08/12/2023
সতীদাহের মত অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই,প্রাণপণ চেষ্টার পর দীর্ঘদিনের সংগ্রামে জয়ের হাসি হেসেছিলেন রাজা তো তিনিই। স্বামীর চিতায় অসহায় জীবন্ত নারীকে পুড়িয়ে মারার কুৎসিত,অমানবিক, সতীদাহ প্রথা চিরতরে উচ্ছেদ হল সমাজ থেকে,লর্ড বেন্টিকের আমলে আইন করে বন্ধ হল সতীদাহ প্রথা,এই কৃতিত্ব যাঁর সব থেকে বেশি প্রাপ্য তিনি রাজা রামমোহন রায়৷ ১৮২৯সালে আজকের দিনে আইন করে বন্ধ করা হয় সতীদাহ।
কেউ যদি রাজা রামমোহন রায়ের সাথে তর্ক যুদ্ধে নামতে চাইতেন শুনে বলতেন,আরে ও কি খায় আমার সঙ্গে তর্ক করবে? তিনি নিজে রোজ দুধ খেতেন বারো সের,পাঁঠা নাকি একটা গোটা!আম একসঙ্গে পঞ্চাশটা।
খুব ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে যেত। লম্বায় ছ'ফুটের বেশি, স্বাস্থ সচেতন মানুষ,জীবন ছিল একেবারেই ছকে বাঁধা৷ভোরে উঠে বেড়ানো,তারপর ব্যায়াম,কিছুক্ষণ বিশ্রাম তারপরে স্নান, তার আগে দুজন পালোয়ান খাঁটি সরষের তেলে দলাই-মলাই করতেন,যখন খেতেন একজন কে খবরের কাগজ পড়ে সব খবর শোনাতে হত,নিজে খুব ভালভাবে অবগত ছিলেন তাঁর শরীরের জোর নিয়ে,যদি কেউ বলতেন আপনাকে অমুক মারবে,তিনি অবজ্ঞার সুরে বলতেন তাই নাকি!
মোক্তার বন্ধু গুরুদাস বসুর বাড়ি গিয়েছেন বাঙালির রাজা, গুরুদাস বললেন ডাব খাওয়া যাক,রামমোহন সম্মতি দিলেন,গাছ থেকে ডাব পেড়ে দেওয়া হল রামমোহন কে, এবার আর তাঁর হাসি আর থামে না৷
ও গুরুদাস ওতে আমার কি হবে!কাঁদি সুদ্ধ পেরে ফেল৷
আধুনিক মনন আর দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে বাবা-মার সঙ্গে তীব্র বিরোধ,এবং পিতা ত্যাজ্যপুত্র করে দিলেন, এতটুকু দমলেন না,বরং দ্বিগুন উৎসাহে সামাজিক বিভিন্ন অমানবিক সংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর হার না মানা অদম্য লড়াই চলতেই থাকলো৷ ব্রাহ্মসমাজ সমাজ গড়েছেন,ইংরেজি ভাষায় লোকে লেখাপড়া শিখবে এই ছিল মনের বাসনা৷আইন করে সতীদাহ প্রথা ইংরেজরা বন্ধ করল,গোটা বঙ্গদেশে তখন একদিকে উৎসব,অন্যদিকে নিন্দা,সমালোচনার কাদা ছোটাছুটি চলছে৷ছড়া গান লিখে রক্ষণশীলরা রামমোহনকে ধিক্কার দিচ্ছেন,সেই রকম একটা গান শোনা যেত—
'সুরাই মেলের কুল
বেটার বাড়ি খানাকুল
ওঁ তৎসহ বলে বেটা
বানিয়েছে স্কুল'৷
যতদিন বেঁচে ছিলেন তাঁর বিরুদ্ধ পক্ষের সকলকে মাথা হেঁট করতে হয়েছে তিনি এখন নেই, রাজা রামমোহন রায় কে আমরা স্মরণ করছি শ্রদ্ধার সঙ্গে।
সংকলনে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।
পুস্তক ঋণ কলকাতার রাজকাহিনী,পূর্ণেন্দু পত্রী❤️