20/11/2022
সারাজীবন রোদবৃষ্টিতে ভিজে কৃষিকাজ করে কেয়ামত আলী সুন্দর একটা ফ্লাট বাসা বানিয়েছিলো। রাস্তার পাশে বিশাল দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। দুই ছেলেকে বিদেশও পাঠিয়েছে। গ্রামে রাস্তা দিয়ে ভ্যানে চড়ে যাওয়ার সময় বাড়িটা চোখে পড়ে। বিশাল উঠানে কখনো ধান, কখনো শরিষা মাড়াইয়ের কাজ চলে।রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায়। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি কেয়ামত আলী তামাক পাতার চাষ করতো৷ গ্রামের গরীব মহিলারা কেয়ামত আলীর বাড়িতে তামাক পাতা বাঁধার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তখনও কেয়ামত আলীর বাড়িতে মাটির ঘর। একটি পুরাতন সাইকেলে করে বাজারে যেতে দেখতাম। টাকাপয়সা হওয়ার পরেও বাইসাইকেলে করেই চলতেন।
কেয়ামত আলীর পায়ে গ্যাংগ্রিন বা পায়ের আঙুল পঁচা রোগ হয়েছিলো। দীর্ঘদিন এটা নিয়ে ভুগেছে। তবে কোন এক কবিরাজ ধরে সেই রোগ ভাল হয়। এরপর থেকে গ্রামের বা আশপাশের গ্রামের কারও এই রোগ হলে কেরামত আলীর বাড়িতে আসতো। কেয়ামত আলী ওষুধ বানিয়ে দিতো। আমার বড় চাচারও এই রোগ হয়েছিলো। কেয়ামত আলীর থেকে ওষুধ নিতো।
তবে রোগবালাই যাইহোক কেয়ামত আলীর কৃষিকাজ কখনো বন্ধ হয়নি। কৃষিই ছিলো তার নেশা। খুব যত্ন করে নানা ফসল ফলাতেন। একজন আপাদমস্তক কৃষকের জীবনই এমন, আমৃত্যু সংগ্রাম করে যায়। একমাত্র মৃত্যুছাড়া কোন রোগবালাই তাকে ঘরে রাখতে পারেনা। গতপরশু আব্বা হঠাৎ ভাঙা গলায় কল দিয়ে বললেন, কেয়ামত আলী মারা গেছে। আমি জিগ্যেস করলাম কিভাবে? বললো, স্ট্রোক করে৷
সকালে ঘুম ভাঙলো কেয়ামত আলীর স্বপ্ন দেখে।
কেয়ামত আলী মারা গেছে, কিন্তু সারাজীবন রোদবৃষ্টিতে কৃষিকাজ করে অর্জিত ধনসম্পদ সবই পড়ে রইলো। যে মানুষটির ধ্যান-জ্ঞান ছিলো কৃষিকাজ, ঘরে থাকতেন না। তাকেই এখন ছোট্ট একটি মাটির ঘরে থাকতে হবে। চাইলেও তিনি বের হতে পারবেন না। এই তো জীবন...
এই যে দুনিয়া, কিসের লাগিয়া? এতো যত্নে গড়াইয়াছেন...
রাশেদ খান