17/04/2024
যে ধরনের সমাজে আমরা বাস করি, চারদিকে কত রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় দিনের পর দিন। দারিদ্র্য সহিংসতা নৃশংসতা প্রতারণা জালিয়াতি-এগুলোর মধ্যে আমরা বাস করি। ফলে মানুষ অনেক সময় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, আশা হারিয়ে বসে। ভাবে, বোধহয় আর কোনো উপায় নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে চিন্তিত হয়ে পড়ে-আমার সন্তানদের কোথায় রেখে যাচ্ছি।
মুক্তির একটা পথ হিসেবে তখন সে বিদেশে যাওয়ার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করে। দালালদের খপ্পরে পড়ে জমি বিক্রি করে, সহায়সম্বল নষ্ট করে। সে আরেক অধ্যায়। ভূমধ্যসাগর, আফ্রিকার জঙ্গল কিংবা ইউরোপের কোনো গহীন জায়গায় এখনই যদি খোঁজ করা হয়, সেখানে বাংলাদেশের তরুণদের পাওয়া যাবে। তারা নানানভাবে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত কোথাও একটা পৌঁছায়।
সন্তান যদি ওখানে গিয়ে স্থায়ী হতে পারে অভিভাবকরা নিশ্চিন্ত হন। সবাই নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না, অনেকে ফেরত আসে প্রতারিত হয়ে। কিংবা আরো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটে। অনেকের লাশ ফেরত আসে। কারো কারো লাশও ফেরত আসে না। সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটা দেশ লাশ ফেরতও দেয় না। ওখানে তারা কী করল তা জানা যায় না। মালয়েশিয়াতেও জেলের মধ্যে পড়ে আছে অনেক বাংলাদেশি। এভাবে এত কষ্ট ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে থেকে তরুণরা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায়। আজকে ঢাকা শহরে বিশাল বিশাল শপিং মল, হাউজিং আছে। কিন্তু যা
নেই তা হলো প্রয়োজনীয় পাবলিক হাসপাতাল। প্রাইভেট হাসপাতাল আছে। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনও দেখি, মোবাইলে শুধু একটা কল করবেন, এম্বুলেন্স আসবে, আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। আপনি সুস্থ হয়ে ফেরত আসবেন। বলা হয় না যে, এই কাজটা করার জন্যে অনেক অর্থ দিতে হবে। যার এই অর্থ নেই, তার চিকিৎসাও নেই। তার তখন ওঝার কাছে যেতে হবে, দোয়া নিতে হবে কিংবা কোনো ধরনের হেকিম কবিরাজ-যাদের অনেকেই নির্ভরযোগ্য নন তাদের ওপর নির্ভর করতে হবে।
অথচ, আজকে ঢাকা মহানগরে যা জনবল তাতে ঢাকা মেডিকেলের মতো
অন্তত ১০টা হাসপাতাল হওয়া উচিত ছিল। হাসপাতাল সম্প্রসারিত করতে
কত টাকা লাগে? কিন্তু বলা হয়, আমাদের যথেষ্ট টাকা নেই। অথচ প্রতি
মাসে প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থের পরিমাণ একশ কোটি ডলার। তার মানে আট হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে তারা যে টাকা পাঠায়, দেশের বাৎসরিক স্বাস্থ্য-বাজেট তার চেয়ে কম আজকে ঢাকা শহরে বিশাল বিশাল শপিং মল, হাউজিং আছে। কিন্তু যা নেই তা হলো প্রয়োজনীয় পাবলিক হাসপাতাল। প্রাইভেট হাসপাতাল আছে। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনও দেখি, মোবাইলে শুধু একটা কল করবেন, এম্বুলেন্স আসবে, আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। আপনি সুস্থ হয়ে ফেরত আসবেন। বলা হয় না যে, এই কাজটা করার জন্যে অনেক অর্থ দিতে হবে। যার এই অর্থ নেই, তার চিকিৎসাও নেই। তার তখন ওঝার কাছে যেতে হবে, দোয়া নিতে হবে কিংবা কোনো ধরনের হেকিম কবিরাজ-যাদের অনেকেই নির্ভরযোগ্য নন তাদের ওপর নির্ভর করতে হবে।
অথচ, আজকে ঢাকা মহানগরে যা জনবল তাতে ঢাকা মেডিকেলের মতো অন্তত ১০টা হাসপাতাল হওয়া উচিত ছিল। হাসপাতাল সম্প্রসারিত করতে কত টাকা লাগে? কিন্তু বলা হয়, আমাদের যথেষ্ট টাকা নেই। অথচ প্রতি মাসে প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থের পরিমাণ একশ কোটি ডলার। তার মানে আট হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে তারা যে টাকা পাঠায়, দেশের
বাৎসরিক স্বাস্থ্য-বাজেট তার চেয়ে কম।একজন বিশাল আয়োজন নিয়ে বেঁচে থাকল, আর চারপাশে ভয়ংকর পরিস্থিতি-একে আসলে বেঁচে থাকা বলে না।
অথচ কী ক্ষুদ্র চিন্তার মধ্যে আটকে থাকে কিছু মানুষ! কিছু ব্যাংক ব্যালেন্স, কয়েকটা গাড়ির মালিক হওয়ার জন্যে যে-কোনো কিছু করতে তারা প্রস্তুত। কী হবে এটা দিয়ে? সে যদি এটা থেকে বেরোতে পারত, মানুষ হিসেবে বাঁচার মধ্যে যে বিশালত্ব ও তৃপ্তি, তা সে অর্জন করতে পারত। এর
যে আনন্দ, তার তো তুলনা নেই। রক্তদান এমন মহৎ কাজেরই অংশ। মানুষ বিনা অর্থে কেন রক্ত দিচ্ছে? তার মধ্যে একটা তৃপ্তি ও আনন্দ আসছে যে, আমি আরেকজনের জন্যে রক্ত
দিচ্ছি। অন্যের জন্যে অনুভব করেন যিনি, 'মানুষ' তো আসলে তিনিই।
রক্তদান নিয়ে ইউরোপে বড় পরিসরে একটি গবেষণা হয়েছিল বছর কয়েক আগে। খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ পল স্যামুয়েলসন পরে এ গবেষণা নিয়ে লিখেছিলেন। যে অর্থনীতি এখন সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে তার মূল কথা হচ্ছে, অর্থ বা বিনিময়মূল্যই সমস্ত কিছু নির্ধারণ করে। তাই মানুষ টাকার জন্যেই সবকিছু করে। সুতরাং ইউটিলিটি ম্যাক্সিমাইজেশন নির্ভর করে
টাকার ওপরেই। অর্থনীতির এই তত্ত্ব আমি নিজে বিশ্বাস করি না। তো, রক্তদানের সাথে এই তত্ত্ব মিলিয়ে গবেষণা করা হলো। দেখা গেল, টাকার বিনিময়ে দেয়া রক্ত এবং স্বেচ্ছা দানকৃত রক্তের গুণগত মানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। দানকৃত রক্তই অধিকতর নির্ভরযোগ্য।
তার মানে, মানুষ যখন টাকার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কোনো কাজ করে, সেই কাজটির সাথে তার মেধা সৃজনশীলতা মমতার সবটুকু যুক্ত থাকে না। কিন্তু যা তার ভালবাসা থেকে আসে, সামাজিক দায়বোধ থেকে আসে তার মধ্যে নিজের সর্বোত্তম অবদান যুক্ত হয়। সে-জন্যেই রক্তদানের ক্ষেত্রে এই
বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে