14/08/2023
র্যাগিং - স্বপ্নদ্বীপ, আমি ও যাদবপুর ইউনিভার্সিটি
নবকুমার হালদার
বাংলা অভিধান ঘাটতে ঘাটতে র্যাগিং শব্দের এই অর্থগুলো খুঁজে পেলাম - অত্যধিক হৈ-হুল্লাড় করা, জালাতন করা, তিরস্কার করা, রসিকতার নামে অত্যাচার করা। র্যাগিং শব্দটা খুব পরিচিত কিন্তু অভিধানিক অর্থগুলো হয়তো অনেকেই জানেননা। র্যাগিং শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয় Professional life থেকে সমাজের সর্বক্ষেত্রে এটা প্রচলিত।
আমি Jadavpur University Engineering স্টুডেন্ট এবং আমি হোস্টেলে থাকতাম। সময়টা 1998। আমার প্রথম Kolkata আসা। Yes, গর্ব করি আমি Jadavpur University স্টুডেন্ট। আমার মতো গরিব একজন below average student এর কাছে এটা স্বপ্ন ছিল। বড়জামাইবাবু আমাদের বাড়ির অন্য সবার মতো আমাকে প্রথমদিন হোস্টেলে ছেড়ে আসেন। ভীষণ Excited ছিলাম নতুন জীবন শুরু করতে চলেছি কিন্তু মনখারাপ ছিল বাড়ি এবং পুরোনো বন্ধুদের ছেড়ে আসতে হয়েছিল। সত্যি বলছি এর আগে র্যাগিং শব্দ এবং র্যাগিং কি আমি জানতাম না। Recently আমি একটা MNC-তে as a GM join করেছি। Professional life এও র্যাগিং আছে তবে একটু অন্যরকম। এখানেও নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে কিন্তু কোথাও একটা System bindings আছে যার জন্য এটা প্রকট নয়। স্বপ্নদ্বীপ এর ঘটনাটার কিছুদিন আগেই আমি ভেবেছিলাম র্যাগিং নিয়ে কিছু লিখবো কিন্তু সময় পাইনি। হটাৎ করে news টা দেখে সত্যি খুব মর্মাহত।
আমার হোস্টেলের প্রথমদিন। কাওকে চিনিনা। হটাৎ উপর থেকে চিৎকার শুনতে পেলাম যে “নতুন মুরগি এসেছে!” কেও চিৎকার করে বলছে “ওই মুরগি, এদিকে আয়।” গেলাম। দেখি একজন দাদা খালি গায়ে, শুধু underwear পরে cigarette খাচ্ছে, চোখমুখ লাল হয়ে আছে। পরে বুঝেছি ওটা cigarette ছিলোনা, ওটা গাঁজা ছিল। আমাকে জিগেস করলে “কোন dept.?” আমি কিছু answer করতে পারিনি কারণ আমি বুঝতেই পারছিলাম না questione টা কি ! Department টাকে short form এ dept. বলা হয়, পরে বুঝেছি। শুরু হয়ে গেলো আমার র্যাগিং। অকথ্য গালিগালাজ, মারধর। মনে হচ্ছিলো আমি বোধহয় ভুল করে অন্য কোথাও ঢুকে পড়েছি। বুঝতে পারছিলাম না আমার অন্যায়টা কি ! আমি ওনাকে “আপনি”বলেছিলাম, তারজন্যও মার খেলাম। র্যাগিং নাকি সিনিয়রকে রেস্পেক্ট করার জন্য করা হয়, আমি তো জানি “আপনি” শব্দটা আমরা কাওকে সম্মান জানিয়ে ব্যবহার করি। তাহলে আমি মার খেলাম কেন? জানিনা ! দাদা বললো তেল দিয়ে বডি-ম্যাসাজ করে দিতে। তখন দুপুরবেলা। Lunch-break এ হোষ্টেলে এসেছি। বললাম ক্লাস এ যেতে হবে এখন, ফিরে এসে করে দেব। আবার চড়, গালিগালাজ। বাধ্যহয়ে শুরু করলাম ম্যাসাজ। শুরুহলো পরিচয় পর্ব। নাম, ধাম, বাড়ি। বাড়িতে কে কে আছে। দিদি আছে কি না। দিদির বয়স কত ! দিদির বিয়ে হয়েছে কি না ! এগুলো normal। কিন্তু এরপরের প্রশ্নগুলো নোংরা। বলতে চাইনা কিন্তু আজকে বলবো কারণ তাহলেই বুঝতে পারবেন কতটা মানসিক যন্ত্রনা হলে স্বপ্নদ্বীপ-রা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে। তবুও পুরোটা বলতে পারবো না কারণ ওই শব্দগুলো বলা যায়না। শুধু এতটুকু বলছি জিজ্ঞেস করা হয় “দিদির শরীরের কোন কোন অংশ আমি দেখেছি, দিদির শরীরের কোন কোন অংশ আমার শরীর ছুঁয়ে গেছে, দিদির সাথে S*x করেছি কি না, ভেজা শরীরে দিদিকে দেখেছি কি না ইত্যাদি।” ছিঃ!! তোমাকে এগুলো বলতে হবে, শুধু হ্যাঁ বা না বললে চলবে না তোমাকে description দিতে হবে আর দাদারা এটাই enjoy করে! আর যদি বলো girlfriend আছে তাহলে প্রশ্নগুলো দিদির প্রশ্নের কয়েকগুন বেশি নোংরা হয়। girlfriend এর সারা শরীরের বর্ণনা দিতে হবে আর সেটা থেকে দাদারা s*x enjoy করে। বলা যায় দূর থেকে R**e করা হয়। ছিঃ ছিঃ!! বাবা-মা কে গালি দেওয়া, বাড়ির সবাইকে গালি দেওয়া এগুলো খুব normal। কেও কেও এগুলো সহ্য করতে পারেনা আর তখন সে স্বপ্নদ্বীপ হয়ে যায়। দেশের অন্যতম সেরা Jadavpur University!
আমি এতক্ষন র্যাগিং এর One percent ও বলিনি। যে রকম ভাবে physical torture করা হয়, you can’t imagine! খেলার নাম করে নতুনদের লড়িয়ে দেওয়া হয় অন্ধকার ঘরে, কারো মাথা ফাটে, কারো হাত, কারো পা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতো থাকে। কাওকে Complaint করা তো দূরে থাক, কারো সাথে শেয়ার করা যেতনা।
স্বপ্নদ্বীপ এর মতো একইরকম অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল। স্বপ্নদ্বীপ আজ নেই কিন্তু আমি বেঁচে আছি। আমিও স্বপ্নদ্বীপ হয়ে যেতাম সেদিন। সেদিন দুপুরবেলা, আগেরদিন রাতে আমাকে ভীষণরকম mental & physical torture করা হয়েছে। দাদাদের কিছু demand আমি সেদিন মানতে পারিনি। আমাকে physically এমন নোংরা কিছু করতে বলা হয়েছিল, আমি করতে পারিনি। জ্বলন্ত Bulb-এ আমাকে kiss করতে বাধ্য করেছিল। সেই দিনটার কথা ভাবলে আমি এখনো আঁতকে উঠি। আমার ঠোঁট ফুলে কলাগাছ হয়েছিল। কিচ্ছু খেতে পারছিলাম না। সেই থেকে আজও আমার ঠোঁট টা ঝুলে আছে। সেদিন আমি Class পর্যন্ত যেতে পারিনি। Room এই ছিলাম। 1st year student দের room lock করার permission ছিলোনা। হটাৎ দুজন দাদা বললে, “অনেক rest করেছিস, কাল রাতে তুই আমাদের কথা শুনিসনি, হিসেবটা করার আছে, চল আমাদের সাথে।” আমি যে না করবো সেরকম mental or physical strength আমার ছিলোনা। চললাম ওদের সাথে। আমাকে ওরা নিয়ে গেলো ছাঁদে। আমাকে একদম ছাঁদের কিনারে নিয়ে এসে বলে, ওখান থেকে ঝাঁপ দিতে। কাল রাতের Punishment। আগেরদিন রাতে এতটাই torture করা হয়েছিল আমার আর বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। আমার চোখ বেঁধে কার্নিশের উপরে তুলে দেওয়া হয় আর আমি, জীবনের সব আশা ছেড়ে ঝাঁপ মারি। কিরকম পরিস্থিতি হলে মানুষ এটা করতে পারে, সেটা বোধহয় আমার আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি সেদিন স্বপ্নদ্বীপ হতে হতে বেঁচে গেছিলাম। আসলে সেদিন ওরা আমাকে চোখ বেঁধে Water tank এর কার্নিশে তুলে দিয়ে ঝাঁপ দিতে বলেছিলো, আমি কিন্তু জানতাম যে আমি ছাঁদ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছি। মৃত্যুকে accept করে নিয়েই আমি সেদিন ঝাঁপ দিয়েছিলাম। একমুহূর্তেও ভাবিনি আমি বেঁচে থাকবো। স্বপ্নদ্বীপের সঙ্গে কোথাও কি সবকিছু মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে না !!??
আমরা গ্রাম থেকে শহরে আসি কিছু স্বপ্ন নিয়ে। আমার স্বপ্নের সঙ্গে আরো হাজারটা স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। শুধু স্বপ্নদ্বীপের স্বপ্নের মৃত্যু হলোনা, মৃত্যু হলো ওর মা-বাবা সহ আরো অনেক প্রিয়জনের স্বপ্ন।
সিনিয়রদের কি করে respect করতে হবে সেটা আমরা আমাদের বাড়ি থেকেই শিখে আসি, আর নিজেকে আরো ভালো করে গড়ে তোলার জন্যই তো Jadavpur University-তে স্বপ্নদ্বীপ,আমি,আমরা আসি।
আমাদেরকে সিনিয়রদের respect করতে শেখানোর দায়িত্ব তোমাকে কে দিয়েছে, সৌরভ? উত্তর চাই !!
আর যাদের উপরে ভরসা করে আমরা Jadavpur University-তে আসি সেই Management Committee, Professor দের কি কোনো responsibility নেই? সর্বোপরি গভর্মেন্ট এবং প্রশাসন কি করছেন? এখনো ঘুমিয়ে আছেন ? কুম্ভকর্ণের ঘুম আর কবে ভাঙবে ?
আজ আমার মেয়ের Class Eight। Jadavpur University র মতো college এ পড়ার স্বপ্ন দেখে। আমি জানি ও একদিন ওর স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছে যাবে কিন্তু তারপর? আমি কি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবো? এই প্রশ্নটা আমার মতো হাজার মা-বাবার।