18/05/2022
এক স্বাধীন নারীর গল্প!-😳
আমার বাবা গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি-
আমরা তিন ভাই-বোনসহ মোট পাঁচজনের সংসারের খরচ চালাতে বাবাকে ডাঙায় তোলা কাতাল মাছের মতো খাবি খেতে।
অভাব কখনও আমাদের পিছু ছাড়েনি।-🥺
আশপাশের স্কুলের সব বন্ধু-বান্ধবীদেরকে দেখতাম তারা পরিবারের সাথে এদিক-সেদিক ঘুরতে যায়, নতুন নতুন জামা-কাপড় পরে, ভালো ভালো খাবার খায়...এসব দেখে আমার খুব কষ্ট লাগতো।
তখন থেকেই আমি মনে মনে সংকল্প করি যে আমাকে অনেক বড়লোক হতে হবে এবং তা খুব দ্রুত। দেখতে দেখতে আমি এসএসসি পাশ করে ফেললাম। আমাকে ভালো পড়াশোনা করানোর জন্যে আমার বাবা বাড়ীর পেছনের পুকুরটি বন্ধক দিয়ে টাকা জোগাড় করে আমাকে ঢাকার গোল্ডেন ক্রস কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলেন; এটি ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী ও অন্যতম ব্যয়বহুল কলেজ।-🙂🙃
চাঁদপুর মতলবের এক অজোপাড়া থেকে হুট করে ঢাকায় এসে দামী প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে মিশতে শুরু করার পর আমি নতুন করে অনেক কিছুই শিখতে ও জানতে শুরু করলাম পড়ার বাইরেও আসলে এক নতুন পৃথিবী বলতে কিছু আছে। -😎
ঢাকায় এসে আমি শিখেছি কিভাবে বড়লোক ছেলেদের সাথে একটু গা ঘেঁষাঘেঁষি করে জীবনের অর্থের সংকট দূর করার সহজ রাস্তা।
একেকদিন একেক ছেলের সাথে ঘুরে ঘুরে আমার জীবনে সাকরাইন, ডিজে পার্টি, পুলসাইড পার্টি, ব্যাচেলর পার্টি, সেন্টমার্টিন ট্যুর, সাজেক ট্যুর, হ্যাংআউট, নাইটআউট, লং ড্রাইভ, বারবিকিউ নাইট, সাকুরা বার, রিজেন্সী, উত্তরা ক্লাব, চিল করা, হাই হওয়া- এজাতীয় নিত্যনতুন শব্দের আমদানী ঘটতে লাগলো।-😎
গাড়ীর পেছনের সীটে বা নাইটক্লাবের বেডরুমে ওদেরকে আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা আনন্দ দেয়ার বিনিময়ে যদি রোজ রোজ ফাইভ স্টার হোটেলে লাঞ্চ-ডিনার করা যায়, তিন দিনের সেন্টমার্টিন ট্যুরে যাবার বিনিময়ে যদি লেটেস্ট মডেলের ফোন উপহার পাওয়া যায়, নিত্যনতুন কাপড় কিনতে পারা যায়- তাহলে মন্দ কি? -😏
এভাবেই একদিন আমাদের ক্লাসের অমিতের সাথে একটি নাইটক্লাবে গিয়ে আমার পরিচয় হয় এক স্বনামধন্য গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নায়েম গোফরান তাকবীর সাহেবের সাথে; যিনি আমার দ্বিতীয় বাবা।-🙂
প্রথম দেখাতেই তাকবীর সাহেবের সৌম্যকান্তি চেহারায় আমার মন আটকে গেলো, উনার চেহারায় কেমন যেন এক অদ্ভূত প্রশান্তি আছে...সেদিনের পর থেকে তাকবীর সাহেবের সাথে আমার বাবা-মেয়ের সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হতে শুরু করলো, আমি উনাকে 'ড্যাডি' বলে ডাকতে শুরু করি। -🤭
উনার নাকি আমার মুখে এই ডাক খুব আদুরে লাগে! ড্যাডি আমাকে পল্লবীর ঘিঞ্জি ব্যাচেলর বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে গুলশানের এক প্রাসাদোপম ডু-প্লেক্স বাসায় থাকার বন্দোবস্ত করে দেন।এটি ড্যাডি'র অনেকগুলো বাসার মধ্যে একটি। ড্যাডি কখনও আমাকে উনি নিজে যে বাসায় থাকেন, সেখানে নিয়ে যান না। -😁
বরঞ্চ উনিই সপ্তাহে তিন-চারবার এই বাসায় আসেন, আমার সাথে গল্পগুজব করেন, খেলাধূলা করে এরপর চলে যান। বাকিটুকু সময় একান্তই আমার। আমি সে বিশাল বাসায় মনের আনন্দে ছুটোছুটি করি, মাঝেমাঝে কলেজের বন্ধুদেরকে নিয়ে পার্টির আয়োজন করি, কখনও বা মন চাইলে ড্যাডি'র ব্যবহার করতে দেয়া মার্সিডিজে করে ঘুরে আসি, শপিং করি, রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাই...😍🥰
আমার জীবনে অভাব বলতে আর কিছুই রইলো না। আমি একবার বাবাকে কিছু টাকা পাঠাতে চেয়েছিলাম, উনি শুনে খুব অবাক হলেন। আমি এতো টাকা কোথা থেকে পেয়েছি, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগলেন। -😡
আমি তাকে ঝাড়ি দিয়ে বললাম "টাকার গায়ে ঠিকানা লেখা থাকেনা যে কোথা থেকে আসছে। মেয়ের কামাই, খেতে চাইলে খাও, নাইলে বাদ দাও।"বাবা আমার টাকা নিলেন না। নিজের কথিত আত্মসম্মান নিয়ে ফকিরী হালতে পড়ে রইলেন বাড়ীতে।-😡
কলেজে এখন আমার স্ট্যাটাস অন্য সব ছাত্র-ছাত্রীর চেয়ে উঁচুতে পৌঁছে গিয়েছে। সবাই আমাকে অন্য চোখে দেখে। মেয়েরা অবাক হয়ে আমার হাতের পান্না খচিত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে, কেওবা আবার আমার লুই ভুইতন ব্যাগ হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখে, কলেজ ছুটির সময় আমাকে কালো মার্সিডিজে করে চলে যেতে দেখে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলে...কে জানে।এগুলো সবই ড্যাডি'র অবদান। আমার আসল বাবা আমাকে যা দিতে পারেন নি, সেগুলো সবই আমাকে দিয়েছেন ড্যাডি। -🤗
তবে আজকাল ড্যাডি'র আচরণে কেমন যেন একটু পরিবর্তন এসেছে। আমি গতবার উনার কাছ থেকে হাতখরচের জন্যে পাঁচ লাখ টাকা চাওয়ায় উনি আমাকে রেগেমেগে খানকি, মাগী এজাতীয় অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করেন। আমি সব চুপ করে শুনে যাই, দুধ দেয়া গরুর লাথি খাওয়াও ভালো। -😌
এরপর একদিন ড্যাডি উনার তিনজন বন্ধু নিয়ে বাসায় আসলেন। উনারা চারজন মিলে সারা রাত আমাকে উল্টেপাল্টে নানারকম শারীরিক কসরত করালেন, সকাল হতে না হতে ব্যথায় আমার জ্বর চলে আসলো। যাবার সময় ড্যাডি'র বন্ধুদের একজন আমাকে উনার কার্ড দিয়ে গেলেন, কোন কিছু দরকার হলে যেন উনাকে জানাই।-🥲
কার্ডটি হাতে নিয়ে আমি একটু মুচকি হেসেছিলাম, আমার সে হাসি চোখে পড়ে যায় ড্যাডি'র। উনার বন্ধুরা চলে যাবার পর ড্যাডি আমার জ্বরের শরীরে বেল্ট খুলে বেদম পিটুনী দিলেন, বলতে লাগলেন "চুতমারানি মাগী, ড্যাডিরে আর ভাল্লাগেনা, নতুন নাগর জুটানোর ধান্ধা?"-😒
ড্যাডি'র আচরণে এসব পরিবর্তন আমার সুবিধার লাগছেনা। এধরণের রাঘব-বোয়ালদের মাথায় একটু ছিট থাকে বলে শুনেছি, রাগের মাথায় আমাকে খতমও করে দিতে পারে যেকোন সময়...তাই আপাতত একটু ভয় ভয় করছে সারাক্ষণ, মনের ভেতর কু ডাকছে।-😔
তবে যতো খারাপই হোক, এই ড্যাডি'র কারণেই আমি জীবনে যতো রকমের সুখ আছে, সব ভোগ করেছি, স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করেছি। আমি গ্রামে থাকতে কখনও ভাবতে পারিনি যে আমার নিজের আলাদা একটি রুম থাকবে, সেই আমাকে ড্যাডি গুলশানের ছয় হাজার স্কোয়ার ফিটের ট্রিপ্লেক্স বাসায় থাকতে দিয়েছেন। -😊
আমি গ্রামে থাকতে কখনও রিকশায় করে স্কুলে যাবার সাহস করতাম না, সেই আমাকে ড্যাডি দেড় কোটি টাকা দামের মার্সিডিজ দিয়েছেন ব্যবহারের জন্যে।
যে আমি কখনও বছরে এক ঈদ বাদে অন্যসময় নতুন কাপড় চোখে দেখতাম না, সেই আমার আলমারীতে এখন কমপক্ষে পনের লক্ষ টাকার কাপড় ও জুতো সাজানো...আমার আপন বাবা আমাকে গরীব করে জন্ম দিয়েছে, আমার দ্বিতীয় বাবা যদি আমাকে কোন কারণে মেরেও ফেলে, তাহলেও আমি ধনী হয়েই মারা যাবো।-😏
তাই মেয়েরা, তোমরা যারা গ্রাম থেকে নতুন নতুন ঢাকায় এসেছো- খুব সতর্কতার সাথে মানুষের সাথে মিশবে। গরীব-ফকিন্নী মার্কা ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশে সময় নষ্ট করবেনা... প্রেম-পিরিতি করেও নিজেকে আটকে ফেলার দরকার নেই, মনে রাখবে যে এক পুরুষে আসক্ত নারী সবসময় ঠকে যায়। -😒
ঠিক পথে আগাতে থাকলে একদিন তোমাদের কপালেও হয়তো আমার ড্যাডি'র মতো একজন ড্যাডি জুটে যাবে, তখন বুঝবে সুখ-শান্তি কাকে বলে!-🥲
©️লেখা সংগৃহিত - তাজরিন