02/05/2020
☘ "আত্মশুদ্ধি" একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আত্মশুদ্ধি অর্জন জান্নাত লাভের উপায়।
আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে এবং নিজের অন্তরকে কুপ্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখে, জান্নাতই হবে তার জন্য চূড়ান্ত আবাসস্থল (নাযি‘আত-৪০)।
মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধির উপরই নির্ভর করে তার বাহ্যিক আচার-আচরণ।
আত্মা বিশুদ্ধ না হলে মানুষের আমলও বিশুদ্ধ হতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহত্তর ও সুমহান যা নিয়ে এসেছেন তা হল অন্তরের সংশোধন ও পরিশুদ্ধতার ব্যবস্থাপত্র!!
🍁 আল্লাহ রাববুল আলামীন মানুষকে তিনটি বিশেষ উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেগুলো হলো, জ্ঞান, দেহ এবং আত্মা:
☘জ্ঞানকে দিকনির্দেশনা দেয় ঈমান,
☘দেহের কল্যাণ সাধন করে ইসলাম এবং
☘আত্মার পরিশুদ্ধি নিশ্চিত করে ইহসান।
একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠা এ উপাদানগুলোর সুষম সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক কঠিন ও আয়াসসাধ্য বিষয় হলো "ইহসান"। আত্মার পবিত্রতা অর্জনের সাথেই ইহসান সম্পৃক্ত।
মূলত মানুষের অন্তরজগত এমন একটি বিশাল জগত যার ব্যাপকতা দৃশ্যমান জগতের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
আবার এটি এমন এক স্থান একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সেখানে অন্য কারোরই প্রবেশাধিকার নেই।
মানুষ তার প্রতিটি কাজ কি উদ্দেশ্যে করছে তার খবর কেবল তার আত্মাই জানে। আবার সমস্ত খবর সে বাইরে চেপে যেতে পারলেও নিজের অন্তরের কাছে সে কিছুই লুকাতে পারে না। সেজন্য অন্তরের এই গভীরতম প্রদেশটি মানুষের সবচেয়ে নিকটবর্তী ও সর্বাধিক আপন।
এ স্থানের সাথে প্রতারণা করার সাধ্য কারো নেই। পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অদৃশ্য ও অনুভূতিস্তরের এই স্থানটির গতি-প্রকৃতির উপরই নির্ভর করে তার বিস্তীর্ণ কর্মজগত।
এজন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বার বার অন্তরাত্মাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যেমন তাকিদ দিয়েছেন তেমনি এটা অর্জনের উপরই মানুষের সফলতা, ব্যর্থতাকে নির্ভরশীল করে দিয়েছেন।
"আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশুদ্ধ করলো সে-ই সফল, আর ব্যর্থ সে-ই যে নিজের অন্তঃকরণকে কলুষিত করলো"
(শামস্ ৯-১০)
রাসূল (সাঃ) বলেন,
"সাবধান! মানুষের দেহের অভ্যন্তরে একটি পিন্ড রয়েছে, যদি তা পরিশুদ্ধ হয় তবে সমস্ত দেহই পরিশুদ্ধ হয়; আর যদি তা বিকৃত হয়ে যায় তবে সমস্ত দেহই বিকৃত হয়ে যায়। সেটা হল কলব বা আত্মা"।
(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/ ২৭৬২)
🍁"আত্মশুদ্ধির প্রকারভেদ"
আত্মশুদ্ধির বিষয়টি "দুই" ভাবে ব্যাখ্যা দেয়া যায়।
যাবতীয় পাপ, অন্যায় ও অপবিত্র কাজ থেকে মুক্ত হওয়া অর্থাৎ যাবতীয় অসৎগুণাবলী বর্জন করা।
অসৎগুণাবলী হলো- শিরক, রিয়া, অহংকার, আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, ঘৃণা, কৃপণতা, ক্রোধ, গীবত, কুধারণা, দুনিয়ার প্রতি মোহ, আখেরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া, জীবনের প্রতি অসচেতনতা, অর্থহীন কাজ করা, অনধিকার চর্চা প্রভৃতি।
উত্তম গুণাবলী দ্বারা আত্মার উন্নতি সাধন করা অর্থাৎ প্রশংসনীয় গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে পরিত্যাগকৃত অসৎগুণাবলীর শূন্যস্থান পূরণ করা।
সৎগুণাবলী হলো=>তাওহীদ, ইখলাস, ধৈর্যশীলতা, তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা, তওবা, শুকর বা কৃতজ্ঞতা, আল্লাহভীতি, আশাবাদিতা, লজ্জাশীলতা, বিনয়-নম্রতা, মানুষের সাথে উত্তম আচরণ প্রদর্শন, পরস্পরকে শ্রদ্ধা ও স্নেহ, মানুষের প্রতি দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ, পরোপকার প্রভৃতি।
🍁 "আত্নশুদ্ধির গুরুত্ব"
আল্লাহ রাববুল আলামীন পবিত্র কুরআনে আত্মশুদ্ধি অর্জনকারীর সফলতার নিশ্চয়তা ও তা পরিত্যাগকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপারে এগারো বার কসম করেছেন
(সূরা শামস্)।
আত্মা মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয় যখন সে তাকে পাপাচার ও সীমালংঘনের দিকে আহবান করে। কেননা এই অপরিশুদ্ধ, পাপাচারী, ব্যাধিগ্রস্ত অন্তর মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
এজন্য রাসূল (সাঃ) অন্তরের অনিষ্ট থেকে অধিক পরিত্রাণ চাইতেন-
"হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে আত্মরক্ষার ক্ষমতা দাও এবং তাকে পরিশুদ্ধ কর। তুমিই অন্তরের সর্বোত্তম পরিশোধনকারী এবং তুমিই তার অভিভাবক ও প্রতিপালক"
(মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৬০)।
আত্মা হল ঈমানের সংরক্ষণস্থল। আর ঈমান হল মানুষের সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ। যদি ঈমান না থাকে তাহ’লে মানুষের সমগ্র জীবনই বৃথা। তাই এ সম্পদকে সুরক্ষা ও তার পরিবৃদ্ধি সাধনের জন্য অন্তরজগতের পরিশুদ্ধি নিশ্চিত করতে হয়।
'‘হে প্রভু! আমাকে পরিশুদ্ধ করে দাও, আমাকে সংশোধন করে দাও এবং সৎকর্ম ও সৎচরিত্রের দিকে আমাকে পথ দেখিয়ে দাও। কেননা সুপথপ্রদর্শন করা ও কুপথ থেকে ফিরিয়ে আনার সাধ্য তুমি ব্যতীত কারো নেই’
(আল জামে‘ঊছ সাগীর হা/২১৪৬)।
🍁 "আল্লাহ আমাদের সকলকে পরিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন।"
(আমীন)
_________________________🍂