04/06/2022
কুমিল্লা জেলা।
বাংলাদেশের অতি প্রাচীণ ও সমৃদ্ধশালী জেলা। শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক উর্বর ভূমি এই জেলা। তাই,অনেকেই বলে থাকেন " কুমিল্লা এগুলে এগুবে বাংলাদেশ। "
আসুন কুমিল্লা কে একটু জানি...
কুমিল্লা জেলা ২৩°০১' থেকে ২৩°৪৭' ৩৬" উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০°৩৯' থেকে ৯১°২২' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বিস্তৃত।
কর্কটক্রান্তি রেখা কুমিল্লা জেলা অতিক্রম করেছে।
মোট জনসংখ্যা= ৫৩,৮৭,২৮৮ জন। পুরুষ =২৫,৭৫,০১৮ জন, মহিলা = ২৮,১২,২৭০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কি:মিঃ) ১৭১২ জন (প্রতি বর্গ কিঃ মিঃ)। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারঃ ১'৫৮% প্রায়। শিক্ষার হার ৬০.০২% (২০১১
সালের জরিপ অনুযায়ী)।
কুমিল্লা জেলা, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত। উপজেলার সংখ্যানুসারে কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত একটি জেলা। এ জেলার মোট আয়তন ৩,০৮৭.৩৩ বর্গ কিলোমিটার।
রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৯৭ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৪৯ কিলোমিটার। এ জেলার দক্ষিণে ফেনী জেলা ও নোয়াখালী জেলা; পশ্চিমে চাঁদপুর, মেঘনা নদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা, উত্তর-পশ্চিমে মেঘনা নদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা, উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।
কুমিল্লা প্রাচীনকালে সমতট জনপদের অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবাহ বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা ২ নং সেক্টর এর অন্তর্গত ছিল।
রসমালাই নামক বিখ্যাত মিষ্টি কুমিল্লায় তৈরি করা হয়। কুমিল্লার বিখ্যাত খদ্দর (খাদি) শিল্পের জন্য। ১৯২১ সাল থেকে খদ্দর এ অঞ্চলে প্রচলিত। বাঁশের বাঁশির জন্য কুমিল্লা বিখ্যাত। কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রাম উপমহাদেশের বাঁশের বাঁশির জন্য সুবিখ্যাত। এছাড়াও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিও এ জেলায় অবস্থিত।
কুমিল্লা জেলা ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৮টি থানা, ৮টি পৌরসভা ও ১১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
কুমিল্লা জেলায় মোট ১৭টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল: কুমিল্লা আদর্শ সদর, ব্রাহ্মণপাড়া, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, তিতাস, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার, নাঙ্গলকোট, বরুড়া, বুড়িচং, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর, মেঘনা, লাকসাম, লালমাই, সদর দক্ষিণ এবং হোমনা উপজেলা।
কুমিল্লা জেলার সাথে সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথে যোগাযোগ সম্ভব এবং পূর্বে এ জেলার সাথে বিমানপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও তা বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ জেলার একমাত্র নদীবন্দর দাউদকান্দি বাউশিয়া নদীবন্দর এবং এ জেলায় মোট ৩৪টি ফেরীঘাট রয়েছে। এযাবৎ আবিষ্কৃত লালমাই অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন ময়নামতি প্রত্নস্থল এ জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে, যার একটি কুমিল্লা জেলার ময়মনামতিতে অবস্থিত আর অপরটি চট্টগ্রামে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেনানিবাস কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম ক্যান্টনমেন্ট যেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু অস্ত্র রক্ষিত ছিল। এখানে রয়েছে ইংরেজ কবরস্থান। যা ইংরেজ আমলে স্থাপিত হয়।
কুমিল্লা জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এ জেলার প্রায় ১১.৬% মানুষ ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়াও এ জেলায় ২টি শিল্প নগরী রয়েছে। রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড এর মূল স্থাপনা এবং গ্যাস ফিল্ড।
কুমিল্লা জেলার প্রধান নদ-নদীগুলো হল: মেঘনা, গোমতী, তিতাস, ডাকাতিয়া, কাঁকড়ি, ছোট ফেনী, আড়চি, ঘুংঘুর এবং সালদা।
কুমিল্লা জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কুমিল্লা, শ্রীকাইল সরকারি কলেজ।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে হলোঃ
প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান- আনন্দবিহার, ইটাখোলা মুড়া, উজিরপুর টিলা বা উজিরপুর ঢিবি, কোটিলা মুড়া, কোটবাড়ি মুড়া, চন্ডী মুড়া, চারপত্র মুড়া, চিতোড্ডা মসজিদ, অর্জুনতলা মসজিদ, ছিলা মুড়া, পাক্কা মুড়া, ভোজ রাজার বিহার, রূপবান মুড়া, রাণী ময়নামতি প্রাসাদ ও মন্দির, মজিদপুর জমিদার বাড়ি, লালমাই চন্ডী মন্দির।শালবন বিহার- বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম
অভয় আশ্রম- ব্রিটিশ ভারতে প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয়তাবাদী সামাজিক সংগঠন, কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, কুমিল্লা জগন্নাথ মন্দির বা সতেরো রত্ন মন্দির, কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন, জাহাপুর জমিদার বাড়ি।
২৩.১৮ একর আয়তনের ধর্মসাগর জলাধার।
ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর জমিদার বাড়ি,দেবীদ্বারের প্রায় পাঁচশত বছরের পুরাতন নূরমানিকচর মসজিদ, মুঘল স্থাপনার বড় শরিফপুর মসজিদ, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বা বার্ড
বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘৈর বিস্তৃত লালমাই পাহাড়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম, কুমিল্লা জগন্নাথ মন্দির বা সতেরো রত্ন মন্দির।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী - রাজনীতিবিদ, অবিভক্ত পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ও বঙ্গীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন:-বীর প্রতীকও সাবেক মন্ত্রী, সেনা কর্মকর্তা এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ- সাবেক আইনমন্ত্রী, আব্দুল খালেক- বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম মহাপরিচালক আইজিপি,
আশরাফ আলী – দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত
মহাস্থবির শীলভদ্র- বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক ও সন্ন্যাসী হিউয়েন সাঙের শিক্ষক, আ হ ম মোস্তফা কামাল – বাংলাদেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী,আখতার হামিদ খান – প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী,
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে- আজিজুল হাকিম, শাহরিয়ার নাজিম জয়, ফেরদৌস আহমেদ, আনোয়ারা, নাসরিন আক্তার নিপুণ, চিন্ময় রায়।
আতিকুল ইসলাম- মেয়র, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
আপেল মাহমুদ- বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রাক্তন মহাপরিচালক, গীতিকার এবং কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর –– সঙ্গীতশিল্পী।
আব্দুল মতিন খসরু- সাবেক মন্ত্রী
মিজানুর রহমান আরিয়ান-- নাট্য নির্মাতা
আহমদ রফিক –– কবি, প্রাবন্ধিক।