রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ বছর আগে বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া ওই হামলায় সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়, যদিও মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশটি তা অস্বীকার করে আসছে।
এ মামলার অভিযোগ থেকে নিজেদের অব্যাহতির জন্য আদালতে আবেদন করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু বুধবার ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক জর্জ ডেনিয়েলস ওই আবেদন খারিজ করে দেন।
আদেশে বিচারক বলেছেন, মামলার বাদীপক্ষ সৌদি সরকারের বিরুদ্ধ সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের যে অভিযোগ এনেছে, তা ‘সামান্য হলেও যুক্তিসঙ্গত ভিত্তির’ ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলে তার মনে হয়েছে। এ কারণে তিনি মামলাটি চলমান রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ছিনতাই করা কয়েকটি যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (টুইন টাওয়ার) ও পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। ছিনতাই করা আরেকটি বিমান পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এসব সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় তিন হাজার লোকের মৃত্যু হয়।
যে ১৯ জন সন্ত্রাসী বিমানগুলো ছিনতাই করেছিল তাদের ১৫ জন ছিলেন সৌদি নাগরিক। অবশ্য সৌদি আরব শুরু থেকেই ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
২০১৬ সালে মার্কিন কংগ্রেসে ‘জাস্টিস এগেইনস্ট স্পন্সরস অব টেররিজম অ্যাক্ট’ পাস হওয়ায় সৌদি আরবকে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ তৈরি হয়। অবশ্য তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সতর্ক করে বলেছিলেন, এ ধরনের মামলা হলে অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাহিনী ও কর্মকর্তাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে।
ম্যানহাটনের বিচারকের আদেশ নিয়ে সৌদি আইনজীবীদের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন সৌদি আরবের ক্যাপিটাল মার্কেট কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ এলকুয়াইজ। নিউ ইয়র্কে সৌদি স্টক মার্কেটের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ সংক্রান্ত কোনো খবর দেখেননি বলে দাবি করেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, টুইন টাওয়ার হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্য, আঘাতপ্রাপ্ত প্রায় ২৫ হাজার মানুষসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি এ মমলার ক্ষতিপূরণের আওতায় পড়বে।
সৌদি আরবের ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও আল রাজি ব্যাংক এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বিন লাদেন গ্রুপ ৯/১১ হামলায় তহবিল ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল, প্রমাণের অভাবে বিচারক এমন অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।
বিচারক বলেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার শহরের কিং ফাহাদ মসজিদের ইমাম ফাহাদ আল থুমাইরি ও কথিত গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওমার আল বাইয়োমির সন্দেহভাজন কর্মকাণ্ডের দায় সৌদি আরবের, বাদীপক্ষ এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করে দেখতে পারে।
সন্দেহভাজন ওই দুই ব্যক্তি দুই ছিনতাইকারীকে যুক্তরাষ্ট্রে মানিয়ে নিতে ও হামলার পরিকল্পনা শুরু করতে সহযোগিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
সৌদি আরব বলছে, হামলা কিংবা এর পরিকল্পনায় সৌদি কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা এজেন্টের সংশ্লিষ্টতা দেখাতে পারেনি বাদীপক্ষ। এ যুক্তিতে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল তারা, কিন্তু আদালত তাতে সাড়া দেয়নি।