29/06/2022
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
*_জিলহজ্ব মাস সমাগত, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের আমল:-_*
-----------------
জিলহজ্ব মাস সমাগত। এই বৃহস্পতিবার ২৯ শে জিলক্বদ চাঁদ উঠলে শুক্রবার হবে পহেলা জিলহজ্ব।
এ মাসেই পবিত্র হজ্ব এবং কুরবানীর ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের প্রতিটি দিন এবং রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ। প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং প্রতিরাতের এবাদত লাইলাতুল কদরের রাতের ইবাদতের সমতুল্য। (তিরমিযি,হা/৭৫৮)
আল্লাহ তা'আলা জিলহজ্ব মাসে মুমিন বান্দা-বান্দিদেরকে কিছু আমলের কর্মসূচি দিয়েছেন।
আসুন, উক্ত আমলগুলো সহিহভাবে জেনে যথাযথ পালন করার চেষ্টা করি।
●জিলহজ্ব মাসের আমল●
১. জিলহজ্বের চাঁদ উঠার আগেই মাথার চুল, হাত-পায়ের নখ, গোঁফ এবং নাভীর অবাঞ্ছিত লোম
কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাসিল করা।
এই আমলটি যারা কুরবানী দিবেন আর যারা দিবেন না উভয় শ্রেণীর নারী-পুরুষের জন্য মুস্তাহাব।
ফজিলত:
অতপর, ঈদের দিন কুরবানীর পর হাত-পায়ের নখ, গোঁফ, মাথার চুল (যদি লম্বা হয়ে থাকে) এবং নাভীর অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করে নিলে বোনাস হিসেবে কুরবানীর সওয়াব লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।
[দলীল: মুসলিম,হা/১৯৭৭,তিরমিযি,হা/১৫২৩,
আবু দাউদ, হা/২৭৮৯,নাসাঈ,হা/ -৪৩৬৫, ত্বহাবী শরীফ,২য় খণ্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা,ইলাউস সুনান,১২তম খণ্ড,২৬৮ পৃষ্ঠা]
২.প্রথম দশকে জিকিরের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া।
সময়ের কদর করে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা। চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম বেশি বেশি পাঠ করা।
[দলীল:মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৪৪৬]
৩. প্রথম দশকে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা।
জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত দিনে নফল রোযা রাখা আর১০ তারিখ
ঈদের রাতসহ প্রতি রাতে বেশী বেশী ইবাদত করা। অর্থাৎ নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারীর মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করা।
ফজিলত:
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশী প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায়”। [ দলীল: তিরমিযি,হা/৭৫৮]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা'আলার কাছে এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য দিনের আমল বেশি প্রিয় নয়”।
[ দলীল: বুখারী,হা/৯৬৯,আবু দাউদ,হা/২৪৩৮]
৪. বিশেষত ৯ই জিলহজ্ব (আরাফার দিন,স্বদেশের হিসাব অনুযায়ী)রোজা রাখা।
ফজিলত:
হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,“আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা তার [রোযাদারের] বিগত এক বৎসরের ও সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন”।
[দলীল: মুসলিম,হা/১১৬৫,তিরমিযি,হা/৭৪৯,আবু দাউদ,হা/২৪২৫, ইবনে মাজাহ,হা/১৭৩০]
৫. তাকবীরে তাশরীক বলা।
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। (মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজ) পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে।
তাকবীর হল-
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”।
[ সূত্র: সূরা বাকারা,আয়াত-২০৩,মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা-১৯৫, হা/৫৬৭৭,ইলাউস সুনান,৮ম খন্ড,১৪৮ পৃষ্ঠা,ফাতওয়া শামী,৩য় খন্ড, ৬১পৃষ্ঠা]
৬.স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা।
১০, ১১ অথবা ১২ ই জিলহজ্বের যে কোন দিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে,তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য।
[ সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ,হা/৩১২৩,মুসনাদে আহমাদ,হা/৮২৭৩,ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭, ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২,]
ফজিলত:
যায়েদ বিন আরকাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ বললেন,“ হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত।
তাঁরা পুনরায় বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তাঁরা আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,ভেড়ার প্রতিটি লোমের বিনিময়েও একটি সওয়াব রয়েছে”। [সূত্র:সুনানে ইবনে মাজাহ,হা/৩১২৭,মুসনাদে আহমাদ,হা/১৯২৮৩]
কঠোর হুশিয়ারী
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে”।
[সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ,হা/৩১২৩]
_আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে উক্ত আমলগুলো সঠিক ভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন।_আমীন ইয়া রব।