18/06/2024
আমি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।ঢাকা শহর বলে কথা।হাতে একটু সময় নিয়ে বের না হলে আর সময় মতো অফিসে পৌছানো যায় না।জ্যামে একবার আটকে গেলে আর হয়েছে।আর এদিকে তামান্না সেই ভোরবেলা থেকেই ছোটাছুটি করছে।ছোট ছেলেটা সকাল থেকেই কান্না করতে শুরু করেছে।এ যদি একবার কান্না করতে শুরু করে ওর মাই ওকে থামাতে পারে না।সেখানে আমি কোন ছাড়।তাও ওর মায়ের নাজেহাল অবস্থা দেখে একটু ব্যার্থ চেষ্টা শুরু করলাম।আদিলকে আমি কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছি।আমি একটু পরেই হাপিয়ে গেলাম।মেয়েরা যে এসব কি করে সামলায় আমার মাথায় ধরে না।এই খাবার খাচ্ছে না।এই খাবার খাওয়ার জন্য কতরকম অঙ্গভঙ্গি করে,কত রকম কথা বলে...,"এই যে ভাউ,এই যে পাগল আসতেছে,নেও নেও তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও...ইত্যাদি ইত্যাদি। "তামান্না পারেও বটে।
বড় ছেলেটা সে তো আরেক নবাবজাদা আর দুষ্ট। সে এখনো ঘুমাচ্ছে। ওর যে স্কুল আছে সে কথা উনার মাথায় নাই।ওর মা বারবার হুংকার ছাড়তেছে।
আব্দুল্লাহ...।ওঠ বাবা তাড়াতাড়ি ওঠ।কিন্তু ওঠার কথা বলে আবার ঘুমাইতেছে।ছেলেটা ওর মাকে একটু কম ভয় করলেও আমাকে অবশ্য বেশ ভয় করে।আমি যখনই ডাকলাম...
আব্দুল্লাহ...।
'জীইই বাবা, আমি উঠেছি তো।'এমনভাবে বললো যেন সে অনেক আগেই উঠেছে।
তাহলে তুমি এখনো বিছানায় কেন?আমার ধমক খেয়ে সে শেষপর্যন্ত উঠে ফ্রেস হওয়ার জন্য বাথরুমে গেল।
আর এদিকে বেচারি আব্দুল্লাহর মা ছোটাছুটি করেই চলছে।আমার জন্য সকালের নাস্তা, আব্দুল্লাহর জন্য স্কুলের টিফিন,ছোট ছেলেটার খাবার।তার সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটে এই সকালের সময়টাতেই।
কাজের মহিলাটাও ঠিকঠাক আসে না।আম্মা বাড়িতে থাকলেও কিছুটা স্বস্তি মিলে।কিন্তু আম্মারও বয়স হয়ে গেছে।আর তার সারা জীবনটাই কেটেছে গ্রামীণ খোলামেলা পরিবেশে।তিনিএই ঢাকা শহুরে জীবনে অভস্ত না।সব সময় এইচার দেয়ালের মাঝে থাকতে পারেন না।বেশিদিন এভাবে সারাদিন ঘরে থাকলে আবার পায়েতে পানি নামে।এজন্যই বিশেষ করে এবার বড়আপা এসে আম্মাকে ওর বাড়িতে নিয়ে গেল।আমিও আর মানা করলাম না। যাক গ্রামীণ এলাকায় কয়েকটা দিন ঘুরে আসুক।
যাইহোক শেষপর্যন্ত কোনোরকমমে নাস্তা সেরে আব্দুল্লাহকে নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হলাম।
আব্দুল্লাহর মা আব্দুল্লাহর ব্যাগে ওর টিফিন টা ঢুকিয়ে দিতে দিতে বললো,
কোনো রকম দুষ্টুমি করবে না।টিফিন পুরোটা শেষ করবে।আর স্কুল ছুটির পর সুন্দর মতো থাকবে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
আব্দুল্লাহ মাথা নাড়িয়ে ওর মায়ের কথায় সায় দিল।
দুই বাপ বেটা এসে রাস্তার পাশে দাড়ালাম।কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর বাস পাওয়া গেল।কিন্তু দু:খের ব্যাপার বাসে সিট নাই।কিছু সময় দাড়িয়ে থাকার পর সিট পাওয়া গেল।দুই বাপ-বেটা গিয়ে সিটে বসলাম।সিটে বসে চিন্তা করছি, তামান্নার কথা। মেয়েটা হুট করেই চাকরি টা ছেড়ে দিল।সে খুব ভালো ছাত্রী ছিল।সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলজের মতো মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছে।বছর দুয়েক হলো চাকরিতে জয়েন করেছে।স্কয়ার হাসপাতালের মতো জায়গায় চাকরি করছে।সামনে তার উজ্জল ভবিষ্যৎ, উজ্জল ক্যারিয়ার। এতোকিছুর পরেও সে চাকরি ছেড়েটা দিলো।কত বোঝানোর চেষ্টা করলাম,দেখো তোমার সামনে তোমার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার,তার উপর দ্রব্যমূল্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে শুধু আমার এই সামান্য বেতনের টাকা সংসার চলবে না।আব্দুল্লাহকেও খুব ভালো কোনো স্কুলে পড়াতেও পারবো না ইত্যাদি। তারপরেও তার কথা সে চাকরি করবে না।তার উত্তর একটাই মেয়েদের নাকি মাতৃত্বই সবচেয়ে সেরা পেশা।সে তার সন্তানদেরকে তার পুরোটা সময় দিতে চায়।এখানেই আমি লাজওয়াব। তাকে আমি আর কিছুই বোঝাতে যাই নি।
চলবে ইনশাআল্লাহ....।