20/06/2022
🌻🌻 কাঁসর ঘন্টা বা ঢাক ঢোলের শব্দে যদি ভগবান আসতো, তবে Tram বা Bus-এর শব্দে কোলকাতার রাস্তাঘাট ভগবানে ভরে যেত।🌻🌻
````````````````````````````````````````````````````````````
৪৬নং ভূপেন বোস এ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, কোলকাতা ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২
``````````````````````````````````````````
কি চাওয়া দরকার, কি পাওয়া দরকার, সেটাই আগে জানা দরকার। আমরা ভগবানকে চাই, ভগবানের দর্শন চাই। ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য এই বাহ্য অনুভূতি দিয়েই সব চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্খার সমাধান মেলে। ভগবানকে কিভাবে পাওয়া যায় ? পাপ-পুণ্য থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যায় ? এরজন্য কি দরকার ? ফলাফল সব শুনা কথার উপরেই আছি। আমরা সত্যকে প্রত্যক্ষভাবে জানতে চাই না। সেই সত্যকে আগে জানা দরকার।
মূর্তিপূজায় সুরাহা হচ্ছে না। এতে মনগড়া শান্তি পাচ্ছি। কিন্তু মীমাংসা হয় নাই। দৃষ্টান্ত দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস করাবার জন্য। কিন্তু তাতে সমাধান হচ্ছে না। সব সময় জোর করে চেষ্টা দ্বারা যে সমাধান, সেটা সমাধান নয়। জিহ্বায় দিলে টক মিষ্টির যে স্বাদ, কাউকে বলে দিতে হয় না। বাংলার পূজা একপ্রকার ; বিহারের পূজা একপ্রকার। ইহাতে বিজ্ঞানসম্মত উত্তর দ্বারা সকলকে আনা যাচ্ছে না। যে মতে সকলে একমত হয়, তাহাকে
বলার দরকার হয় না। তৃষ্ণাকে বলার দরকার নাই।
সূর্যকে প্রচার করবে কে ? পরিদৃশ্যমান জগৎকে কে কিভাবে প্রচার করবে ? ধর্ম মাকড়সার জালের মতো সংস্কারের জালে এমনভাবে আটক হয়ে পড়েছে যে, সেখান থেকে আর বার হতে পারছে না। এখানে শিশুকে বিকৃত করে ভিক্ষার জন্য, পরে সে মায়ের কাছেও আসতে পারে না। যে খোঁড়া, সে সুস্থ হলেও খাটতে পারে না, তখনো সে খুঁড়িয়েই চলে। আমাদেরকেও সংস্কারে খোঁড়া করেছে। আমরা কিন্তু ইহাকেই মানিয়ে নিয়েছি। এই সংস্কারের বেড়াজাল হতে আগে রেহাই চাই।
`````````````````````````````````````````````````````````
নদীতে ঝর উঠলে লোকে'হা ভগবান রক্ষা কর', বলে। কিন্তু ভগবান তোমার জানাতে নাই, শোনাতেই শুধু আছে। জানাকে সঠিকভাবে জানলে, বুঝলে তবেই চাইতে পার। America না দেখলেও, সেই দেশ আছে, জানি। তাই দেখার স্পৃহা জেগে ওঠা স্বাভাবিক। 'ভগবান যে আছে', কই সেরকম করে স্থির বিশ্বাসে তো তুমি বলতে পার না ? নিজেকে বুঝাচ্ছ, 'এই চন্দ্র সূর্য, মানুষ➖ ভগবান না থাকলে কে করল ?' যে বললো সেই-ই পরে Pick-pocket করলো। এই তো অবস্থা। মরাকে ছুঁলে অশুদ্ধ হতে হয়। কিন্তু ঘার থেকে মরা নামিয়ে রেষ্টুরেন্টে খেয়ে নিল। সে বেলায় নির্বিকল্প, ক্ষুধার তাড়নায় সব ভুলে গেল।
মরতেই যে হবে, সে বেলা কারও দুশ্চিন্তা নাই। Arrest হবার পর warrent-এর (ওয়ারেন্টের) ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। অমুক দিন অপারেশন (operation) হবে, সে চিন্তায় কাহিল হয়ে যায়। বলার সময় বলে, "প্রভু, তুমি সব দেখছো, তুমি সব করাচ্ছ।" করার সময় নিজের মনে ছল বল কৌশল কিছুই বাদ নাই। প্রয়োজনের সময় কৈ ভগবান এসে তো বাচায় না। তখন বলে, "পূর্ব জন্মের দুস্কৃতির ফল, কর্মফল।" তাহলে তাহাকে ডাকবো ? একটা পাথর পেলে ১০,০০০ বছরের পুরণো বলে তাকে সিঁদুরের ফোঁটা দেয়। ১ লক্ষ বছরের পুরণো শালগ্ৰাম শিলা পেলে কলকাতায় procession হয়ে যায়। কিন্তু কোন পাথর পৃথিবী হতে পুরণো নয়। কৈ তারা পৃথিবীকে তো পূজা করে থাকে।
কীর্তনে প্রথম সাড়িতে গান হচ্ছে, পতিতে তারিতে এল তারিণী।" আর শেষের শাড়িতে গেয়ে চলেছে ২৫শে তারিখে হবে বারুণী।" রামবাবু আরা গেছে। শুনলো মারা গেছে। রামবাবুর স্ত্রী শাখা সিঁদুর ফেলে বিধবা সাজলো। এক গ্ৰামে লোকেরা হাতি দেখে অবাক হল। তর্কালঙ্কার মশায় নাকে নস্যি টেনে হেসে বললেন, "গত রাত্রের অন্ধকার এটায় জমাট বেঁধে আছে।" কোথায় গেল জপ, তপ ; আবাহন বিসর্জনের অর্থ। হয়ে গেল সব পাঁচনের ফর্দ। Left Right করে সব চলছে কোথায় জানা নাই। এসব হল সংস্কারের বিষক্রিয়ার ফল। আমাদের ধর্মে 'গুরুগিরি' ব্যবসা হয়ে গেছে। তাই দুর্দিনের সৃষ্টি হয়েছে। সূর্য না উঠলে দেশ মরে যেত। কিন্তু সূর্যকে সকলে আড়াল দিয়ে চলে ছায়াতে গাছ হয় না।
``````````````````````````````````````````````````````````
স্বাধীন চিন্তায় থাক। যা জানা নাই, তাকে প্রত্যক্ষ বলে জানছি না, মানছি না। কিন্তু এটা বুঝি যে, না বুঝার ফল ভুগছি। সুতরাং সত্যকে জেনে নাও। 'ভগবান', 'ভগবিন' বলে সকলে কেঁদেছে। কিন্তু ভগবান আসলো না কেন ? সে কান্নায় আন্তরিকতার অভাব তো নাই। মায়ের যে ছেলেটি মারা গেল, মাতার জন্য কেঁদে পাগল হয়ে যায়। তবুও সে আসে না কেন ? সে ঐ রূপে আর নাই বলে।
বৃত্তি সকলের চিরকাল একই ছিল। সকলেই ২/৩টা বা আরও বিবাহ করতো। ৬০,০০০ বৎসরেও দশরথ লব কুশকে দেখে নাই। কিন্তু এখন ৩০/৪০ বৎসর বয়সেই নাতি পুতি দেখছে। সুতরাং এখনকার ৩০/৪০ বৎসর আগেকার ৬০,০০০ বছর হতেও অনেক দ্রুত অনেক Matured. Velocity of time এখন অনেক বেশী। তাদের বৃত্তি আর তোমাদের বৃত্তি এক হলে, তারা যদি ভগবানকে দেখে থাকে, তাহলে তোমরাও দেখেছ। তারা আর তোমরা একই ; আলাদা কিছুই নয়। তারা যদি ভগবানকে দেখে থাকে, দেখতে হবে তারা কোন্ টাকে ভগবান বলেছে ? তারা এই আকাশ বাতাস সূর্যকেই ভগবান বলেছে। তারাও বলতো শিব, কালি আসল।
যে সকলকে প্রত্যক্ষ দেখা যায়, তাহাই দর্শন। বাবা আছেন', তাকে লোকের কথায় বিশ্বাস করতে হয় না। লক্ষ লক্ষ লোক যদি বলে, 'তিনি তোমার বাবা নন', তাহলেও তাদের কথায় বিশ্বাস করবে না। পূর্বের লোকেদের সাথে তোমাদের সকল বিষয়েই মিল আছে। ১০টা মিলে থাকলে ১১টা মিলবে না কেন ? যেমন তারা ভগবান হলেন বা ভগবান দেখলেন। সব মিললে ১১টাও মিলতে হবে, এটাই নিয়ম। বিশ্বাস কথাটা অন্ধ ভাব নয়। প্রত্যক্ষতার মধ্যে বিশ্বাসই হ'ল বিচার।
তোমরা এই পৃথিবীতে এসেছ (জন্মগ্রহণ করেছ) জান, এখানে আছ জান, যাবে (মৃত্যু হবে) যে, সেটাও জান। কার উপর নির্ভর করে এসব কথা বলছো ? তোমরা বায়ু (মরুৎ), তেজ (আলো), জল (অপ্), স্থল (ক্ষিতি) এবং মহাশূন্য (ব্যোম) এই পঞ্চভূত থেকে এসেছ। তোমার মাতা পৃথিবী। পৃথিবীর পিতা হ'ল সূর্য। সুতরাং তোমার পূর্বপুরুষ হল সূর্য। আবার মৃত্যুর পর মিশে যাও সেই পৃথিবীর জল, বায়ু, তেজে। পৃথিবী ছিল জলে। জল বায়ুতে, বায়ু তেজে। সুতরাং তেজই হ'ল আরাধনা। তেজ থেকে বার হলে ; আবার তেজেই ফিরে যাবে। এই দর্শন, স্পর্শন ঘ্রাণ, শ্রবন ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতির সকলের মূলেই আছে তেজ। তেজই প্রাণ, তেজই মন, হ'ল অস্তিত্ব। সুতরাং তেজই হ'ল আমাদের আরাধনা, আমাদের আরাধ্য বস্তু। বুঝতে পেরেছে ?
সহজ চিন্তার দ্বারাই তেজকে আশ্রয় কর। চৈতন্য কি ? তাকে তো দেখা যায় না। কিন্তু বুঝা যায়। তেজও ঠিক তাই। দু'জনার রূপ গুণ এক। সুতরাং তাহারা একেতে সংশ্লিষ্ট আছে। একটা বোধে বোধগম্য সত্তায় ব্যক্তিগত অনুভূতি, চেতনার চৈতন্য তেজ আকারে আকার নিয়েছে। সৃষ্টি হ'ল এর নমুনা। দুধ-ঘাস-মাটি-জল অনেক প্রভেদ। কিন্তু ঘাস থেকেই দুধ হ'ল। এই জাগতিক বুদ্ধি হতে অণিমা, লঘিমা➖ সব বিভিন্ন শক্তি, তেজ থেকেই এল তেজও এল অনন্ত হতে।
``````````````````````````````````````````````````````````
তেজের পর তেজ recurring হয়ে speed maintain করে চলেছে➖ এটাই হ'ল life. বহু অণু-পরমাণুর মিলিত অবস্থা হ'ল আত্মা। ইহাদের দেহের মধ্যে সাড়া পাওয়া যায়। অন্তর আত্মাতে চৈতন্য➖ আমরা তেজ রূপে সূর্য হয়ে আছি। সেই তেজ ৯৭°/৯৮° তাপ হয় এই দেহেতেই আছে। তেজ যদি আমরা হই, তবে আমরা তেজকেই উপাসনা করবো। আমরা নিত্য শুদ্ধ বুদ্ধ অবস্থায় আছি। আমরা হলাম এক একটি তাঁরা ( নক্ষত্র) ; যার কিরণ বার হচ্ছে সদা সর্বদা➖ দর্শন,স্পর্শন, ঘ্রাণ, শ্রবন,স্বাদ ইত্যাদি নামে।
আমাদের শুদ্ধ ভাবই প্রকৃত ভাব। জীব হ'ল চির শুদ্ধ বীজ। ছেড়ে দাও সেই বীজকে মহাশূন্যে। সে আপনি ফুটবে। এখানে আমরা নিজেকে ভুলে গিয়ে জোর করে 'ভগবান', 'ভগবিন' বলছি। কিন্তু কে ভগবান ? কাকে ডাকবো ? এই দেহ নিয়ে সীমাবদ্ধ অবস্থায় নানারকম জ্বালা যন্ত্রণায় আক্রান্ত হয়ে আছি। আকাশের মত মনকে ব্যাপ্তমান করে ছেরে দাও। কাঁদনের কথা বলা সহজ। তাতে তাড়াতাড়ি রেহাই পেতে পারি। শুধু সেই কারণেই বিরহ মিলনের কথা, স্বর্গের কথা, পাঁচালী-ছন্দের কথা বলবো না। আমার কথায় মনে হবে নাস্তিকতা। কিন্তু ইহা পূর্ণ আস্তিকতা। কুমার মূর্তি গড়ে, পা দিয়ে মাটি ছানে। পরে নিজেই নিজের গড়া মূর্তির কাছে হাত জোড় করে। এই ভাবই হ'ল মূর্তি পূজার ভাব।
আলাদা করে কোন ভগবান কে ডাকতে হবে না। তোমরা নিজেরাই Diamond হয়ে যাবে। রাজার ছেলে রাজাই তোমরা এক একজন বিরাট। বিরাট হয়ে এসেছ, বিরাট হয়েই আছ➖ তাহাই শুধু জেনে নাও, বুঝে নাও। এখন না বুঝলেও বিরাটের বিরাটত্ব ঠিকই আছে। শুধু অজ্ঞান-আবরণে ঢাকা আছে। সময় মতো সেটাও কেটে যাবে। মেঘের মধ্য হতে জ্ঞান সূর্য আপনিই উদয় হবে। বিশ্ব জগতের সকল বস্তু নিয়েই আমরা এসেছি। তাহাই শুধু জানবো। তাহাই শুধু বুঝবো। সেই স্বরূপকে জানার অনুভূতিকেই আমরা জাগাবো। তখন দেখবো। আমাতেই ব্রহ্মাণ্ড প্রকাশিত হয়ে রয়েছে। আমরা যে ব্রহ্মের সন্তান, আমরাই যে পূর্ণব্রহ্ম।
এখনই মূর্তিকে ভয়েও অনেকে নমস্কার করে। আবার প্রণামের সময়ও অনেকে দেখে, কেউ দেখে ফেললো কি না। ভগবান কে গালি দিলেও ভগবান রাগে না। আদর করলেও কথাটি বলে না। যে ভগবানে আমাদের প্রত্যক্ষনুভূতি জাগে না, সে ভগবানে দরকার কি ? আমি তোমাকে খুন করলেও ভগবান এসে বাধা দেবে না। আবার তোমাকে মৃত্যুর হাত হতে বাঁচালেও আমাকে পুরস্কৃত করবে না। সুতরাং বাঁকা পথ, অজানা পথ ধরবে না। প্রকৃতির রূপকেই প্রত্যক্ষভাবে চিন্তা কর। সুন্দর ও সুস্থ হও। দেহবীণাযন্ত্রকে ঠিক করো। এখানকার সাধু-সন্ন্যাসী দেশকে নির্জীব করেছে। আমিও মৃদঙ্গের (খোল করতাল নিয়ে কীর্তনের) বংশ। কাঁসর ঘন্টা বা ঢাক ঢোলের শব্দে যদি ভগবান আসতো, তবে Tram বা Bus এর শব্দে কোলকাতার রাস্তাঘাট ভগবানে ভরে যেত।
`````````````````````````````````````````````````````````
তোমরা যে ভালবাস, কি ভালোবাস, কাকে ভালবাস বলো তো ? চামড়া ফেলে দিলে একজন আর একজনকে আর ভালবাসে না। তখন সাহিত্য কবিতা সব চলে যায়। এক চামড়ার উপরেই আছে এই সাহিত্য, এই কবিতা। তোমার জীবন চরিতকে এইরূপ চামড়া ছাড়া করে বুঝে নাও। এখানের চলতি ধারার আইন অনুযায়ী গেলে ভগবান দর্শন আর হবে না। কারণ বহু কিছু ছাড়তে হবে। ছাড়াছাড়িতে যারা বলেন, ' পেয়েছেন', সেটা বা সেই পথ তোমাদের জন্য নয়। এই মীমাংসা নিয়েই সব গোলমাল হয়েছে। সব ধারা মীমাংসাতে গিয়ে আটকে আছে।
কেহই কিছুই ছাড়তে পারে না। দেহের কোন বৃত্তি ছাড়া যায় না। কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা-দ্বেষ➖ এগুলি দেব-দর্শনের অন্তরায় হতে পারে না। কারণ এগুলি কেহই ছাড়তে পারে না। যতক্ষণ দেহ আছে, এসবই থাকবে। যদি সেগুলো খারাপ হয়, তাহলে স্রষ্টাই সেজন্য দায়ী। কারণ তিনি এসব বৃত্তির সংযোগে আমাদের পাঠিয়েছেন। এই নিয়েই সৃষ্টি। আজ ধর্মের মধ্যে ছল চাতুরী এসে পড়েছে। সমস্ত বৃত্তি সব সময়ই সকলের থাকবে। কোন কিছুই কেহই ছাড়তে পারে না ; যত বড় বড় মহানই হোক না কেন।
সঠিক পথের সন্ধান মিলছে না। সব যেন দিশেহারা হয়ে গেছে। সহজ Line কে সহজ অবস্থাকে জটিল হতে জটিলতর করেছে। এখন আর রাস্তা খুঁজে পায় না বলে, ভাবাতীত, জ্ঞানাতীত, অবাঙ্মানসগোচরঃ ইত্যাদি বলছে। কিন্তু তারা পারেনি বলে আমরাও পারবো না, তা হবে কেন ?
আমাদের সব কিছু হয়েই আছে। যা আছে সেই সবকেই আবার জানাবো। দুঃখ বা ইন্দ্রিয়ের দৈহিক ব্যাপার আধ্যাত্মিকতা নয়। আমি বাচ্চা বয়স হতে অনেক দেখেছি। তুমি তোমাতে তোমার অনতর্জগতে স্থিত হও। সব জানলে, সব বুঝলে, কিন্তু সংস্কার এমনই যে, তবুও ধাক্কা দেবেই।
এই জগতের সুখ দুঃখ আঘাত➖ সব দৈহিক ব্যাপার। কে সুখ বা দুঃখ পায়, খুঁজলে পাওয়া যায় না। আমার চতুর্দিকে বহু মূর্তি ছিল। বাচ্চা বয়স হতে বহু ভগবান দেখেছি। কত মূর্তি এসে দৌড়াদৌড়ি করেছে। কিন্তু আমার কাছে কোনোটারই দাম নাই। বিরাট স্রোতে সব আপনি চলে যায়। কিছুতেই কিছু হবে না। শুধু স্বাদকে বুঝা চাই। তত্ত্ব এমনই জিনিস যে, সব মূর্তি ভেসে গেল।
মূর্তি হচ্ছ তুমি। তুমি তোমাতে প্রতিষ্ঠিত হও। এই বিশ্বরূপ তোমাতেই প্রতিষ্ঠিত আছে। এগ জীবজগৎই বিরাট। যতদিন পর্যন্ত এই দেহের তত্ত্বকে এই দেহমূর্তির তত্ত্বকে বুঝা না যায় সেই গভীরতায় পৌঁছান না যায়, ততদিন কিছুই হবে না।
`````````````````````````````````````````````````````````
জীবনভর যে যা করছো, সকলে রিসার্চ করে যাও, Analysis করে যাও, যাকে খাচ্ছ, আবার সেও তোমাকে খাচ্ছে পূর্ণ তৃপ্তির সহিত। তুমি যে জিনিস খাচ্ছ, সেটাই germ হয়ে কৃমি হয়ে তোমাকে খাচ্ছে। কেউ মরে না শুধু রূপের পরিবর্তন হয়। যা খাচ্ছ, সকলেই নড়ে চড়ে, সকলেরই প্রান আছে। এই খাদ্য খাদক, খাওয়া খাওয়িতে, আদান-প্রদানেই সব চলেছে। তুমি খেয়ে তৃপ্ত, খাদ্যও তোমাকে খাইয়ে তৃপ্ত➖ এইভাবে বৃত্তির নিবৃত্তি এই ভাব চলছে প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে।
প্রতি ক্ষণে ক্ষণে জন্ম ; এই রূপের নিয়ম। আমরা এত রূপে রূপান্তরিত হতে হতে রূপ নিয়ে যাচ্ছি। আমরা একবার গহ্বরে একবার সৃষ্টিতে। প্রতি মুহূর্তে জন্মাই আবার প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুতে বা রূপে রূপান্তরিত হচ্ছি। শুক্র কীট হতে, কি কি হতে কি হতে আবার মিলিয়ে গেলাম। একবার রক্ত, একবার বীর্য, একবার মাংস➖ প্রতি মুহূর্তে মাতৃগহ্বরে ; আবার প্রতি ক্ষনে বহির্গত হচ্ছি অজানা হতে জানতে। আবার অজানা গহ্বরে ; আবার জানতে বহির্গত হচ্ছি।
জীবনের প্রথম হতে শেষ ১ মিনিটের কোটি ভাগের এক ভাগে, আগে যাহা ছিলাম এখনও সেইভাবেই আছি। জীবনভর শুধু রূপে রূপে রূপান্তরিত হতে হতে যাচ্ছি ভাল করে বুঝে নাও।
সেই কীটানুকীট অবস্থায় আজও রহিয়াছি একবার মাংস একবার বীর্য হয়ে যাচ্ছি। প্রত্যেকে নিজের জীবনকেই পাঠ করো। তাহলেই প্রকৃতির গ্ৰন্থকে পাঠ করা হবে। মুহুর্তে মুহূর্তে গহ্বরে আবার বহির্জগতে। প্রতি মুহূর্তে অজানাতে (গহ্বরে) এবং জানাতে আছি। প্রতি মুহূর্তে জন্মে আবার মরছি এবং যাচ্ছি অনুভূতিতে দর্শনে➖ জানার পর আবার অজানাতে।
`````````````````````````````````````````````````````````
আদি বীর্যকীট➖ সেই অবস্থার রূপের মাঝে রূপান্তরিত হতে হতে সেই অবস্থাতেই আছে অনন্ত অগণিত কোটি কোটি বছর ধরে একই ভাবে চলছে। যেমন ৮০ বছর x ৩৬৫ দিন➖ এক ব্যক্তিই এত দিনের মধ্যে রয়েছে। সেই শিশুই চিরদিন রয়ে গেল। মিনিটে বা সেকেন্ডে বা পলে (মুহূর্তে) নিয়ে যাও➖ একই ব্যক্তি আর একই ব্যক্তিত্ব রয়ে গেল। সূর্যে তাপে জলে বাতাসে মাটিতে শুধু রূপান্তরিত হতে হতে যাচ্ছে।
সকলেই গিয়ে সূর্যে মেশে। তাই এই শরীরে তাপ বা সূর্য আছে সকল ভাবই সেই তাপ হতে সৃষ্টি। তাই সকলেই গিয়ে সূর্যে মিশেছে। তাই সূর্যই আমাদের ধ্যান, সূর্যই আমাদের জ্ঞান।
অনন্ত অগণিত অণু-পরমাণুর মাঝে সেই সূর্য-শক্তিই
বিদ্যমান। বস্তুর বস্তুত্ব হইল জ্ঞান বা তেজ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নক্ষত্রবৎ এই জীবাত্মাগণ যদি শুধু এই তেজকেই সঞ্চয় করিয়া চলে, তবেই সে ক্রমে ক্রমে সূর্য অবস্থা প্রাপ্ত হইয়া নূতন নূতন ভাবে ব্রহ্মকে আপন আপন জ্ঞানে উদ্ভাসিত করিতে পারিবে। বিরাটের সেই অনুভূতিতে ভরপুর হইয়া থাকার অবস্থাই ব্রহ্ম অবস্থা। সৃষ্টির মূলে প্রকৃতির এই সাম্য অবস্থা, এই সাম্য নীতিই হইল ব্রহ্মনীতি। এই সর্ব-সাম্য অবস্থায় যে অবস্থান করিতে পারে, তাহার আর ধর্ম-কর্মের কোন প্রয়োজন হয় না নিজের সিদ্ধি, নিজের মুক্তি, নিজের নির্বাণ, সে নিজেই দান করিতে পারে।
আজ এই থাক।
🙏🌹🔱 রাম নারায়ণ রাম 🙏🌹🔱
🔱🌺 গুরু কৃপাহি কেবলম্ 🔱🌺
পুস্তক সূত্র : ধর্মের আঁতুর ঘর সংসার
Post Day : 20/06/2022