29/04/2024
একজন লেখক বিহারে রাতের ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন। রাত বাড়তেই পাশে বসা সহযাত্রীরা ক্রমশ কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে লাগলেন। লেখকের ট্রেনযাত্রায় ঘুম আসে না। তিনি একটি বই খুলে পড়তে শুরু করলেন। উল্টোদিকের সিটে বসা ৫-৬ জনের মাঝখান থেকে এক যাত্রী লেখককে উদ্দেশ্য করে বললেন,
_"আপনি ঘুমোবেন না?"_
_"না ট্রেনের দুলুনিতে ঘুম আসে না। বই পড়ে রাত কাটিয়ে দেব।"_
_"তাহলে আমার একটা উপকার করতে হবে।"_
_"কী?"_
_"রাত আড়াইটায় আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিতে হবে। তার পরেই আমার স্টেশন এসে যাবে।"_
লেখক সম্মত হলেন। যাত্রীটি অন্যদের মতোই কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
শীতের শেষ রাতে লেখকেরও চোখের পাতা জড়িয়ে এলো। হঠাৎ সহযাত্রীর চিৎকারে সচকিত হলেন। চোখ খুলে দেখেন, সেই সহযাত্রী তাঁরই সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে কামরা মাথায় তুলেছেন। অন্য যাত্রীরাও জেগে গিয়েছেন। জানালার ওপাশে হালকা ভোরের আলো ফুটেছে। সময়মতো জাগিয়ে না দেবার জন্য ও নির্দিষ্ট স্টেশন পার হয়ে যাবার জন্য লোকটি লেখককে তুমুল গালাগালি দিতে লাগল। লেখক ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে নীরবে তিরস্কার হজম করতে লাগলেন। কামরার অন্য যাত্রীরা বরং তাঁর পক্ষ নিয়ে এগিয়ে এল। ওই যাত্রীকে থামিয়ে বলল,
_"অনুরোধ না রাখতে পারা এমন কোনো অপরাধ নয় যে, ওই ভদ্র সন্তানকে এত গালাগালি শুনতে হবে। যাকে মাঝরাত পার করে নামতে হবে, জেগে থাকার দায় তারই।"_
লোকটিকে কোনোমতে থামিয়ে অন্য সহযাত্রীরা লেখককে বললেন,
_"আপনিই বা কেন নীরবে এত তিরস্কার হজম করছেন? আমরা আপনার হয়ে কথা বলছি, অথচ আপনি আগাগোড়া চুপ, আশ্চর্য তো!"_
লেখক শান্তভাবে বললেন,
**"যে লোকটাকে কম্বল মুড়ি দেওয়া অবস্থায় প্রায় জোর করে তুলে দিয়ে অন্ধকার স্টেশনে নামিয়ে দিলাম, সে না জানি কত গালাগালি করছে! তার কথা ভেবে এনার কথায় চুপ করে আছি।"**
লিখেছেনঃ শিবরাম চক্রবর্তী