24/09/2022
ফেসবুকের এই পিচ্ছিল জগতে সাবধান বোনঃ
এক আপুর ঘটনা শেয়ার করি। আপুটিও পর্দার ব্যাপারে ছিলেন সচেতন। তার ফ্রেন্ড লিস্ট ছিলো গায়রে মাহরাম মুক্ত এবং চ্যাটের ক্ষেত্রেও ছিলো তাই।
মেসেজ রিকুয়েস্টে এক নবাগত তার সাথে যোগাযোগ করতে খুবই আগ্রহী।
মেসেজে বিভিন্নভাবে সে আপুটিকে এটা বুঝালো যে, আপুটির মতো দ্বীনদার মেয়ে নাকি বিরল, ঠিক এমন একজনকে সে জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়, তার পরিবার নাকি অনেক খুঁজেও এমন দ্বীনদার একজন মেয়ে পেলোনা!
এখন আপুটি যদি রাজি থাকেন তবে তার সাথে যেনো একটু কথা বলেন এবং তিনি আপুটিকে সিভি দিতে চান।
অন্যদিকে আপুটির জন্য তার ফ্যামিলি দ্বীনদার একজন ছেলে খুঁজছিলেন, যদিও সেরকম কাউকে তখনও পাওয়া যায়নি।
তাই আপুটির মনে হলো, ফ্যামিলি থেকে চেষ্টা করে তেমন দ্বীনদার কাউকে যেহেতু পাওয়া যাচ্ছেনা, তাহলে বরং ওই মেসেজদাতার প্রোফাইলে গিয়েই দেখা যাক কী অবস্থা।
যাইহোক প্রোফাইল ঘুরে দেখা গেলো, ছেলে উচ্চ শিক্ষিত এবং পুরো প্রোফাইল ঘেটে ছেলেকে মোটামুটি দ্বীনদারই মনে হলো।
যদিও শুধুমাত্র প্রোফাইল বা আরও অনেক কিছু ঘেটে বা যাচাই বাছাই করেও সত্যিকার দ্বীনদার চেনা যায়না; অনলাইনের এই জগতে তো নয়ই।
(উপরের কথাটা কয়েকবার রিপিট করে পড়ো বোন)।
যাইহোক ওই আপু এরপর ওই ছেলের মেসেজ রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলেন, চ্যাট করলেন, ফ্যামিলিকে জানালেন এবং ছেলে তার সিভিও দিলো একসময়।
মেয়ের ফ্যামিলির সম্মতিতে একসময় মেয়েকে দেখতে আসলো ছেলে।
মেয়ে দেখার পর ছেলে মেসেজ পাঠিয়ে "আলহামদুলিল্লাহ" বলে পছন্দ করেছেন জানালেন।
এরপর চলতো দিনরাত চ্যাট, ফোনে কথাবার্তা এবং ছেলের অনুরোধে মেয়ে নিজের ছবিও দিয়ে দিলো।
আর এসমস্তই ছিলো হারাম।
ইসলামী শরীয়ত যারা জানেন, তারা ভালোভাবেই জানেন, বিয়ের আগ পর্যন্ত এসমস্ত কথাবার্তা, চ্যাট, ছবি আদান প্রদান -সমস্তই শরীয়ত বহির্ভূত কাজ।
আপুটি মনের দিক থেকে অপরাধবোধে ভুগতেন ঠিকই, তারপরও ওই ছেলের মন রক্ষার্থে তার সাথে একরকম রিলেশনে জড়িয়ে গেলেন!
কিছুদিন পর দেখা গেলো সেই ছেলে আর আপুটির সাথে যোগাযোগ করতে চায়না, এবং আপুটি খুব বুঝতে পারলো তাকে ইগনোর করা হচ্ছে।
এদিকে আপুর ফ্যামিলি এবং রিলেটিভদের অনেকের কাছে ব্যাপারগুলো আর অজানা ছিলোনা, তাই আপুটি এই সম্পর্কটিকে বিয়ের রূপ দিতে মরিয়া হয়ে গেলেন।
অসংখ্য মেসেজ এবং কাকুতি মিনতির পর ছেলেটি জানালো, এখন আর তার কাছে মেয়েটির সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা, তাই সে আর যোগাযোগ করে না!
ততোদিনে বোনটির সমস্ত প্রার্থনা আর চাওয়া পাওয়ার জগতে ওই হতভাগা জায়গা করে নিয়েছে।
বোনটি প্রতিটি প্রার্থনায় ওই ছেলেকে চাইতো, জায়নামাজে অশ্রু বিসর্জন দেয়া অসংখ্য রাত কেটেছিলো তার।
পরিশেষে বোনটি তার ভুল বুঝতে পারে, সে বুঝতে পারে পরিপূর্ণ পর্দার হাকীকত, বুঝতে পারে পরিপূর্ণ পর্দার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা একজন নারীকে ঠিক কতোটা সুরক্ষিত একটি জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।
তারপর আল্লাহর মাগফেরাতের দরিয়ায় ডুবে যায় সে রব্বে কারীমের রহমতের দরজায় কড়া নেড়ে; পরিপূর্ণ তাওবাকে বরণ করে নিয়ে।
তার একটি কথা আমার মনকে খুব আলোড়িত করেছিলো।
তার প্রচন্ড অসহায়ত্বের সময় সে বলেছিলো, "পর্দানশীল এই আমি হতে পারতাম পবিত্র একজন পুরুষের আরাধ্য, আর আজকের এই আমি ভুল জায়গায় কদম দেয়ায় হয়ে গেলাম কোনো এক কাপুরুষের অবহেলার পাত্র!"
-আসলেই তাই।
পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করা একজন নারী সমস্ত দুনিয়া ও দুনিয়ার মালিকের দরবারে যে আসনে থাকে, হাজার যুগ সাধনা করেও পর্দাহীনা একজন নারীর পক্ষে সেই আসন লাভ সম্ভব নয়।
যাইহোক এই ঘটনাটি বলার বিশেষ কারন হলো, ওই আপুটি ঠিক যে জায়গায় ভুল করে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন, আমাদের অনেক বোনই ঠিক একই জায়গায় এসে ভুল করে ফেলেন।
আর তা হলো, পরিবার যখন তাদের জন্য দ্বীনদার পাত্রের ব্যবস্থা করতে পারেনা, তখন ইনবক্সের এইসব আবর্জনাযুক্ত মেসেজগুলোর মাঝে বোনগুলো সম্ভাবনা আর তা হলো, পরিবার যখন তাদের জন্য দ্বীনদার পাত্রের ব্যবস্থা করতে পারেনা, তখন ইনবক্সের এইসব আবর্জনাযুক্ত মেসেজগুলোর মাঝে বোনগুলো সম্ভাবনা খুঁজে পায়!
এইসব মেসেজে সম্ভাবনা খুঁজে পাবার মূলে রয়েছে শয়তানের অত্যন্ত শক্তিশালী কিছু কুমন্ত্রনা।
শয়তান যে কুমন্ত্রনাগুলো তখন অন্তরে ঢালা শুরু করে,
'‘পরিবার তো দ্বীনদার ছেলে খুঁজে পেলোনা, কে জানে হয়তো মেসেজদাতা এই ছেলেই প্রকৃত দ্বীনদার!”
‘'তুমি তো আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছো, কে জানে মেসেজদাতা এই ছেলেই হয়তো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তোমার জন্য!'’
'‘ছেলেটার প্রোফাইলটা একটু ঘুরেই দেখোনা, সমস্যা কী।
রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে সামান্য একটু কথা বললে কী এমন সমস্যা হয়ে যায়!''
-এই কুমন্ত্রনাগুলোকে আমরা আমাদের নিজস্ব চিন্তা হিসেবে গ্রহন করে ফেলি এবং দ্বীনদার পাত্র নির্বাচনের অজুহাতে হারাম একটা সম্পর্কের সূচনা করে ফেলি।
শয়তানের প্রচন্ড শক্তিশালী আরেকটি বিশেষ কুমন্ত্রনা হলো, "এভাবে ফেসবুকে পরিচয়ে বিয়ে হয়ে অন্য কেউ কী সুখী হয়নি?"
-বোন তুমি পর্দানশীল, এই কুমন্ত্রনায় তুমি পরাজিত হতে পারোনা।
তোমার লক্ষ্য শুধু সুখী হওয়া নয়, তোমার লক্ষ্য আল্লাহর দ্বীনকে নিজের জীবনের প্রতিটি স্টেপে গ্রহন করে, আল্লাহর রাজী খুঁশি মতো জীবন পরিচালনা করে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবী অর্জন করা।
আমি জানি উপরের এই প্রশ্নটি তোমার জীবনে বারবার আসে ঘুরেফিরে।
শুধু শয়তানের পক্ষ থেকেই নয়, বরং তোমার পর্দাহীনা চ্যাটিং, ডেটিং করা পরিচিত বোনদের থেকেও আসে।
সেক্ষেত্রে প্রশ্নটি আসে আরেকটু আপগ্রেড হয়ে,
"প্রেম করে, চ্যাটিং করে, ডেটিং করে ....ইত্যাদি ইত্যাদি করার পর বিয়ে করে কী অনেকে সুখী হয়নি?
মা বাবার পছন্দে বা শরীয়ত নির্দেশিত পথে বিয়ে করে কী কেউ দুঃখী হয়নি?"
এক্ষেত্রে আমি জাস্ট একটি উদাহরণই তোমাকে দিবো, এবং আমার বিশ্বাস এই উদাহরণ থেকেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
"মনে করো তুমি এবং তোমার ওই ডেটিং করা প্রশ্নকারী বোন একসাথে খেতে বসলে।
দুজনই ভাত নিয়েছো, তবে ভাতের সাথে তুমি নিয়েছো রান্না করা মাছ আর ওই বোন নিয়েছে রান্না করা সাপ।
সে খুব দ্রুতগতিতে ভাতের সাথে ওই হারাম (সাপ) কে লোকমায় ভরে তৃপ্তি মেরে খাচ্ছে আর তুমি ভাতের সাথে হালাল (মাছ) খাচ্ছো।
একপর্যায়ে তোমার গলায় কাঁটা বিধে গেলো আর ততোক্ষণে সে তার খাওয়া শেষ করে মস্ত বড় এক ঢেকুর তুললো।
তোমার গলায় কাঁটা বিধেছে দেখে তাচ্ছিল্য ভরে সে বললো, "দেখলে বান্ধবী, তুমি খেতে গিয়ে কতো কষ্ট পেলে আমাকে অনুসরণ না করে আর আমি কতো মজা করে খেলাম; কতো তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম।"
তুমি শান্তি অথচ দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিলে, "তুলনা করোনা সখী, তোমারটা ছিলো হারাম আর আমারটা হালাল; হালাল ও হারামে এভাবে তুলনা চলেনা।"
-হ্যাঁ, উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তরও তাই।
পবিত্র একটি জীবনের সাথে হারাম রিলেশন দিয়ে সূচনা করা জীবনগুলোর কোনোই তুলনা চলেনা।
এরপর কোনো গায়রে মাহরাম যখন আবর্জনাযুক্ত কোনো মেসেজ দিবে এবং শয়তান যখন কুমন্ত্রনাগুলো ঢালতে থাকবে, আশা করি উপরের উদাহরণটি তোমাকে ধোঁকা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে ইনশাল্লাহ।
ওই সমস্ত তথাকথিত দ্বীনদার (?) মেসেজদাতাদের উদ্দেশ্যে জাস্ট দুইটা কথা বলতে চাই,
‘'যদি মনের শয়তানি থেকে ইনবক্স করে থাকেন তবে আপনাকে শায়েস্তা করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’'
'‘আর যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে ইনবক্সে আমন্ত্রণ করে আবর্জনাগুলো প্রেরণ করে থাকেন তবে শুনুন প্রকৃত পর্দানশীল কোনো নারী এসব আবর্জনা গ্রহন করেন না।’'
কাজেই প্রকৃত দ্বীনদার পেতে চাইলে আল্লাহর কাছে অন্তর দিয়ে প্রার্থনা করুন, রিয়েল লাইফে অভিভাবকের সাহায্য নিন।
ফেসবুকের ফেতনাময় জগতে আহলিয়ার খোঁজে চ্যাটিং করতে চাওয়াটা অনেকটা দান সদকা করার নিয়তে অপরের ঘর চুরি করার মতোই হাস্যকর।
আর আমার দ্বীনি মহলের বোনগুলোকে বলছি, প্রকৃত দ্বীনদার একজন পুরুষ কখনোই গায়রে মাহরাম নারীকে ইনবক্স করবেনা এটা নিশ্চিত থাকো।
তাই মজবুত ইমানের দাবীদার বোনদের বলছি,এরকম মেসেজ পাওয়ার সাথে সাথেই ডিলিট অপশন কাজে লাগিয়ে ইনবক্স আবর্জনামুক্ত করে ফেলবে।
আর এসব মেসেজে যারা ভবিষ্যতের সম্ভাবনা খোঁজার চেষ্টা করছো তাদের আবার আবার এবং বারবার সাবধান করছি
বোন, হারামে আরাম নেই কোনো।তারপরও যদি তুমি নিজের মনকে কিছুতেই বোঝাতে না পারো বা মেসেজদাতার সাথে কন্টাক্ট করতেই চাও তবে বোন মেসেজদাতার আইডি লিংক তুমি তোমার অভিভাবককে দিয়ে, তাদেরকে বলো কন্টাক্ট করতে।
এতে আর যাইহোক গুনাহের দরজা বা হারামের দরজাটা অন্তত বন্ধ থাকবে।
বোন, তোমার ঈমানী জযবা আর তাকওয়ার সূর্যের উপর নির্ভর করছে আগামী প্রজন্মের কান্ডারী উমর বিন আব্দুল আজীজ হবে নাকি হাজ্জায বিন ইউসুফ হবে।
সামনের দিনগুলোতে জাতি প্রভাতের প্রথম আলোর ইশারা পাবে নাকি সম্ভাবনার আকাশটা মেঘে মেঘে ঢেকে যাবে, নির্ভর করছে তোমার আজকের চারিত্রিক পবিত্রতার উপর বোন।
তাই বোন হৃদয়ঝরা অশ্রু দিয়ে বলি তোমায়, তোমার চরিত্র যেনো নাহয় অমাবশ্যা রাতের ঘনঘটা, তোমার চরিত্র হোক দীপ্তিমান সূর্যের আলোকছটা।
ফেসবুকের এই পিচ্ছিল জগতে চ্যাটিং ডেটিংয়ের ফেতনা থেকে সযত্নে নিজেকে রক্ষা করে আল্লাহর রঙে রঙে রঙিন হও বোন।
জেনে রেখো আল্লাহর দরবারে তোমার অবস্থান হবে, সেতারার মজলিসের নেতৃত্ব দেয়া ওই চাঁদটির মতোই দ্যুতিময়!
:
লিখেছেনঃ- Umme Habiba
Send a message to learn more