01/09/2023
সেল্ফ বিজনেস এটা সম্পূর্ণ হারাম।
বিস্তারিত :-
সেল্ফ বিজনেস ভয়ংকর এক হারাম ফাদ !!!
এখানে যারা কাজ করে তাদের বেশির ভাগই হচ্ছে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র আর কিছু মুফতি ট্যাগ লাগানো লোকও আছে যার ফলে নতুন যখন কেউ যুক্ত হতে যায় তারা জিজ্ঞেসা করে এইটা কি হালাল? তারা বলে হ্যাঁ হালাল। হালাল না হলে কি এতো হুজুর মানুষেরা এই কাজ করতো? ব্যাস এতেই হয়ে গেলো আর কোন খোজ খবর না নিয়েই অনেকে সেল্ফে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।
১ম পয়েন্ট:
সেল্ফ' নামক একটি অনলাইন বিজনেসের ব্যাপারে গত কিছু মাস যাবত অনেক ভাইয়েরা মেসেজ করছেন। আমি এটি দেখেও এ বিষয়ে কিছু বলার মনে করেনি। কিন্তু কয়েকদিন যাবত আমার টাইমলাইনের অনেক ভাই পোষ্ট করছে "ঘরে বসে বসে কি ইনকাম করতে চান? আজ আমার ইনকাম ২ হাজার টাকা। যুক্ত হতে চাইলে ইনবক্সে আসুন। সবচেয়ে কষ্ট লাগে মাদ্রাসার আলেম হাফেজ ভাইয়েরা দ্বীনের বুঝ আছে এমন ভাইয়েরাও এসবে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। (আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুক)
লেখাটি অনেক বড় হতে যাচ্ছে 'আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আমি কারো বিরুদ্ধে, বা কোন কোম্পানীর বিরুদ্ধে টার্গেট করে লেখছিনা। সেল্ফে আমার দ্বীনি ভাই যারা অজানায় নাবুঝে হারামে লিপ্ত হয়েছেন তাদেরকে হালাল হারামটা জানিয়ে দিচ্ছি। কেউ যদি আমার এ লেখার পড়ার পরেও জেনে বুঝে স্বজ্ঞানে হারামে লিপ্ত থাকে তাহলে এটির জবাব সে নিজে আল্লাহর কাছে দিবে। হারাম জানার পরেও যদি হারামে লিপ্ত থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু জানিয়ে দেওয়া।
২য় পয়েন্ট:
১/ সূরত- সেল্ফ তথা এমএলএম এই কোম্পানীটির প্রথম যে শর্তটি 'সেটি হচ্ছে ৫০ টাকা দিয়ে সেখানে কেউ ডুকলো। পরবর্তিতে কাজ করতে চাইলে ২০০০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ শুরু করবে। একজন লোক যতজনকে তাদের কোম্পানীতে ঢুকাতে তার বিনিময়ে সে ৩৫০ টাকা করে কমিশন পাবে। এটাই মূল ব্যাবসার কাজ। তাছাড়া তাদের রেসেলিং কিছু প্রডাক্ট রয়েছে যেগুলি ক্রয় বিক্রয় করতে পারলে সেখান থেকেও কমিশন পাবে উক্ত ব্যাক্তি।
এবার আসুন...!
শরিয়তে তাদের এই ব্যাবসার সূরত কোন ভাবে জায়েজ কিনা আমরা জানি। নাকি এ সূরত হারাম।
প্রথমত-শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি শরী‘আতের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো এতে ‘শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম’ রয়েছে যা ইসলামি আইন সমর্থন করে না।
৩য় পয়েন্ট:
বিনিময়বিহীন শ্রমের বিষয়টি ফুটে উঠে তাদের প্রচলিত সে নীতিতে যাতে রয়েছে, একজন ডিস্ট্রিবিউটর (পরিবেশক) এর ডান ও বাম উভয় দিকের নেট না চললে সে কমিশন পাবে না। অর্থাৎ কেউ যদি নির্ধারিত পয়েন্টের একজন ক্রেতা জোগাড় করে কিন্তু আরেকজন জোগাড় করতে অক্ষম হয়, তবে লোকটি কমিশন থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে। এমনিভাবে কেউ যদি দু’জন ক্রেতাও কোম্পানিকে এনে দেয়, কিন্তু তারা কোম্পানির নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে কম পয়েন্টের মালামাল ক্রয় করে তবে এর জন্যও ঐ ব্যক্তি কমিশন পায় না। ফলে এটি বিনিময়বিহীন শ্রমে পরিণত হয় যা ইসলামি আইনে নিষিদ্ধ। হাদীসে কুদসীতে রয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: ‘‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করবো। (এক) যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। (দুই) যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে এবং (তিন) যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে নিযুক্ত করে তার কাছ থেকে কাজ আদায় করার পর মজুরী পরিশোধ করে না’’ [সহীহ বুখারী : ২২২৭]
৪র্থ পয়েন্ট:
ইসলামি শরী‘আতে 'একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করতে না পারলে পারিশ্রমিক পাবে না’ এ ধরনের শর্ত দিয়ে কোনো চুক্তি করা বৈধ নয়। আল্লামা ইবন রুশদ তার ‘আল-মুকাদ্দামাত’ গ্রন্থে বলেছেন: ‘‘কাপড়ের নির্দিষ্ট সংখ্যার ওপর এ চুক্তি করে লোক নিয়োগ দেয়া যে, ‘কাপড়ের এত সংখ্যক বিক্রয় করতে না পারলে সে কোনো পারিশ্রমিক পাবে না’ তাহলে চুক্তিটি বৈধ হবে না। কারণ এরূপ ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা কর্মচারীর অল্প সংখ্যক বিক্রয় দ্বারা যে উপকৃত হচ্ছে তা তার জন্য বৈধ হবে না।’’
আর শ্রমবিহীন বিনিময়টি সুন্দরভাবে ফুটে উঠে তাদের ভিত্তিগত দিকে যা ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, তাদের নীতিমালা রয়েছে, কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত পরিমাণ পণ্য খরিদান্তে ডিস্ট্রিবিউটর (পরিবেশেক) হওয়ার পর যদি সে দু’জন ক্রেতা নিয়ে আসে এবং তারা প্রত্যেকে আরও দু’জনকে এবং সে চার জন আরও আটজনকে কোম্পানির সাথে যুক্ত করে, তবে প্রথম ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় লেভেলের দু’ব্যক্তি নিম্ন লেভেলের আট ব্যক্তি ক্রেতা-পরিবেশকের সুবাদেও কোম্পানি থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। অথচ এ আটজনের কাউকেই প্রথম ব্যক্তি ও দ্বিতীয় লেভেলের দু’ব্যক্তি কোম্পনির সাথে যুক্ত করে নি; বরং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর নীতি অনুযায়ী এরা কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়েছে তাদের সরাসরি ওপরের ব্যক্তির রেফারেন্সে এবং এর জন্য ঐ ব্যক্তি নির্ধারিত হারে কমিশনও পাবে। এটি সুস্পষ্টই শ্রমবিহীন বিনিময় যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
৫ম পয়েন্ট:
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে, তাদের এ কারবারে বিনিময়বিহীন শ্রম ও শ্রমবিহীন বিনিময় দু’টিই পুরোপুরিভাবে বিদ্যমান রয়েছে যা শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। এমএলএম কারবারগুলোতে ডাউনলেভেল থেকে আপ লেভেলে যে কমিশন আসে তা বিনিময়বিহীন হাসিল হয়। কারণ ১ম স্তরের সরাসরি জোগাড় করা ক্রেতারা ছাড়া ২য় স্তরের পরবর্তী স্তরগুলোতে যে সকল ব্যক্তি যুক্ত হয় তারা কোম্পানিতে যোগ হয়েছে অন্যান্য লোকজন কর্তৃক এবং তাদের স্বাক্ষরে।
সুতরাং যে কমিশন বা পারিশ্রমিক নিম্নস্তর থেকে আসছে তা বিনিময়হীন হওয়ার কারণে ‘আকলু মালিল গায়র বিল (বাতিল)’ তথা (অন্যের সম্পদ বাতিল পন্থায় আহরণ) এর অন্তর্ভুক্ত। সে হিসাবে এটি হারাম।
উপরন্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেলো এরকম সূরতে বাংলাদেশে অগনিত প্লাটফর্ম রয়েছে তার সবগুলিই হারামের সূরতে নাজায়েজ।
বিস্তারিত এ লেখা পড়ার পরেও কোন ভাই যদি এটিতে যুক্ত থাকেন তাহলে সেটি হিসাব আপনি নিজেই বিবেচিত হবেন। আমাদের জিম্মাদারি ছিল আপনাকে হালাল হারাম জানিয়ে দেওয়া। এখন আপনি মানবে কি মানবেননা এটি একমাত্র আপনার ইচ্ছে।