02/03/2024
আচ্ছা, অতিমাত্রায় অলস হয়ে যাওয়া হচ্ছেনা?
আমার স্পষ্ট মনে পড়ছেনা, একটা সিনেমার শেষের দিকে দেখেছিলাম, সব মানুষ অতিরিক্ত স্থুলকায় হয়ে গেছে। ফাস্টফুড, চিপ্স আর ড্রিংকস খাচ্ছে। হাঁটা তো বহুদূর, চলার জন্য অত্যাধুনিক হুইলচেয়ারের মতো কিযেনো ব্যাবহার করছে। সারাদিন ডিভাইস স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করছে। কোনো কাজ করতে বা কিছু বলতে কোনো ভাবাভাবি করছেনা।জীবন তাদের অনেক সহজ দেখাচ্ছে...! সিনেমাটার নাম বোধহয় "ওয়াল-ই"।
যাহোক, ছোটোবেলার একটা জিনিস আমার আপনার জীবনের সাথে মিলে যাবে যে, ভাড়া আর টিফিনের টাকা জমিয়ে বই কিনা। কষ্টের পর জমানো টাকা দিয়ে বইগুলা কিনার পর কেমন একটা টান অনুভব হতো বইগুলোর প্রতি। পড়া শেষ হবার পরও মাঝেমধ্যে উল্টেপাল্টে দেখতাম। কাউকে ধার দিতে কয়েকবার ভাবতাম। খুবই যত্নে রাখতাম বইগুলো।
তারপর একদিন দেখলাম পিডিএফ পাওয়া যায়, হাতে যেনো চাঁদ পেলাম।সহজে পেয়ে প্রথমদিকে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম! আর নয় কষ্ট! এবার আরামসে সব সিরিজ শেষ দিয়ে ফেলবো। আর এই ফাঁদে পা দিয়ে আমার বই পড়ার অভ্যাসটাই হারিয়ে ফেলেছি। হয়তো অনেকেরি পিডিএফ ভালো লাগে, লাগতেই পারে—সাময়িক!
আজকে বহুদিন পর পেজ এ এসেই দেখি, মেটার তরফ থেকে আমার প্রতি খুব মহব্বত নিয়ে ব্যাবসায়িক একটা মেসেজ। প্রসঙ্গ ছিলো, কীভাবে ব্যাবসায় সবুজ বাতির পাওয়ার বাড়াবো। তারা জানালো, ভিডিও দিয়ে কাজ করুন, মানুষ তাহলেই দেখবে। আপনার এই লিখালিখিতে কাজ হবেনা। আরো আজব বিষয় হলো, এক ভাইয়ের মেসেজ দেখলাম, তিনি আমাকে একটা পরামর্শ দিতে চান। দিলাম অনুমতি। তিনিও দেখলাম একই কথা জানালো। জানালেন বাস্তবতাই—মানুষ যেহেতু এখনার লিখা পড়তে চায়না, আপনি ভিডিও দিয়ে বইয়ের সেল-পোস্ট তৈরি করুন। কাজে দিবে।
বিষয়টা আমার ভালো লাগেনি। প্রথমে কাগজে প্রিন্ট করা লেখা পড়া থেকে আমাদের মন উঠালো, তারপর মন উঠালো ওইসব পিডিএফ থেকে, তারপর বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ করা ছোটো-বড় আর্টিকেল বা পোস্ট থেকে। এনেছে এখন ভিডিও দেখার পর্যায়ে। অর্থহীন লাগছেনা আমার কথা? এতে দোষ কি, ভাবছেন না? আচ্ছা, মানুষের ব্রেইন দিনের একটা সময়ে খুবই ফাস্ট কাজ করে। কিন্তু এটা বাদ দিন। এমনিতে ব্রেইন ফাস্ট হওয়ার কয়েকটা টিপসের একটা টিপস হচ্ছে "পরিশ্রম"। মাথা খাটান আর গতর, পরিশ্রম হচ্ছে ব্রেইনের জন্য হাতুড়ি স্বরুপ। আর ঘাম ছুটানো হচ্ছে মরিচা পড়া মগজের জন্য তেল স্বরুপ।
ওইযে প্রথমে লিখলাম, " তারা কিছু করা বা বলার সময় ভাবেনা"—কারণ তাদের চিন্তাশক্তি বা বোধশক্তি শেকল দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা ওই পর্যায়ে যেতে খুব একটা দেরি নেই। দিনেনদিন যেই পরিমান সহজ হচ্ছে দৈনন্দিন কাজগুলো, আমরাও প্রযুক্তির কল্যাণে তৈরি ভাসমান হুইলচেয়ারে চলবো। ভাববেন না, তখনার পৃথকভাবে আপনাকে কেউ হোঁৎকা বা মোটকা বলবেনা। কারণ আয়নায় সবাইকে একি লাগবে। অবশ্য তখন এটা নিয়ে ভাবার মত মাথার অস্তিত্ব থাকবেওনা।
আমাদের মানসিকতায় আর জীবনযাপনে জোরপূর্বক একটা কৃত্রিম অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। তারপর ঐ অবস্থাকে আমাদের চোখের সামনে "যুগোপযোগী" নাম দিয়ে আমাদেরকে শেখাচ্ছে কীভাবে মানু্ষের এই অভ্যাসকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসা করা যায়। আমরাও সুন্দর ব্যাবসা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা যে কারো পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছি ভাবছিনা কেনো আমরা?
মেটা কোম্পানিটা যে আমাদের মগজের এক্সেস নিয়ে আমাদের বলছে আমাদের মোবাইলের অমুক তমুক এক্সেস নেবার অনুমতি চায় তারা, আমরা যদি দয়া করে অনুমতি দেই। কীভাবে আমাদের চিন্তা করার খাস-কামড়াগুলোয় তারা বাগ বসালো?
লিখায়: "খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ"