22/10/2024
একটা শীতের বিকেল। আকাশে মেঘ জমে উঠেছে,
হালকা বাতাস বইছে, আর রাস্তার পাশের গাছগুলো ঝিরঝির করে দুলছে। অর্পিতা রাস্তার ধারে একটা ক্যাফেতে বসে আছে, হাতে একটা কাপ কফি। বাইরে তাকিয়ে আছে সে, যেন কারও অপেক্ষা করছে। তার মনটা একটু অস্থির, কারণ আজ তার খুব বিশেষ দিন। আজকে সে রনির সাথে দেখা করবে—তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।
তাদের দুজনের পরিচয় বছরখানেক আগে। দুজনেই একই অফিসে কাজ করে, কিন্তু তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল এক অফিসের অনুষ্ঠানে। সেদিন অর্পিতা রনিকে প্রথম দেখেছিল, এবং কেমন যেন মনের ভেতরে একটা ঝড় বয়ে গিয়েছিল। রনির হাসি, তার নম্র ব্যবহার, আর তার চোখের গভীরতা অর্পিতাকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু তখনো সে জানত না, এই মুগ্ধতার পেছনে কত গভীর একটা অনুভূতি লুকিয়ে আছে।
দিন কেটে গেল। অফিসে রনি আর অর্পিতা একসাথে কাজ করতে শুরু করল। কথা হতে লাগল, হাসি-ঠাট্টা চলতে থাকল, আর ধীরে ধীরে তারা একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে এল। রনি মাঝে মাঝে অর্পিতাকে তার প্রিয় বইগুলো নিয়ে গল্প করত, আর অর্পিতা রনির পছন্দের খাবারের রেসিপি শিখে তার জন্য রান্না করত। এক অদ্ভুত মায়া তাদের বন্ধনে জড়িয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তারা কেউই তাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারেনি।
তারপর একদিন হঠাৎ করে রনি অফিসের ছুটিতে চলে গেল। অর্পিতা প্রথমে বুঝতে পারেনি কেন সে এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। রনি আসবে না কয়েকদিন—এটা কি এত বড় ব্যাপার? কিন্তু রনি চলে যাওয়ার পর অর্পিতার দিনগুলো যেন থমকে গিয়েছিল। প্রতিদিন অফিসে এসে তার মনে হত, কিছু একটা অসম্পূর্ণ। রনির অনুপস্থিতি তাকে বুঝিয়ে দিল, সে আসলে রনিকে কতটা ভালোবাসে।
অবশেষে, রনি ফিরে এল। এবং সেই দিনই অর্পিতা সিদ্ধান্ত নিল, আর দেরি করা যাবে না। সে আজ রনির কাছে তার ভালোবাসা প্রকাশ করবে। কিন্তু তার মনের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করছিল। রনি কি তাকে একইভাবে ভালোবাসে? যদি না বাসে?
আজ সেই দিন। অর্পিতা ক্যাফেতে বসে আছে, আর মনটা চিন্তায় ভরা। ঠিক তখনই দরজা খুলে গেল, আর রনি ভেতরে ঢুকল। তাকে দেখে অর্পিতার বুকের ভেতরটা ধপ করে উঠল। রনি তার দিকে এগিয়ে আসছে, তার চোখে সেই পরিচিত উজ্জ্বলতা।
রনি এসে বসতেই অর্পিতা সোজা কথা শুরু করল। অনেক দিন জমিয়ে রাখা কথাগুলো এক নিমেষে বেরিয়ে এল। “রনি, আমি জানি না তুমি কী ভাববে, কিন্তু আমি আর চুপ থাকতে পারছি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেক দিন ধরেই তোমার সাথে এই কথাটা বলতে চাচ্ছি। তুমি আমার জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে উঠেছ, আর আমি চাই, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হোক।”
কথাগুলো বলে অর্পিতা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিল। রনি কিছুক্ষণ চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে রইল, যেন কথা গুছিয়ে নিচ্ছে। তারপর সে ধীরে ধীরে বলল, “অর্পিতা, আমি অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম তোমাকে কীভাবে বলব। কিন্তু তুমি আগে বললে। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। প্রথম দিন থেকেই আমি তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। তোমার হাসি, তোমার সরলতা—সবকিছুই আমাকে তোমার দিকে টেনে নিয়ে এসেছে।”
তাদের দুজনের চোখে একই সময়ে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিল। এই মুহূর্তটা যেন কোনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। তারা কেউই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে অবশেষে তাদের মনের কথা তারা একে অপরকে জানাতে পেরেছে।
তারপর থেকে অর্পিতা আর রনি একসঙ্গে সময় কাটাতে লাগল। তাদের ভালোবাসা ধীরে ধীরে আরও গভীর হলো। তারা একে অপরকে নতুনভাবে চিনতে শিখল, ছোট ছোট আনন্দগুলো একসঙ্গে ভাগ করে নিতে শিখল। জীবনের প্রতিটি দিন যেন তাদের কাছে একটি নতুন অধ্যায় হয়ে উঠল, যেখানে শুধু ভালোবাসা আর সুখের গল্প লেখা থাকত।
এভাবেই তাদের ভালোবাসার গল্প শুরু হলো,
আর সেই গল্প প্রতিদিন নতুন করে লেখা হতে থাকল।
নিয়মিত গল্প পড়তে চাইলে পেজটি ফলো করুন
ও পোস্টগুলো শেয়ার করে দিন।