28/01/2024
আজকাল আমার সাথে অহরহ একটা ঘটনা ঘটছে, যেটা আমি আমার সরল মনে কিছুতেই মেলাতে পারছি না। ঘটনাটা বলছি....
দুপুরে বাসা থেকে কল আসলো। বউ ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, ‘রাতে কি রান্না করবে।’ চমৎকার বউসুলভ প্রশ্ন।
কিন্তু যেহেতু চাকরিজীবী বউ, তাকে তো আর পোলাও-কোরমা রান্না করার কথা বলা যায় না!
বুদ্ধি করে বলে দিলাম, ‘ডাল আর ডিমভাজি হলেই আমার চলবে!’সহজ রান্না।কষ্ট কম।আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না।
সন্ধায় বাসায় ফিরলাম। রাতে খাবার টেবিলে বসে দেখলাম রান্না হয়েছে - পোলাও, মুরগির রোস্ট আর ডিম ভুনা।
ব্যাপারটা দেখে একটু খটকা লাগলো।আজকে আবার বার্থডে বা অ্যানিভারসারির মত কোন উটকো উপলক্ষ- টুপলক্ষ নেইতো!ভুলে গেলেই তো আবার বিপদ!মনে মনে হিসাব কষা শুরু করলাম।
আজকে কি বউয়ের বার্থডে? - না, ক্যানসেল।
আমার বার্থডে? - না, ক্যানসেল।
আমাদের অ্যানিভারসারি? - না, তাও না, ক্যানসেল।
কি হতে পারে, কি হতে পারে!মনে মনে আবার হিসাব করা শুরু করলাম।অনেক হিসেব আর এলগরিদম মিলিয়ে একটাই সল্যুশন বের করতে পারলাম।
২০২০ এর লিপ ইয়ারে ৩৬৬ দিন ধরে আজ আমাদের বিয়ের ১৯৯৯ তম দিন।এটা কি একটা কারণ হতে পারে!১৯৯৯তম দিন কি কোন সেলিব্রেট করার দিবস? না, মানে, মানুষ কি সেলিব্রেট করে? নাকি রাত ১২ টার পর ২০০০তম দিন হবে, সেইটা কারণ?
কি জানি, হয়তো আমি একটু বেশিই ভাবছি। হয়তো এসব কিছুই না!কিন্তু তাও, রিস্ক নিয়ে লাভ নেই।সাথে সাথে নীচে যেয়ে কয়েকটা গোলাপ কিনে আনলাম। গোলাপ হচ্ছে গিফটের আলু!
আলু যেমন সব তরকারির সাথে যায়, গিফট হিসেবে গোলাপও যে কোন কিছুর সাথেই যায়!
ডিনার শেষে বউকে বললাম, – ‘ রান্না চমৎকার হয়েছে। ’
আর গোলাপগুলো হতে দিয়ে বললাম, ❝ হ্যাপি গুড ডে ❞
বউ কিছু বললো না। মুচকি হাসলো।'হ্যাপি ১৯৯৯তম দিন' আর বললাম না, চেপে গেলাম।
আমার এলগরিদমের হিসেব অনুযায়ী যদি ও না ভেবে থাকে!
থাক, রিস্ক নিলাম না।কিন্তু আমার সব হিসাব ভুল। সেদিন আসলে কোন ডে- ফে ছিল না। বউ এমনিতেই ভালো মন্দ রান্না করেছিলো।সেদিনের ব্যাপার ওখানেই শেষ।
'
'
'
এরপর আরেকদিন.....
বউ ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, ‘রাতে কি রান্না করবে।’
আমি আবারও বললাম, ‘ডাল আর ডিমভাজি হলেই আমার চলবে।’
পয়েন্ট টু বি নোটেড - এখানেই একটা ব্যাপার বোঝার আছে।একদিন পোলাও রোস্ট রান্না করেছে বলেই সেটাকে গ্যারান্টেড হিসেবে ধরে নেওয়া যাবে না।মনে রাখতে হবে "পোলাও-রোস্ট ইজ আ প্রিভিলেজ, নট আ রাইট!" ম্যাক্সিমাম পুরুষই এই পয়েন্টে এসে ধরা খায় - পোলাও রোস্টকে গ্যারান্টেড ধরে নেয়।আমি সেই ভুল করলাম না।
সন্ধায় বাসায় ফিরলাম। রাতে খেতে বসে দেখলাম সেদিন রান্না হয়েছে - ভুনা খিচুড়ি, গরু ভুনা আর বেগুন ভাজি।
ডিনার শেষে বউকে বললাম, ‘রান্না চমৎকার হয়েছে।’ বউ আবারও কিছু বললো না। হালকা হাসলো।
'
'
এরপর আরেকদিন......
বউ জিজ্ঞেস করলো রাতে কি রান্না করবে।
আমি আবারও বললাম, ‘ডাল আর ডিমভাজি হলেই চলে আমার!’
রাতে বাসায় ফিরে খেতে বসে দেখি, রান্না হয়েছে - গরুর নেহারি আর গরম গরম ছিটে রুটি।
বাহ চমৎকার!চমৎকার এই ব্যাপারটার কি উপমা দেওয়া যেতে পারে? 'মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি' নাকি 'অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ'?
উপমা যেটাই হোক, ততদিনে আমি ভালোমন্দ খেয়ে অভ্যস্ত।
এরপর আরেকদিন........
তার পরের দিন........
তারপরেও একদিন.......
আরো অনেকবার.... অনেকদিন.....
বউ ফোন করে জিজ্ঞেস করে, ‘রাতে কি রান্না করবে।’
ততদিনে ডাল, আলু ভর্তা আর ডিমভাজি বলতে বলতে আমিও ক্লান্ত। আর এসবতো ও রান্নাও করে না, বরং ভালো কিছুই করে সব সময়।
কিন্তু কথায় আছে - ' To err is human', মানে 'পুরুষ মাত্রই ভুল' !
পুরুষ মানুষ ভুল করবেই। আজ হোক, কাল হোক- করবেই।তাই আমিও সাহস করে বলে ফেললাম - “ রূপচাঁদা ভুনা আর খাসির কলিজা করো, সাথে পোলাও বা খিচুড়ি। ”
বাসায় ফিরলাম।রাতে খেতে বসে দেখি শুটকো বরবটি ভাজি আর উস্তে তরকারি, তাও আলু ছাড়া (আমাদের এলাকায় করোল্লাকে উস্তে বলা হয়)।
হাসিমুখে বললাম,
- “ কি ব্যাপার, তোমাকে না বলেছিলাম কলিজা আর রূপচাঁদা রান্না করতে? ”
ব্যাস.............বিষ্ফোরণ!
একটা কথা......জাস্ট এই একটা সামান্য কথা আমাকে সংসারের সব হিসাব - নিকাশ বুঝায়ে দিলো।এই একটা সহজ প্রশ্নের কারণে আমি পাল্টা যেসব প্রশ্ন শুনলাম তার কিছু অংশ অনেকটা এরকম...
- প্রতিদিন ভালো মন্দ খাওয়াই, একদিন না পারলেই দোষ?
- তুমিতো রান্নাও করতে পারো না, আমার কষ্ট কিভাবে বুঝবে?
- বাচ্চাও তো সামলাতে পারো না, কলিজা ভুনা খাওয়ায় সখ হয় কিভাবে?
- সংসারতো সামলাতে হয় না, কত ধানে কত চাল জানো?
- কালকে ঝুল ঝাড়ু আনতে বলেছিলাম, এনেছিলে?
- সকালে ময়লার বালতি নিচে নামিয়ে দিতে বলেছিলাম, দিয়েছিলে?
- নিজে নিজে কিছু করতে পারো না, সব কি আমার বলে দিতে হবে?
- সংসারে যে আরেক জন নতুন মানুষ আসছে, আমার শরীরের অবস্থা কেমন জিজ্ঞেস করেছো কখনো?
আরো কী কী জানি বললো! সব কথা আমি বুঝিও নাই। কিন্তু লাস্টের কথাটা শুনে খুশি হয়ে গেলাম।তাই মাফ চেয়ে উস্তে তরকারি দিয়েই খেয়ে উঠে পড়লাম।
রাতে শুয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– “ এমন করলে কেনো তখন? ”
– “ তুমি আজকাল খুব বেশি ভালো হয়ে গিয়েছিলে। কিছুতেই ঝগড়া করতে পারছিলাম না তাই......... ”....................................................................................
শেষ : এই গল্পটা লিখে বউকে পড়তে দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম, ‘লেখা কেমন হয়েছে?’
বউ সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো,
– “ ডাল আর ডিমভাজি - যেটা এতদিন পাচ্ছিলে, আজ থেকে সেটাও বন্ধ। কাল থেকে তুমি রান্না করবে। ”
-----------------------------
#রম্যগল্প
#কলমেঃ_নিশাদ_আর. প্রিতুল
-----------------------------