শুধু তাই নয়, ‘ঘরে বাইরে’ও তাকে টাকা দিয়ে লেখানো হয়।”(তথ্যসূত্র: দৈনিক বাংলাবাজারে প্রকাশিত ড.আহমদ শরীফের সাক্ষাৎকার, তারিখঃ ০১/০৫/১৯৯৭ইং)।
"কালীপ্রসন্ন বিদ্যাবিশারদ তার 'মিঠেকড়া'তে পরিষ্কার বলেই দিয়েছিলেন যে, রবীন্দ্রনাথ মোটেই লিখতে জানতেন না, স্রেফ টাকার জোরে ওর লেখার আদর হয়। পাঁচকড়ি বাবু একথাও বহুবার স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের প্রায় যাবতীয় সৃষ্টিই নকল। বিদেশ থেকে ঋণ স্বীকার না করে অপহরণ। (তথ্যসূত্র: জ্যোতির্ময় রবি ও কালোমেঘের দল, লেখক: সুজিত কুমার সেনগুপ্ত, পৃ-১১১)।)
এ বক্তব্যের সাথে একমত নই রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিল গীতাঞ্জলির জন্য নয়, বরং গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ 'Osong Offerings'-এর জন্য। রবীন্দ্র হলো বাংলা ভাষী, ইংরেজিতে কবিতা লিখে নোবেল প্রাইজ পাওয়াটা তার মতো ব্যক্তির পক্ষে একদমই অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভবটাই সম্ভব হয়েছিল, কারণ পর্দার আড়ালে থেকে কলম ধরেছিল সি. এফ. অ্যানড্রুজ। ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদ কিন্তু বাংলা থেকে হুবহু অনুবাদ ছিল না, বরং তা ছিল ভাবানুবাদ। সেই ইংরেজি অনুবাদের ভাব সম্পূর্ণ মিলে গিয়েছিল খ্রিস্টানদের বাইবেল ও তাদের ধর্মীয় সাধকদের রচনার সাথে। যে প্রসঙ্গে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকার লেখক, কবি ইয়েটস বলেছিলেন- ‘Yet we are not moved because of its strangeness, but because we have met our own image’ অর্থাৎ ‘গীতাঞ্জলি’র ভাব ও ভাষার সাথে পশ্চিমাদের নিজস্ব মনোজগতে লালিত খ্রিস্টীয় ভাবধারা সম্পূর্ণ মিলে গিয়েছিল। ইয়েটস তার বক্তব্যের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে সেন্ট বার্নার্ড, টমাস-এ- কেম্পিস ও সেন্ট জন অফ দি ক্রসের সাথে ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদের মিল উল্লেখ করেছিলেন। অন্যান্য পশ্চিমা সাহিত্য সমালোচকরাও ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদের ২৬নং কবিতা ও ইংরেজি বাইবেলের Songs of Solomon – এর ৫: ২-৬ নম্বর শ্লোক, তাছাড়া সেন্ট ফ্রান্সিসের রচিত খ্রিস্টীয় গান Canticle এবং ইংরেজি গীতাঞ্জলির ৮৬নং কবিতা এই দুটো পাশাপাশি রেখে তাদের মিল দেখিয়েছেন। (তথ্যসূত্র: আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ-১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-১৪৫)।
ভাগ্য রবী ঠাকুরের! ইংরেজী অনুবাদটি রবীন্ড্রোজের নবসৃষ্টি হলেও নোবেল পেয়েছেন শুধু রবীন্দ্রনাথ, এতে আমরা বেজার হবার কে ?
দর্শনশাস্ত্রে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ‘‘সব কিছুকেই সন্দেহ করা যায়, কিন্তু সন্দেহকে কখনো সন্দেহ করা যায় না। কোন না কোন এক জায়গায় আমাদের থামতে হবে”। আর সেটাই হলো আমাদের ‘স্টপিং পয়েন্ট’।
রবিঠাকুরে সম্পর্কে সত্যিটা মানুষকে জানানো বিপদ অনেক। কারণ স্রোতটাই রবিঠাকুরের পক্ষে। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়াতে শিরদাঁড়ায় জোর থাকতে হয়, সেটি হাতে গোনা ক’জনেরই আছে। রবি ঠাকুরের আসল চেহারা ফাঁস করে দেওয়ার পর আমাকেও হয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
©️