09/03/2024
ঈমান-কুফরের আদি-দ্বন্দ্বটাই অঞ্চল-ভূগোল-সমাজ ভেদে নানারূপে হাজির হয়। পাক-ভারত-বাংলায় এর রূপ গরুর মাংস।
গৌরগোবিন্দ বুরহানুদ্দিনের শিশুপুত্রকে হত্যা করে গরু আকিকার দেবার অপরাধে। বল্লালসেন একজন মুসলমানকে গরু কুরবানির জন্য নির্যাতন করে, যার জন্য যুদ্ধ হয়, প্রাণ দেন বাবা আদম শহীদ রহ.। গরুর মাংস খাওয়া 'মুসলিমবঙ্গের' জন্য কেবল একটা রেসিপি বা আইটেম না। বরং তাগুত অস্বীকারের ঈমানী চিহ্ন, তওহীদী আত্মপরিচয়, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দ্রোহ। এটাকে একটা রেসিপি মনে করলেন তো ভুল করলেন। এ অঞ্চলের রাজনীতিটা আর আপনি ধরতে পারলেন না। রাবি'র ঘটনাটা একই বস্তু। ঢাবি' র ক্যান্টিনে বছরখানেক আগেও গরুর গোশতের আইটেম ছিল বলে ভাংচুর করেছে। এই সিম্বোলিজমগুলো না বুঝলে রাজনীতি হবে না। এই অঞ্চলে গত তিন হাজার বছরের ইতিহাসে পক্ষ এই দুইটাই। গরুখোর পক্ষ। আর গরু-উপাসক ও সিম্প পক্ষ। আজ অব্দি একচুল এদিক-ওদিক হয়নি।
দ্বিতীয় সিম্বল হল, লম্বা দাড়ি। আমরা ইতিহাস থেকে জানি, হি.ন্দু জমিদাররা মুসলমান প্রজাদের দাড়ির দৈর্ঘ্যের উপর ট্যাক্স বসাতো। যতবড় দাড়ি, ততবেশি ট্যাক্স। আজও ডিজিটাল জমিদার ও সিম্প গং ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে লম্বা দাড়িওয়ালাদের 'জঙ্গি' বলে হ্যারাস করে। জমিদারদের মুখপত্র 'জঙ্গিবাদ' শনাক্তের চিহ্ন হিসেবে দাড়িকে উল্লেখ করে।
তৃতীয় সিম্বল হল, মেয়েদের পোশাক। এই ভারত উপদ্বীপে এমন সময়ও গেছে, জমিদার-ব্রাহ্মণ গং নিম্নজাতের নারীদের স্তন ঢাকতে দেয়নি। যারা স্তন-আবরণ পরবে, তাদেরকে স্তনকর দিতে হবে। বিশেষত দক্ষিণ ভারতে এর প্রকোপ ছিল অসহনীয়। আজও দেখবেন, নারীর শালীন পোশাক, নিকাব, হিজাবের বিরুদ্ধে এদের আস্ফালন, চুলকানি। জমিদার-সিম্প গং আজ ফিরে পেয়েছে হারানো জমিদারি। সকল অফিস-আদালতের বড় পোস্টগুলো দখল করে চাবুক ঘোরাচ্ছে মুসলমান প্রজাদের উপর।
চতুর্থ সিম্বল, লম্বা-পোশাক-টুপি। একটা সময় এদের পোশাক ছিল সেলাই ছাড়া দু'টুকরো কাপড়। পুরুষ পরত ধুতি, আরেকটা কাপড় গায়ে জড়াতো, ব্রাহ্মণদেরটাকে বলে নামাবলী। আর মেয়েরা পরত শাড়ি, ব্লাউজ ছাড়া। মুসলমান এসে শিখিয়েছে সেলাই করা কাপড় পরতে। মুসলমান শাসনে লম্বা পোশাক পরতে শিখেছে, মেয়েরা শিখেছে পর্দা-আব্রু-অন্দরমহল বিষয়গুলো। এই পোশাকও এ অঞ্চলের আরেক রাজনৈতিক সিম্বলিজম।
আরেকটা বিষয় হল, হি.ন্দু পূজাপার্বণ উপলক্ষে মুসলমান প্রজাদের থেকে জোরপূর্বক কর-চাঁদা নেয়া। আজও ক্যাম্পাসে সরস্বতীপূজা উপলক্ষে মুসলমান থেকে জোর করে চাঁদা নেয়া থেমে নেই। সাথে আছে জমিদারের লাঠিয়াল লীগ।
এটাই এ অঞ্চলের হাজার বছরের ইতিহাস। সিম্বলিজম অবচেতন মনে কী গভীর প্রভাব ফেলে, তা সচেতন পাঠক মাত্রই জানে। অথচ ইসলাম নিয়ে যাদের রাজনীতি, তারাই এ সকল সিম্বল পরিহার করার শতেক অজুহাত খুঁজে বের করে। আর দিবারাত্র জিগির করে 'পোশাকের মধ্যে ইসলাম নাই'। আরে ভাই, ইসলাম থাকুক আর না থাকুক, রাজনীতি যে আছে, এটুকু বুঝলেও তো হতো।
আজ যে গরুর গোশত মুসলমানের নাগালের বাইরে
আজ যে মুসলমানের হজ নাগালের বাইরে
আজ ইফতারের খেজুর নাগালের বাইরে
আজ সন্তানের মুসলমানি করানো যে এক আতঙ্কের নাম
আজ বোরকা-টুপি-দাড়ি যে উপর্যুপরি টার্গেট
আজ যে ৯৫% মুসলমান সন্তানকে মুখস্ত করতে হচ্ছে হিন্দু-উপাসনা পদ্ধতি নৃত্যের গ্রামার।
আজ যে মুসলমান সন্তানকে শেখানো হচ্ছে পয়লা বৈশাখ, বর্ষাউৎসব, শারদ উৎসব পালন করতে।
এসব বিচ্ছিন্ন কিছু না। এসবই হাজার বছর ধরে হয়ে এসেছে। এটাই এ অঞ্চলের ক্ষমতার টানাপোড়েন। এটাই এ এলাকার হাজার বছরের রাজনীতি।