25/04/2024
"রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়ে আমি। আমাদের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল, নেই সুচিকিৎসার সুযোগ। গ্রামের কমবেশি সকলের জীবিকাই নির্ভরশীল জুম চাষের ওপর। শিক্ষার সুযোগ বলতে আছে একটি প্রাইমারি স্কুল যেখানেও যেতে হয় নৌকায় করে। ক্লাস টু পর্যন্ত আমি সেখানেই পড়াশোনা করেছি।
পড়াশোনার প্রতি আমার তীব্র আগ্রহ দেখে পরবর্তীতে পিসিবাবা আমাকে জেলা শহর খাগড়াছড়িতে নিয়ে যান এবং সেখানকার একটি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করান। প্রাইমারি শেষে আমি সেখানেই একটি হাই স্কুলে ভর্তি হই। কিন্তু, ক্লাস টেন-এ থাকা অবস্থায় আমার পিসিবাবা মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে পিসিমার পক্ষে আমাকে তাঁর সাথে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তাই আমার আবারও ফিরে যেতে হয় রাঙামাটিতে। সেখানে আমি রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হই। কলেজ থেকে যাতায়াতের সুবিধার কারণে সেসময় আমি আমার জেঠিমার বাসায় থাকতাম। সত্যি বলতে মানুষের বাসায় থেকেই আমি বেড়ে উঠেছি। তবে তা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই, বরং আমি কৃতজ্ঞ এই মানুষগুলোর প্রতি, আমার লেখাপড়ার যাত্রায় এতো সহযোগিতা করার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আর্থিক সংকটের কারণে আমি কোনো কোচিং করতে পারিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনদের নির্দেশনা অনুযায়ীই আমি পড়তে থাকি এবং ভাগ্যক্রমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। আমাদের গ্রাম থেকে এখন পর্যন্ত আমিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি। এটি আমার জীবনের একটি অন্যরকম বড় প্রাপ্তি।
ঢাকায় এসে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। আমি কীভাবে বাংলা বলতে পারি, কখন থেকে বাংলা বলা শিখেছি, শিক্ষকরা কি চাকমা ছিল না কি বাঙালি, অনেকেই এ ধরনের অপ্রীতিকর প্রশ্ন করতেন। আদিবাসী হওয়ার কারণে আমাকে কেউ টিউশনও দিতে চাইতেন না। এদিকে একা আমার বাসা ভাড়া, সেমিস্টার ফি, পরীক্ষার ফি, ইত্যাদির খরচ চালাতে বাবাও হিমশিম খাচ্ছিলেন। অন্য কোনো উপায় না দেখে আমি বিভিন্ন বৃত্তির সন্ধান করতে থাকি এবং U- Go নিবেদিত জাগো উইমেন স্কলারশিপের সন্ধান পাই। এরপর আমি এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করি এবং ভাগ্যক্রমে পেয়েও যাই।
এই স্কলারশিপটি পাওয়াতে আমার খুব উপকার হয়েছে। এখন আমার সেমিস্টার ফি, পরীক্ষার ফি, কোর্সের বই আর বাজারের খরচ সব আমি এই টাকা দিয়েই বহন করছি। যার ফলে আমার বাবার উপর আর্থিক আর মানসিক চাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে। আমি এবং আমার পরিবারের সবাই জাগো এবং U-Go এর প্রতি মন থেকে কৃতজ্ঞ। আমি আশা রাখি, ভবিষ্যতে ভালো কিছু করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবো এবং তাঁদের কষ্টের প্রতিদান তাঁদের দিতে পারবো।"
- সুস্মিতা চাকমা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়