26/01/2024
""কাঁদুক পাগলীটা""""
-এই শোন না?
-কি হয়েছে কি?
-তোমার চুলগুলো আঁচড়ে দেই!
-দরকার নেই।
-কেন?
-ভাল লাগে না।
-এই শোন?
-কি?
-তোমার পায়ে আলতা লাগিয়ে দেই?
-লাগবেনা।
-চল না ছাদে গিয়ে বসি।
-না।
-তোমার হাতটা ধরি?
-উহু।
-বলছি বাপের বাড়ি কি যাওয়াই লাগবে?
-হ্যা
-না গেলে হয়না?
-না।
-কেন যাবে?
-যেতে মন চাইছে।
-যদি যেতে না দেই।
-নিশ্চুপ।
-যেতে না দিলে এভাবে রেগে থাকবে তাইতো?
-জানিনা।
-কিছুদিন পরে গেলে পারতে
-নাহ এক্ষুনি যাব।
-হবেনা।
-আমি কান্না করব।
-কর কেউ আসবেনা দেখতে।
-মানে কি আকাশ?
-যাওয়া হচ্ছেনা।
-যাব।
-না বলেছি।
-কিন্তু কেন?
-জানিনা।
-কি বোঝাতে চাইছ?
-ভালবাসি তোমাকে।
-জানি কিন্তু আমাকে যেতে দিবে না কেন?
-ইচ্ছে আমার।
-বললেই হল?
-হ্যা।
-আমি যাব পারলে ঠেকাও।
-হুম।
এইযে মিষ্টি বউটা আমার। সকাল থেকেই
মুখভার করে আছে বাপের বাড়ি যেতে চায়।আমি
রাতেই না করে দিয়েছি।আব্বু আম্মু অবশ্য যেতে
বলেছে কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া ও কখনই
যাবেনা। লাবনী কে আব্বু আম্মু পছন্দ করেই এনেছে।
নিজেদের মনের মত বউমা।বিয়ের পরেও এক অন্যরকম অনুভূতির ভালবাসা যা লাবনী আসাতেই বুঝেছি।এ যুগে এতটা সংসারী মেয়ে লাখে একটা।লাবনীর প্রতি আলাদা
একটা দূর্বলতা সবসময় কাজ করে।বউপাগল
নামটা বোধহয় এসব গুনাবলী দেখেই প্রকাশ পায়।
তবে আমি বউ পাগল না। স্ত্রী মানে অর্ধাঙ্গীনি
আমার সবকিছুর ভাগ তাকে নিতে হবে।ভালবাসি
বলে এই নয় যে আদরে আহ্লাদে আটখানা।স্ত্রীর
মর্যাদা দিয়েই ওকে ভালবাসি।এই ভালবাসটা এক
অন্যরকমভাবে দুজনকে আরও কাছে টেনেছে।
কাল রাত থেকেই ও বলছে বাপের বাড়ি
যাবে।
কিন্তু আমি যেতে দিতে চাইছি না।ওকে
ছাড়তে ইচ্ছে করেনা।কিন্তু বুঝতে দেওয়া যাবেনা।
কত কি বলে ভোলানোর চেষ্টা করতেছি কিন্তু ও
তো বাচ্চা মেয়ে না সহজে ভুলে যাবে।জেদ
ধরে বসে আছে যাবেই।আমিও নাছোড়বান্দার মত
সায় দিচ্ছি না।জানি লাবনি মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে তবু
আমার যে ওকে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা।এদিকে
অফিসেও ছুটি দিবেনা সাথেও যেতে পারছিনা।মেয়েটা
যে কেন বোঝেনা আমায়।এখন ও আবার চেষ্টা করে
বৃথা হয়ে আমার দিকে ভ্যাংচি কেটে চলে গেল....
খাওয়া দাওয়া ছাড়তেই হল?(আমি)
-হুম সব ছাড়ব।(লাবনি)
-কেন?
-নিজেকে কষ্ট দিতে চাই।
-আব্বু আম্মুর কাছে কি খুব যেতে ইচ্ছে করছে?
-হুম।
-কিন্তু আমি তো যেতে দিব না।
-প্লিজ আকাশ একবার যাব।আর কোনদিনও
যেতে চাইব না।
-হবে না বললাম তো।
-উহু উহু উহু।
-কাঁদার কি হল?
-তুমি এত খারাপ কেন?
-হা হা হা।
-হাসবে না।তুমি জেনে বুঝে করছ এসব।
-কে বলল?
-তুমি জান আমি তোমার অনুমতি পাওয়া না পর্যন্ত
যেতে পারব না আর তাই তুমি এমন করছ তাই না?
-হুম।
-প্লিজ আকাশ।
-উহু।খেয়ে আস।
-খাব না।
-খেতে বলেছি তোমায়।
-খাবনা বললাম তো।
-বেশ খেওনা।
-হুম।
-ঘুমিয়ে পড়।
-না।
-বসেই রাত জাগ তাহলে।
-হ্যা।
লাবনীকে কাল সকালেই গাড়িতে তুলে দিব।
কিন্তু কিছু জানাইনি।শেষ মূহুর্তে ওর রাগী মুখটা
আরেকটু দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল।মেয়েটি আমার উপর
অনেকটাই রেগে আছে কিন্তু মুখে কিছু বলবেনা।শেষ
মূহুর্ত বললাম কারন কয়েকটা দিন তো ওকে না
দেখেই থাকতে হবে।সব সন্তানেরই তো নিজের
বাবা মায়ের জন্য মন কেমন করে ওরও ব্যাতিক্রম
নয়। তাছাড়া অনেকদিন হল বাপের বাড়ি যায়না
সবাইকে দেখতে ইচ্ছে করছে।আমাকে অনেকটা
সম্মান করে বলে অন্যদের মত বিনা অনুমতি
চলে যায়নি না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে।তবে
ওকে না খাইয়ে তো একটু রাখতেই হবে।একটা
রাত ও পারবে আমি জানি।যদিও ক্ষুদায় সারারাত
এপাশ ওপাশ করবে সকালে খেয়ে নিবে যাওয়ার
কথা শুনলে।
-কই হল তোমার ব্যাগ গোছানো?
-এইতো হল চল।
-হুম চল।
-দাড়াও আব্বু আম্মুকে সালাম দিয়ে আসি।
-হুম।
কিছুক্ষন পর বেরিয়ে পড়েছি। রিক্সা নিয়ে
কাউন্টারে পৌছেছি।ওকে বাসে তুলে দিয়ে
দাড়িয়ে আছি নিচে ওর দিকে মুখ করে।
-মনটা কি চাইছে জান?(আমি)
-কি?
-সারাজীবন তোমায় বুকের মধ্যে রাখি।
-ন্যাকা বুকের মধ্যে মানুষ কেমনে রাখে।
-রাখে গো রাখে ভালবাসে সব করা যায়।
-হয়েছে।শোন নিজের খেয়াল রাখবা কিন্তু।
-হুম তুমিও।
-খাওয়া দাওয়া করবা ঠিকমত।
-হুম।
সকালে উঠে পাগলীটা যেই শুনেছে ওর জন্য
গাড়ি ঠিক করে রেখেছি,লাফিয়ে উঠেছে
আনন্দে।
সত্যি বলতে ওর হাসিমুখটাই আমি দেখতে
চাই আর কিছু না।এখন যদিও কষ্ট হচ্ছে গাড়িটা যতদূর
পেরেছি চোখ রেখেছি এখন দৃষ্টির সীমানার বাইরে
চলে গিয়েছে।পাগলীটাকে মিস করছি এখন
থেকেই।
দুইদিন পর......
-হ্যালো(লাবনী )
-হুম বল।
-বল মানে কি হুম?
-বাহ ফোন করেছ তো কিছু বলার জন্য তাই না?
-চুপ।দুইদিন হল আমি এখানে একটু খোঁজখবর
তো নিতে হয়।
-আমি জানি তুমি ভাল আছ।
-কঁচু জান।
-কি করছ এখন?
-নাচতেছি।
-আমি দেখব।
-আকাশ...
-হুম।
-তোমার ফোন অফ থাকে কেন?
-অফিসে গেলে অফ করে রাখতে হয় মিটিংএ
থাকতে হচ্ছে দুইদিন।
-তাই বলে আমায় ভুলে যাবে।
-কই ভুলে গেছি।
-জানি আমি।
-ভুল জানো।
-জান কাল রাতে তোমায় খুব মনে পড়ছিল
তোমার দুষ্টুমিগুলোও খুব কান্না করেছি।
-কেন?
-তোমাকে মিস করছি।
-হুম।
-ভালবাসি তোমাকে।
-হুম।
-তুমি কি রেগে আছ বাবু?
-উহু।
-তাহলে কিছু বলছ না কেন?
-বলছিতো।
-তুমি কাল আসবে একটু খুব দেখতে ইচ্ছে
করছে তোমায়।
-ছুটি নেই।
-চেষ্টা করনা বাবু।
-বাদ দাও রাতে খেয়েছ?
-বলনা আসবে তো।
-খেয়ে নাও রাখছি।(কেটে দিলাম)
লাবনী কে ফোন দেইনি ইচ্ছা করেই।জানি
ওর সাথে কথা বললে দেখতে ইচ্ছে করবে।কিন্তু আজ
ফোন অন করতেই কল দিল।কেঁদে ফেলেছে মেয়েটা।
যেতে বলছে।হ্যা আমি তো যাব।তবে ওকে না
জানিয়েই।
একা ফেলে যাওয়ার মজা বুঝুক।কাঁদছে
কাঁদুক পাগলীটা।কাঁদলে ভালবাসা বাড়বে।
আমি আসছি
পাগলী।।।।।
#আকাশ