12/25/2023
লোকে কী বলবে এই কথাটা ভেবে জীবনে অনেক সুন্দর ঘটনা লিখতে পারিনি। লিখে ফেলতে পারলে নোবেল পুরস্কার না হোক একটা Booker Prize আমার নামের সাথে অবশ্যই দেখা যেত।পুরষ্কার পাব একদিন আজ লিখে ফেলি সাহস করে! অতি সার্বজনীন -যৌনমিলন এবং সৃষ্টি, যা প্রাকৃতিক একটা বিষয়।হঠাৎ লেখার জন্য এ বিষয় আমার মাথায় আসলো কেন? এ প্রশ্ন পাঠকের মনে জাগতেই পারে। তার অবশ্য কারণ আছে।সেটা একটু পরেই না হয় খোলাসা করছি।
একবার জিওগ্রাফি চ্যানেলে ধারাভাষ্য শুনে, ছোট্ট মেয়েটা আমার অফিসে এসে বলেছিল, কোন কোন প্রাণী বাচ্চা দিলো ? এবং কত বছর বয়সে তাঁরা বাচ্চা দেয়? এটাও উল্লেখ করলো “only human being give birth after merry”. সেটা শুনে হাসতে হাসতে আমার এক সহকর্মী বলেছিল, “মাই গো বড় হও তখন জানবে বিয়ে ছাড়াও হিউম্যান বিং গিভ বার্থ”।ছোট্ট মেয়ে কি বুঝলো জানি না তবে সত্য এটাই ।বিয়ের সাথে শারীরিক মিলনের বৈধ সনদ থাকলেও ঘটনা আসলে প্রাকৃতিক এবং এ জন্য প্রকৃতি কোনো দলিল দেখে না।বিবাহ অপ্রাকৃতিক ব্যবস্থা মাত্র। যৌনমিলনের সব অন্তরজাল আয়োজনের জন্য প্রকৃত অর্থে প্রকৃতি দায়ী ।চন্দ্রের প্রভাবে জোয়ারভাটা কী শুধু সাগরনদীতে আসে ?মানব শরীরেও আসে ।সমস্ত সৃষ্টির প্রতি ডাক থাকে। প্রকৃতির কাজ সৃষ্টি করা,সে সৃষ্টির জন্যই বহমান। সে ধ্বংস করে তখন ,যখন মানব অনাসৃষ্টি সৃষ্টি করে। প্রকৃতি এটা মানতে পারে না। যৌনরোগ বালাই সৃষ্টির অপব্যবহার, যা অনাসৃষ্টি থেকে আসে।বলা হয় পরোক্ষভাবে প্রকৃতি দায়ী সেটা যৌন মিলন হোক আর অনাচার হোক।
মানবজাতির মাঝে বিয়ে প্রথা শুরু হয়েছিল কারণ বলশালী ( সম্পদ এবং জবর দখলের ক্ষমতায়) পুরুষরা সকল সুন্দর নারীকে অবাধে ভোগ করতো বলে। একটা সময় মানুষের এ হেন সব অন্যায়ের জন্য ধর্মীয় প্রথা চালু হয় এবং সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ধারনা তৈরী হলো যে বিয়ে প্রথা চালু হলে বলশালী পুরুষদের এ অতিমাত্রার ভোগবিলাস বন্ধ হবে এবং নারী ও গরীব পুরুষজাতির ওপর সুবিচার হবে । পেটভোজনের মত তাঁদেরও ইন্দ্রীয়ভোজন হবে। ধর্মের মোহর হিসেবে নিয়ম করে বলা হলো যে বিবাহিত নারীর প্রতি দৃষ্টি দিলে পাপ হবে। সে এখন পরনারী এবং বাল্য বিবাহের সূত্রপাত হয় এ জন্য । যাতে ক্ষমতাবান পুরুষরা দৃষ্টি না দিতে পারে।তার আগেই তাঁদের বিয়ে দেয়া হতো। বিয়ে প্রথার পরও যে এ অন্যায় বন্ধ হয়েছিল তা নয়। মাত্র কয়েকশ বছ আগেও হায়দ্রাবাদের নিজামের পাঁচশত পত্নী ছিলেন। যাঁদের তিনি চিনতেনও না ঠিক মত।এই সংখ্যাই প্রমাণ করে যে, অজস্র ভোগবিলাস কামনা বাসনা তৃপ্ত করতে পারে না।
প্রকৃতিকে দায়ী করলেও পরনারী বা পুরুষের প্রতি মানবের যে মোহ তার জন্য ইন্দ্রিয়কে দায়ী করা হয়।কারণ ইন্দ্রিয় এক জিনিস বেশি গ্রহণ করতে পারে না। যেমন একই আহার সব সময় মনে,স্বাদে ,রুচিতে ধরে না অনেকটা সে রকম। নিজের স্ত্রী যতই রূপবান হোন না কেন পরনারীর প্রতি মন উচাটন থাকে।তাই বলে কী মানুষ অনাচার করবে? অবশ্যই না।এ জন্য প্রয়োজন সংযম সাধনা।তবে এটাও সত্য মানুষের আত্মার অতীত সম্পর্কও এখানে জড়িত। যা মানুষকে ভেতর থেকে তাড়িত করে। সব বিপত্তির জন্য সাধনা না করলে সংযম হয় না।মন,দেহকে স্থিরতায় না নিলে অতৃপ্তি আর আকাংখা বাড়তে থাকে। শূন্যের মাঝে পূর্ণ হতে হয় ।জ্বলন্ত প্রদীপ দিয়ে আরেকটা প্রদীপ জ্বালানো যায়।স্থির হয়ে যদি বসার মত ক্ষমতাই না থাকে তবে সুস্থ চিন্তা চেতনা জাগ্রত হয় না।এ জন্য অনেক পান্ডিত্য , শোভা সৌন্দর্যের পরও মানুষকে বিব্রত হতে হয় মননে, চলনে,বলনে।
আগে নিজের সাথে প্রেম,নিজের মাঝে বিলিন, নিজের মাঝে ভক্তি ,মুক্তি। নতুবা বহুগমন বহু বিবাহ ,অনাসৃষ্টি সব বিরাজমান থাকবে।নিজের মাঝে প্রেম না থাকলে অন্যকে প্রেম দেয়া যায় না। প্রেম থাকুক আর না থাকুক এই প্রকৃতির কারণে যে স্বামীস্ত্রী একেঅন্যের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না , তাঁদের মাঝেও কোন এক রাতে রতিক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং সৃষ্টি উন্মূ্ক্ত হয়। এখন পরিবার পরিকল্পনা বিশেষ ভূমিকা পালন করে বলে বাহির থেকে বোঝার উপায় নেই । আগের আমলে বছর বছর সন্তান জন্ম দিয়ে দাম্পত্য জীবনের শুরু নতুন করে হতো এবং ভাঙ্গন ভাঙ্গতে গিয়ে থেমে যেত। তালাকের সংখ্যা ছিল কম।যৌনতা নিয়ে ওশো খুব সুন্দর সমাধান দিয়েছেন।যদিও এমনটা হওয়া দূরে এবং সবাই এসব হজম করতেও পারবে না। উনি আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেছেন যে মানুষ সেক্সকে ফান হিসেবে নিলে পৃথিবীতে সব বেশ্যালয় বা প্রস্টিটিউশন বন্ধ হয়ে যেত। উনার কথায় তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নেমে আসে। শরীর বিক্রি করা কম কথা নয়! জীবন ধারন বা শুধু বেঁচে থাকার জন্য নিজের শরীরে কাউকে স্থান দেয়া এ বড় কঠিন কাজ। আপাত দৃষ্টিতে তাঁদের পাপী মনে হলেও এ পাপের ভাগীদার তথাকথিত অনেক নিয়ম।
এবার আসি আসল কথায়, সকাল বেলা হাঁটতে বের হলে পাখির মুখরিত শব্দে মনে হয় চারিদিক বাজনা সম্বর্ধনার মত বিশেষ কোনো ব্যবস্থা তৈরী করে রাখা হয়েছে। এ সুন্দর পৃথিবী দেখা থেকে বঞ্চিত বেশির ভাগ মানুষ। আমি গতকাল হাঁটতে হাঁটতে যখন এইটিফাইভ এভিন্যূ পাড়ি দিচ্ছি হঠাৎ শুনি চড়ূই পাখির বিচিত্র চিৎকার এবং চেয়ে দেখি চকচকে পুরুষ চড়ূই পাখিটা অন্যটাকে চেপে মেরে ফেলছে আর সে চিৎকার করছে। আমি নিজের মত হেঁটে গেলাম এবং হাসলাম। মনে পড়লো বছর তিনেক আগে জীববিজ্ঞানের কোনো প্রজেক্ট করতে গিয়ে মেয়ে পাখি নিয়ে রিসার্চ করেছে এবং আমি যখন পাখিদের খাওয়াই তখন বলছে, “Mom, Bird’s entire life passing through having s*x and eating”. ভোরবেলায় বিচিত্র স্বরে ওরা নাকি ওদের সঙ্গীদের ডাকে।ওদের খাবার বেশি লাগে বলেই কথাটা উঠেছিল।সে খুব আহত হয়েছিল জীবনে যখন স্কুলের ক্লাসে জেনেছিল হেভিং এ সেক্স গিভ বার্থ। সে আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে বলে আমি যে মিথ্যে বলেছি এ জন্য সে চরম আহত হয়েছে।সত্য বলার মধ্যে যে খারাপ কিছু নেই বাচ্চাদের এটা বোঝানোর তীব্র চেষ্টা সে আমাকে করে। কিন্তু আমাদের এশিয়ান সংস্কৃতি বড় বিচিত্র। মেয়েদের পিরিয়ড হলে বলা যাবে না। বোঝানো যায় না কেন লজ্জার? আমেরিকান এসব বাচ্চারা কনফিউজ হয়ে যায় মানে দ্বন্ধে পড়ে যায়। ওশোর মত বলতে হয় সব নিয়মের পাপরে বাপ।
আরো কিছু দূর হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শুনি সামনে দৌঁড়ঝাপের শব্দ এবং সামনে তিনটা কাঠবিড়ালী আগে আগে গাছে ওঠে গেলো এবং দু’জন মুহূর্তের অন্তিম সুখে নিজেকে বিলিন করলো। আমার উপস্থিতি বাঁধা দিলো কি দিলো না বুঝলাম না। আমি ননসেন্সের মত দাঁড়িয়ে দেখছি এবং এ মুহূর্তকে ক্যামেরা বন্দী করতে মোটেও কুন্ঠিত হলাম না।আমার ঘরের চালে যে পরিবার থাকে তাঁদের দু’টো করে বাচ্চা হয় । এদেরও দু’টো বাচ্চা হবে। কয়েক সেকেন্ড সৃষ্টির এ চিন্তা উবে গেলো।যদিও ওরা পরে আমার দিকে তাকাচ্ছিল।অপর পাশে একা যেটা সেটাও আমার মত দর্শক ।সঙ্গীর এমন বঞ্চনায় সে আহত তার চোখে মুখে এক আতংকের মত। ওদের দেখছে।আমি ঐ মুহূর্তে খুটিয়ে দেখতে পারিনি ও মেল না ফিমেল? ছবিতে ওদের বিচ্ছিন্ন ছবি আছে,অপরাধ করে ফেললাম কি না খোদা জানেন!আমার নানী বলেছিলেন, উনি ছোটবেলা ১২/১৩ বছর বয়সে মিলনরত সাপ মেরে ফেলেছিলেন। এবং উনার ধারনা এ জন্য উনি কঠিন সাজা ভোগ করেছেন। ছবিতে স্পষ্টত এরা দু’জন অপলক সাথের সঙ্গিকে দেখছে। মানব ইতিহাসের মত কী তাঁদের মধ্যেও প্রেম ভালোবাসা পরকিয়া স্বকিয়ার বিষয় আছে না স্বাধীন উদার ওশোর সূত্রের মত? আমি পথ চলমান ।
আজ এমন সব রোমান্টিক দৃশ্য সামনে আসাতে মনে পড়লো চন্দ্র মহারাজ প্রকৃতিকে জাগিয়ে তুলেছেন। এ পরিবর্তন শুরু হয় চাঁদের পূর্ণতা অপূর্ণতার সাথে । যখনই চাঁদ পূর্ণ হতে হতে দশদিনের পূর্ণতা লাভ করে একাদশে পা দেয় এবং আবার ক্ষয়ে যেতে যেতে শেষ চারদিন এ পড়ে, তখন পরিবর্তন আসে সমগ্র সৃষ্টির প্রাণীর ওপর। অবশ্য সব প্রাণীর ক্ষেত্রে সময়ের এ ডাক সকল মাসে প্রযোজ্য কি না জানি না। ছোটবেলা এক বুড়িমার একটা পাঠা ছিল এবং আমার প্রশ্নে বিব্রত হয়ে উনি আমাকে খুব বকা দিছিলেন। তখন না বুঝতে পারলেও এখন বুঝি আমি কী নির্বোধ প্রশ্ন করেছিলাম । সেটা মনে হলে আমি একা একা হাসি।উনাকে আমার বড় ভাইবোনরা হয়তো চিনবেন ।কাজি ইলিয়াসে এই মহিলা থাকতেন ।সম্ভবত ওখানে দিঘীর মত কোনো জায়গা ছিল। ঝোঁপড়ার মত একটা ঘরে উনি থাকতেন এবং ঐ পাঠাই ছিল উনার সম্পদ ।
তিনদিন পরেই পূর্ণিমা।পৃথিবীতে বেশির ভাগ ধর্ষণ সংঘটিত হয় চাঁদের এমন সব মূহুর্তে ।নারীদেহের পরিবর্তনে সৃষ্টির সীমানায় দেহমনে বিরোপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। রীতিমত আকর্ষণ বিকর্ষন সংঘর্ষ। পাপপূন্ণ্যের নামে অনেক ধর্মে বিবাহিত নারীদের আলাদা বিছানায় থাকতে হয় ।মনোবিজ্ঞান বলছে এ সময় মানসিক প্রশান্তি জন্য ভালোবাসা প্রয়োজন । খুঁজলে দেখা যাবে পারিবারিক দাম্পত্য কলহের খিটমিট স্বভাব নারীদের তীব্র হয় এ সময়। সাথের সঙ্গী পুরুষের এ মর্মে হয়তো জ্ঞানই নেই । প্রকৃতির এ পরিবর্তন নারীদেহ সংঘটিত হয় সবাই জানে তবে আদতে ভাঙ্গন গড়ন চলে পুরুষের মাঝেও , তাই কে কাকে বুঝবে এটাও প্রশ্ন।দেহমন ঘুরপাক খেতে শুরু করে।অনেকে শূণ্যতা , অসুস্থতা বোধ করেন। এগুলো স্বাভাবিক । বলা হয় এ সময় শরীরে খাবার প্রয়োজন নেই। চাঁদের সাথে মিল রেখে রোজা উপবাসের ব্যবস্থা এ জন্য হয়েছে। এ সৃষ্টি শূণ্যতা পছন্দ করে না,তাই মানবের মাঝে শূন্যতা বোধ কষ্ট তৈরী করে। যাদের চরিত্রগত ত্রুটি আছে এ সময়টা চেকিং এ রাখলে সমস্যা এবং অপরাধ প্রবনতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, নতুবা তা বেড়ে যাবে।
#প্রকৃতি_সৃষ্টি
লেখা এবং ছবি : সেলিনা আক্তার