17/01/2024
একটি
ছোটগল্প- ২০৮৬
Join: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছোটগল্প
সেদিন ক্লাসে স্যার বলতেছিলেন,"সবাই কোনো না কোনো ভাবে দুর্নীতির সাথে যুক্ত, সেজন্য কেউ বিদ্রোহী হয় না, কেউ আওয়াজ তুলে না। " আমার হঠাৎ ই মনে হলো বাবার কথা। আমার বাবা একজন কৃষক তবে প্রান্তিক কৃষক। তার তেমন জমি নেই, আছে মোটে দুই বিঘে জমি, তবুও তা অন্য ব্যক্তির নিকট বন্ধক( পূর্বে মানুষ যেমন গহনা দিয়ে টাকা ধার নিতো) দিয়ে টাকা এনে আমাকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। আমার বাবা যখন মাঠ থেকে এসে গোসল করতে যান তখন আমি বাবার জন্য পানি তুলে দেই। সাবান টা কাছে দেই। বাবা খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন বসেন আমি বাবার কাছে বসি, বাবার সাথে গল্প করতে করতে বাবার দুটো হাত ধরি। দেখি বাবার হাতগুলো খুব খসখসে, কেমন কেমন যেন। বাবাকে বলি বাবা তোমার হাত টা কেমন হয়ে গেছে। বাবার পা দিকে চোখ পড়তেই দেখি বাবার পায়ের চামড়াগুলো কেমন থিতলে থিতলে গেছে। বাবাকে প্রশ্ন করি, "বাবা এত পরিশ্রম করার দরকার নাই।" বাবা বলেন পরিশ্রম করি বলেই দুটো খেতে পাই, তোমাদের কষ্ট করে পড়াশোনা করাতে পারছি।আমি বাবার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকি। আমি নির্বাক, কি বলবো আমি, ভাষা হারিয়ে ফেলে শুধু তাকিয়ে থাকি। বৃষ্টির দিনে ঝড়ে দিনে যখন বাবা জমিতে কাজে থাকেন অনেক ভয় হয়, সব সময় চিন্তাতে থাকি বাবা ঠিক আছেন তো? বর্তমানে বাজ পড়ে অনেক মানুষ মারা যায় আমাদের ঐ দিকে। এই বিষয়টিতে অনেক ভয় পাই। এই পৃথিবীতে বাবা ছাড়া কোন সম্পদ নেই যে। বাবা হারিয়ে গেলে কোথায় দাঁড়াবো?
খুব ছোট বেলায় যখন বাবার সাথে বাজারে বা হাটে যেতাম, বাবা বিভিন্ন সবজি নিয়ে যেতেন। বাবা অনেক টা সময় নিয়ে বিক্রি করতেন। যে যাই দাম বলুক আমি বাবাকে বলতাম দিয়ে দিন, আমরা বাড়ি চলে যাবো। তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম বাবা ৫ টাকার জন্য কতটা অপেক্ষা করতেন। আজ যখন গাড়িতে আসা যাওয়া করি, গাড়ির মালিকের কাছে যখন ভাংতি না থাকে তখন বলে আপু ৫ টা টাকা কি এমন! খুব বেশি নয় তো।তখনই বাবার মুখটা ভেসে উঠে, ৫ টা টাকার মূল্য যে কতো! কিন্তু যখন দেখি ধানের ব্যাপারী আমাদের বাড়িতে ধান কেনার জন্য আসতেন। বাবা আমাকে ওনাদের মাপ দেখতে বলেন। আমি দেখি প্রতি ২ মণ ধানে ৩ কেজি ধান বেশি নিতেছেন। আমি যখন জিজ্ঞেস করি তখন বলেন, বাজারের তোলা, আর ছালার ওজন। আমি তখন বললাম বাজারে কি প্রতি মণে মণে তোলা দিতে হয়, আর একটা ছালার ওজন কতো?? কিন্তু ওনারা আমার কথা আমলে নিলেন না, নিজেরা বলতে শুরু করলেন এই বাড়িতে ধান কেনাই উচিত হয়নি, এত প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। শুধু এটুকুই নয় আমি যখন বাড়ির বাহিরে গেছি, এসে শুনি ধানের মোট মূল্য থেকেও টাকা কম দিয়ে গেছেন। তাহলে এখানে আমার বাবা কী দুর্নীতি করলেন? কিভাবে প্রতিবাদ করবে উপায় নেই। স্যার বলার সাথে সাথে অনেক খুঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু খুঁজে পেলাম না। স্যারকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি, তখনই রাজেয়া খাতুন চৌধুরীর একটা কবিতা মনে পড়ে গেল "চাষী"-"ব্রত তাহার পরের হিত, সুখ নাহি চায় নিজে/রৌদ্র দাহে শুকায় তনু, মেঘের জলে ভিজে। " সত্যি বলতে এই কৃষকগুলোই দুর্নীতিবাজ, কারণ তারা সকলের মুখে অন্ন তুলে দেন, এরাই দুর্নীতি বাজ কারণ তারা দুটো খাবারের জন্য এতো পরিশ্রম করে। এদের উদর না দিলেও পারতেন সৃষ্টিকর্তা। এদের কষ্ট হয়তো এরা পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর শেষ হবে তার আগে নয়,, তার আগে তো এরা দুর্নীতিবাজ, কারণ তারা আওয়াজ তুলে না, কারণ তারা তাদের সন্তানদের কথা চিন্তা করে, এরা সত্যি স্বার্থপর।