06/07/2023
হযরত খাওলা বিনতে সালাবা রাদি.-কে তাঁর স্বামী তালাক দিলেন। জিহার তালাক। জাহেলি যুগের প্রচলিত তালাক। নিজের স্ত্রীকে ‘তুমি আমার
মায়ের মতো' এ জাতীয় কথার দ্বারা তৎকালে তালাক দেয়ার প্রচলন ছিল। একবার এ ধরনের তালাক দিলে তাকে আর ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা ছিল না। স্বামীর মুখে একথা শুনতেই হযরত খাওলা রাদি. ছুটে এলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে। আরয করলেন,
‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্বামী আমাকে জিহার তালাক দিয়েছে। আপনি একটা ব্যবস্থা করুন।'
এটা ছিল জাহেলি যুগের তালাক। শরিয়তে তখনও এ সম্পর্কিত কোনো বিধি-বিধান অবতীর্ণ হয়নি- তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৎকালীন রেওয়াজ মাফিক বলে দিলেন, ‘তালাক হয়ে গেছে।
হযরত খাওলা রাদি. আরয করলেন, ‘তাহলে আমি এখন কোথায় যাবো?'
সন্তান প্রসব করতে গিয়ে আমার পেট দীর্ণ হয়ে গেছে ।আমার বয়সও এখন অনেক মা-বাবা জীবিত নেই । যৌবন হারিয়ে গেছে। আমার ধন-সম্পদও ফুরিয়ে গেছে। এখন আমি কোথায় যাবো?'
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, তালাক হয়ে গেছে।
হযরত খাওলা রাদি, আরয করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এ বিধান রহিত করে দিন।'
তাঁর অনুরোধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কথা বলতে পারলেন না। মাথা নত করে বসে রইলেন।
এবার হযরত খাওলা রাদি. বললেন, 'হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি আমার কথা না রাখেন তাহলে আমি নিজেই আমার আল্লাহকে আমার কথা বলব।'
এরপর তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। আল্লাহর দরবারে হাত তুলে অশ্রুসজল চোখে আবেদন করলেন—
‘হে আল্লাহ! তুমি জানো আমার ছোটো ছোটো কয়েকটি সন্তান রয়েছে। যদি আমি তাদেরকে আমার কাছে রাখি, তাহলে তারা ক্ষুধায় কষ্ট পাবে।
আর যদি আমার স্বামীর কাছে ছেড়ে দিই, তাহলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। হে আল্লাহ! ‘তুমি আমার পক্ষে ফয়সালা দাও।'
হযরত খাওলা রাদি. একথা বলেননি, তোমার যা খুশি ফয়সালা করো। বলেছেন, ‘তুমি আমার পক্ষে ফয়সালা দাও ।'
আল্লাহ তাআলা হযরত খাওলা রাদি.-এর এ দোয়ার প্রেক্ষিতে সাধারণ ফয়সালা পাঠাননি বরং কুরআন বিধান সম্বলিত আয়াত পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে যতদিন পর্যন্ত এ উম্মত এবং কুরআন থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তারা হযরত খাওলা রাদি. এর কাহিনী শুনতে থাকবে। তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের মহিমা প্রকাশিত হতে থাকবে ।
হযরত খাওলা রাদি. আবেদনরত। এখনও তিনি হাত নামাননি। তাঁর কান্না আরশের দরজা খুলে দিয়েছে। হযরত জিবরাইল আ. এসে জানিয়েছেন, ‘একজন নারীর দরদভরা কান্না আল্লাহর আরশকে পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে অহি অবতরণের নিদর্শন ছাপিয়ে উঠেছে। হযরত আয়েশা রাদি. হযরত খাওলাকে বললেন, ‘হাত নামাও, অহি অবতীর্ণ হচ্ছে।'
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শরীর ঘামে সিক্ত হয়ে উঠেছে। তিনি শরীরের ঘাম মুছলেন। বললেন, ‘খাওলা! তোমাকে মুবারকবাদ!
আল্লাহ তাআলা তোমার পক্ষে ফয়সালা দিয়েছেন'—
قَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّتِى تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا ،
وَتَشْكِيْ إِلَى اللهِ ، وَالله يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا (١)
‘আল্লাহ অবশ্যই সে নারীর কথা শুনেছেন, যে তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সঙ্গে বাদানুবাদ করেছে।
এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদও করেছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন।’
[সূরা মুজাদালাহ, আয়াত : ০১ ]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালাক মেনে নিচ্ছিলেন। হযরত খাওলা রাদি. অস্বীকার করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা এ কাহিনী দেখছিলেন, শুনছিলেন। এরপর চূড়ান্ত ঘোষণা করে দিলেন—
الَّذِينَ يُظْهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَآبِهِمْ مَّا هُنَّ أُمَّهٰتِهِمْ إِنْ أُمَّهٰتُهُمْ إِلَّا الَّتى وَلَانَهُمْ وَ إِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُورًا وَاِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ (٣)
‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে তারা জেনে রাখুক, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়, যারা তাদের জন্মদান করে কেবল তারাই তাদের মাতা। তারা কিন্তু অসঙ্গত ও অসত্য কথাই বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপমোচনকারী ও ক্ষমাশীল।’
[সূরা মুজাদালাহ, আয়াত :০৩ ]
বই: আল্লাহওয়ালাদের হৃদয়ছোঁয়া গল্প, পৃষ্ঠা: ৬১-৬৩